Ajker Patrika

ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে গ্যাসক্ষেত্র থেকেই বছরে আয় করবে ৪০০ কোটি ডলার: বিশেষজ্ঞ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বর্তমান বাজারদরে গাজা মেরিন গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আদায় সম্ভব। ছবি: আনাদোলু
বর্তমান বাজারদরে গাজা মেরিন গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আদায় সম্ভব। ছবি: আনাদোলু

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রশ্নে নতুন করে আলোচনা শুরুর প্রেক্ষাপটে গাজার উপকূলবর্তী গ্যাসক্ষেত্র ‘গাজা মেরিন’ নিয়ে প্রায় তিন দশক ধরে চলমান রাজনৈতিক ও আইনি জটিলতা নতুন মোড় নিচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন ফিলিস্তিন যদি একটি রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় তাহলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পিএ যে গাজা মেরিনের গ্যাসসম্পদ উন্নয়নের বৈধ অধিকার রাখে, তা বাস্তবায়ন নিয়ে আর কোন সন্দেহ থাকবে না।

প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত থাকা বিশেষজ্ঞ মাইকেল ব্যারন তাঁর ‘দ্য গাজা মেরিন স্টোরি’ নামক গবেষণাগ্রন্থে দেখিয়েছেন, বর্তমান বাজারদরে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আদায় সম্ভব। যা আগামী ১৫ বছরে পিএর জন্য বার্ষিক ১০০ মিলিয়ন ডলার আয়ের পথ খুলে দিতে পারে। তার মতে, এই আয় ফিলিস্তিনিকে কাতার বা সিঙ্গাপুরের মতো পরিণত করবে না, তবে এটি ফিলিস্তিনের নিজস্ব উপার্জন। এই উপার্জন ফিলিস্তিনের বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমাবে।

তবে ২০০০ সালে গ্যাস আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকেই মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে রয়েছে প্রকল্পটি। ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তিতে ফিলিস্তিনের উপকূলীয় জলসীমা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার অধিকার স্বীকৃত হলেও, ২০১৫ সালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র জাতিসংঘের সাগর আইন বিষয়ক কনভেনশন (ইউএনসিএলওএস) স্বাক্ষর করার মাধ্যমে তাদের একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইইজেড) দাবি করে। ২০১৯ সালে তারা বিস্তারিতভাবে তাদের সামুদ্রিক সীমানার দাবি তুলে ধরে। কিন্তু ইসরায়েল ইউএনসিএলওএসের সদস্য নয়। তারা এই অঞ্চলের জলসীমাকে “নো-ম্যান’স ওয়াটার” হিসেবে চিহ্নিত করে মালিকানা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে।

জোন জি নামে পরিচিত এই এই অঞ্চলকে নিজেদের সামুদ্রিক এলাকা হিসেবে দাবি করে অনুসন্ধান লাইসেন্স জারি করে ইসরায়েল। দেশি বিনিয়োগ টানার উদ্দেশ্যে বড় বড় জ্বালানি কোম্পানিকে সেখানে কাজের অনুমতি দেয় তারা। ইতালির রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানি ইএনআইসহ কয়েকি বিদেশি কোম্পানিকে ওই অঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধানের লাইসেন্স দেয় ইসরায়েল। খুব শিগগিরই গ্যাস অনুসন্ধানের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ইএনআই।

তবে, এই এলাকার ৬২ শতাংশই নিজেদের বলে দাবি করছে ফিলিস্তিন। যে কারণে, ইসরায়েলের জারি করা এই লাইসেন্স প্রকৃতপক্ষে বৈধ নয় বলে মত আইনজীবীদের। এরই জেরে সম্প্রতি একাধিক মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ইতালির রাষ্ট্রীয় কোম্পানি ইএনআইকে আইনি চিঠি পাঠানো হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই চিঠিতে ইতালিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েল আপনাদের কোনো বৈধ অনুসন্ধান অধিকার দিতে পারে না এবং আপনারাও তা বৈধভাবে অর্জন করতে পারেন না।’

উল্লেখ্য, ইএনআই পরে জানিয়েছে, এখনো কোনো লাইসেন্স ইস্যু করা হয়নি এবং কোনো অনুসন্ধান কাজও শুরু হয়নি। অন্যদিকে, মানবাধিকার সংস্থা গ্লোবাল উইটনেস অভিযোগ করেছে যে, গাজার উপকূল ধরে যাওয়া ইস্ট মেডিটেরেনিয়ান গ্যাস পাইপলাইনটি ফিলিস্তিনের জলসীমার মধ্যে দিয়ে গেছে, যা আইনত অবৈধ। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ইসরায়েলের আশকেলন থেকে মিশরের আরিশে গ্যাস পাঠানো হয় এবং সেখানে তা তরল গ্যাসে রূপান্তর করে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। অথচ এই পাইপলাইন থেকে ফিলিস্তিন কোনো রাজস্ব পায় না।

মাইকেল ব্যারনের মতে, এই প্রকল্প শুধু অর্থনৈতিক গুরুত্বই নয়, বরং এটি ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্য ও সার্বভৌম অধিকারের প্রতীক। ২০০৭ সালে হামাস গাজা অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ইসরায়েল আশঙ্কা করেছিল যে গ্যাস থেকে পাওয়া রাজস্ব হামাসের হাতে গিয়ে পড়তে পারে, তাই প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে প্রকল্পের প্রধান অংশীদার ব্রিটিশ গ্যাসের প্রাক্তন শাখা বিজি গ্রুপ গাজা মেরিন প্রকল্পটি স্থগিত করে এবং পরে পুরোপুরি সরে যায়।

২০২৩ সালের জুনে ইসরায়েল মিশরের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানি ইজিএএসকে গাজা মেরিন গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছিল। তবে বছরের শেষ দিকে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ায় এই কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।

ব্যারনের মতে, যতদিন ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া হয়, ততদিন ইসরায়েল আইনি ও রাজনৈতিকভাবে এই প্রকল্পে বাধা দেওয়ার সুযোগ পাবে। তবে যদি ফিলিস্তিন একটি স্বীকৃত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যার একক ও বৈধ সরকার রয়েছে, তাহলে ইসরায়েল আর কোনো যুক্তিতেই গাজা মেরিনের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেস্কা আলবানিজ সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি আন্তর্জাতিক করপোরেশনগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা অবৈধ দখলদারিত্ব বজায় রাখার মতো কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত না হয় এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতি দেয়। তার মতে, আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অনুযায়ী, করপোরেট সংস্থাগুলোর উপর দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের অংশীদারিত্ব থেকে পুরোপুরি ও নিঃশর্তভাবে সরে আসার একটি মৌলিক দায় বর্তায় । ইসরায়েল অবশ্য এই দাবিকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভাঙা হচ্ছে হোয়াইট হাউসের একাংশ, ট্রাম্পের শখের বলরুম নির্মাণ শুরু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্পের শখের বলরুম নির্মাণে হোয়াইট হাউসের একাংশ ভাঙা হচ্ছে। ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের শখের বলরুম নির্মাণে হোয়াইট হাউসের একাংশ ভাঙা হচ্ছে। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনায় নতুন বলরুম নির্মাণের জন্য হোয়াইট হাউসের পূর্ব দিকের অংশ (ইস্ট উইং) ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। এই উদ্যোগ ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাবেক এক মার্কিন আইনপ্রণেতা তো এটিকে ‘স্রেফ ধ্বংসযজ্ঞ’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসের ইস্ট উইংয়ের একটি অংশ ভাঙার কাজ শুরু হয়। পত্রিকাটি ভাঙচুরের কিছু ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে ভবনের বাইরের অংশে নির্মাণকাজের চিহ্ন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। নিউইয়র্ক পোস্টেও অনুরূপ কিছু ছবি প্রকাশিত হয়েছে।

সোমবার নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেন, ‘হোয়াইট হাউসে নতুন বলরুম নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আমি গর্বিত যে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহু প্রতীক্ষিত এই প্রকল্পটি শুরু করতে পারলাম—করদাতাদের একটা পয়সা অপচয় ছাড়াই! এটি সম্পূর্ণভাবে অর্থায়ন করছে কিছু দেশপ্রেমিক, বড় আমেরিকান কোম্পানি এবং আমিও।’

সেই দিনই ওয়াশিংটন ডিসিতে এনসিএএ চ্যাম্পিয়ন লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির বেসবল দলকে সংবর্ধনা দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সুন্দর বলরুম তৈরি করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানতাম না যে এখন আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকব। কারণ, ঠিক পাশেই নির্মাণকাজ চলছে—আপনারা হয়তো মাঝেমধ্যে শব্দ শুনতে পাবেন।’

হোয়াইট হাউসে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বিশাল বলরুম তৈরির পরিকল্পনা গত জুলাইয়ে সামনে। এটি হবে শতাব্দীর মধ্যে হোয়াইট হাউসের অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছিলেন, ৯০ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই বলরুমে একসঙ্গে ৬৫০ জন অতিথি বসতে পারবেন। কর্মকর্তারা বলেন, প্রকল্পটির অর্থায়ন করবেন ট্রাম্প ও কিছু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দাতা।

তখন ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘গত ১৫০ বছর ধরে হোয়াইট হাউসে বলরুম চাওয়া হয়েছে। কোনো প্রেসিডেন্টই বলরুম তৈরিতে ভালো ছিলেন না। আমি নির্মাণে পারদর্শী। সুন্দর, সময়মতো ও মানসম্মতভাবে কাজটি শেষ করব।’

ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ট্রাম্প দাবি করেছেন, নতুন কাঠামোটি বর্তমান ভবনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে না। তিনি বলেন, ‘এটি কাছেই থাকবে, কিন্তু ছুঁয়ে যাবে না। বর্তমান ভবনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই নির্মাণ করা হবে। এটি আমার প্রিয় জায়গা, সবচেয়ে ভালো লাগে হোয়াইট হাউসকেই।’ ২০২৯ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কাজটি শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে নতুন বলরুমের দাতাদের জন্য এক ডিনার আয়োজন করেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি অতিথিদের জানান, নতুন বলরুমে থাকবে বুলেটপ্রুফ কাচ, ১ হাজার অতিথির ধারণক্ষমতা এবং প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজনের উপযোগী অবকাঠামো। সেই ডিনারে আমাজন, অ্যাপল, মেটা, গুগল, মাইক্রোসফট, প্যালান্টির ও লকহিড মার্টিনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

এদিকে ট্রাম্পের এই উদ্যোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং রাজনৈতিক মহলে সমালোচনা চলছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান মার্ক তাকানো একটি বিল প্রস্তাব করেছেন, যাতে বলা হয়েছে—সরকারি কার্যক্রম বন্ধ থাকলে (শাটডাউন পরিস্থিতিতে) হোয়াইট হাউসে কোনো নির্মাণ বা সংস্কারকাজে ফেডারেল তহবিল ব্যবহার করা যাবে না, যদি না তা স্বাস্থ্য বা নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়। সোমবার ছিল সরকার শাটডাউনে থাকার ২০তম দিন।

সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জো ওয়ালশ এক্সে লিখেছেন, ‘এটি জনগণের বাড়ির এক ভয়াবহ বিকৃতি। আমি যদি ২০২৮ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হই, প্রথম প্রতিশ্রুতিই হবে ওই বলরুম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আমেরিকানদের আমন্ত্রণ জানাব, যেন তারা সাপ্তাহিক ছুটিতে নিজ নিজ হাতুড়ি আর ক্রোবার নিয়ে এসে এই বিকৃত স্থাপনাটি ভেঙে ফেলেন।’

মানবাধিকার আইনজীবী কাসিম রশিদ এক্সে লিখেছেন, ‘আমেরিকায় আয় ও সম্পদের বৈষম্য এখন রেকর্ড পর্যায়ে, কিন্তু আমরা ২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করছি একটি অহংকারমূলক প্রকল্পে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনের চাহিদায় ভাগ বসাল যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিরল খনিজ চুক্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ১২
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অ্যান্থনি আলবানিজ যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে একটি বিরল খনিজ চুক্তি করেছেন। ছবি: এএফপি
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অ্যান্থনি আলবানিজ যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে একটি বিরল খনিজ চুক্তি করেছেন। ছবি: এএফপি

বিরল মৃত্তিকা ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহ বাড়াতে নতুন এক চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া। বিরল খনিজের বাজারে চীনের একক নিয়ন্ত্রণ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তাদের কৌশলের অংশ হিসেবেই এই চুক্তি করেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে—অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ জানিয়েছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ‘রেডি-টু-গো’ প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগের পথ খুলবে, যা অস্ট্রেলিয়ার খনন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সক্ষমতা আরও বাড়াবে।

চুক্তির আওতায় আগামী ছয় মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া যৌথভাবে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে ফ্রেমওয়ার্কে উল্লেখ করা হয়েছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ থেকেই দেশ দুটি এই খনিজ সহযোগিতা নিয়ে কাজ করে আসছে। তবে আলবানিজ বলেছেন, এই নতুন চুক্তি সম্পর্ক ‘আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত রোববার ‘অকাস’ নামে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার যৌথ সাবমেরিন প্রকল্প নিয়েও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘এটা পুরো গতিতেই এগোচ্ছে।’ এর আগে চলতি বছরের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসন এই প্রকল্প পর্যালোচনার ঘোষণা দিয়েছিল, যাতে দেখা হয় যে—এটি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না। এতে আশঙ্কা দেখা দেয়, অস্ট্রেলিয়া হয়তো পুরোনো সাবমেরিন বহর প্রতিস্থাপনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন পাবে না। তবে ট্রাম্প বলেছেন, ‘না, তারা সাবমেরিনগুলো পাচ্ছে।’

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিরল ধাতু আহরণের ৭০ শতাংশ এবং এসব ধাতুর প্রক্রিয়াজাতকরণের ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে চীন। এই ধাতুগুলো প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম থেকে শুরু করে কম্পিউটার চিপ ও গাড়িতেও ব্যবহৃত হয়। চীনের এই প্রভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এদিকে চীন যখন নতুন মার্কিন শুল্কের জবাবে সরবরাহ সীমিত করার পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন এই নির্ভরতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই ঘোষণার পর মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার বিরল ধাতু খনন কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্য বেড়ে যায়। পার্থভিত্তিক আরাফুরা রেয়ার আর্থসের শেয়ার প্রায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। অপর একটি বড় প্রতিষ্ঠান ইলুকা রিসোর্সেসের শেয়ার বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি।

আলবানিজ বলেছেন, চুক্তির লক্ষ্য তিন ধরনের প্রকল্পে বিনিয়োগ দ্রুত করা, যার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় প্রক্রিয়াজাতকরণ স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগও থাকবে। দুটি দেশ মূল্য নির্ধারণ, অনুমোদন প্রক্রিয়া এবং খনিজ খাতে কোম্পানি ও প্রকল্প বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারি পর্যালোচনার নিয়ম নিয়েও একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র আলাদাভাবে জানিয়েছে, তারা পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় বছরে ১০০ টন ক্ষমতার উন্নত গ্যালিয়াম রিফাইনারি নির্মাণে বিনিয়োগ করবে এবং এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করবে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ প্রকল্পগুলোতে।

সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের এমপি ম্যাটেরিয়ালস, কানাডার ট্রিলজি মেটালস ও লিথিয়াম আমেরিকাসের মতো কোম্পানিতে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে, যেগুলোর প্রকল্প যুক্তরাষ্ট্রেই চলছে। এই বিনিয়োগের বিনিময়ে প্রশাসন ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশীদারত্বও অর্জন করেছে।

এই বৈঠকের আগেই অস্ট্রেলিয়ার লাইনাস রেয়ার আর্থসসহ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারমূল্য বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর কয়েক বছর আগে লাইনাসকে একটি চুক্তি দিয়েছিল, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি টেক্সাসে একটি প্রকল্পে কাজ করছে।

হোয়াইট হাউস প্রকাশিত ফ্রেমওয়ার্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি, যা ইঙ্গিত দেয় আলোচনাটি বেশ সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে। অস্ট্রেলিয়া গুরুত্বপূর্ণ খনিজের বড় উৎস হলেও দেশটি এখনো চীনের ওপর নির্ভরশীল, কারণ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো মূলত চীনের হাতেই রয়েছে—যেমনটা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও দেখা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তেলাপোকা মারতে গিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট জ্বালিয়ে দিলেন তরুণী, প্রতিবেশীর মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৪৬
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দক্ষিণ কোরিয়ার এক তরুণী তেলাপোকা মারতে গিয়ে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে আগুন লাগিয়ে ফেলেছেন। ভয়ংকর এই আগুনে প্রাণ গেছে তাঁরই এক প্রতিবেশীর। ঘটনাটি ঘটেছে দেশটির উত্তরাঞ্চলের ওসান শহরে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ওই তরুণী গত সোমবার বিকেলে লাইটার আর দাহ্য স্প্রে একসঙ্গে ব্যবহার করে তেলাপোকা পোড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। অর্থাৎ তিনি নিজের ঘরেই বানিয়েছিলেন একধরনের অস্থায়ী ফ্লেমথ্রোয়ার। আগেও নাকি এমনভাবে তেলাপোকা মারার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু এবার ভাগ্য সহায় হয়নি। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ধরে যায় তাঁর ঘরের আসবাবে, তারপর তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো অ্যাপার্টমেন্টে।

দমকল বিভাগ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। তবে ততক্ষণে আগুনের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। আতঙ্কে বাসিন্দারা ছোটাছুটি শুরু করেন। ভবনের পঞ্চম তলায় থাকা এক চীনা দম্পতি প্রথমে জানালা খুলে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন। তাঁরা তাদের দুই মাস বয়সী শিশুটিকে পাশের ভবনের এক প্রতিবেশীর হাতে জানালা দিয়ে তুলে দিতে সক্ষম হন। এরপর নিজেরাও পালানোর চেষ্টা করেন।

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ধোঁয়ায় ভরে যাওয়ায় সিঁড়ি দিয়ে নামার পথ বন্ধ হয়ে যায়। তাই তাঁরা জানালা দিয়েই পাশের ভবনে যাওয়ার চেষ্টা করেন। স্বামী কোনোভাবে পাশের ভবনের দেয়াল ধরে উঠতে সক্ষম হলেও তাঁর স্ত্রী হাত ফসকে নিচে পড়ে যান। দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা যান ওই নারী।

মারা যাওয়া ওই নারী ছিলেন ৩০ বছর বয়সী চীনা নাগরিক। তিনি স্বামী ও নবজাতক শিশুসহ ওসান শহরের ওই ভবনে বসবাস করতেন। ওসান পুলিশ জানিয়েছে, আগুন লাগানোর ঘটনায় ২০ বছরের বেশি বয়সী ওই তরুণীর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তাঁর বিরুদ্ধে অসাবধানতাবশত আগুন লাগানো এবং তাতে মৃত্যুর কারণ হওয়ার অভিযোগ আনা হতে পারে।

আগুন লাগার পর ভবনের নিচতলায় থাকা দোকানগুলোতেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিচতলায় বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক দোকান এবং ওপরের তলাগুলোতে ৩২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। দমকলের সাতটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় নেয়। ততক্ষণে ভবনের ভেতরের অন্তত আটজন বাসিন্দা ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়।

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, ওই তরুণী লাইটার ও স্প্রে একসঙ্গে ব্যবহার করে তেলাপোকা মারার চেষ্টায় এই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে লাইটার, স্প্রে এবং দাহ্য পদার্থের বেশ কিছু অবশিষ্ট অংশ উদ্ধার করা হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ফ্লেমথ্রোয়ার’ বা আগুন নিক্ষেপ যন্ত্র দিয়ে তেলাপোকা মারার ভিডিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেকেই এই ভিডিও দেখে একইভাবে পোকামাকড় মারার চেষ্টা করছেন। অথচ এই কায়দায় একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায়ও এক ব্যক্তি কীটনাশক স্প্রে ও আগুনের মিশ্রণে বানানো ফ্লেমথ্রোয়ার দিয়ে তেলাপোকা মারতে গিয়ে নিজের রান্নাঘর জ্বালিয়ে ফেলেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসরায়েল থেকে ফেরত আসা ১৩৫ ফিলিস্তিনির মরদেহে অঙ্গচ্ছেদ-নির্যাতনের চিহ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৫৮
সরায়েলের কারাগারগুলোতে এমন অমানবিক অবস্থায় বিনা বিচারে বছরের পর বছর বন্দী করে রাখা হয় ফিলিস্তিনিদের। ছবি: সংগৃহীত
সরায়েলের কারাগারগুলোতে এমন অমানবিক অবস্থায় বিনা বিচারে বছরের পর বছর বন্দী করে রাখা হয় ফিলিস্তিনিদের। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল থেকে ফেরত আসা অন্তত ১৩৫ ফিলিস্তিনির মরদেহে ভয়াবহ নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মরদেহগুলো ইসরায়েলের একটি কুখ্যাত আটককেন্দ্র ‘স্‌দে তেইমান’-এ রাখা হয়েছিল। যেখানে আগে থেকেই বন্দীদের ওপর নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ জানান, প্রতিটি মরদেহের ব্যাগে থাকা নথিতে লেখা আছে যে এগুলো স্‌দে তেইমান ঘাঁটি থেকেই এসেছে। ওই ট্যাগগুলো হিব্রু ভাষায় লেখা এবং কিছু মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষা সেখানেই করা হয়েছিল।

নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত স্‌দে তেইমান আটককেন্দ্রের বিরুদ্ধে গত বছরও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, ফিলিস্তিনি বন্দীদের খাঁচায় আটকে রাখা, চোখ বেঁধে হাত-পা শৃঙ্খলিত করে রাখা ও হাসপাতালের খাটে বেঁধে রাখার মতো অমানবিক আচরণ করা হতো।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ফেরত পাওয়া মরদেহগুলো পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অনেকের চোখ বাঁধা, হাত পেছনে বাঁধা এবং শরীরে গুলির দাগ রয়েছে। কিছু মরদেহে ট্যাংকের চাকায় পিষ্ট হওয়ার চিহ্নও পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, এসব প্রমাণে স্পষ্ট যে ইসরায়েল বন্দীদের ওপর হত্যা ও নির্যাতন চালিয়েছে।

নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের পরিচালক আইয়াদ বারহুম বলেন, ‘মরদেহগুলোর নাম নেই, শুধু কোড নম্বর দেওয়া আছে। শনাক্তকরণের কাজ চলছে।’

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, তদন্তের মাধ্যমে বের করতে হবে মরদেহগুলোর কেউ আটক অবস্থায় নিহত হয়েছে কি না এবং হলে কতজন।

উত্তর গাজার বাসিন্দা মাহমুদ ইসমাইল শাবাতের মরদেহেও নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাঁর ভাই রামি জানান, মাথার পুরোনো অস্ত্রোপচারের দাগ দেখে ভাইয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন তিনি। রামি বলেন, ‘তাঁর হাত বাঁধা ছিল, শরীরে নির্যাতনের দাগ ছিল। এটা দেখা খুব কষ্টের।’

মাহমুদের মা বলেন, ‘বিশ্ব কোথায়? আমাদের সন্তানদের সবাইকে নির্যাতিত অবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত