Ajker Patrika

৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে বাংলাদেশে পুশইন, ভূমিষ্ঠ সন্তানের নাগরিকত্ব কী হবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১২: ২২
সুনালি বিবি ও তার স্বামী দানিশ। ছবি: সংগৃহীত
সুনালি বিবি ও তার স্বামী দানিশ। ছবি: সংগৃহীত

গত কয়েক মাস ধরেই বাংলাভাষীদের বাংলাদেশে পুশ ইন করছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। তেমনই একজন বীরভূম জেলার বাসিন্দা সুনালী বিবি। দিল্লি পুলিশ গত ২৬ জুন তাঁকে আটক করে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, সুনালী কি সন্তান জন্মদানের আগেই ভারতে ফিরতে পারবেন? আর যদি না পারেন, তাহলে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া ওই শিশুর নাগরিকত্ব কী হবে?

সুনালী একা নন, তাঁর স্বামী এবং আট বছর বয়সী ছেলেকেও বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়েছে। গত দুই দশক দিল্লিতে গৃহকর্মী ও আবর্জনা সংগ্রহকারী (র‍্যাগপিকার) হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন সুনালী ও তাঁর স্বামী। গত ২৬ জুন তাঁদের আটক করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে দিল্লির একটি আদালতে মামলা করা হয়, কিন্তু পরে তা প্রত্যাহার করে পশ্চিমবঙ্গ মাইগ্র্যান্ট লেবার ওয়েলফেয়ার বোর্ডের সহায়তায় কলকাতা হাইকোর্টে ‘হেবিয়াস করপাস’ আবেদন করা হয়।

সুনালীর মা জ্যোৎস্নারা বিবি বীরভূমের পাঁইকর গ্রাম থেকে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘আমাদের একমাত্র ভরসা আদালত। আমার মেয়ে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা, এই মাস বা আগামী মাসে তার সন্তান জন্ম হতে পারে। আমরা জানি না তারা বাংলাদেশে কেমন আছে, সে ঠিকমতো চিকিৎসা ও খাবার পাচ্ছে কি না। সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হলো, ওই সন্তান কি বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হবে?’

সুনালীর বোন কারিশমা বলেন, ‘আমরা শুধু চাই যে আমার বোন বাংলাদেশ থেকে ফিরে এসে এখানেই তার সন্তান জন্ম দিক। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। তার চার বছরের মেয়েটি, যে আমাদের সঙ্গে আছে, প্রতিদিন মায়ের জন্য কাঁদে।’

সুনালীর মতো একই সময়ে বীরভূমের ধিতোড়া গ্রামের ৩২ বছর বয়সী সুইটি বিবি এবং তার ছয় ও ১৬ বছর বয়সী দুই ছেলেও একই সময়ে আটক হয়ে বাংলাদেশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

এদিকে, দিল্লি পুলিশের দাবি, কাগজপত্র সব যাচাই-বাছাইয়ের পরই তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। দিল্লি পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও) কাগজপত্র যাচাই করার পরেই তাদের বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি এখন আদালতের বিচারাধীন।’

সুনালীর বাবা ভদু শেখ জানান, অভিবাসী শ্রমিক বোর্ডের সাহায্য পেলেও এখনো কোনো সমাধান হয়নি।

সুনালী ও অন্য যাদের বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়েছে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁরা একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। ওই ভিডিওতে দেশে ফিরতে চেয়ে সবার কাছে সহায়তা চেয়েছেন তাঁরা। তারপর এই ইস্যুতে এগিয়ে আসে পশ্চিমবঙ্গ মাইগ্র্যান্ট লেবার ওয়েলফেয়ার বোর্ড। বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পাওয়ার পর থেকেই আমরা পরিবারটির পাশে আছি। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় আমরা সুনালীর স্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তিত। আমরা আদালতের দিকে তাকিয়ে আছি, যেন তাদের ফিরিয়ে আনা যায়।’

সুনালীর পরিবারের আইনজীবী সুপ্রতিক শ্যামল জানান, ‘৮ জুলাই হেবিয়াস করপাস আবেদন করা হয়। আদালত দিল্লি সরকারকে মামলার সমস্ত তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দিল্লি সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য বলেছে।’

এদিকে সুনালীর পরিবার আবার দিল্লিতে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সুনালীর বোন কারিশমা বলেন, ‘আমরা রোহিনীতে থাকি, আর আমি, মা ও আমার বাচ্চারা শুক্রবার সেখানে ফেরত যাব। আমরা সব কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যাব। কিছু করার নেই। টাকার প্রয়োজন। ঘরে বসে থাকলে তো টাকা আসবে না। আমার মেয়ে দিল্লির একটি সরকারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। আমাদের ফিরতেই হবে।’

সম্প্রতি গুজরাট, মহারাষ্ট্র, দিল্লি ও মধ্যপ্রদেশে বাংলাভাষী অভিবাসী শ্রমিকদের আটক করে বাংলাদেশে পাঠানোর ঘটনা খুব সাধারণ হয়ে উঠেছে। মুম্বাই ও রাজস্থানে আটক হওয়া নয়জনকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হস্তক্ষেপে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই ঘটনাপ্রবাহে অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে ভারতজুড়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অপারেশন সিঁদুরে নিহত প্রায় দেড় শ সেনার তালিকা প্রকাশ করে মুছে ফেলল পাকিস্তানি টিভি

ঢাবিতে পাঁচ প্যানেলে ভোটের যুদ্ধ

দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে এনসিপির মাহিন সরকারকে বহিষ্কার

যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকারকে বহিষ্কারের কারণ জানাল এনসিপি

আদালতে আসামির স্বীকারোক্তি—১০ লাখ টাকা লোন দেয়নি বলে ব্যাংকে চুরির সিদ্ধান্ত নিই

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত