Ajker Patrika

গাজায় দুর্ভিক্ষে হাড্ডিসার ইসরায়েলি জিম্মিরাও, ভিডিও প্রকাশ হতেই পশ্চিমে হইচই

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৫৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি দুই জিম্মির ভিডিও প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গাজার দুর্ভিক্ষের চিত্র স্পষ্ট ওই ভিডিও দুটিতে। দিনের পর দিন না খেতে পেয়ে হাড়-জিরজিরে হয়ে পড়েছে জিম্মিদের শরীর। হাঁটাচলা, এমনকি উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তিও নেই তাঁদের। গত বৃহস্পতিবার এই ভিডিওগুলো প্রকাশের পর থেকেই এ নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। অনাহারে হাড্ডিসার হয়ে গাজার দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু যাদের নাড়াতে পারেনি, এই দুই ইসরায়েলির জীর্ণ শরীর দেখে যেন রীতিমতো আঁতকে উঠেছেন তাঁরা। একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ, শোকস্তব্ধ আর ক্রুদ্ধ বিশ্ব মোড়ল পশ্চিমা নেতারা। একের পর এক বিবৃতি দিয়ে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন তাঁরা। তবে, ঠিক কার ওপর কেন ক্ষুব্ধ তাঁরা, তা নিশ্চিত হতে পারছেন না অনেকেই।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জিম্মিদের ভিডিও প্রকাশকে ‘বীভৎস’ আখ্যা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। তাঁর ভাষ্য—প্রচারণার জন্য জিম্মিদের ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস, যা অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়। অবিলম্বে বিনা শর্তে জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে। ভিডিওগুলো দেখে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিক মের্ৎস। তিনি বলেন, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য ‘জিম্মি মুক্তি’ হতে হবে প্রধান শর্ত। যদিও হামাস কখনো জিম্মিদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায়নি, তারপরও তিনি কেন এ কথা বললেন তা পরিষ্কার নয়।

এদিকে, এই ভিডিও প্রকাশকে হামাসের চরম নিষ্ঠুরতার উদাহরণ বলে নিন্দা জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। এ সময় তিনি আরও বলেন, সব জিম্মির মুক্তি, যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা এবং গাজার বেসামরিক মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্যারিস। এ সময় তিনি সংকট নিরসনে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ওপর আবারও জোর দেন।

উল্লেখ্য, হামাস প্রকাশিত ওই ভিডিওতে ব্রাসলাভস্কি ও ডেভিড নামে দুই জিম্মিকে দেখা যায়। তাঁদের দুজনেরই বয়স ২০-এর কোঠায়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল থেকে তাঁদের জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। প্রকাশিত ভিডিওর প্রথমটিতে দেখা যায়, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাঁদছে ব্রাসলাভস্কি। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমাদের খাবার ও পানি শেষ হয়ে গেছে। আজ আমি শুধু তিনটি ফালাফেল (ছোলা বা ডাবরির চপ) খেয়েছি। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে আছি। উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তিও নেই আমার।’

অন্য ভিডিওটিতে দেখা যায়, ডেভিড মাটি খুঁড়ছে। জানান, এটি তাঁর কবর হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি কয়েক দিন ধরে অভুক্ত। সামান্য পানি পেয়েছিলাম, তা-ও উল্লেখ করার মতো নয়।’

ভিডিও দুটি প্রকাশের পর থেকে বিক্ষোভে উত্তাল ইসরায়েল। আর ধৈর্য ধরতে পারছেন না জিম্মিদের স্বজনেরা। এমন পরিস্থিতে চাপের মুখে জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা ‘অবিরাম ও নিরলসভাবে’ চলতে থাকবে বলে তাদের আশ্বস্ত করেন তিনি। গতকাল রোববার, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রসের গাজা শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করেন নেতানিয়াহু। জিম্মিদের কাছে অবিলম্বে খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে তাদের কাছে অনুরোধ করেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে গতকাল এক পোস্টে নেতানিয়াহু লিখেছেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি অব দ্য রেড ক্রসের (আইসিআরসি) প্রধান জুলিয়ান লারসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। জিম্মিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা ও খাদ্যসহায়তা দিতে সংস্থাটিকে অনুরোধ করা হয়েছে।’ ওই পোস্টে তিনি আরও লিখেন, ‘হামাস গাজায় অনাহার-দুর্ভিক্ষ নিয়ে মিথ্যাচার করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেখানে ইসরায়লিদেরই অভুক্ত রাখা হচ্ছে, পরিকল্পিতভাবে অনাহার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

রেড ক্রস জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর এই অনুরোধে সাড়া দিয়েছে তারা। হামাসকে তারা আহ্বান জানিয়েছে, যেন রেড ক্রসকে জিম্মিদের কাছে পৌঁছাতে দেওয়া হয়। এ সময় তারা আরও জানায়, প্রকাশিত ওই দুই ভিডিও দেখে তারা মর্মাহত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তারা লিখেছে, ‘প্রকাশিত ভিডিওগুলো বিভীষিকাময়। গাজায় জিম্মিরা কী অবস্থায় রয়েছে—এগুলো তার প্রমাণ। জিম্মিদের পরিবার এসব ভিডিও দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।’

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গাজায় তিন মাস ধরে চরম দুর্ভিক্ষের পর ওই দুই ইসরায়েলির ভিডিও দেখে হঠাৎ পুরো বিশ্বের এমন টনক নড়া দেখে গতকাল অবশেষে মুখ খুলেছে হামাস। গতকাল গোষ্ঠীটির সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবেইদা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, হামাস যোদ্ধা এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকেরা যা খায়, জিম্মিরাও তা-ই খায়। রেড ক্রসের আহ্বানকে স্বাগত জানালেও তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘গাজার সব মানুষ যেমন আছে জিম্মিরা তেমনই থাকবে। কোনো বিশেষ সুবিধা তাদের দেওয়া হবে না।’ তিনি বলেন, ‘জিম্মিদের সহায়তা পৌঁছাতে হলে গাজা উপত্যকার সব এলাকায় আমাদের জনগণের জন্য খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছাতে মানবিক করিডরগুলোকে স্বাভাবিক ও স্থায়ীভাবে খোলা রাখতে হবে। ত্রাণ সংগ্রহের সময় সব ধরনের হামলা বন্ধ রাখতে হবে।

জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে গাজায় অন্তত ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৯৩ জনই শিশু।

জাতিসংঘ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা এবং ইসরায়েলের কয়েকজন মিত্র এই দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েলি অবরোধ ও মানবিক সহায়তা প্রবেশে আরোপিত বিধিনিষেধকে দায়ী করেছে। তবে ইসরায়েল এই অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করে বলেছে, সংকটের জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী ‘কেবল হামাস’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা: কে এই ফ্লাইট এক্সপার্ট এমডি সালমান, বাবার হাত ধরে যাঁর উত্থান

আ.লীগের এমপি শাম্মীর বাসায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি ও ভাগ-বাঁটোয়ারার বিবরণ দিলেন রিয়াদ

কিশোরগঞ্জে হর্টিকালচারের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ‘সমকামিতার’ অভিযোগ, মামলা বাবুর্চির

অতিরিক্ত ফি দাবি করায় বিমানবন্দর স্টাফের চোয়াল ভেঙে দিলেন যাত্রী

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত