Ajker Patrika

ইসরায়েলি আগ্রাসনে অনাহারে গাজার ১৫ হাজার গর্ভবতী নারী

আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ২১
একটি আশ্রয়শিবিরে গাজার এক গর্ভবতী নারী। ছবি: এএফপি
একটি আশ্রয়শিবিরে গাজার এক গর্ভবতী নারী। ছবি: এএফপি

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) সতর্ক করেছে যে, গাজার ১৫ হাজার গর্ভবতী নারী ইসরায়েলি বিমান হামলার কারণে অনাহারের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া ভারী বর্ষণ ও সীমিত মানবিক সহায়তার কারণে গৃহহারা মানুষের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কাতারের সংবাদমাধ্যম গালফ টাইমসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউএনআরডব্লিউএ তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা এক পোস্টে জানিয়েছে, গাজায় প্রায় ৫০ হাজার গর্ভবতী নারী রয়েছেন। ডিসেম্বর মাসেই ৪ হাজারেরও বেশি সন্তান জন্ম নেবে। এর মধ্যে ১৫ হাজার নারী তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছেন।

চলতি মাসের শুরুতে জাতিসংঘের সহায়তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছিল যে, উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন। তীব্র বোমা হামলা ও সংঘর্ষের কারণে খাদ্যসহায়তা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ইউএনআরডব্লিউএ আরও জানায়, ২০২৪ সাল মানবিক সহায়তাকারী কর্মীদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর। বিশ্বজুড়ে ২৮১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ কর্মী।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, গাজায়, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে ওষুধ, খাদ্য, জ্বালানি ও আশ্রয়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ডব্লিউএইচও ইসরায়েলকে আরও মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং ত্রাণ কার্যক্রম সহজ করার আহ্বান জানিয়েছে। ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ড. তেদরোস আধানম ঘেব্রেইসাস গতকাল শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গৃহহারা প্রায় সবাই সরকারি ভবন বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এখন ৯০ শতাংশ মানুষ তাঁবুতে বসবাস করছে।

তেদরোস আধানম ঘেব্রেইসাস বলেন, ‘এই পরিস্থিতি তাদের শ্বাসযন্ত্রের রোগসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে ফেলছে। বিশেষ করে শীতকাল, বৃষ্টি এবং সম্ভাব্য বন্যার কারণে খাদ্যসংকট ও অপুষ্টির অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।’ তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, উত্তর গাজার পরিস্থিতি খুবই সংকটময়। সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী অক্টোবরে বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে।

ইসরায়েল গাজার বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ৪১৯তম দিনের মতো গণহত্যা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ ও গুলিবর্ষণ চলছে। গৃহহারা মানুষ এবং নিরীহ নাগরিকেরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। উত্তর গাজা ৫৩ দিন ধরে অবরুদ্ধ। সেখানে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর কেন্দ্রীয় এবং উত্তর গাজা উপত্যকায় অভিযান চলাকালে ১২ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা (ওয়াফা) জানায়, গাজার দক্ষিণ-পশ্চিমের তেল আল-হাওয়া এলাকার শিল্পাঞ্চলসংলগ্ন স্থানে দখলদার বাহিনীর বোমা হামলায় তিনজন শহীদ এবং কয়েকজন আহত হয়েছে। গাজা শহরের আল-ওয়াহদা স্ট্রিটে দখলদার বাহিনীর হামলায় আরও তিনজন শহীদ এবং পাঁচজন আহত হয়েছে।

আল-নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরের পশ্চিমে আল-দাহদুহ পরিবারের একটি বাড়িতে বোমা হামলায় পাঁচজন ফিলিস্তিনি শহীদ হন। দেইর আল-বালাহের পশ্চিমে একটি সমুদ্রতীরবর্তী রিসোর্টে দখলদার বাহিনীর বিমান হামলায় আটজন আহত হন।

আল-নুসেইরাতের আল-আওদা হাসপাতাল জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে দখলদার বাহিনীর হামলায় শিবিরের বিভিন্ন বাড়ি ধ্বংস এবং সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ফলে ৩১ জনের মৃতদেহ এবং ১২৭ জন আহত ব্যক্তি হাসপাতালে পৌঁছেছে। উত্তর গাজায় বাইত লাহিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান ইসরায়েলি ড্রোনের হামলায় হাসপাতালের আঙিনায় শহীদ হন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার জানায়, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মৃতের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৩৬৩তে পৌঁছেছে। আহত হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৭০ জন। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোশ্যাল মিডিয়া খতিয়ে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতীয়দের এইচ-১বি ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থগিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সোশ্যাল মিডিয়া খতিয়ে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতীয়দের এইচ-১বি ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থগিত

এইচ-১বি ভিসা প্রার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট যাচাই-বাছাই করবে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই নতুন সোশ্যাল মিডিয়া নীতিতে আটকে গেল ভারতের আবেদনকারীদের ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট। গতকাল মঙ্গলবার রাতে এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা দিয়েছে ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। সেখানে বলা হয়, ভিসা আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকারের তারিখ আগামী বছরে পেছানো হয়েছে।

দূতাবাসের বার্তায় আরও বলা হয়, যদি আপনি আপনার ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে ইমেইল পেয়ে থাকেন, তবে মিশন ইন্ডিয়া আপনার নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট তারিখে নিতে সহায়তা করতে আগ্রহী।’

বার্তায় সতর্ক করে দূতাবাস আরও জানায়, পুনর্নির্ধারণের নোটিফিকেশন পাওয়ার পরও আগের নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত হলে দূতাবাস বা কনস্যুলেটে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শেষভাগে যেসব সাক্ষাৎকার নির্ধারিত ছিল, সেগুলো আগামী বছরের মার্চে নেওয়া হচ্ছে। তবে ঠিক কতগুলো অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থগিত হয়েছে, তা জানা যায়নি।

শীর্ষ ব্যবসায়িক অভিবাসন আইন প্রতিষ্ঠানের অ্যাটর্নি স্টিভেন ব্রাউন বলেন, ‘মিশন ইন্ডিয়া যা নিশ্চিত করেছে, তা-ই আমরা শুনছিলাম। সোশ্যাল মিডিয়া যাচাইয়ের কারণে তারা আগামী কয়েক সপ্তাহের বেশ কিছু অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করে মার্চে পুনর্নির্ধারণ করেছে।’

এইচ-১বি ভিসা আবেদনকারী ও এইচ-৪ নির্ভরশীলদের জন্য স্ক্রিনিং ও যাচাই–বাছাইয়ের পরিধি বাড়িয়েছে মার্কিন সরকার। নতুন নির্দেশনায় আবেদনকারীদের সব সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের প্রাইভেসি সেটিং ‘পাবলিক’ রাখতে বলা হয়েছে।

আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য বা জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা জননিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারেন কি না তা চিহ্নিত করতে ১৫ ডিসেম্বর থেকে কর্মকর্তারা তাঁদের অনলাইন উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। তবে শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আবেদনকারীরা আগে থেকেই এমন পর্যবেক্ষণের আওতায় ছিলেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, প্রতিটি ভিসার ক্ষেত্রেই জাতীয় নিরাপত্তার কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের অন্যতম প্রধান পথ এইচ-১বি ভিসা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নিয়মকানুনের সর্বশেষ আঘাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি। গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নতুন এইচ-১বি ভিসার ওপর একবারের জন্য ১ লাখ ডলারের অতিরিক্ত ফি আরোপ করেন। এর কিছুদিন পর, আফগান বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তির গুলিতে ন্যাশনাল গার্ড সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র ১৯টি দেশকে ‘উদ্বেগজনক দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করে আবেদনকারীদের গ্রিন কার্ড, মার্কিন নাগরিকত্ব ও অন্যান্য অভিবাসন প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনের আগেই চুক্তি চান ট্রাম্প, প্রস্তাব মানতে জেলেনস্কিকে আলটিমেটাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছেন, বর্তমান রণক্ষেত্র অনুসারেই যুদ্ধবিরতিতে যেতে। ছবিতে, হালকা গোলাপী রঙে চিহ্নিত অঞ্চলটি রাশিয়া দখলে যাওয়া ইউক্রেনীয় অঞ্চল। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছেন, বর্তমান রণক্ষেত্র অনুসারেই যুদ্ধবিরতিতে যেতে। ছবিতে, হালকা গোলাপী রঙে চিহ্নিত অঞ্চলটি রাশিয়া দখলে যাওয়া ইউক্রেনীয় অঞ্চল। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সময় বেঁধে দিয়েছেন, তাঁর প্রস্তাবিত শান্তিচুক্তি মেনে নিতে। কারণ, ট্রাম্প আগামী বড় দিন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বরের আগেই একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে চান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমস নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তবে বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মার্কিন আলোচকেরা ইউক্রেনের নেতা ভ্লাদিমির জেলেনস্কিকে শান্তি প্রস্তাবের জবাব দেওয়ার জন্য কয়েক দিন সময় দিয়েছেন। এই প্রস্তাবে কিয়েভকে কিছু অনির্দিষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বড়দিনের আগেই একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আশা করছেন। খবরে বলা হয়েছে, জেলেনস্কি মার্কিন দূতদের বলেছেন—কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য তাঁর সময়ের প্রয়োজন।

যদিও ট্রাম্প গত মাসে বলেছিলেন, তিনি থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের মধ্যে একটি চুক্তি দেখতে চান, পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে তাঁর কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নভেম্বরে এক শান্তি পরিকল্পনা উত্থাপন করেন, যাতে ইউক্রেনকে দনবাসের সেই অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানানো হয়েছিল, যা বর্তমানে দেশটির নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিস্তৃত যুদ্ধবিরতির জন্য মস্কোর অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল।

সোমবার লন্ডন সফরকালে জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ‘একটি বড় ধরনের বাধার’ মুখে ঠেলে দিচ্ছে, তবে তিনি যোগ করেছেন যে—ভূখণ্ড নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, ইউক্রেন লড়াই না করে কোনো জমি ছেড়ে দিতে রাজি নয়।

রাশিয়ার সৈন্যরা ফ্রন্ট লাইনের বিভিন্ন অংশে দৃঢ়ভাবে অগ্রগতি অর্জন করে চলেছে, আর ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা বলছেন—তাদের কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্র নেই এবং নতুন সৈন্যদের দিয়ে যুদ্ধের ক্ষতি পূরণ করতে তারা সংগ্রাম করছেন। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ক্রাসনোয়ার্মেইস্ক (পোকরোভস্ক) শহর মুক্তির ঘোষণা করে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দনবাসের এই শহরটিকে পরবর্তী আক্রমণের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ‘সেতুবন্ধন’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

এদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী ক্রমেই নাকাল হয়ে পড়ছে। এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে সেনাবাহিনী থেকে সদস্যদের পলায়ন ও অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিতি। সরকারি হিসাব অনুসারে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ সেনা অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিত বা পলাতক; এবং সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

অক্টোবরে ইউক্রেনীয় কৌঁসুলিরা জানান, রাশিয়া ২০২২ সালে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার সেনা অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিত রয়েছেন এবং প্রায় ৫৪ হাজার সেনা পলায়ন করেছেন। গত বছর থেকে এই সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিতি ১ লাখ ৭৬ হাজার এবং পলায়নের ২৫ হাজার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল জাজিরার প্রতিবেদন /যুদ্ধজয়ের আশা নেই, ইউক্রেনীয় বাহিনীতে পলাতক-অনুপস্থিত প্রায় ৩ লাখ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫২
ক্যাপ: ইউক্রেনের তৃতীয় স্বতন্ত্র আক্রমণ ব্রিগেডের সৈন্যদের উদ্যোগে আয়োজিত এক সামরিক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে বেসামরিক মানুষ সামরিক পোশাক পরে কিয়েভ অঞ্চলে জমায়েত হন। ছবিটি চলতি বছরের ১২ জুলাই জুলাই তোলা। ছবি: এএফপি
ক্যাপ: ইউক্রেনের তৃতীয় স্বতন্ত্র আক্রমণ ব্রিগেডের সৈন্যদের উদ্যোগে আয়োজিত এক সামরিক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে বেসামরিক মানুষ সামরিক পোশাক পরে কিয়েভ অঞ্চলে জমায়েত হন। ছবিটি চলতি বছরের ১২ জুলাই জুলাই তোলা। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী ক্রমেই নাকাল হয়ে পড়ছে। এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে সেনাবাহিনী থেকে সদস্যদের পলায়ন ও অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিতি। সরকারি হিসাব অনুসারে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ সেনা অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিত বা পলাতক; এবং সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

তিমোফ। ইউক্রেনের ৩৬ বছর বয়সী এক অফিস সহায়ক। তাঁর হাতে ও আঙুলে এখনো বেগুনি রঙের ছোট ছোট বেশ কিছু ক্ষত রয়ে গেছে। ছয় মাস আগে সে একটি সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে পালিয়ে আসে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে। সে সময়ই হাতে এই ক্ষত তৈরি হয়। কিয়েভের এই যুবক জানান, গত এপ্রিলে তাকে জোর করে সেনাবাহিনীতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি পরপর দুবার পালিয়ে এসেছেন।

তিমোফ বলেন, সত্যিকারের লড়াইয়ের জন্য তাঁর প্রশিক্ষণ কতখানি অকার্যকর, তা বুঝেই তিনি পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বুঝতে পারেন, অনিবার্যভাবে তাঁকে ফ্রন্টলাইনের সৈন্য হতে হবে, যেখানে বেঁচে থাকার কোনো সুযোগ থাকবে না। তিমোফ বলেন, ‘কোনো প্রশিক্ষণই দেওয়া হয় না। আমি প্রথম আক্রমণেই মারা যাব, তাতে তাদের কিছু যায়-আসে না।’

তিনি দাবি করেন, তাঁর প্রশিক্ষকেরা বেশির ভাগ সময় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে যাতে কেউ পালাতে না পারে, সেই চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। কেন্দ্রটি ছিল কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা একটি তিন মিটার প্রায় ১০ ফুট উঁচু কংক্রিটের দেয়াল দিয়ে সুরক্ষিত। তিমোফ বলেন, ‘একজন সৈনিক গুলি চালানো শিখল কি না, তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। তারা আমাকে একটি বন্দুক দিল, আমি লক্ষ্যের দিকে একটি গুলি ছুড়লাম, আর তারা আমার নামের পাশে একটি টিক চিহ্ন দিয়ে দিল।’ ব্যস প্রশিক্ষণ শেষ।

কর্তৃপক্ষের ভয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকায় তিমোফে তাঁর পদবি এবং ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখতে অনুরোধ করে। তিনি দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো পলাতক বা অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ আনা হয়নি। তাঁর ব্যাখ্যা খুব সহজ, ‘দেশের অর্ধেক মানুষ এখন পালাচ্ছে’, আর সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে এত সংখ্যক পলাতককে খুঁজে বের করে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা নেই।

অক্টোবরে ইউক্রেনীয় কৌঁসুলিরা জানান, রাশিয়া ২০২২ সালে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার সেনা অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিত রয়েছেন এবং প্রায় ৫৪ হাজার সেনা পলায়ন করেছেন। গত বছর থেকে এই সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিতি ১ লাখ ৭৬ হাজার এবং পলায়নের ২৫ হাজার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।

ইউক্রেনীয় কমান্ডার ভ্যালেন্তিন মাঙ্কো শনিবার ইউক্রেনীয় প্রাভদাকে বলেন, ‘এমনকি রাশিয়ায়ও এত বেশি সৈন্য অনুমতি ছাড়া পালিয়ে যায়।’ পলায়নের এই সংকট ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ক্রমেই চলে যাওয়ার মধ্যে সেনাকর্মীর মারাত্মক অভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

নভেম্বরে রাশিয়ার বাহিনী প্রায় ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে নেয়, যার বেশির ভাগই পূর্ব ইউক্রেনে, আর ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা আবারও থমকে যায়। মাঙ্কো জানান, প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার পুরুষকে সেনাবাহিনীতে নেওয়া হয়, কিন্তু সব সামরিক ইউনিটকে ‘পুনরায় সচল’ করতে দরকার ৭০ হাজার সেনা।

যুদ্ধে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে, একজন সেনা সামরিক ইউনিট ছেড়ে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরে পলায়নের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন এবং তার ৫ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। আর অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিতির শাস্তি ১০ বছর পর্যন্ত জেল। অনেকেই জেলকে বেছে নিচ্ছেন।

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের সাবেক উপপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর রোমানেনকো বলেন, ‘আমাদের পলাতক সৈন্য এবং অনুমতি ছাড়া চলে যাওয়া সেনার সংখ্যা খুবই বেশি।’ তিনি বলেন, ‘তারা ভাবে—আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে ফ্রন্টলাইনে যাওয়ার চেয়ে জেলে যাওয়া সহজ।’ রোমানেনকো দীর্ঘদিন ধরে কঠোর যুদ্ধকালীন আইন চালু করার এবং পলাতক ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের জন্য কঠোর শাস্তির পক্ষে সওয়াল করছেন। তাঁর বিশ্বাস, তাদের জেলে না পাঠিয়ে ফ্রন্টলাইনে পাঠানো উচিত।

পলায়ন এবং অনুমতি ছাড়া চলে যাওয়ার মধ্যে আইনি পার্থক্য হলো ‘চিরতরে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য।’ তবে ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকার প্রথমবার পলায়নকারীদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করেছে। যার ফলে তারা কোনো শাস্তি ছাড়াই তাদের ইউনিটে ফিরে আসতে পারে। সামরিক কর্তৃপক্ষ এবং তাদের কমান্ডিং অফিসারদের দয়ার ওপর ভরসা করে প্রায় ৩০ হাজার সেনা ফিরে এসেছেন।

দক্ষিণ ইউক্রেনের একটি সামরিক ইউনিটের এক মনোবিজ্ঞানী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘তাদের প্রতি এখন আরও বেশি সহানুভূতি দেখানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, পলায়ন সব সময় মৃত্যুর ভয়ের কারণে হয় না, বরং বেশির ভাগ সময়েই মনোযোগহীন কমান্ডিং অফিসারদের কারণে হয়, যারা তাদের সেনাদের সমস্যাগুলোকে উপেক্ষা করেন। তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলে, তাদের কমান্ডার তাদের ছুটিতে যেতে দেননি, তাদের অসুস্থ আত্মীয়দের দেখতে যেতে দেননি, এমনকি বিয়ে করতেও দেননি।’

এদিকে সামরিক পুলিশ বাহিনীতে লোকবলের মারাত্মক অভাব রয়েছে এবং আদালতের আদেশ ছাড়া তারা কোনো সেনাকে আটক করতে পারে না। ফলে অনুমতি ছাড়া সেনাবাহিনী ছেড়ে যাওয়া কিংবা পালিয়ে যাওয়া সেনারা খুব বেশি ধরাও পড়ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানকে ঘিরে চীনা-রুশ যুদ্ধবিমানের চক্কর—অভিযোগ টোকিওর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫১
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ট্রাক বলে পরিচিত কৌশলগত বোমারু বিমান টুপোলভ–৯৫। ছবি: তাস
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ট্রাক বলে পরিচিত কৌশলগত বোমারু বিমান টুপোলভ–৯৫। ছবি: তাস

জাপানকে ঘিরে রাশিয়া ও চীনের যুদ্ধবিমান যৌথভাবে টহল দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে টোকিও। জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে জানিয়েছে, রাশিয়া ও চীনের বিমানবাহিনী দেশটির চারপাশ দিয়ে যৌথ টহল দেওয়ায় তারাও নজরদারি চালানোর জন্য যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। টোকিও এবং বেইজিংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার আবহে এই ঘটনা ঘটল।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুটি পারমাণবিক বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম টুপোলভ-৯৫ কৌশলগত বোমারু বিমান জাপান সাগর থেকে পূর্ব চীন সাগরের দিকে উড়ে যায় এবং সেখানে দুটি চীনা এইচ-৬ বোমারু বিমানের সঙ্গে মিলিত হয়। এরপর তারা প্রশান্ত মহাসাগরে একটি ‘দীর্ঘ দূরত্বের যৌথ উড্ডয়ন’ সম্পন্ন করে।

টোকিও আরও জানিয়েছে, বোমারু বিমানগুলো যখন জাপানের ওকিনাওয়া এবং মিয়াকো দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে দিয়ে চক্কর কেটে যাচ্ছিল, তখন চারটি চীনা জে-১৬ যুদ্ধবিমান তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এই দুটি দ্বীপের মধ্যবর্তী মিয়াকো প্রণালি আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবে বিবেচিত। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, জাপান সাগরে একই সময়ে রাশিয়ার বিমানবাহিনীর আরও কার্যকলাপ শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি আর্লি-ওয়ার্নিং বিমান এ-৫০ এবং দুটি এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমান ছিল।

জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি বুধবার এক্সে এক পোস্টে বলেন, ‘রাশিয়া ও চীনের যৌথ অভিযানগুলো স্পষ্টতই আমাদের জাতির বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছে, যা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।’ ইজুমি যোগ করেন, জাপানের যুদ্ধবিমানগুলো ‘আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা কঠোরভাবে কার্যকর করেছে।’

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, জাপানের কাছে রাশিয়া-চীনের যৌথ এই উড্ডয়ন আট ঘণ্টা ধরে চলেছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীও মঙ্গলবার জানিয়েছে, সাতটি রুশ বিমান ও দুটি চীনা বিমান তাদের বিমান প্রতিরক্ষা সীমায় প্রবেশ করেছিল।

জাপান রোববার জানায়, এর আগের দিন চীনা বিমানবাহী জাহাজ থেকে উৎক্ষেপিত যুদ্ধবিমান জাপানি সামরিক বিমান লক্ষ্য করে রাডার তাক করেছিল; যদিও বেইজিং সেই দাবি অস্বীকার করেছে। গত মাসে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যের পর জাপানের কাছাকাছি বেইজিংয়ের সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেল। সানায়ে বলেছিলেন, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে চীনা সামরিক পদক্ষেপ যদি জাপানের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে, তবে টোকিও তার প্রত্যুত্তর দিতে পারে।

চীন ও রাশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্যান্য স্থানে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করছে। এর মধ্যে রুশ ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী প্রশিক্ষণ এবং দক্ষিণ চীন সাগরে লাইভ ফায়ার নৌ মহড়ার মতো যৌথ অভিযান অন্তর্ভুক্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত