Ajker Patrika

তীব্র শীতে গাজায় প্রাণ সংহারকারীর ভূমিকায় ‘বায়রন’, নিহত অন্তত ১৪

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গাজায় অস্থায়ী আশ্রয়ের সামনে জমে যাওয়া পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছে এক শিশু। ছবি: এএফপি
গাজায় অস্থায়ী আশ্রয়ের সামনে জমে যাওয়া পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছে এক শিশু। ছবি: এএফপি

যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজায় যুদ্ধবিরতির লংঘন ক্বরেই চলছে ইসরায়েল। প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি হামলায় অঞ্চলটিতে কেউ না কেউ নিহত হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রাণ সংহারকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ঝড় বায়রন। এরই মধ্যে বৃষ্টিপাত, জলাবদ্ধতা ও শীতে ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে শিশুসহ অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন।

গাজার অভ্যন্তরীণ ও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, ঝড় বাইরন গাজা উপত্যকায় আঘাত হেনেছে। এতে কমপক্ষে ১৪ জন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো আগে থেকেই বিপন্ন ছিল, তার ওপর দিয়ে এই ঝড় বয়ে গেল। তীব্র বাতাস, অবিরাম বৃষ্টি এবং ভেঙে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উত্তর গাজার বীর আন-নাজা এলাকায় বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকদের আশ্রয় দেওয়া একটি বাড়ি ঝড়ের কারণে ধসে পড়লে পাঁচজন মারা যান।

পরদিন বৃহস্পতিবার ভোরে গাজা সিটির রেমাল পাড়ায় দেয়াল ভেঙে তাঁবুর ওপর পড়লে আরও দুজন নিহত হন। এর আগের দিন শাতি শরণার্থী শিবিরে একটি স্থাপনা ধসের কারণে আরও একজন মারা যান, এবং আল-মাওয়াসিতে এক নবজাতক ঠান্ডায় জমে গিয়ে মারা যায়।

গাজার চিকিৎসা কর্মীরা ঠাণ্ডাজনিত কারণে মৃত্যুর হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধির খবর দিয়েছেন। আল-শিফা হাসপাতালের একটি সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, নয় বছর বয়সী হাদিল আল-মাসরি গাজা সিটির পশ্চিমে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে মারা গেছেন, অন্যদিকে শিশু তাইম আল-খাওয়াজা শাতি শিবিরে মারা গেছে।

খান ইউনিসে আট মাস বয়সী রাহাফ আবু জাজার মারা যায় তার পরিবারের তাঁবু বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হওয়ার পরে। আত্মীয়-স্বজনরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের নিজেদের বাড়ি ধ্বংস হওয়ার পর পরিবারটি ছাদহীন, বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়িতে আশ্রয় খুঁজছিল।

শিশুটির দাদা বলেন, ‘গতকাল আমরা তার মায়ের চিৎকার শুনে চমকে গেলাম। সে বলছিল, “আমার ছেলের শরীর নীল হয়ে গেছে!” তাই আমরা ছেলেটিকে নিয়ে আল-রান্তিসি হাসপাতালে গেলাম।’ তিনি বলেন, তীব্র ঠাণ্ডায তার সব অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তার মস্তিষ্ক খারাপ হতে শুরু করে এবং এটাই তার শেষ ছিল।’

আল জাজিরার ইব্রাহিম আল-খালিলি দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি থেকে জানান, ঝড় বায় রন দুর্বল আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে মারাত্মক ফাঁদে পরিণত করেছে।

তিনি বলেছেন, ‘কর্মকর্তারা সতর্ক করছেন যে বন্যা, ভারী বৃষ্টি এবং শিলাবৃষ্টি হতে পারে, যা আজও অব্যাহত থাকবে। এটি ৭৬১টি স্থানে আশ্রয় নেওয়া প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষকে হুমকির মুখে ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার মধ্যে বহু শিশু রয়েছে। এখানে, ভারী বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে তাঁবুগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, পরিবারগুলো তাদের অস্থায়ী আশ্রয়গুলো ধ্বংসের সম্মুখীন।’

উপকূলরেখার বড় অংশ ধসে পড়েছে, সমুদ্র থেকে কয়েক মিটার দূরে পাতা তাঁবুগুলোকে আরও বিপন্ন করছে। আল-খালিলি বলেন, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচতে স্থান থেকে স্থানান্তরে বাধ্য হওয়া পরিবারগুলো এখন ‘অতিরিক্ত চাপের’ মুখোমুখি।

তিনি বলেন, ‘তাঁবুগুলো ভেঙে পড়ছে; ঠান্ডা অসহনীয়। আসলে, তাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। যা ঘটছে তা বিপর্যয়কর।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি কেবল একটি ঝড় নয়; যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার পরেও এটি বাস্তুচ্যুতির এক নতুন ঢেউ। এখানকার অনেকেই আমাকে বলেছেন, এই বন্যার পরে সত্যিই নতুন যুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং মানুষ তাদের দুর্বল আশ্রয়গুলো ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...