Ajker Patrika

জাতিসংঘের প্রতিবেদন /মেগাসিটি বেড়ে চার গুণ, ঢাকা-টোকিওকে ছাড়িয়ে গেল জাকার্তা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ২১
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর এখন জাকার্তা। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর এখন জাকার্তা। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব দ্রুতগতিতে নগরকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক দপ্তরের (ইউএন ডিইএসএ) ১৮ নভেম্বর প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড আর্বানাইজেশন প্রসপেক্টাস ২০২৫: সামারি অব রেজাল্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন (৮২০ কোটি), যার ৪৫ শতাংশ মানুষ এখন শহরে বাস করে। ১৯৫০ সালে বিশ্বের ২৫০ কোটি মানুষের মাত্র ২০ শতাংশ শহরে বসবাস করত। অর্থাৎ গত সাত দশকে শহরবাসী মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।

প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, ২০৫০ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির দুই-তৃতীয়াংশ ঘটবে শহরগুলোতে, এবং অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি হবে ছোট শহরে।

মেগাসিটির সংখ্যা চার গুণ বৃদ্ধি

১০ মিলিয়ন (১ কোটি) বা তার বেশি বাসিন্দা রয়েছে এমন ‘মেগাসিটি’র সংখ্যা ১৯৭৫ সালে ছিল মাত্র ৮টি, যা ২০২৫ সালের মধ্যে চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩ টিতে দাঁড়িয়েছে। এই মেগাসিটিগুলোর অর্ধেকের বেশি (১৯ টি) এশিয়া মহাদেশে।

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর হলো ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, যেখানে প্রায় ৪২ মিলিয়ন (৪ কোটি ২০ লাখ) বাসিন্দা রয়েছে। এরপরই রয়েছে বাংলাদেশের ঢাকা, যার জনসংখ্যা প্রায় ৪০ মিলিয়ন (৪ কোটি)। তৃতীয় স্থানে আছে জাপানের টোকিও (৩৩ মিলিয়ন কা ৩ কোটি ৩০ লাখ)। শীর্ষ ১০টি মেগাসিটির মধ্যে কায়রো (মিসর) একমাত্র অ-এশীয় শহর।

২০৫০ সালের মধ্যে মেগাসিটির সংখ্যা বেড়ে ৩৭ টিতে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা, তানজানিয়ার দারুস সালাম, ভারতের হাজিপুর এবং মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের মতো শহরগুলো এই সময়ের মধ্যে ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) জনসংখ্যা অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ছোট ও মাঝারি আকারের শহরে জনসংখ্যার চাপ

মেগাসিটির ব্যাপক পরিচিতি থাকা সত্ত্বেও প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ছোট এবং মাঝারি আকারের শহরগুলোতেই মেগাসিটির তুলনায় বেশি মানুষ বাস করে এবং বিশেষত আফ্রিকা ও এশিয়াতে এই শহরগুলো আরও দ্রুত গতিতে বাড়ছে।

পর্যালোচিত ১২ হাজার শহরের মধ্যে ৯৬ শতাংশে ১ মিলিয়নের (১০ লাখ) কম এবং ৮১ শতাংশে ২ লাখ ৫০ হাজারের কম বাসিন্দা রয়েছে। নতুন তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৫ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী শহরের মোট সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী শহরের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যেগুলোর বেশির ভাগের জনসংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজারের কম হবে।

অনেক বড় শহরে জনসংখ্যা হ্রাসের প্রবণতা

প্রতিবেদনে শহর বৃদ্ধির বিপরীত চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে অনেক শহর সম্প্রসারিত হচ্ছে, সেখানে মেক্সিকো সিটি (মেক্সিকো) এবং চেংদু (চীন)-এর মতো কিছু খুব বড় শহরসহ অন্য শহরগুলোতে জনসংখ্যার সংকোচন দেখা যাচ্ছে। জনসংখ্যা হ্রাসের প্রবণতায় থাকা বেশির ভাগ শহরে চলতি ২০২৫ সালে ২ লাখ ৫০ হাজারের কম বাসিন্দা রয়েছে, এসব শহরের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি চীনে এবং ১৭ শতাংশ ভারতে অবস্থিত। এটি এমন একটি প্রবণতা যেখানে দেশের সামগ্রিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও এসব শহরের জনসংখ্যা কমছে।

‘টাউন’ বা ছোট শহরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

প্রতিবেদনে ‘টাউন’ বা ছোট শহরের সংজ্ঞাও নির্ধারণ করা হয়েছে। যে বসতিতে কমপক্ষে ৫ হাজার বাসিন্দা এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে কমপক্ষে ৩০০ জন মানুষ বাস করে, সেগুলোই টাউন। জার্মানি, ভারত, উগান্ডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ৭১টি দেশে এই ‘টাউন’ হলো সবচেয়ে সাধারণ বসতির ধরন। গ্রামীণ অঞ্চল এবং শহরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কমে যাচ্ছে গ্রাম

বর্তমানে বিশ্বের ৬২টি দেশে গ্রামীণ অঞ্চল প্রধান বসতি হলেও ১৯৭৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ১১৬টি। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা আরও কমে ৪৪ টিতে দাঁড়াবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ইউরোপের অস্ট্রিয়া, বুলগেরিয়া, ফিনল্যান্ড, রোমানিয়া এবং সাব-সাহারান আফ্রিকার সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, চাদ, ইসোয়াতিনি, মোজাম্বিক ও জাম্বিয়ার মতো অনেক দেশে এখনো গ্রামীণ বসতিগুলোর আধিপত্য রয়েছে। উপ-সাহারা আফ্রিকা একমাত্র অঞ্চল যেখানে গ্রামীণ জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে প্রায় সমস্ত গ্রামীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য এই অঞ্চলটিই দায়ী থাকবে।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল লি জুনহুয়া জোর দিয়ে বলেছেন, জলবায়ু-সংক্রান্ত বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি এগিয়ে নিতে সরকারগুলো যখন কোপ৩০-তে মিলিত হচ্ছেন, তখন জাতিসংঘ সকল প্রকার বসতিতে টেকসই উন্নয়ন এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা তৈরির ক্ষেত্রে নগর উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দিচ্ছে। ভারসাম্যপূর্ণ আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য, দেশগুলোকে অবশ্যই সমন্বিত জাতীয় নীতি গ্রহণ করতে হবে যা শহর এবং গ্রামীণ অঞ্চল জুড়ে আবাসন, ভূমি ব্যবহার, চলাচল এবং জনসেবাগুলো নিশ্চিত হবে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনের এই সংস্করণে একটি বড় পদ্ধতিগত উদ্ভাবন যুক্ত করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো, এটি ‘ডিগ্রি অব আর্বানাইজেশন’ যুক্ত করা হয়েছে। এটিকে একটি সমন্বিত জিওস্পেশিয়াল পদ্ধতি বলা হচ্ছে। এটিতে শহর, টাউন এবং গ্রামীণ এলাকা—এই তিন ধরনের বসতির জন্য আলাদা করে ধারণা দেওয়া হয়েছে। এই নতুন পদ্ধতির ফলে আন্তর্জাতিক তুলনামূলক আলোচনা এবং নগরায়ণ প্রবণতা সম্পর্কে আরও সূক্ষ্ম ধারণা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া শহরের জন্য ন্যূনতম জনসংখ্যা সীমা ৩ লাখ থেকে কমিয়ে ৫০ হাজার করা হয়েছে, যার ফলে প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত শহরের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘুমের মধ্যে শরীরে পারদ প্রবেশ করান স্বামী, মৃত্যুশয্যায় স্ত্রীর জবানবন্দি

সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ মাতালো ব্যান্ড অমূলোক

বগুড়ায় বিছানায় দুই শিশুসন্তানের রক্তাক্ত লাশ, গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছিল মা

স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে: কাস্টমস কর্মকর্তা আলী রেজার বিচার শুরু

রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ আগুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ