Ajker Patrika

ইরানে বিবাহবিচ্ছেদের রেকর্ড

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২: ৪৪
Thumbnail image
ছবি: ইরান ইন্টারন্যাশনাল

ইরানে বিবাহবিচ্ছেদের হার রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে ইরানে ৪ লাখ ৮১ হাজার বিবাহ ও ২ লাখ ২ হাজার বিচ্ছেদ নথিভুক্ত হয়েছে। এই হিসোবে দেশটির প্রতি ২.৪টি বিবাহের বিপরীতে অন্তত একটি বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে।

ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, এমন পরিস্থিতির জন্য দেশের অর্থনৈতিক সংকটকে দায়ী করছেন দম্পতিরা।

তিন বছর আগে বিয়ে করেছিলেন রাজধানী তেহরানের বাসিন্দা নারগিস ও আলী। তাঁরা জানান, ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি তাঁদের স্বপ্নগুলোকে ক্রমাগত দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। নারগিস বলেন, ‘আমরা শুধু বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছিলাম। একসময় আমরা দুজনই বুঝতে পারি, আমাদের মধ্যে আর কোনো সম্পর্ক বাকি নেই।’

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ইরানের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। অনেকেই বেঁচে থাকার জন্য একাধিক কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

আরেকটি বিষয় হলো—ইরানের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ২০৫১ সালের মধ্যে দেশটির মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশই বয়স্ক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই সম্ভাবনাকে হ্রাস করতে সরকার ২০২৮ সালের মধ্যে উর্বরতার হার ২.৫-এ নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু আর্থিক চাপ এবং দারিদ্র্য এই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

জানা গেছে, তেহরানে এক কক্ষের একটি অ্যাপার্টমেন্টের মাসিক ভাড়া এখন ২৫ কোটি ইরানি রিয়াল (৪০ হাজার বেশি)। কিন্তু দেশটির গড় পারিবারিক আয় প্রায় ১৫ কোটি রিয়াল (প্রায় ২৩ হাজার টাকা)।

সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করা ২৭ বছর বয়সী ইরানি কন্যা লাইলা জানিয়েছেন, দেশের চাকরির সুযোগ এখন খুবই সীমিত। সঞ্চয়েরও কোনো উপায় নাই।

লাইলার মা ফারিদেহ বলেন, ‘আমার বয়সে আমরা নিজের বাড়িতে বসবাস করতাম। এখন বেঁচে থাকাই কঠিন। বিয়ে বা সন্তানের কথা ভুলে যান।’

ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তেহরান এবং আশপাশের প্রদেশগুলোতে প্রতি ১০০ বিবাহের বিপরীতে ৬১টি বিবাহবিচ্ছেদ রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে, চাহারমাহাল ও বখতিয়ারি এবং সিস্তান ও বালুচিস্তানের মতো ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলে এই হার কিছুটা কম।

প্রাদেশিক রাজধানী জাহেদানের হোসেন নামে এক দোকানমালিক ব্যাখ্যা দাবি করেছেন, যুবকদের মধ্যে দারিদ্র্য হতাশার উদ্রেক করছে। তিনি বলেন, ‘তরুণেরা সাধারণত বয়স ২০-এর কোঠায় বিয়ে করত আগে। কিন্তু এখন তারা অপেক্ষা করছে যেন তারা তাদের পরিবার চালানোর মতো সক্ষমতা অর্জন করে। সেই দিনটিও এখন ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাচ্ছে।’

সেমনান প্রদেশের ৩২ বছর বয়সী শিক্ষিকা মেহরি দুই সন্তানের মা। তিনি জানান, পরিবারের খরচ জোগাতে তাঁকে এখন রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে। তাঁর স্বামী একসময় প্রকৌশলী ছিলেন। কিন্তু তাঁকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষকতার আয় দিয়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

ইরান ইন্টারন্যাশনালকে মেহরি বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে আর শান্তি নেই।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক চাপের ফলে বিবাহের নিম্ন হার ইরানের সামাজিক কাঠামোতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরানের এক অধ্যাপক বলেছেন, ‘বিবাহ আমাদের সংস্কৃতির স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি। কিন্তু অর্থনৈতিক চাপে আরও বেশি পরিবার এখন ভাঙনের মুখে পড়ছে, যা সামাজিক বন্ধনগুলোকে দুর্বল করে দিচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত