Ajker Patrika

গবেষণাগার থেকে লিক হয়েছিল কোভিডের ভাইরাস: মার্কিন তদন্ত

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭: ১৮
Thumbnail image
চীনের উহানের সেই বিখ্যাত পি-৪ ল্যাব। ছবি: এএফপি

সারা বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করা করোনা ভাইরাস মহামারির বীজ তথা জীবাণু ছড়িয়েছে গবেষণাগার থেকেই। গতকাল সোমবার মার্কিন কংগ্রেসের একটি কমিটি করোনাভাইরাস মহামারির কারণ হিসেবে গবেষণাগার থেকে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টিকে সামনে এনেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস ‘সিলেক্ট সাবকমিটি অন দ্য করোনাভাইরাস ক্রাইসিস’ বলেছে, তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, করোনাভাইরাস ‘সম্ভবত একটি ল্যাব বা গবেষণা সম্পর্কিত দুর্ঘটনার কারণে উদ্ভূত হয়েছিল।’ ৫২০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন দুই বছর ধরে প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে মহামারির উৎস, এর প্রতিক্রিয়া এবং টিকাদানের প্রচেষ্টাসহ ফেডারেল এবং রাজ্য পর্যায়ের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছে।

কমিটির রিপাবলিকান চেয়ারম্যান কংগ্রেসকে লেখা এক চিঠিতে বলেছেন, ‘এই কাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বকে পরবর্তী মহামারি পূর্বাভাস, প্রস্তুতি, সুরক্ষায় প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করবে এবং আশা করি, পরবর্তী মহামারি প্রতিরোধে সাহায্য করবে।’

রিপোর্টের মূল সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল, মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (এনআইএইচ) চীন অবস্থিত উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে বিতর্কিত ‘গেইন-অব-ফাংশন’ গবেষণার জন্য তহবিল প্রদান করেছিল—যেটি ভাইরাসকে আরও শক্তিশালী করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপায় খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়—মহামারির শুরু হওয়ার আগে।

কোভিড-১৯-এর জীবাণু প্রথম ক্ষেত্রে উহানে পাওয়া যায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। এই শহর চীনের হুবেই প্রদেশের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এরপর ভাইরাসটি দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং এতে ৭০ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়।

মার্কিন ফেডারেল এজেন্সি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা কোভিড-১৯ এর উৎস নির্ধারণের চেষ্টা করলেও কোনো মতানৈক্য হয়নি। অনেক গবেষক বিশ্বাস করেন, ভাইরাসটি প্রাণী থেকে মানুষে ছড়িয়েছিল এবং কোনোভাবে আক্রান্ত একটি প্রাণী সম্ভবত উহানের বাজারে চলে এসেছিল। তবে মার্কিন জ্বালানি বিভাগের এক গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে, ভাইরাসটি সম্ভবত গবেষণাগার থেকে বেরিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনও (এফবিআই) একই ধরনের দাবি করেছিল।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ করতে গিয়ে, কমিটি দুই বছর ধরে ২৫টি বৈঠক করেছে এবং ৩০টিরও বেশি সাক্ষাৎকার নিয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে ১০ লাখের বেশি পৃষ্ঠার বিভিন্ন দলিল পর্যালোচনা করে গবেষণাগার থেকে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার তত্ত্বের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

এই তদন্তের অংশ হিসেবে, রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসনাল প্যানেল এন্থনি ফাউচির সঙ্গে দুই দিনব্যাপী সাক্ষাৎকার নেয়। ড. ফাউচি মহামারির শুরুর দিকে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক বার্তা প্রচারের জন্য সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। কংগ্রেসের রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের অভিযোগ, ফাউচি চীনা বিজ্ঞানীদের জন্য তহবিল অনুমোদন করে সার্স-কভ-২ বা কোভিড-১৯-এর একটি প্রকরণ তৈরি করিয়েছেন এবং এর ফলে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারি তৈরি হয়েছে।

ফাউচি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে অবসর নেন। কমিটির অভিযোগ, ফাউচি চীনা গবেষণাগার থেকেই কোভিডের জীবাণু ছড়িয়ে এমন ‘তত্ত্ব’ চাপা দেওয়ার জন্য কাজ করেছেন। এদিকে, ৮৩ বছর বয়সী ড. ফাউচি বর্তমানে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করছেন। কারণ, তাঁর পরিবারকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গত এক গণশুনানিতে কংগ্রেসের কমিটিকে ফাউচি বলেছিলেন, উহান ল্যাব মহামারি সৃষ্টিকারী ভাইরাস সরিয়েছিল এটি প্রায় অসম্ভব।

অপরদিকে, মার্কিন কংগ্রেসের কমিটির তদন্ত এই বিষয়টিও খুঁজে পেয়েছে যে, লকডাউন আরও ক্ষতি করেছে, ভালো কিছু করেনি। এ ছাড়া, বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার বিষয়টি কোভিড ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণে অকার্যকর ছিল। তবে সামাজিক দূরত্ব ও ভ্রমণ সীমাবদ্ধতার মতো উদ্যোগ জীবন রক্ষা করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত