Ajker Patrika

ভারত ভিসা না দেওয়ায় বাংলাদেশি শূন্য কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’, ব্যবসায়ীদের হাপিত্যেশ

আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯: ৫৯
কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিটের সাম্প্রতিক ছবি। ছবি: দ্য উইক
কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিটের সাম্প্রতিক ছবি। ছবি: দ্য উইক

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঢাকা ত্যাগ এবং গত ২৫ নভেম্বর ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তেজনার কারণে কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত ব্যস্ততম রাস্তাগুলো এখন বিবর্ণ, ফাঁকা।

অক্টোবর থেকে মার্চ সময়কালে কলকাতার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত রফি আহমেদ কিদওয়াই রোড, মার্কুইস স্ট্রিট এবং ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এলাকা বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড়ে মুখর থাকে। এ কারণেই এই অঞ্চলটি ‘মিনি বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত।

বাংলাদেশ থেকে আসা চিকিৎসা ও অবকাশ পর্যটক, শিক্ষার্থী এবং আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে আসা মানুষজন এখানে এসে নিজ বাড়ির মতোই পরিবেশ খুঁজে পান। এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতিও ব্যাপক বিকশিত হয়েছে। এখানে হোটেল, অতিথিশালা, রেস্তোরাঁ, পোশাকের দোকান এবং বিদেশি মুদ্রা বিনিময় পরিষেবাগুলো সমৃদ্ধ হয়েছে।

ভারত সরকার জরুরি এবং চিকিৎসাজনিত প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দেওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসা পর্যটকদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে, যা স্থানীয় ব্যবসাগুলোকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং এসব ব্যবসার সঙ্গে জড়িত জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেল টাইমস ইন্টারন্যাশনালের মালিক এবং কলকাতা হোটেল গেস্ট হাউসের সভাপতি হরমিত সিং দ্য উইককে বলেন, ‘আমার হোটেলে ৩০টি কামরা আছে এবং এই সময়ে ৮৫ শতাংশ কামরা পূর্ণ থাকে। কিন্তু এবার শুল্ক কমিয়েও আমরা মাত্র ২০-২৫ শতাংশ কামরা ভাড়া দিতে পারছি।’

একই ধরনের কথা জানিয়েছেন সিংয়ের হোটেলের বিপরীতে অবস্থিত ইচ্ছামতী রেস্তোরাঁর ম্যানেজার কেশব সরকার। দুপুরের খাবারের সময়টায় এই জনপ্রিয় রেস্তোরাঁটির—যা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য খ্যাত—চিত্র এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। চেয়ার-টেবিল প্রায় সবই ফাঁকা। আগে এসব চেয়ার–টেবিলের বেশির ভাগটাই দখলে থাকত বাংলাদেশি পর্যটকের।

কেশব সরকার বলেন, ‘সাধারণ সময়ে বসার জায়গা পাওয়া যেত না। বাংলাদেশের মানুষের প্রিয় জায়গাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। আগস্টের পরও পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না। কিন্তু গত মাসখানেক যা দেখছি তা বর্ণনা করা কঠিন।’

রেস্তোরাঁটি একটি দোতলা ভবনে অবস্থিত। নিচতলায় শেখ শহিদুল ইসলাম একটি পোশাকের দোকান চালান। যেখানে সালওয়ার, কামিজ, কুর্তি ও শাড়ির দারুণ সংগ্রহ রয়েছে। খাবারের জন্য ওপরে ওঠার সময় বা খাওয়ার পর নিচে নামার সময় পর্যটকেরা ইসলামের দোকানের সংগ্রহ দেখে যেতেন এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু কিনতেন।

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আগে প্রতিদিন ২০-২৫টি আইটেম বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন একটিও বিক্রি করতে পারি না।’ তিনি জানান, ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বলেন, ‘এখন আমাকে সঞ্চয় থেকে খরচ করতে হচ্ছে।’ তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারের কাছে দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানান।

শুধু স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই নয়, অনেক বাংলাদেশিও এই অস্থির সময়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি প্রত্যাশা করছেন। ঢাকার মিরপুর থেকে আসা আবিদা সুলতানা এবং তাঁর পরিবার সৌভাগ্যক্রমে এই সময়ে চিকিৎসার ভিসায় ভারতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। ভারতে নিয়মিত ভ্রমণকারী আবিদা এবার সীমান্তে ব্যাপক কঠোর চেকিং লক্ষ করেছেন। তিনি জানতেন বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমেছে, তবে মার্কুইস স্ট্রিটের ফাঁকা রাস্তা তাঁকে অবাক করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এমনটা দেখতে অভ্যস্ত নই।’

ভবিষ্যতে ভালো সময় আসার ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করে আবিদা বলেন, ‘হ্যাঁ, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা হয়েছে, তবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। (ভারতীয়) গণমাধ্যম বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করছে।’

বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রিকে ভারতীয় গণমাধ্যমের অতিরঞ্জিত বক্তব্য নিয়ে অবহিত করেছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি মিশ্রি বাংলাদেশ সফর করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

তবে বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ৮৮টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। যার
পরিপ্রেক্ষিতে ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানা গেছে, মিশ্রি ভারতের সংসদের পররাষ্ট্রবিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে এই পদক্ষেপ এবং পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতির বিষয়ে জানিয়েছেন।

দুই দেশের এই যৌথ প্রচেষ্টা উত্তেজনা প্রশমনে সহায়ক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিটের ব্যবসায়ীদের মনে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার আশা জাগিয়েছে। বর্তমানে তাঁরা এক অনিশ্চিত এবং চ্যালেঞ্জপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।

ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের হায়দার আলী খান দ্য উইককে বলেন, ‘আমরা দুই দেশের সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই, যেন দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। নইলে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার রাস্তায় এসে দাঁড়াবে। আমি আমাদের বাংলাদেশি ভাই-বোনদের বলতে চাই, ভারত আগের মতোই নিরাপদ আছে। কিছুই বদলায়নি। আমাদের এখানে আসা বন্ধ করবেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মিডল ইস্ট আই এর প্রতিবেদন /ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ–ভারত–পাকিস্তানের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি। ছবি: এএফপি
প্রতীকী ছবি। ছবি: এএফপি

যুক্তরাজ্য সরকারের ‘চরম ও গোপনীয়’ নাগরিকত্ব বাতিল করার ক্ষমতার কারণে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে আছেন দেশটির কোটি খানেক মুসলিম। যাদের বেশির ভাগই আবার বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। এই ক্ষমতা তাদের জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলেছে বলে এক নতুন প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান রানীমীড ট্রাস্ট এবং আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের সংগঠন রিপ্রিভ প্রকাশিত গবেষণা জানাচ্ছে, যুক্তরাজ্যের প্রায় ৯০ লাখ—যা দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ–স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আওতাধীন এই ক্ষমতার কারণে তাদের নাগরিকত্ব খোয়াতে পারেন।

প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, এই ক্ষমতা দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার সঙ্গে যুক্ত নাগরিকদের ওপর ‘অসমভাবে প্রভাব ফেলছে ও তাদের বিপন্ন করছে।’ উভয় সংগঠনই সতর্ক করে বলছে, এই ‘নাগরিকত্ব-বাতিল ব্যবস্থা’ এখন মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি পদ্ধতিগত হুমকি সৃষ্টি করেছে।

বর্তমান আইনে, সরকার যদি মনে করে যে—একজন ব্রিটিশ নাগরিক অন্য কোনো নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য, তবে তিনি তার জাতীয়তা হারাতে পারেন। এমনকি তিনি সেই দেশে কখনো বাস না করলেও বা সেই পরিচিতি গ্রহণ না করলেও। প্রতিবেদনটি দেখাচ্ছে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ব্যবস্থা নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে একটি জাতিগত শ্রেণিবিন্যাস তৈরি করেছে, যেখানে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের মতো মুসলিমদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব শর্তহীন নয়, বরং তা শর্তসাপেক্ষ। রিপ্রিভের কর্মকর্তা মায়া ফোয়া বলেন, ‘বিগত সরকার রাজনৈতিক ফায়দার জন্য পাচার হয়ে আসা ব্রিটিশদের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে, আর বর্তমান সরকার এই চরম ও গোপনীয় ক্ষমতাগুলোকে কেবল বাড়িয়েই চলেছে।’

ফোয়া বলেন, ‘যে ৯০ লাখ মানুষের অধিকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেড়ে নিতে পারেন, তাদের পূর্ণ কর্তৃত্ববাদী সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।’

ফোয়ার উদ্বেগগুলোই যেন প্রতিধ্বনিত হলো রানীমীড ট্রাস্টের শাবানা বেগমের কথায়। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের আওতাধীন ক্ষমতায় ‘নাগরিকত্ব বাতিলের একটি শীতল স্রোত’ বইছে এবং তা ব্রিটেনের মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর অসমভাবে প্রভাব ফেলেছে।’ তিনি বলেন, ‘যে আইন কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছিল, ঠিক তার মতোই এই ক্ষমতাগুলো ব্যাপকভাবে অপব্যবহার হওয়া থেকে রক্ষার জন্য কোনো কার্যকর বাধা নেই।’

শাবানা বেগম বলেন, ‘নাগরিকত্ব একটি অধিকার, বিশেষ কোনো সুযোগ নয়। অথচ ব্রিটেনের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসা সরকারগুলো ধারাবাহিকভাবে নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে দুই-স্তরীয় পদ্ধতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যা একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করছে।’ এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর কোনো মন্তব্য করেনি।

রিপ্রিভ এবং রানীমীডের বিশ্লেষণ দেখাচ্ছে—

  • প্রতি পাঁচজন অশ্বেতাঙ্গ মানুষের মধ্যে তিনজন ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
  • শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের মধ্যে প্রতি ২০ জনের মধ্যে কেবল একজন একই ঝুঁকির সম্মুখীন।
  • ভারত (৯ লাখ ৮৪ হাজার জন), পাকিস্তান (৬ লাখ ৭৯ হাজার জন) এবং বাংলাদেশি (ঝুঁকিতে থাকা ৩৩ লাখ এশীয় ব্রিটিশদের বাংলাদেশি অনেক বেশি) ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ক্ষতিগ্রস্ত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
  • কার্যতভাবে যাদের নাগরিকত্ব বাতিল হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই দক্ষিণ এশীয়, মধ্যপ্রাচ্য বা উত্তর আফ্রিকা থেকে যাওয়া ‘মুসলিম।’

প্রতিবেদনটি আরও বলেছে, অশ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশরা তাদের শ্বেতাঙ্গ সহ–নাগরিকদের তুলনায় ১২ গুণ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেছে যে, নাগরিকত্ব বাতিল—যা একসময় কেবল ব্যতিক্রমী যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হতো—কীভাবে দুই দশকের সন্ত্রাস দমন আইনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে, ‘জনসাধারণের মঙ্গলের সহায়ক’ কারণ দেখিয়ে ২ শতাধিক মানুষের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়, যাদের মধ্যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই মুসলিম। ২০২২ সালে, সরকার কোনো ব্যক্তিকে না জানিয়েই তার নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষমতা অর্জন করে।

এবং ২০২৫ সালের একটি আইন এখন নিশ্চিত করেছে যে, আদালত নাগরিকত্ব বাতিলকে বেআইনি ঘোষণা করলেও, সরকারের আপিল শেষ না হওয়া পর্যন্ত (যা কখনো কখনো বছরখানেক ধরে চলতে পারে) মানুষ তাদের নাগরিকত্ব ফিরে পাবে না।

তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইউক্রেনের ২ বন্দরে রুশ হামলায় ৩ তুর্কি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ওদেসা বন্দরে রুশ আঘাতে আগুন ধরে যাওয়া একটি জাহাজ। ছবি: সংগৃহীত
ওদেসা বন্দরে রুশ আঘাতে আগুন ধরে যাওয়া একটি জাহাজ। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের দুই বন্দরে রুশ হামলায় ৩টি মালবাহী জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাহাজ তিনটি তুরস্কের মালিকানাধীন। গতকাল শুক্রবার এই হামলা ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা এবং একটি জাহাজের মালিকের মতে, রাশিয়ার বাহিনী ইউক্রেনের দুটি বন্দরে হামলা চালিয়েছে, যার ফলে খাদ্য সরবরাহকারী একটি জাহাজসহ তিনটি তুর্কি মালিকানাধীন জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শুক্রবার রুশ বাহিনী কৃষ্ণ সাগরের তীরে অবস্থিত ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিম ওদেসা অঞ্চলের চেরনোমর্স্ক এবং ওদেসা বন্দরকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ইউক্রেনীয় নৌবাহিনীর এক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মোট তিনটি তুর্কি মালিকানাধীন জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে তিনি বিস্তারিত কোনো বিবরণ দেননি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় চেরনোমর্স্কের একটি ‘বেসামরিক জাহাজে’ অগ্নিনির্বাপকদের আগুন নেভানোর ভিডিও ফুটেজ পোস্ট করে বলেন, রাশিয়ার আক্রমণের ‘কোনো...সামরিক উদ্দেশ্যই ছিল না।’ জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি আরও একবার প্রমাণ করল যে, রাশিয়ানরা শুধু কূটনীতির বর্তমান সুযোগটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে নিতে ব্যর্থই হয়নি, বরং ইউক্রেনের স্বাভাবিক জীবনকে ধ্বংস করার জন্যই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক নৈতিক মান বজায় রাখে—সেই বিবেচনায় কে এই যুদ্ধ টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং কে শান্তি দিয়ে এটি শেষ করার জন্য কাজ করছে, কে বেসামরিক জীবনের বিরুদ্ধে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে এবং কে রাশিয়ার যুদ্ধ যন্ত্রের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে এমন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করছে—তা বোঝা জরুরি।’

জেলেনস্কি জাহাজটির নাম উল্লেখ করেননি, তবে এটিকে পানামার পতাকাবাহী এবং তুর্কি মালিকানাধীন সেন্ক টি হিসেবে চিহ্নিত করেছে রয়টার্স। জাহাজটির মালিক, সেন্ক শিপিং নিশ্চিত করেছে যে, স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল ৪টায় এটির ওপর হামলা হয়। তারা আরও জানায়, ক্রুদের মধ্যে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং জাহাজের ক্ষতি সীমিত ছিল।

ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ওলেক্সি কুলেবা নিশ্চিত করেছেন—ওদেসা বন্দরের ওপর পৃথক হামলায় একটি বেসরকারি সংস্থার একজন কর্মচারীও আহত হয়েছেন। এ ছাড়া, একটি কার্গো লোডারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন, যে রাশিয়া বন্দরগুলোতে হামলায় ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। প্রসঙ্গত, ওদেসা অঞ্চলের কৃষ্ণ সাগর তীরবর্তী ৩টি বড় ইউক্রেনের অর্থনীতির লাইফলাইন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইমরান খানের জন্য ইলন মাস্কের কাছে জেমিমার আবেদন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৮
ইমরান খান ও জেমিমা গোল্ডস্মিথ। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খান ও জেমিমা গোল্ডস্মিথ। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রাক্তন স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথ অভিযোগ করেছেন, এক্স প্ল্যাটফর্মে তাঁর পোস্ট ফিল্টার করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার এ নিয়ে এক্সের মালিক ইলন মাস্কের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

গোল্ডস্মিথ অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের হাতে ইমরান খানের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আইনি জটিলতা নিয়ে তাঁর করা পোস্টগুলো জনগণের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। তিনি ইলন মাস্ককে তাঁর অ্যাকাউন্টে ‘দৃশ্যমানতা ফিল্টারিং’ (visibility filtering) নামে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তা দ্রুত সমাধানের জন্য অনুরোধ করেছেন।

এক্স হ্যান্ডলে করা পোস্টে জেমিমা বলেন, তাঁর ছেলেদের তাদের বাবার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। ইমরান খানকে ২২ মাস ধরে অবৈধভাবে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পিটিআই নেতা একজন মৌলিক মানবিক অধিকারহীন রাজনৈতিক বন্দী—এই কথা বিশ্বকে জানানোর জন্য এক্সই তাঁর কাছে একমাত্র জায়গা। তিনি অভিযোগ করেন, পাকিস্তান এবং বিশ্বব্যাপী তাঁর পোস্টের ‘রিচ’ প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনা হয়েছে।

তিনি লেখেন, ‘আপনি বাক্‌স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কথা বলার স্বাধীনতা, কিন্তু কেউ শুনতে পাবে না, এমনটি নয়।’

এর আগেও জেমিমা অভিযোগ করেছিলেন যে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ তাঁর ছেলেদের বাবার সঙ্গে কথা বলতে বাধা দিচ্ছে এবং তারা দেশে আসার চেষ্টা করলে তাদের গ্রেপ্তার করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে ইমরান খানের প্রতি হওয়া দুর্ব্যবহারের বিষয়ে তাঁর বোন আলিমা খানও গত সপ্তাহে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত বুধবার আদিয়ালা জেলের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, ‘আমরা আট মাস ধরে এখানে আসছি। প্রতি মঙ্গলবার আমরা এখানে এসে বসে থাকি। আমাদের ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয় না। তারা তাকে নির্যাতন করছে। তাকে অবৈধভাবে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে। তাদের উচিত ইমরান খানের ওপর এই নির্যাতন বন্ধ করা।’

উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইমরান খানকে ইচ্ছেমতো আটক রাখার কারণে পাকিস্তান সরকারের সমালোচনা করেছিল। তাঁরা জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইমরান খানের কারাদণ্ড স্পষ্টতই তাঁকে রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এপস্টাইন ফাইল: নতুন ছবিতে বিল ক্লিনটন ও বিল গেটসসহ প্রভাবশালী অনেকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২০
নতুন প্রকাশিত ছবিতে বিল ক্লিনটন ও বিল গেটসের মতো প্রভাবশালীদের দেখা গেছে। ছবি: সংগৃহীত
নতুন প্রকাশিত ছবিতে বিল ক্লিনটন ও বিল গেটসের মতো প্রভাবশালীদের দেখা গেছে। ছবি: সংগৃহীত

যৌন পাচারকারী জেফরি এপস্টাইনের এস্টেট থেকে হাউস ডেমোক্র্যাটদের প্রকাশিত ১৯টি নতুন ছবিতে দেখা গেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাঁর পূর্বসূরি বিল ক্লিনটন এবং ব্রিটেনের সাবেক রাজপুত্র অ্যান্ড্রুকে। ২০১৯ সালে যৌন পাচারের অভিযোগে জেল হেফাজতে থাকাকালে এপস্টাইনের মৃত্যু হয়। সেই এস্টেট থেকে হাউস ওভারসাইট কমিটি ৯৫ হাজার ছবি হাতে পেয়েছে। এর মধ্য থেকে প্রথম ধাপে ১৯টি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রকাশিত ছবিগুলোতে কোনো ক্যাপশন বা প্রেক্ষাপট না থাকলেও এর মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি সাদা-কালো ছবিতে তাঁকে ছয়জন নারীর সঙ্গে দেখা গেছে। যদিও ট্রাম্প একসময় এপস্টাইনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, তবে যৌন পাচারের অভিযোগ ওঠার অনেক আগেই তিনি এপস্টাইন থেকে দূরত্ব তৈরি করেন বলে জানা যায়।

এ ছাড়া ছবিগুলোতে স্টিভ ব্যানন, বিল গেটস, রিচার্ড ব্র্যানসন, হার্ভার্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ল্যারি সামারস এবং আইনজীবী অ্যালান ডারশোভিৎজ-সহ আরও বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে দেখা গেছে। অন্য একটি ছবিতে ট্রাম্পের ক্যারিক্যাচার (ব্যঙ্গচিত্র) এবং ‘I’m HUUUUGE!’ লেখাসহ কনডমের একটি বাটি দেখা যায়, যার পাশে ‘$ 4.50’ মূল্যের একটি সাইনও রয়েছে।

এর আগে অবশ্য এপস্টাইনের ব্যক্তিগত জেটে ভ্রমণ করার কথা স্বীকার করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। তবে তাঁর মুখপাত্রের মাধ্যমে তিনি জানান, এপস্টাইনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না। অন্যদিকে এপস্টাইনের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসার পর প্রিন্স অ্যান্ড্রু তাঁর রাজকীয় উপাধি ও বিশেষাধিকার হারিয়েছেন; যদিও তিনি কোনো ভুল করার কথা অস্বীকার করেছেন।

ডেমোক্র্যাটরা জানিয়েছে, বিচার বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত মামলার নথিপত্রের বাইরে এই ছবিগুলো প্রকাশের ফলে এপস্টাইন তদন্তে নথি প্রকাশে ট্রাম্প প্রশাসনের আগের অনীহার বিপরীতে চাপ বাড়ানো সম্ভব হবে।

ওভারসাইট কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট রবার্ট গার্সিয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘হোয়াইট হাউসের এই লুকোচুরির সমাপ্তি ঘটানোর এবং জেফরি এপস্টাইন ও তাঁর ক্ষমতাধর বন্ধুদের শিকার হওয়া মানুষদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার সময় এসেছে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই ছবিগুলো এপস্টাইন এবং বিশ্বের কিছু ক্ষমতাধর পুরুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলেছে। আমরা সত্য প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত থামব না। বিচার বিভাগকে অবিলম্বে সব নথি প্রকাশ করতে হবে।’

উল্লেখ্য, রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি ইতিমধ্যে এপস্টাইন এস্টেট থেকে পাওয়া হাজার হাজার নথি, ই-মেইল এবং কথোপকথন প্রকাশ করেছে। সেই ই-মেইলগুলোতে এপস্টাইন দাবি করেছেন, ট্রাম্প এপস্টাইনের অন্যতম প্রধান অভিযোগকারী ভার্জিনিয়া জিওফ্রির (প্রয়াত) সঙ্গে ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছেন’। ট্রাম্প ‘মেয়েদের সম্পর্কে জানতেন’। যদিও তরুণীদের প্রলুব্ধ করে বেআইনি কাজে ব্যবহার করার কারণে এপস্টাইনকে তাঁর মার-এ-লাগো ক্লাব থেকে বের করে দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন ট্রাম্প।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত