Ajker Patrika

ভারতে ঘটে যাওয়া ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘ বিস্ফোরণ আসলে কী

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে আকস্মিক বন্যায় একটি গ্রাম কর্দমাক্ত পানিতে ডুবে গেছে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১০০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন। এই ভয়াবহ বন্যার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ‘ক্লাউডবার্স্ট’ বা মেঘ বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট বৃষ্টিকে দায়ী করা হচ্ছে।

উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেছেন, একটি ক্লাউডবার্স্টের ফলে প্রবল বৃষ্টি ও ধ্বংসাবশেষের স্রোতে ধারালি গ্রামের এই বিপর্যয় ঘটেছে। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পশ্চিম ভারতের কিছু অংশে ২১০ মিলিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘ বিস্ফোরণ কী?

ভারতীয় আবহাওয়াবিদদের মতে, ক্লাউডবার্স্ট হলো ৩০ বর্গকিলোমিটার বা তার কম একটি এলাকায় প্রতি ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাত। এই ঘটনা ঘটার পেছনে একটি জটিল প্রক্রিয়া রয়েছে।

মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির আবহাওয়াবিদ রুচিত কুলকার্নি বলেন, ‘এটি সাধারণত বর্ষার সময় পাহাড়ি অঞ্চলে ঘটে থাকে।’ হিমালয়ের পাদদেশে আরব সাগর থেকে আসা আর্দ্র বাতাস পাহাড়ের কারণে ওপরে উঠে যায়, যা ‘অরোগ্রাফিক লিফট’ নামে পরিচিত। এর ফলে বিশাল কিউমুলোনিম্বাস মেঘ (উলম্ব মেঘ) তৈরি হয়, যা বড় আকারের বৃষ্টির ফোঁটা ধারণ করতে পারে।

প্রসঙ্গত, অরোগ্রাফিক লিফট হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আর্দ্র বাতাস পাহাড় বা পর্বতশ্রেণীর কারণে ওপরে উঠতে বাধ্য হয়। এই উপরে ওঠা আর্দ্র বাতাস একসময় ঠান্ডা হয়ে কিউমুলোনিম্বাস বা উলম্ব মেঘ সৃষ্টি করে। এই কিউমুলোনিম্বাস বা উলম্ব মেঘের একেকটির আয়তন ১৩ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এ রকম একাধিক উলম্ব মেঘ ভূপৃষ্ঠে থাকা মাত্রাতিরিক্ত জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে এসে একটা সময় আর মেঘ হিসেবে আকাশে থাকতে পারে না। তখন ভূমির দিকে সমান্তরাল ভাবে নেমে আসে এবং প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়।

কুলকার্নি বলেন, ‘আর্দ্র বাতাস ওপরে উঠতে থাকে এবং মেঘ বড় হতে থাকে। কিন্তু বৃষ্টিপাত হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় মেঘ এত ভারী হয়ে যায় যে একপর্যায়ে তা ফেটে যায়। এটিই ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘ বিস্ফোরণ।’

এর আগে ২০১৩ সালের জুন মাসে উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথে ক্লাউডবার্স্টের ফলে সৃষ্ট এক ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই বন্যায় ৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

কেদারনাথের বন্যা নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা যায়, মোট বৃষ্টিপাতের অর্ধেকেরও বেশি বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস এবং অ্যারোসল কণার বৃদ্ধির কারণে হয়েছিল। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেও ভারতে এমন বৃষ্টিপাতের ঘটনা বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত