Ajker Patrika

শাটডাউনে মার্কিন সরকার, কারণ কী এবং এর ফলে কী হয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ০৭
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: এএফপি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: এএফপি

শাটডাউনে চলে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টা ১ মিনিট) ফেডারেল সরকারের ব্যয় চালিয়ে নিতে রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত তহবিল প্যাকেজ ডেমোক্র্যাটরা আটকে দেওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সময়সীমার শেষ মুহূর্তে এসে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা একে অপরের প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তীকালীন বিল প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে ছয় বছরের মধ্যে প্রথম শাটডাউনে চলে গেল সরকার।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতিহাসে ১৯৮০ সালের পর থেকে এক ডজনেরও বেশিবার মার্কিন সরকার আংশিকভাবে শাটডাউন হয়েছে। তবে এবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, এই সুযোগে তিনি সরকারি রাজস্ব ব্যয়ের পরিমাণ কমিয়ে আনতে চান। এতে অতীতের তুলনায় দীর্ঘ অচলাবস্থা তৈরি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, এই শাটডাউনের সুযোগে তিনি এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন, যা ডেমোক্র্যাটদের জন্য ‘খারাপ’ হবে। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা এমন কিছু করতে পারি যা তাদের পছন্দের মানুষকে বাদ দেবে, তাদের পছন্দের কর্মসূচি বাতিল করবে। এগুলো তাদের জন্য খারাপ ও অপূরণীয় হবে।’ ট্রাম্প আরও বলেন, সরকারের কার্যক্রম বন্ধ হলে অনেক ভালো দিকও আসতে পারে।

এর আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এর ফলে কিছু অ-অপরিহার্য সেবা বন্ধ হয়ে যাবে। যেমন: গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ ও ছোট ব্যবসার জন্য ঋণ অনুমোদন। তবে অপরিহার্য খাত—আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সামরিক বাহিনী ও বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রকেরা কাজ চালিয়ে যাবেন, যদিও বেতন পাবেন না। সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা ও খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম চলবে।

এর আগে প্রতিবারই শাটডাউনের সময় শত শত সরকারি কর্মী সাময়িক ছুটিতে গিয়েছিলেন এবং পরে কাজে যোগ দিয়ে বকেয়া বেতন পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এ সুযোগে তিনি ‘অনেককে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত’ করবেন। তাঁর দাবি, ‘ওরা সবাই ডেমোক্র্যাট।’

জর্জ ডব্লিউ বুশের শাসনামলে হোয়াইট হাউসের নৈতিকতা বিষয়ক প্রধান আইনজীবী ছিলেন রিচার্ড পেইন্টার। তিনি ট্রাম্পের এ হুমকিকে ‘বলপ্রয়োগের কৌশল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প কর্মীদের ছাঁটাইয়ের হুমকি দিচ্ছেন। এর কিছু হয়তো তিনি করতে পারবেন, কিন্তু অনেক কিছুই কংগ্রেস অনুমোদন দেয়নি। বিশেষ করে যাদের সিভিল সার্ভিস সুরক্ষা আছে, তাদের চাকরি থেকে সরানো যাবে না।’

এই অচলাবস্থার পেছনে রয়েছে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের বিতর্ক। মাসের শুরুতে রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তী বিল ডেমোক্র্যাটরা প্রত্যাখ্যান করেন। সেই বিলে সরকারকে আরও নয় সপ্তাহ চালানোর প্রস্তাব ছিল। ডেমোক্র্যাটরা বলেছিলেন, বিলটিতে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের বিধান থাকা জরুরি, বিশেষ করে ট্রাম্পের ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট”—এ প্রস্তাবিত মেডিকেড কাটছাঁট বাতিল করার দাবি তোলেন তারা। রিপাবলিকানরা বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবার মতো বিষয় আলাদা দ্বিদলীয় আলোচনায় পরে সমাধান করা উচিত।

অচলাবস্থা এড়াতে মঙ্গলবার শেষ মুহূর্তে রিপাবলিকানরা আরেকটি বিল আনেন। এতে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ব্যয় চালিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব ছিল। ভোটে ৫৫-৪৫ সমর্থন পেলেও পাস হতে প্রয়োজন ছিল ৬০ ভোট। ভোটাভুটিতে দুই ডেমোক্র্যাট—পেনসিলভানিয়ার জন ফেটারম্যান ও নেভাদার ক্যাথরিন কর্তেস মাস্তো—এবং মেইনের স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দেন।

অন্যদিকে রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের বিল নামিয়ে দেন। সেই বিলে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত অর্থায়ন বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব ছিল। ভোটে ৪৭-৫৩ ব্যবধানে বিলটি ব্যর্থ হয়। কোনো রিপাবলিকান এতে সমর্থন দেননি।

ভোটাভুটি ব্যর্থ হওয়ার পর দুই দলই একে অপরকে দায়ী করে। সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেন, ‘রিপাবলিকানরা স্বাস্থ্যসেবার সংকট সমাধান না করে সরকার শাটডাউন করে দিচ্ছে।’

প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফরিস অভিযোগ করেন, রিপাবলিকানরা সাধারণ মানুষের ক্ষতি করার জন্য ভোট দিয়েছে।

অন্যদিকে সিনেটের রিপাবলিকান নেতা জন থুন আশা প্রকাশ করেছেন, বুধবারের পরবর্তী ভোটে কিছু ডেমোক্র্যাট তাঁদের দলের ‘ক্লিন বিল’-এর পক্ষে ভোট দেবেন। ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, ‘এ সবই অপ্রয়োজনীয় ছিল। কেবল তাঁদের বামঘেঁষা রাজনৈতিক অবস্থানে অনড় থাকার কারণেই এ কাজ করা হয়েছে।’

দ্বিদলীয় নীতি কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, এবারসহ ১৯৮০ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ বার সরকার অচল হলো। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ অচলাবস্থা হয়েছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে—২০১৮ সালের শেষ দিকে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত টানা ৩৪ দিন স্থায়ী ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ গ্রেপ্তার

বিহার নির্বাচন: লড়বেন না প্রশান্ত কিশোর, ‘নিশ্চিত পরাজয়’ দেখছেন বিজেপি জোটের

প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট চালু করছে চ্যাটজিপিটি, শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়

স্ত্রীর সম্পদ পুনরুদ্ধারে মামলা করা যায়

হামাসকে নিরস্ত্র হতে বাধ্য করা হবে, প্রয়োজনে আমরাই করব সহিংসভাবে: ট্রাম্প

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত