Ajker Patrika

বাইবেল থেকে ইরানে হামলার নাম রেখেছে ইসরায়েল

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

এক সপ্তাহ ধরে চলছে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। যুদ্ধের সূত্রপাত ১৩ জুন ইরানি সময় ভোরে। অবশ্য আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে বিরাজ করছিল থমথমে অবস্থা। ইসরায়েল যে হামলা করতে পারে, তা আগে থেকে আঁচ করতে পেরেছিল ইরান। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত শুক্রবার ইরানের একাধিক পারমাণবিক কেন্দ্র, সরকারি স্থাপনাসহ শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে বড় ধরনের হামলা চালায় ইসরায়েল।

হামলার পরপরই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন ইরানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল, যার নাম ‘অপারেশ রাইজিং লায়ন’। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। কিছুক্ষণ আগে ইসরায়েল ইরানে অপারেশন রাইজিং লায়ন শুরু করেছে। এটি একটি লক্ষ্যভিত্তিক সামরিক অভিযান, যার উদ্দেশ্য ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ ইরানি ঝুঁকিকে প্রতিহত করা। যত দিন না হুমকি পুরোপুরি নির্মূল হবে, তত দিন এই অভিযান চলবে।’

অভিযানের নাম অপারেশন রাইজিং লায়ন কেন? বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই নামের রাজনৈতিক ও সামরিক গুরুত্ব তো বটেই, রয়েছে ধর্মীয় গুরুত্বও। অপারেশন রাইজিং লায়নের বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘উদীয়মান সিংহ’ অথবা ‘সিংহের জাগরণ’। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফের তথ্যমতে, এই নাম নেওয়া হয়েছে ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেল থেকে। বাইবেলের একটি শ্লোকে ইসরায়েলের বিজয়সংক্রান্ত একটি ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়, ‘দেখো, এই জাতি এক মহাসিংহের মতো জেগে উঠবে এবং নিজেকে মেলে ধরবে এক যুবক সিংহের মতো। যতক্ষণ না শিকারের রক্ত পান করবে, ততক্ষণ সে থামবে না।’

এই বাক্য এসেছে বাইবেলের নম্বর গ্রন্থের (বুক অব নম্বর), ২৩ নম্বর অধ্যায়ের ২৪ নম্বর আয়াত থেকে। ওই অধ্যায়ে মূলত বালাম বিন বেওর নামের এক জ্যোতিষীর উপাখ্যান বর্ণনা করা হয়েছে। বালাম হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত এক রহস্যময় চরিত্র, যিনি পরিচিত একজন অ-ইসরায়েলি ভবিষ্যদ্বক্তা বা জ্যোতিষী হিসেবে। নম্বর গ্রন্থের ২২ থেকে ২৪ অধ্যায়ে তাঁর কাহিনি বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে।

বর্ণনা অনুযায়ী, ইসরায়েলি জাতি যখন মিসর থেকে নিষ্ক্রমণের পর মরুভূমি পেরিয়ে মোয়াব অঞ্চলে পৌঁছায়, তখন মোয়াবের রাজা বালাক শঙ্কিত হয়ে ওঠেন। কারণ, ইসরায়েলিরা জনবল ও সামরিক দিক থেকে ছিল খুবই শক্তিশালী এবং মিসর থেকে মোয়াবের দিবে যাওয়ার পথে কয়েকটি শক্তিশালী জাতিকে পরাজিত করে তাঁদের ভূমি ও সম্পদ দখল করে নিয়েছিলেন তাঁরা।

এই পরিস্থিতিতে মোয়াবের রাজা বালাক ভয় পেয়ে যান যে ইসরায়েলিরা মোয়াবদের সম্পদ ও জমি দখল তো নেবেই, এমনকি পুরো মোয়াব জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে পারে। তাই তিনি ইসরায়েলিদের পরাজিত করতে আধ্যাত্মিক পন্থা অবলম্বনের কথা ভাবেন। আর তখনই আবির্ভাব হয় বালাম বিন বেওরের, যাঁর অভিশাপ বা বর ফলে যায় বলে সুনাম উল্লেখ করা হয়েছে বাইবেলে। তাই বালামকে ডেকে পাঠান মোয়াবের রাজা।

বালাম শুরুতে এই প্রস্তাবে রাজি না হলেও পরে ঈশ্বরের অনুমতিতে যান, তবে শর্ত থাকে যে—তিনি কেবল ঈশ্বরের দেওয়া বাণীই উচ্চারণ করবেন। মোয়াবে যাওয়ার পর ঈশ্বরের বাণী পাওয়ার জন্য তিনবার ভেড়া উৎসর্গ করেন বালাম। কিন্তু কোনো শাপবাক্য না দিয়ে তিনবারই বালাম ইসরায়েলিদের বর দেন। বালাককে বালাম বলেন, ‘যাঁকে ঈশ্বর অভিশাপ দেননি, তাঁকে আমি কীভাবে অভিশাপ দেব?’ তিনবার উচ্চারিত ওই আশীর্বাদের বাক্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—‘দেখো, এই জাতি একদিন উঠে দাঁড়াবে সিংহীর মতো।’

এই বাক্য ইসরায়েলের প্রতিরোধী চেতনার প্রতীক হয়ে উঠেছে। আর এই লাইন থেকে সাম্প্রতিক সামরিক ইসরায়েল তাদের অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’।

তথ্যসূত্র: ওয়াইটি নিউজ, বিবলিক্যাল আর্কিওলজি সোসাইটি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বুশেহর পারমাণবিক কেন্দ্রে আছেন রুশ বিশেষজ্ঞরা, ইসরায়েলকে রাশিয়ার হুঁশিয়ারি

ইরানকে ঘিরে ফেলছে একের পর এক মার্কিন রণতরি ও যুদ্ধবিমান

পর্যটনে সেরা ১০ মুসলিমবান্ধব অমুসলিম দেশ

ছেলের কাটা পা হাতে নিয়ে বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বাবা

পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে কেন যুক্তরাষ্ট্রে ডেকেছিলেন ট্রাম্প, ইরান-ইসরায়েল নিয়ে কী আলোচনা হলো

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত