অনলাইন ডেস্ক
ইথিওপিয়ার কৃষ্ণাঙ্গ ইহুদিদের ব্যাপারে ইসরায়েলি সরকার বরাবরই বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে। এমনকি কিছু ইহুদি রাব্বি মনে করেন, ইথিওপিয়ার লোকেরা প্রকৃত ইহুদি নয়। এমনকি ইথিওপিয়ার ইহুদিদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের গোপন ব্যবস্থাও নিয়েছিল ইসরায়েলি সরকার।
এক দশক আগে সম্মতি ছাড়াই অভিবাসী ইথিওপীয় নারীদের গর্ভনিরোধক ইনজেকশন প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছিল ইসরায়েল সরকারের বিরুদ্ধে। অভিবাসন আটকে যাবে—এমন ভয় দেখিয়ে ইনজেকশনটি সম্পর্কে কোনো তথ্য না দিয়েই তাঁদের সেটি গ্রহণে বাধ্য করা হয়। ব্যাপক বিতর্কের মুখে অভিযোগটি তদন্ত শুরু করে ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে ২০১৩ সালে সব অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বাধ্য হয়ে ইসরায়েলের তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ইয়োকোভ লিৎজম্যানের নেতৃত্বে তদন্তের ঘোষণা দেওয়া হয়। যদিও আগে এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিল ইসরায়েলি সরকার।
বিষয়টি প্রথম সামনে আসে ২০১২ সালে। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, এক দশকে ইসরায়েলে বসবাসরত ইথিওপীয় নারীদের মধ্যে জন্মহার অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার ইথিওপীয় নারীকে তিন মাস অন্ত ‘ডিপো-প্রোভেরা’ নামের একটি ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে ইসরায়েলি ক্লিনিকগুলোতে। যেটি মূলত একটি গর্ভনিরোধক ইনজেকশন। দীর্ঘদিন এটি গ্রহণের ফলে নারীদের পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। ঝুঁকি তৈরি হয় বন্ধ্যত্ব এবং অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগের।
২০১২ সালে এ নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র সম্প্রচারিত হয়। যাতে দেখানো হয়, ইথিওপিয়ার ট্রানজিট ক্যাম্পগুলোতেই নারীদের এই গর্ভনিরোধক ইনজেকশন দেওয়া শুরু হয়। তবে, এটি আসলে কী ইনজেকশন, এর ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানানো হয়নি কাউকেই। পরবর্তীতে তাঁরা ইসরায়েলে পৌঁছানোর পরও, চলতে থাকে এই ‘‘চিকিৎসা’। তবে এই নীতির সূচনা কে বা কারা করেছিল সেটি প্রামাণ্যচিত্রে স্পষ্ট করা হয়নি। কারণ ইসরায়েল এবং ইথিওপিয়া—কেউই এর দায় স্বীকার করতে রাজি হয়নি।
প্রামাণ্যচিত্রটির জন্য ইসরায়েলে বসবাসরত ৩৫ জন নারীর সাক্ষাৎকার নেন সাবা রিউবেন নামের এক নারী। সাবা নিজেও ইথিওপীয় অভিবাসী। তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে ইসরায়েলে বসবাস করছেন। তিনি জানান, তিনি যখন সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তখনো ২৫ জন নারী গর্ভনিরোধক ইনজেকশন নিচ্ছিলেন।
ওই ২৫ জনের একজন রিউবেনকে বলেন, তিনি এত দিন জানতেন তাঁকে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছিল। আরেক নারী রিউবেনকে জানান, যখন ট্রানজিট ক্যাম্পে পৌঁছান তখন তিনি গর্ভবর্তী ছিলেন। কিন্তু ক্যাম্পে পৌঁছানোর পর সব গর্ভবর্তী নারীকে জড়ো করে জানানো হয় যে তাঁদের ডিপো প্রোভেরা দেওয়া হবে, কারণ ইসরায়েলে গিয়ে সন্তান জন্ম দেওয়া তাঁদের জন্য ‘খুবই কঠিন’ হবে।
তাঁরা ইনজেকশনটি নিতে রাজি হয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, ‘না, আমরা নিতে চাইনি। আমরা বলেছিলাম, আমরা এটা চাই না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজি হতে হয়। কারণ আমাদের বলা হয়েছিল, যদি ইনজেকশন না নিই, তাহলে ইসরায়েলে অভিবাসন আটকে যাবে এবং ক্যাম্পে আর কোনো স্বাস্থ্যসেবা পাব না।’ রিউবেন জানান, শুধু ওই নারী নন, অসংখ্য নারী এমন ঘটনার শিকার।
ইথিওপীয়দের অভিযোগ—ইসরায়েলের ইথিওপীয় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যেই এমন ঘৃণ্য পদক্ষেপ নেয় ইসরায়েল। তবে, ওই সময় এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে ইসরায়েল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডিপো প্রোভেরা ইনজেকশনের ব্যবহার সব সময় নিরুৎসাহিত করে। যদি ইসরায়েলের কোথাও এ ঘটনা ঘটে থাকে, তবে তা আমাদের অবস্থানের পরিপন্থী।’
তবে, রিউবেন বলছেন, তাঁর কাছে ইথিওপিয়ার এক ক্লিনিককে লেখা ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি আছে। ওই চিঠিতে বিপুলসংখ্যক নারীকে ডিপো-প্রোভেরা প্রয়োগের জন্য ওই ক্লিনিকের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের ধন্যবাদ দিয়েছে ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চিঠিটি ২০০ সালে লেখা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
রিউবেন ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, ইথিওপীয় নারীরা নাকি স্বেচ্ছায় এই ইনজেকশন নিচ্ছে। তবে, এটা সত্যি নয়। কারণ, ইথিওপিয়ায় বহু সন্তান থাকাকে সম্মানের মনে করা হয়। অনেক সন্তান থাকার অর্থ তিনি খুব ধনী।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি ইসরায়েলের একটি পরিকল্পিত নীতি। বেছে বেছে নতুন আসা ইথিওপীয় অভিবাসীদের লক্ষ্যবস্তু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কারণ তারা ভালো করে হিব্রু জানে না, কর্তৃপক্ষকে অন্ধভাবে মান্য করে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এমন ঘৃণ্য কাজ করছে তারা।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন শুধু ইথিওপীয় নারীদেরই ইসরায়েলে ডিপো-প্রোভেরা দেওয়া হচ্ছে?
জেরুজালেমের হাদাসা মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ড. মুশিরা আবুদিয়া ওই সময় গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি যেসব ইথিওপীয় নারীর সঙ্গে দেখা করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই ডিপো-প্রোভেরা ইনজেকশন নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি এমন এক নীতি, যার কথা কেউ স্বীকার করে না। ইসরায়েলে কেউ এই চিকিৎসার দায়িত্ব নিচ্ছে না, কিন্তু কেউ না কেউ তো অবশ্যই এটি শুরু করেছে। আর যেহেতু এই নারীরা দেশ ছাড়ার প্রস্তুতিতে ছিল, ইথিওপিয়ার স্বার্থে তাদের এই চিকিৎসা দেওয়া যুক্তিসংগত নয়।’
গত এক দশকে ইসরায়েলে গেছেন ৫০ হাজারেরও বেশি ইথিওপীয় নারী। তবে, ইসরায়েলে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে তাঁদের। এর আগে ১৯৯৬ ইথিওপীয়দের দান করা সব রক্ত ধ্বংস করে ফেলেছিল ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। অজুহাত দিয়েছিল—এসব রক্তে মরণব্যাধি এইডসের ভাইরাস ‘এইচআইভি’ থাকতে পারে। এই ঘটনার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল হাজার হাজার ইথিওপীয় অভিবাসী।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিনের নির্দেশে, ১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকে ইসরায়েলের মোসাদ গোয়েন্দা সংস্থা বেশ কয়েকটি গোপন অভিযানের মাধ্যমে সুদানের শরণার্থীশিবির থেকে প্রথম ইথিওপীয় ইহুদিদের ইসরায়েলে নিয়ে আসে।
এরপর আরও কয়েকটি অভিযান চলে এবং ১৯৯১ সালে ইথিওপিয়া থেকে আকাশপথে স্থানান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে।
শুরু থেকেই ইসরায়েলে ইথিওপীয় ইহুদিদের একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়াটি ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। ইথিওপীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের হার অনেক বেশি এবং তারা বৈষম্যের শিকারও হন। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
এই বৈষম্যের পেছনে শুধু গায়ের রংই নয়, ধর্মীয় গোঁড়ামিও ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে ইহুদি ধর্মীয় নেতারা নিজেদের মধ্যে এক ধরনের বর্ণবাদ জারি রেখেছেন। হাসিদিক, আশকেনাজি এবং সেফারদিক—এই শব্দগুলো ইহুদি পরিচয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।
হাসিদিক বলতে বোঝায় পূর্ব ইউরোপ থেকে উদ্ভূত একটি সুনির্দিষ্ট, কট্টর-অর্থোডক্স ইহুদি আন্দোলনের অনুসারী। অন্যদিকে, আশকেনাজি মূলত মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের এবং সেফারদিরা স্পেন, পর্তুগাল, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বংশোদ্ভূত।
ইসরায়েলের আশকেনাজি ইহুদি রাব্বিরা নিজেদের অভিজাত ও খাঁটি রক্তের ইহুদি বলে দাবি করেন। তাঁরা বাকিদের তাঁদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত নিচু বর্ণের ইহুদি বলে মনে করেন। এমনকি বিশেষ করে আরব ও আফ্রিকার ইহুদিদের তাঁরা প্রকৃত ইহুদি বলে মনে করেন না।
ইথিওপিয়ার কৃষ্ণাঙ্গ ইহুদিদের ব্যাপারে ইসরায়েলি সরকার বরাবরই বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে। এমনকি কিছু ইহুদি রাব্বি মনে করেন, ইথিওপিয়ার লোকেরা প্রকৃত ইহুদি নয়। এমনকি ইথিওপিয়ার ইহুদিদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের গোপন ব্যবস্থাও নিয়েছিল ইসরায়েলি সরকার।
এক দশক আগে সম্মতি ছাড়াই অভিবাসী ইথিওপীয় নারীদের গর্ভনিরোধক ইনজেকশন প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছিল ইসরায়েল সরকারের বিরুদ্ধে। অভিবাসন আটকে যাবে—এমন ভয় দেখিয়ে ইনজেকশনটি সম্পর্কে কোনো তথ্য না দিয়েই তাঁদের সেটি গ্রহণে বাধ্য করা হয়। ব্যাপক বিতর্কের মুখে অভিযোগটি তদন্ত শুরু করে ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে ২০১৩ সালে সব অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বাধ্য হয়ে ইসরায়েলের তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ইয়োকোভ লিৎজম্যানের নেতৃত্বে তদন্তের ঘোষণা দেওয়া হয়। যদিও আগে এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিল ইসরায়েলি সরকার।
বিষয়টি প্রথম সামনে আসে ২০১২ সালে। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, এক দশকে ইসরায়েলে বসবাসরত ইথিওপীয় নারীদের মধ্যে জন্মহার অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার ইথিওপীয় নারীকে তিন মাস অন্ত ‘ডিপো-প্রোভেরা’ নামের একটি ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে ইসরায়েলি ক্লিনিকগুলোতে। যেটি মূলত একটি গর্ভনিরোধক ইনজেকশন। দীর্ঘদিন এটি গ্রহণের ফলে নারীদের পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। ঝুঁকি তৈরি হয় বন্ধ্যত্ব এবং অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগের।
২০১২ সালে এ নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র সম্প্রচারিত হয়। যাতে দেখানো হয়, ইথিওপিয়ার ট্রানজিট ক্যাম্পগুলোতেই নারীদের এই গর্ভনিরোধক ইনজেকশন দেওয়া শুরু হয়। তবে, এটি আসলে কী ইনজেকশন, এর ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানানো হয়নি কাউকেই। পরবর্তীতে তাঁরা ইসরায়েলে পৌঁছানোর পরও, চলতে থাকে এই ‘‘চিকিৎসা’। তবে এই নীতির সূচনা কে বা কারা করেছিল সেটি প্রামাণ্যচিত্রে স্পষ্ট করা হয়নি। কারণ ইসরায়েল এবং ইথিওপিয়া—কেউই এর দায় স্বীকার করতে রাজি হয়নি।
প্রামাণ্যচিত্রটির জন্য ইসরায়েলে বসবাসরত ৩৫ জন নারীর সাক্ষাৎকার নেন সাবা রিউবেন নামের এক নারী। সাবা নিজেও ইথিওপীয় অভিবাসী। তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে ইসরায়েলে বসবাস করছেন। তিনি জানান, তিনি যখন সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তখনো ২৫ জন নারী গর্ভনিরোধক ইনজেকশন নিচ্ছিলেন।
ওই ২৫ জনের একজন রিউবেনকে বলেন, তিনি এত দিন জানতেন তাঁকে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছিল। আরেক নারী রিউবেনকে জানান, যখন ট্রানজিট ক্যাম্পে পৌঁছান তখন তিনি গর্ভবর্তী ছিলেন। কিন্তু ক্যাম্পে পৌঁছানোর পর সব গর্ভবর্তী নারীকে জড়ো করে জানানো হয় যে তাঁদের ডিপো প্রোভেরা দেওয়া হবে, কারণ ইসরায়েলে গিয়ে সন্তান জন্ম দেওয়া তাঁদের জন্য ‘খুবই কঠিন’ হবে।
তাঁরা ইনজেকশনটি নিতে রাজি হয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, ‘না, আমরা নিতে চাইনি। আমরা বলেছিলাম, আমরা এটা চাই না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজি হতে হয়। কারণ আমাদের বলা হয়েছিল, যদি ইনজেকশন না নিই, তাহলে ইসরায়েলে অভিবাসন আটকে যাবে এবং ক্যাম্পে আর কোনো স্বাস্থ্যসেবা পাব না।’ রিউবেন জানান, শুধু ওই নারী নন, অসংখ্য নারী এমন ঘটনার শিকার।
ইথিওপীয়দের অভিযোগ—ইসরায়েলের ইথিওপীয় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যেই এমন ঘৃণ্য পদক্ষেপ নেয় ইসরায়েল। তবে, ওই সময় এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে ইসরায়েল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডিপো প্রোভেরা ইনজেকশনের ব্যবহার সব সময় নিরুৎসাহিত করে। যদি ইসরায়েলের কোথাও এ ঘটনা ঘটে থাকে, তবে তা আমাদের অবস্থানের পরিপন্থী।’
তবে, রিউবেন বলছেন, তাঁর কাছে ইথিওপিয়ার এক ক্লিনিককে লেখা ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি আছে। ওই চিঠিতে বিপুলসংখ্যক নারীকে ডিপো-প্রোভেরা প্রয়োগের জন্য ওই ক্লিনিকের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের ধন্যবাদ দিয়েছে ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চিঠিটি ২০০ সালে লেখা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
রিউবেন ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, ইথিওপীয় নারীরা নাকি স্বেচ্ছায় এই ইনজেকশন নিচ্ছে। তবে, এটা সত্যি নয়। কারণ, ইথিওপিয়ায় বহু সন্তান থাকাকে সম্মানের মনে করা হয়। অনেক সন্তান থাকার অর্থ তিনি খুব ধনী।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি ইসরায়েলের একটি পরিকল্পিত নীতি। বেছে বেছে নতুন আসা ইথিওপীয় অভিবাসীদের লক্ষ্যবস্তু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কারণ তারা ভালো করে হিব্রু জানে না, কর্তৃপক্ষকে অন্ধভাবে মান্য করে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এমন ঘৃণ্য কাজ করছে তারা।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন শুধু ইথিওপীয় নারীদেরই ইসরায়েলে ডিপো-প্রোভেরা দেওয়া হচ্ছে?
জেরুজালেমের হাদাসা মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ড. মুশিরা আবুদিয়া ওই সময় গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি যেসব ইথিওপীয় নারীর সঙ্গে দেখা করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই ডিপো-প্রোভেরা ইনজেকশন নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি এমন এক নীতি, যার কথা কেউ স্বীকার করে না। ইসরায়েলে কেউ এই চিকিৎসার দায়িত্ব নিচ্ছে না, কিন্তু কেউ না কেউ তো অবশ্যই এটি শুরু করেছে। আর যেহেতু এই নারীরা দেশ ছাড়ার প্রস্তুতিতে ছিল, ইথিওপিয়ার স্বার্থে তাদের এই চিকিৎসা দেওয়া যুক্তিসংগত নয়।’
গত এক দশকে ইসরায়েলে গেছেন ৫০ হাজারেরও বেশি ইথিওপীয় নারী। তবে, ইসরায়েলে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে তাঁদের। এর আগে ১৯৯৬ ইথিওপীয়দের দান করা সব রক্ত ধ্বংস করে ফেলেছিল ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। অজুহাত দিয়েছিল—এসব রক্তে মরণব্যাধি এইডসের ভাইরাস ‘এইচআইভি’ থাকতে পারে। এই ঘটনার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল হাজার হাজার ইথিওপীয় অভিবাসী।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিনের নির্দেশে, ১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকে ইসরায়েলের মোসাদ গোয়েন্দা সংস্থা বেশ কয়েকটি গোপন অভিযানের মাধ্যমে সুদানের শরণার্থীশিবির থেকে প্রথম ইথিওপীয় ইহুদিদের ইসরায়েলে নিয়ে আসে।
এরপর আরও কয়েকটি অভিযান চলে এবং ১৯৯১ সালে ইথিওপিয়া থেকে আকাশপথে স্থানান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে।
শুরু থেকেই ইসরায়েলে ইথিওপীয় ইহুদিদের একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়াটি ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। ইথিওপীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের হার অনেক বেশি এবং তারা বৈষম্যের শিকারও হন। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
এই বৈষম্যের পেছনে শুধু গায়ের রংই নয়, ধর্মীয় গোঁড়ামিও ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে ইহুদি ধর্মীয় নেতারা নিজেদের মধ্যে এক ধরনের বর্ণবাদ জারি রেখেছেন। হাসিদিক, আশকেনাজি এবং সেফারদিক—এই শব্দগুলো ইহুদি পরিচয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।
হাসিদিক বলতে বোঝায় পূর্ব ইউরোপ থেকে উদ্ভূত একটি সুনির্দিষ্ট, কট্টর-অর্থোডক্স ইহুদি আন্দোলনের অনুসারী। অন্যদিকে, আশকেনাজি মূলত মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের এবং সেফারদিরা স্পেন, পর্তুগাল, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বংশোদ্ভূত।
ইসরায়েলের আশকেনাজি ইহুদি রাব্বিরা নিজেদের অভিজাত ও খাঁটি রক্তের ইহুদি বলে দাবি করেন। তাঁরা বাকিদের তাঁদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত নিচু বর্ণের ইহুদি বলে মনে করেন। এমনকি বিশেষ করে আরব ও আফ্রিকার ইহুদিদের তাঁরা প্রকৃত ইহুদি বলে মনে করেন না।
ক্যানসারের সঙ্গে লড়ে ছেলে মারা গেছে পাঁচ মাস আগে। কিন্তু এক মায়ের বিশ্বাস, এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি। বংশ রক্ষায় তিনি মৃত ছেলের শুক্রাণু চেয়ে আবেদন করেন আদালতে। মায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রাণু ফার্টিলিটি সেন্টারে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
১ সেকেন্ড আগেঢাকার খিলক্ষেতে একটি ‘মন্দির’ উচ্ছেদের ঘটনায় ভারত নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এ উদ্বেগ জানান। তিনি বিষয়টিকে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের ধারাবাহিকতা আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালনের প্রশ্ন তুলেছেন।
১৬ মিনিট আগেভারতের দক্ষিণ কলকাতার সরকারি ল কলেজ ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে (২৪) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে শহরজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
৩২ মিনিট আগেজাপানে ‘টুইটার কিলার’ নামে পরিচিত সিরিয়াল কিলার তাকাহিরো শিরাইশির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও আত্মহত্যাপ্রবণ তরুণ-তরুণীদের সহানুভূতির নামে ফাঁদে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করতেন তিনি। ২০২২ সালের পর এটাই জাপানে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা।
৪০ মিনিট আগে