Ajker Patrika

গাজার জন্য শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনের উদ্যোগ ফ্রান্সের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ৩৭
১৯৫৭ সালে গাজায় টহলরত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর দুই সদস্য। ছবি: জাতিসংঘের সৌজন্যে
১৯৫৭ সালে গাজায় টহলরত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর দুই সদস্য। ছবি: জাতিসংঘের সৌজন্যে

গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের (আইডিএফ) পরিবর্তে একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে ফ্রান্স। যুদ্ধ শেষে এই বাহিনী অঞ্চলটির দায়িত্ব নেবে এবং হামাসকে নিরস্ত্র করার কাজ করবে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল প্রাপ্ত খসড়া প্রস্তাবের বরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, এই বাহিনীকে জাতিসংঘ অনুমোদিত একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা মিশন হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যুদ্ধবিরতির পর তা গাজায় দায়িত্ব নেবে। এতে ধাপে ধাপে গাজার নিরাপত্তার দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবে মিসর, জর্ডান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারকে এ বাহিনীর নেতৃত্বের জন্য প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, পরিবেশ অনুকূল হলেই অল্প সময়ে জাতিসংঘ অনুমোদিত আঞ্চলিক নেতৃত্বাধীন একটি অস্থায়ী স্থিতিশীলতা মিশন মোতায়েনের বাস্তবসম্মত রূপরেখা এটি।

গত জুলাইয়ে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে প্রণীত নিউইয়র্ক ঘোষণায় এই ভিত্তি স্থাপন করা হয়। কাতার, মিসরসহ আরব দেশগুলো এ ঘোষণায় সমর্থন জানায়। চলতি মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তা প্রস্তাব আকারে গৃহীত হয়।

ঘোষণায় বলা হয়, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে ও জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী ‘একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা মিশন’ গঠনে দেশগুলো সমর্থন জানাচ্ছে। এতে আরও বলা হয়, এই মিশন পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। এর মূল লক্ষ্য হবে—ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণের সুরক্ষা দেওয়া, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ—পিএর কাছে ধাপে ধাপে নিরাপত্তার দায়িত্ব হস্তান্তর করা, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ও তার নিরাপত্তা বাহিনীকে সক্ষম করে তোলা এবং ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করা।

ফরাসি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন বা বিশেষ রাজনৈতিক মিশনের আকারে হতে পারে। এতে বৈধতা ও নিরপেক্ষতা থাকবে। তবে একটি ছোট আকারের অ্যাডহক বহুজাতিক বাহিনী দ্রুত মোতায়েন সম্ভব হবে এবং তা স্থল পরিস্থিতি বিবেচনায় সহজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

অর্থায়ন হবে উপসাগরীয় দেশগুলোর মতো স্বেচ্ছা দাতাদের কাছ থেকে। জাতিসংঘের বাধ্যতামূলক চাঁদা থেকে নয়। প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেও এ মিশন পাঠানো যেতে পারে। তবে যুদ্ধবিরতি আগে নিশ্চিত করা হলে সেটি ‘সবচেয়ে কার্যকর’ হবে।

খসড়ায় দুই ধাপের মোতায়েন পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ, ফিলিস্তিনি জনগণের সুরক্ষা, ধীরে ধীরে হামাসকে নিরস্ত্র করা ও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ হবে। দ্বিতীয় ধাপে বাহিনী দীর্ঘ মেয়াদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এ জন্য কসোভো ও পূর্ব তিমুরে জাতিসংঘের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হবে।

এ বাহিনী ফিলিস্তিনে নির্বাচন আয়োজন ও গাজার পুনর্গঠনেও সহায়তা করবে। শুরুতে এটি শুধু গাজায় মোতায়েন হবে। তবে খসড়ায় সতর্ক করা হয়েছে, দীর্ঘ মেয়াদে শুধু গাজায় সীমিত থাকলে পশ্চিম তীর ও গাজার মধ্যে স্থায়ী বিভাজন তৈরি হতে পারে।

খসড়ায় ইসরায়েল প্রসঙ্গ মাত্র একবার এসেছে। পিএর ভূমিকার ঘোর বিরোধী ইসরায়েল এ পরিকল্পনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ ছাড়া কাতারের সম্পৃক্ততা নিয়েও ইসরায়েলের আপত্তি থাকতে পারে। এখানে সরাসরি হামাসকে নিরস্ত্র করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এটি সম্প্রতি টনি ব্লেয়ারের পরিকল্পনার তুলনায় বেশি স্পষ্ট। ব্লেয়ার মূলত গাজায় অন্তর্বর্তীকালীন শাসনকাঠামো গঠনের কথা বলেছিলেন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া ফরাসি প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সিবিএসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে তিনি এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছেন।

মাখোঁ বলেন, আরব দেশগুলোকে যুক্ত করতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি ছিল। তিনি জানান, ফরাসি পরিকল্পনায় ‘ইসরায়েলের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি সেনাদের যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়টি থাকবে’। তিনি বলেন, এতে জর্ডান ও মিসর সরাসরি যুক্ত থাকবে। অন্যরা অর্থায়নে প্রস্তুত। আর অবশ্যই এটি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে করা হবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, পরিকল্পনার মূল বিষয় হলো হামাসকে ভেঙে দেওয়া। তিনি আরও বলেন, সমস্যার সমাধান একটাই—হামাসকে নিরস্ত্র করা, তাদের যোদ্ধাদের কার্যক্রম বন্ধ করা এবং ডিডিআর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া। নিশ্চিত করতে হবে, হামাস আর কখনো সরকারে থাকবে না। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে গাজা ছাড়তে হবে আর কিছুজনকে চরমপন্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

মাখোঁর ভাষায়, এটি করতে হলে আন্তর্জাতিক বাহিনী সেখানে থাকতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত