Ajker Patrika

বিহারে ইতিহাস গড়ে বিজেপি জোটের বিপুল জয়, সর্বোচ্চ ভোট পেয়েও মহাজোটের ভরাডুবি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ০৪
নরেন্দ্র মোদি ও নিতীশ কুমার। ছবি: সংগৃহীত
নরেন্দ্র মোদি ও নিতীশ কুমার। ছবি: সংগৃহীত

সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেল বিজেপি নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ)। ২৪৩ আসনের বিধানসভায় ২০২টিতে জয়ী হয়ে তারা ক্ষমতা ধরে রাখল। অন্যদিকে বিরোধী শিবির রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতৃত্বাধীন মহাজোট (মহাগঠবন্ধন) মুখ থুবড়ে পড়ল, মাত্র ৩৫টি আসনে জয়লাভ করে তারা বিহারের নির্বাচনী ইতিহাসে অন্যতম খারাপ ফল করল।

নির্বাচনে চরম বিপর্যয় সত্ত্বেও একটি বিষয়ে আনন্দ করার অবকাশ রয়েছে আরজেডির। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন আরজেডি পেয়েছে ২৩ শতাংশ ভোট, যা একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি। এই ভোটের হার ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) (২০.০৭ %) থেকে ২.৯২ শতাংশ এবং মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) (১৯.২৬ %) থেকে ৩.৭৫ শতাংশ বেশি।

তবে আরজেডির এবারের ভোটের হার গত নির্বাচনের (২০২০) চেয়ে সামান্য কমেছে (২০২০ সালে ছিল ২৩.১১ %)। সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি এসেছে আসনসংখ্যায়। গত নির্বাচনে আরজেডি ১৪৪টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৭৫টি আসনে জয়ী হয়েছিল, যা কোনো একক দলের জন্য সর্বোচ্চ। এবার দলটি ১৪১টি আসনে লড়ে জিতেছে মাত্র ২৫টি। এটি ২০১০ সালের পর আরজেডির দ্বিতীয় বাজে পারফরম্যান্স, যেখানে তারা ২০১০ সালে ২২টি আসনে জিতেছিল।

মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদব অবশ্য তাঁর পারিবারিক দুর্গ রাঘোপুর আসনে এনডিএ প্রার্থী সতীশ কুমারকে দীর্ঘ ও উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ের পর পরাজিত করে জয় ছিনিয়ে এনেছেন।

আরজেডির পাশাপাশি মহাজোটের শরিক দলগুলোর অবস্থাও ছিল শোচনীয়। কংগ্রেস এই বিপর্যয়ের মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। দলটি এবার ৬১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ৬টি আসনে জয়ী হয়েছে। এটি বিহারের নির্বাচনী ইতিহাসে কংগ্রেসের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ফল (২০১০ সালে ৪টি আসনে জিতেছিল)। জোটের পক্ষ থেকে কংগ্রেসকে এবার মোট ৬১টি আসন দেওয়া হয়েছিল, যেখানে ২০২০ সালে তারা ৭০টির মধ্যে ১৯টিতে জিতেছিল। এই চরম অবনতি মহাজোটের সামগ্রিক পরাজয়ের কারণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

এ ছাড়া সিপিআই (এমএল) দুটি, সিপিআই (এম) একটি এবং সিপিআই কোনো আসন পায়নি। সব মিলিয়ে মহাজোটের মোট আসনসংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ৩৫টিতে।

এনডিএ শিবিরের প্রাপ্ত ভোটের হারও এবার বেড়েছে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখল এনডিএ। জোটের শরিক দলগুলোর আসনসংখ্যা এমন:

বিজেপি (বিজেপি) : ৮৯টি

জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) : ৮৫টি

লোক জনশক্তি পার্টি (রাম বিলাস) (এলজেপি-আরভি) : ১৯টি

হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (এইচএএম) : ৫টি

রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা (আরএলএম) : ৪টি

আসনসংখ্যা কমে গেলেও এনডিএর দুই প্রধান শরিক বিজেপি ও জেডিইউ উভয়েরই ভোটের হার বেড়েছে। বিজেপি এবার ১০১টি আসনে লড়েছে (গতবার ১১০) এবং ভোটের হার ১৯.৪৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০.০৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে জেডিইউ এবার ১০১টি আসনে লড়ে (গতবার ১১৫) ভোটের হার ১৫.৩৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৯.২৬ শতাংশে নিয়ে এসেছে।

বিজেপির চেয়ে বেশি ভোট পেয়েও পাত্তা পেল না আরজেডি। ছবি: সংগৃহীত
বিজেপির চেয়ে বেশি ভোট পেয়েও পাত্তা পেল না আরজেডি। ছবি: সংগৃহীত

মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) এবার বিহারে একটি আসনে জয়ী হয়েছে। রামগড় আসনে তাদের প্রার্থী সতীশ কুমার যাদব নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির বিধায়ক অশোক কুমার সিংকে মাত্র ৩০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন। রামগড় আসনটি ২০০৫ সাল থেকে আরজেডি এবং বিজেপির মধ্যে পালাবদল করছিল। গত বছর উপনির্বাচনে এই আসনে বিজেপির অশোক কুমার সিং জিতেছিলেন।

অন্যদিকে প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টি এবং মুকেশ সাহানির বিকাশশীল ইনসান পার্টি (ভিআইপি) কেউই আসনের খাতা খুলতে পারেনি।

বিহারে শোচনীয় হারের পর বিরোধী শিবিরের একাধিক শীর্ষ নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী পরাজয়ের পর এক্সে লেখেন, ‘বিহারের লাখ লাখ ভোটার মহাজোটের ওপর যে আস্থা দেখিয়েছেন, তার জন্য আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। বিহারের এই ফলাফল সত্যিই আশ্চর্যজনক। যে নির্বাচন প্রথম থেকেই নিরপেক্ষ ছিল না, তাতে আমরা জয় পেতে পারিনি।’ তিনি স্পষ্ট করে ‘ভোট চুরির’ অভিযোগ না তুললেও ইঙ্গিত দেন, এই বৃহত্তর লড়াইটি হলো ‘সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার’ জন্য।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিহারের জনগণের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি এবং সেই শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব, যারা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অপব্যবহার করে গণতন্ত্রকে দুর্বল করার কাজে নিযুক্ত।’ দল বিস্তারিতভাবে ফলাফল পর্যালোচনা করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন নিতীশ কুমারকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি ভারতের নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সুনাম এখন সর্বনিম্ন স্তরে। দেশের নাগরিকদের এমন একটি শক্তিশালী এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রাপ্য, যার নির্বাচন পরিচালনায় বিজয়ী না হওয়া দলগুলোরও আস্থা থাকবে।’

বিহারে এবারের নির্বাচন দুই দফায়—৬ নভেম্বর এবং ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় এবং ৬৬ শতাংশের বেশি ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন, এটি ১৯৫১ সালের পর রাজ্যে সর্বোচ্চ। পুরুষ ভোটারদের (৬২.৮ %) তুলনায় নারী ভোটারদের উপস্থিতি (৭১.৬ %) উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি দেখা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...