Ajker Patrika

২ বছর ধরে চলমান যুদ্ধের মধ্যেও ৩০ হাজার প্রশাসনিক কর্মীর বেতন যেভাবে দিচ্ছে হামাস

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ২৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বিশ্ববাসীর কাছে হামাস হয়তো কেবল ‘একটি সশস্ত্র’ গোষ্ঠী। তবে, এটিই তাদের একমাত্র পরিচয় নয়। দুই দশক ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকা গাজার প্রশাসকের ভূমিকায় রয়েছে হামাস। ২০০৬ সালে নির্বাচনে ফাত্তাহকে পরাজিত করে গাজা উপত্যকার শাসন ক্ষমতা পায় হামাস। গাজাজুড়ে হামাস প্রশাসনের প্রায় ৩০ হাজার বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, যারা রুটি-রুজির জন্য হামাসের বেতনের ওপর নির্ভরশীল। গাজায় ইসরায়েল যে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তার মূল লক্ষ্যবস্তুই হামাস। যেকোনো মূল্যে হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে চায় নেতানিয়াহুর বাহিনী। দুবছর ধরে টানা আইডিএফের (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) হামলার টার্গেট হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত এই ৩০ হাজার কর্মীর বেতন দিয়ে যাচ্ছে হামাস। কিন্তু কীভাবে?

অর্থনৈতিক অবকাঠামোর এত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও হামাস কীভাবে তার কর্মীদের এতদিন ধরে বেতন দিয়ে আসছে তা এখনো পর্যন্ত এক প্রকার রহস্যই। হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ও হামাসের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালো জানাশোনা এমন এক ব্যক্তি বিবিসিকে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার আগেই ভূগর্ভস্থ টানেলে প্রায় ৭০ কোটি ডলার এবং আরও কয়েক কোটি শেকেল নগদ অর্থ মজুদ করে রেখেছিল গোষ্ঠীটি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি মাসে প্রায় ৭০ লাখ ডলার বেতন দেয় হামাস। এদিকে, ইসরায়েলি হামলায় গাজার ব্যাংকিং খাত পুরোপুরি বিধ্বস্ত। এমন পরিস্থিতিতে এত বিপুল অংকের অর্থ কীভাবে আদান-প্রদান হয় তা অনেকের কাছে রীতিমতো বিস্ময়।

হামাসের তিন কর্মী বিবিসিকে জানিয়েছে, কোনো উপায় না থাকায় বিপজ্জনক গোপন পন্থায় সশরীরে গিয়ে বেতন নিতে হয় তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই তিন কর্মী বিবিসিকে জানিয়েছেন, গত সপ্তাহেই তারা প্রত্যেকে ৩০০ ডলার করে বেতন পেয়েছেন।

হামাস প্রশাসনের কর্মীদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, সাধারণত নিজেদের কিংবার সঙ্গীর মোবাইল ফোনে একটি এনক্রিপ্টেড টেক্সট পান তারা। সেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় চায়ের আড্ডায় ডাকা হয়। উল্লিখিত সময়ে নির্দিষ্ট ওই স্থানে গেলে সাধারণত কোনো পুরুষ অথবা মাঝে মাঝে কোনো নারী এসে একটি সিল করা খাম হাতে ধরিয়ে দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে গায়েব হয়ে যায়। এই পুরো ঘটনাটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘটে। কারণ, ইসরায়েল প্রায়শই হামাসের বেতন প্রদানের এই গোপন জায়গাগুলোতে হামলা চালায়।

হামাসের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। বলেন, ‘যখনই বেতন আনতে যাই, স্ত্রী-সন্তানকে বিদায় জানিয়ে যাই। কারণ, জানি আমি আর নাও ফিরতে পারি। মাঝে মাঝে “স্যালারি ডিসট্রিবিউশন পয়েন্টে” হামলা চালায় ইসরায়েলিরা। একবার এমন একটি হামলা থেকে কোনোমতে বেঁচে ফিরেছি।’

তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্থের পরিমাণ কমছে। তারা জানান, গত সপ্তাহে তারা যে পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেছেন তা যুদ্ধের আগে তারা যে বেতন পেতেন তার মাত্র ২০ শতাংশ। এ ছাড়া, বেতনে পাওয়া বেশিরভাগ নোট থাকে পুরোনো, নইলে ছেঁড়া ফাটা, যে কারণে সেগুলো আর ব্যাবহারের উপযুক্ত থাকে না। লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতির প্রেক্ষাপটে এই ক্ষুদ্র ও ব্যাবহারের অনুপযুক্ত বেতন কর্মীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ সৃষ্টি করছে। এদিকে, এক কেজি আটার দাম পৌঁছেছে ৮০ ডলার পর্যন্ত, যা স্মরণকালের সর্বোচ্চ।

হামাসের এক কর্মচারী আলা(ছদ্মনাম)। তিনি হামাস সরকার পরিচালিত একটি স্কুলের শিক্ষক। পরিবারের ছয় সদস্য তাঁর আয়ের ওপরই নির্ভরশীল। বিবিসিকে তিনি জানান, গত সপ্তাহে তিনি ৩০০ ডলার বেতন পেয়েছেন। ফিলিস্তিনি মুদ্রায় ১ হাজার শেকেল। তিনি বলেন, ‘নোটগুলোর বেশির ভাগই ছেঁড়া ফাটা। দোকানদারেরা নিতে চান না। মাত্র ২০০ শেকেল ব্যবহারের উপযোগী ছিল। বাকি অর্থগুলো কী কাজে ব্যবহার করতে পারি আমার জানা নেই। প্রায় আড়াই মাস পর বেতন পেয়েছি। তাও এমন ছেঁড়া-ফাটা, পুরোনো নোট। বাধ্য হয়ে মরণঘাতী ওই ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে যেতে হয় আমার। মাঝে মাঝে একটা আটার বস্তা পাই, বেশিরভাগ সময়ই তাও পাই না।’

গত মার্চে হামাসের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রধান ইসমাইল বারহৌমকে হত্যার দাবি করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে চালানো এক হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন বলে দাবি আইডিএফের। তাঁর বিরুদ্ধে হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডের কাছে অর্থ পাঠানোর অভিযোগ তোলে তারা।

হামাসের আয় মূলত জনগণের দেওয়া শুল্ক ও কর। পাশাপাশি কাতার থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা পেয়ে এসেছে সংগঠনটি। হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডসেরও একটি পৃথক অর্থনৈতিক কাঠামো রয়েছে। কাসেম ব্রিগেডস মূলত ইরানের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ইসলামপন্থী সংগঠন, মিসরভিত্তিক মুসলিম ব্রাদারহুডের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাদের বাজেটের প্রায় ১০ শতাংশও হামাসকে বরাদ্দ দেওয়া হতো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত