Ajker Patrika

গঙ্গার ঘাটে স্যুটকেস খুলতেই মিলল নারীর মরদেহ

গঙ্গার ঘাটে স্যুটকেসে মিলেছে এক নারীর মরদেহ। ছবি: এনডিটিভির সৌজন্যে।
গঙ্গার ঘাটে স্যুটকেসে মিলেছে এক নারীর মরদেহ। ছবি: এনডিটিভির সৌজন্যে।

কলকাতার কুমারটুলির গঙ্গার ঘাটে প্রতিদিনের মতোই যোগব্যায়ামের জন্য এসেছিলেন স্থানীয় কিছু মানুষ। জায়গাটা দুর্গাপূজার প্রতিমা তৈরির জন্য বিখ্যাত হলেও, বছরের অন্যান্য সময় এখানকার পরিবেশ বেশ শান্ত থাকে। তবে আজকের সকালটা ছিল একটু ভিন্ন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একটি সাদা-নীল রঙের ট্যাক্সি থেকে দুজন নারী নেমে আসেন ঘাটে। তাঁদের সঙ্গে ছিল একটি বেগুনি রঙের ট্রলি ব্যাগ। ব্যাপারটি স্থানীয়দের চোখে পড়ে। তাঁরা খেয়াল করেন, ওই দুই নারী ব্যাগটি নদীর দিকে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দুজনে মিলে টেনেও তা সরাতে পারছেন না। এতে সন্দেহ জাগে যোগব্যায়ামকারীদের। তাঁরা কাছে গিয়ে নারীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।

প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ওই দুই নারী। তাঁরা ব্যাগটি ধরতেও নিষেধ করছিলেন। এতে সন্দেহ বাড়লে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে ট্রলি ব্যাগ খুলতেই বেরিয়ে আসে রক্তমাখা কাপড়ে মোড়ানো এক নারীর মরদেহ!

স্থানীয় যোগ প্রশিক্ষক রাজা সাউ বলেন, ‘ওরা প্রথমে ব্যাগ খুলতে রাজি হয়নি। বলেছিল, ভেতরে ওদের ল্যাব্রাডর কুকুরের মরদেহ আছে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করিনি। একটা কুকুরের ওজন কত হবে? ৩০ থেকে ৪০ কেজি। তাই বলে দুজন মিলে ব্যাগটা টানতে পারবে না?’

প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলা এই বিতর্কের মধ্যে আশপাশে আরও ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষ জড়ো হয়ে যান। একপর্যায়ে এক নারী স্বীকার করেন, ব্যাগের ভেতরে তাঁর বৌদি সুমিতা ঘোষের মরদেহ রয়েছে। যিনি এক দিন আগে আত্মহত্যা করেছেন। তখন স্থানীয়রা প্রশ্ন করেন, ‘আত্মহত্যা করলে মরদেহ কেন এভাবে সরাতে হবে? এমন হলে তো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল, পুলিশকে খবর দেওয়া উচিত ছিল।’

পরবর্তী সময়ে পুলিশ এসে দুই নারীকে আটক করে। আটক দুই নারী হলেন ফাল্গুনী ঘোষ ও তাঁর মা আরতি ঘোষ। নিহত সুমিতা ঘোষ ছিলেন ফাল্গুনীর কাকিমা।

পুলিশ জানায়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, তাঁ কাজীপাড়া থেকে ট্রেনে কুমারটুলি এসেছেন। কিন্তু মধ্যমগ্রামের এক সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তাঁরা একটি ভ্যানগাড়িতে ব্যাগটি নিয়ে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে আসেন এবং সেখান থেকে সরাসরি কুমারটুলিতে আসেন।

তদন্তে জানা গেছে, মা-মেয়ে মধ্যমগ্রামের এক ভাড়া বাড়িতে দুই বছরের বেশি সময় ধরে থাকছিলেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়িতে রাতে অপরিচিত ব্যক্তিদের আনাগোনা ছিল, তবে পরিবারটি খুব গোপনীয় জীবনযাপন করত।

আটক দুই নারী ফাল্গুনী ঘোষ ও তাঁর মা আরতি ঘোষ। ছবি: এনডিটিভির সৌজন্যে।
আটক দুই নারী ফাল্গুনী ঘোষ ও তাঁর মা আরতি ঘোষ। ছবি: এনডিটিভির সৌজন্যে।

সম্প্রতি ট্যাংরায় একটি ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা নিয়ে শহরজুড়ে আলোড়ন চলছে। ঠিক এই সময়েই আবার একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটল, যা এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

ওই ট্রিপল মার্ডারের বিষয়ে পুলিশকে প্রথমে জানানো হয়েছিল, বাড়ির পুরুষ সদস্যরা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁদের সঙ্গে মহিলারাও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পুরুষ সদস্যরা বেঁচে গেলেও দুই নারী ও তাঁদের এক মেয়ে মারা যান। তবে পরবর্তী সময়ে পুলিশ জানায়, ওই বাড়ির মহিলাদের খুন করা হয়েছে এবং বাড়ির পুরুষ সদস্যরাই এর জন্য দায়ী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত