Ajker Patrika

ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট কী, যুক্তরাষ্ট্রে এর সূচনা হয় কীভাবে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩: ৩৮
Thumbnail image
২০১৯ সালের ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে প্রার্থনায় রিপাবলিকান রিপ্রেজেনটেটিভ জেমস ল্যাংকফোর্ড (ওকলাহোমা), প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস কুনস (ডেলাওয়ার)। ছবি: সংগৃহীত

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তবে কী এই ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট। এর সূচনাই বা কোথায় আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে এর সম্পর্কই-বা কতটুকু? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

১৯৩৫ সালের এপ্রিল মাসে ওয়াশিংটনের সিয়াটলে ১৯ জন ব্যবসায়ী এক সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় একত্র হন। সমাজ জীবনের টানাপোড়েন ও বিভাজন থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে তাঁরা প্রায় দুই হাজার বছরের পুরোনো এক গল্পের কাছে ফিরে যান। গল্পটি যিশুখ্রিষ্টের এবং এটি শুরু হয়েছিল এক খাবার টেবিল থেকে।

বাইবেলের জন ২১ অধ্যায়ের বিবরণ অনুযায়ী, যিশু তাঁর কয়েকজন বন্ধুদের তিবেরিয়াস সাগরের তীরে সকালের খাবারের আমন্ত্রণ জানান। সেই ব্রেকফাস্টে তিনি ঐশ্বরিক শক্তিতে প্রচুর মাছ ধরেন; ঈশ্বরের ভালোবাসা তুলে ধরেন পিটারকে ক্ষমা করার মাধ্যমে, যিনি তাঁকে অস্বীকার করেছিলেন। মানুষের একত্র হওয়া, একসঙ্গে খাবার খাওয়া, বন্ধুত্ব গড়া ও প্রার্থনার গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেন তিনি।

সিয়াটলের এই ব্যবসায়ীরা নিয়মিত দেখা করতে শুরু করেন এবং তাঁদের জীবনের এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি জন্ম নেয়। তাঁরা নিজেদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে পুনর্মিলনের দূত হওয়ার সংকল্প গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে তাঁরা তাঁদের শহরের এবং এর বাইরের দারিদ্র্যপীড়িত ও নিপীড়িত মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে ওঠেন।

পরবর্তী মাস ও বছরগুলোতে এই ছোট দলের গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁরা অন্যদের বলতে থাকলে আরও অনেক ব্রেকফাস্ট দল গড়ে ওঠে। ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্য থেকে শুরু করে সান ফ্রান্সিসকো, শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া, বোস্টন এবং ১৯৪২ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে এই উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন কংগ্রেসের সিনেট এবং হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভেও এমন ব্রেকফাস্ট দল গঠন করা হয়।

আজকের দুনিয়ায় এই সরল ধারণা—পারস্পরিক উৎসাহ ও বন্ধুত্বের জন্য মানুষের একত্র হওয়া এবং উত্তম পথ খোঁজার প্রয়াস—বিশ্বের ১৮০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যিশুখ্রিষ্টের শিক্ষা, নীতিমালা এবং তাঁর ব্যক্তিত্বকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই প্রাচীন ধারণা আধুনিক সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ করেছে।

১৯৫৩ সালে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডুইট ডি. আইজেনহাওয়ার একটি ব্রেকফাস্ট সভায় অংশগ্রহণ করেন। খ্রিষ্টধর্ম প্রচারক বিলি গ্রাহামের আহ্বানে তিনি এতে যোগ দিতে রাজি হন। আইজেনহাওয়ার প্রকাশ্যে ধর্মপরায়ণ না হলেও প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আধ্যাত্মিক পুনর্জাগরণের প্রয়োজন।

আইজেনহাওয়ারের নেতৃত্বেই যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রায় ‘ইন গড, উই ট্রাস্ট’ সংযোজন এবং জাতীয় শপথবাক্যে ‘আন্ডার গড’ শব্দ দুটি যুক্ত করা হয়। এসব উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল ‘রেড স্কেয়ার’ বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিজম প্রতিরোধ করতেই এসব করেছিলেন তিনি।

এর পর থেকে প্রতিটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই ব্রেকফাস্ট সভায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছেন। খ্রিষ্টধর্ম প্রচারক বিলি গ্রাহাম এবং তাঁর ছেলে ফ্র্যাঙ্কলিন গ্রাহাম কয়েক দশক ধরে প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং ওয়াশিংটনে তাদের প্রভাব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে ‘দ্য ফ্যামিলি’ নামেও পরিচিত একটি গোষ্ঠীও এই প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হোয়াইট হাইস ও ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট কমিটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত