Ajker Patrika

বাবা সিদ্দিকিকে গুলির খবরে মধ্যরাতে হাসপাতালে সালমানসহ বলিউড তারকারা

আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৩: ১৬
বাবা সিদ্দিকিকে গুলির খবরে মধ্যরাতে হাসপাতালে সালমানসহ বলিউড তারকারা

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী ও মুম্বাইয়ের জনপ্রিয় রাজনীতিক বাবা সিদ্দিকি নিহতের খবরে মধ্যরাতে হাসপাতালে ছুটে গেছেন বেশ কিছু বলিউড তারকা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সালমান খান, সঞ্জয় দত্ত, জাহির ইকবাল, শিল্পা শেঠিও। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। 

পুলিশ জানিয়েছে, উত্তর প্রদেশ ও হরিয়ানার দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তৃতীয় অভিযুক্ত পলাতক। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, বাবা সিদ্দিকিকে ১৫ দিন আগে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। 

গতকাল শনিবার (১২ অক্টোবর) রাতে গুলি করে তাঁকে হত্যা করে আততায়ীরা। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ মুম্বাইয়ের খের নগরে নিজের ছেলের অফিসের সামনে বাবা সিদ্দিকির ওপর গুলি চালানো হয়। এ সময় লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। 

বাবা সিদ্দিকি বলিউড অভিনেতা সালমান খানের খুব ঘনিষ্ঠ। লীলাবতী হাসপাতালে গিয়ে তাঁর চোখ ছলছল করছিল। 

এদিকে ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, হাসপাতালে পৌঁছানোর সময় শিল্পা শেঠি দৃশ্যত চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলেন না। গাড়ির মধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। এ সময় স্বামী রাজ কুন্দ্রাকেও দেখা যায়। 

গোটা ঘটনা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে রীতেশ দেশমুখ বলেন, ‘এই জঘন্য অপরাধের অপরাধীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।’ 

বান্দ্রা পশ্চিমের তিনবারের বিধায়ক বাবা সিদ্দিকি কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অজিত পাওয়ারের এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড় কোম্পানি থেকে ‘ভারতীয় নির্মূলের’ আহ্বান মার্কিন জরিপকারীর, সমালোচনার ঝড়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট ভাষ্যকার ও জরিপকারী মার্ক মিশেল। ছবি: এনডিটিভি
যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট ভাষ্যকার ও জরিপকারী মার্ক মিশেল। ছবি: এনডিটিভি

বড় মার্কিন কোম্পানিগুলোকে ‘ডি–ইন্ডিয়ানাইজ’ করা বা কোম্পানিগুলো থেকে ‘ভারতীয় নির্মূলের’ আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট ভাষ্যকার ও জরিপকারী মার্ক মিশেল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স–এ তিনি আরও বলেন, এ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে একটি নতুন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গড়তে চান তিনি। এ মন্তব্যে মার্কিন প্রযুক্তি খাতে ভারতীয় পেশাজীবীদের ভূমিকা নিয়ে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে এবং ভারতীয়দের মধ্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

মিশেল লিখেছেন, ‘আমার জীবনে কখনো কিছু এভাবে চাইনি। বড় বড় করপোরেশনকে ডি–ইন্ডিয়ানাইজ করতে সাহায্য করার জন্য নতুন করপোরেট পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাই আমি।’

কয়েক দিন আগে একটি পডকাস্টে যুক্তরাষ্ট্রে এইচ–১বি ভিসা কর্মসূচির আওতায় ভারতীয় পেশাজীবীদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন র‍র‍্যাসমুসেন রিপোর্টসের প্রধান জরিপকারী মিশেল।

৮ ডিসেম্বর প্রচারিত ‘দ্য ওয়্যার রুম’ নামে ওই পডকাস্টে স্টিফেন ব্যাননের সঙ্গে আলোচনায় মিশেল এইচ-১বি ভিসা কর্মসূচিতে ভারতীয়দের প্রাধান্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি দাবি করেন, অ্যাপলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন সিনিয়র এইচ-১বি ডেভেলপারকে দেশে ফেরানো অর্থনৈতিকভাবে দশজন বেআইনি অভিবাসীকে বহিষ্কারের সমান।

তিনি বলেন, ‘অ্যাপলে থাকা প্রতিটি এইচ-১বি সিনিয়র ডেভেলপারকে যদি আমরা ফেরত পাঠাই, সেটি অর্থনৈতিক দিক থেকে সম্ভবত দশজন বেআইনি অভিবাসীকে দেশছাড়া করার সমান হবে। তাই এটা আমরা এখনো কেন করিনি, বুঝতে পারছি না। আর হ্যাঁ, অনেকেই এন্ট্রি-লেভেলের, কিন্তু অনেকে বিপুল পরিমাণ অর্থও আয় করছে।”

এসব কারণে ১ কোটি ২০ লাখ মার্কিন প্রযুক্তিকর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন বলে দাবি এই মার্কিন জরিপকারীর। তিনি মনে করেন, ‘বিদেশি শ্রমশক্তি’ সিলিকন ভ্যালিকে ‘ইন্ডিফাই’ বা ‘ভারতীয়করণ’ করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘সিলিকন ভ্যালিতে দেশের সবচেয়ে দামি রিয়েল এস্টেট রয়েছে। আর সেখানে কর্মশক্তির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই বিদেশে জন্ম নেওয়া। ওয়ালমার্টের ভবনগুলোতে ৮৫ থেকে ৯৫ শতাংশ ছিলেন ভারতীয় নাগরিক। তারা এসব স্বর্ণসুযোগের পথ ধরে এসে চাকরিগুলো দখল করে নিচ্ছেন।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, শীর্ষ মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কম খরচের অভিবাসী শ্রমশক্তির ওপর নির্ভর করছে। তাঁর দাবি, কোম্পানিগুলো সিনিয়র মার্কিন ইঞ্জিনিয়ারদের এড়িয়ে যাচ্ছে, কারণ তাঁদের হাতে রয়েছে ‘তৃতীয় বিশ্বের তরুণ ইঞ্জিনিয়ারদের এক অন্তহীন ভাণ্ডার’।

মিশেল আরও বলেন, ‘আমার মতো যাদের পরিবার আছে, যাদের কিছুটা বেশি বেতন দিতে হয়, তাদের হয়তো দু-একবার বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার স্বাস্থ্যবিমার খরচও একটু বেশি। আমাদের খুব সহজেই প্রতিস্থাপন করা যায় আর আমাকে দিয়েই আমার বিকল্প জনকে প্রশিক্ষণ করানো যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন এইচ-১বি ডেভেলপার যিনি ৯০ হাজার ডলার আয় করেন, তাঁকে আনা মানে ঘণ্টায় ৯ ডলার করে আয় করা দশজন আনডকুমেন্টেড শ্রমিককে আমদানি করার সমান।’

সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মার্কিন প্রযুক্তিখাতের প্রায় ৬৬ শতাংশ কর্মীই বিদেশি। এর মধ্যে ২৩ শতাংশ ভারতীয় এবং ১৮ শতাংশ চীনা। এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় মিশেল এ মন্তব্য করেন।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে মিশেলের ‘ডি–ইন্ডিয়ানাইজ’ মন্তব্য। তিনি ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য করেছেন বলে অনেকে অভিযোগ তোলেন।

এক্স-এ এক ব্যবহারকারী লেখেন, ‘আপনি যদি বলতেন, বড় মার্কিন কোম্পানিগুলোকে “ডি–জিউ” করতে চান, তবে আপনার কোনো ক্যারিয়ারই থাকত না। কিন্তু মার্কিন রক্ষণশীল মহলে একটি “মডেল মাইনরিটি”র বিরুদ্ধে সরাসরি বর্ণবাদী হওয়া যেন স্বাভাবিক।’

অন্য একজন লিখেছেন, ‘খেয়াল করুন, এই মানুষটি এইচ–১বি থেকে সরাসরি “ইন্ডিয়ানস”-এ চলে গেছেন। মানে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া দ্বিতীয় প্রজন্মের ভারতীয়–আমেরিকানদেরও তিনি বঞ্চিত করতে চান।’

আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘ভাবুন তো, অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে কেউ এমন কথা বললে কী হতো। তাই হয়তো আপনার চাকরির সুযোগ এত সীমিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্কুলে কিশোরীদের হেডস্কার্ফ পরা নিষিদ্ধ করল অস্ট্রিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নতুন আইনে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের কম বয়সী মেয়েদের স্কুলে ‘ঐতিহ্যবাহী মুসলিম’ মাথা ঢাকার পোশাক পরে যেতে হবে না। ছবি: স্কাই নিউজ
নতুন আইনে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের কম বয়সী মেয়েদের স্কুলে ‘ঐতিহ্যবাহী মুসলিম’ মাথা ঢাকার পোশাক পরে যেতে হবে না। ছবি: স্কাই নিউজ

১৪ বছরের কম বয়সী স্কুলছাত্রীদের জন্য হিজাব বা বোরকার মতো মাথা ঢেকে পরে এমন পোশাক নিষিদ্ধ করেছে অস্ট্রিয়া। এই নিষেধাজ্ঞা সরকারি ও বেসরকারি দুই ধরনের স্কুলের ছাত্রীদের জন্যই প্রযোজ্য হবে। এ সংক্রান্ত একটি আইন পাস করেছে দেশটি।

নতুন এই আইনে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের কম বয়সী মেয়েরা ‘ঐতিহ্যবাহী মুসলিম’ মাথা ঢেকে রাখে এমন পোশাক, যেমন-হিজাব বা বোরকা পরে স্কুলে যেতে পারবে না।

আইনে বলা হয়েছে, হিজাব নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও আইনগত অভিভাবকদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনায় বসতে হবে। বারবার নিয়ম ভাঙা হলে শিশু ও যুবকল্যাণ সংস্থাকে বিষয়টি জানাতে হবে। শেষ পর্যন্ত প্রয়োজন হলে পরিবার বা অভিভাবকদের সর্বোচ্চ ৮০০ ইউরো (১ লাখ ১৪ হাজার ৪০০ টাকা) পর্যন্ত জরিমানা করা যেতে পারে।

এর আগে ২০২০ সালে ১০ বছরের কম বয়সী মেয়ে শিশুদের জন্য হিজাব নিষিদ্ধের একটি আইন সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটির সাংবিধানিক আদালত বাতিল করে দেয়। কারণ, সেই আইনটি সরাসরি মুসলমানদের লক্ষ্য করে করা হয়েছিল।

অস্ট্রিয়ার তিনটি মধ্যপন্থী দল ওইভিপি (ÖVP), এসপিও (SPÖ) ও নিওস (Neos)-এর নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল জোট বলছে, এ আইন ‘লিঙ্গ সমতার প্রতি সুস্পষ্ট অঙ্গীকার’।

সরকারের সদস্যরা বলছেন, এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়ন করা। তাদের দাবি, এটি মেয়েদের ‘বঞ্চনা বা দমন-পীড়ন’ থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্যই নেওয়া হয়েছে।

লিবারাল নিওস দলের সংসদীয় নেতা ইয়ানিক শেটি বলেন, ‘এটি কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নয়। এ দেশের মেয়েদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্যই এই পদক্ষেপ।’

নিষেধাজ্ঞাটি প্রায় ১২ হাজার শিশুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভোট দেওয়া ডানপন্থী বিরোধী দল অস্ট্রিয়ার ফ্রিডম পার্টি (এফপিও) বলেছে, আইনটি যথেষ্ট দূর পর্যন্ত যায়নি। এটি ‘প্রথম ধাপ’, যা সম্প্রসারিত করে সব শিক্ষার্থী ও স্কুলকর্মীর জন্য প্রযোজ্য করা উচিত।

এফপিওর পরিবারের বিষয়ে দলের মুখপাত্র রিকার্ডা বার্গার বলেন, ‘স্কুলে হিজাবের ওপর সামগ্রিক নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। ইসলাম ধর্মের রাজনীতিকরণের কোনো স্থান এখানে নেই।’

তবে সমালোচকেরা বলছেন, এ আইন দেশে ইসলামবিদ্বেষ আরও উসকে দিতে পারে এবং এটি সংবিধানবিরোধীও হতে পারে।

বিরোধী দল গ্রিনস-এর সিগরিড মাউরার নতুন আইনটিকে ‘স্পষ্টভাবেই অসাংবিধানিক’ বলে মন্তব্য করেছেন।

অস্ট্রিয়ার সরকারি ইসলামিক কমিউনিটি (আইজিজিও) জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে এবং সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করবে। তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, শিশুদের ক্ষমতায়নের বদলে তাদের কলঙ্কিত ও প্রান্তিক করে দেওয়া হবে। তারা আইনটির সাংবিধানিকতা পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে।

আইজিজিও আরও বলেছে, সাংবিধানিক আদালত ইতিমধ্যে ২০২০ সালেই স্পষ্টভাবে রায় দিয়েছে, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা অসাংবিধানিক, কারণ এটি একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে লক্ষ্য করে এবং সমতার নীতি লঙ্ঘন করে।’

এ নিয়ে সরকার বলছে, তারা এমন পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করেছে। সংসদীয় নেতা ইয়ানিক শেটি বলেন, ‘এটি সাংবিধানিক আদালতের পরীক্ষায় টিকবে কি না, আমি জানি না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু করেছি।

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই আইনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর আগামী সেপ্টেম্বরে নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাজ্যে ভারতীয়সহ ৬০০ ঔপনিবেশিক প্রত্নবস্তু চুরি, দুই মাস পর জানাল পুলিশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৬
ঘটনার দুই মাস পর সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করেছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত
ঘটনার দুই মাস পর সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করেছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগের ইতিহাস সম্পর্কিত ৬০০ টিরও বেশি ‘অতি মূল্যবান’ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন চুরির ঘটনা সামনে এসেছে। অ্যাভন এবং সমারসেট পুলিশ এই ঘটনাকে ‘হাই-ভ্যালু বার্গলারি’ বা ‘অতি মূল্যবান বস্তু চুরি’ বলে চিহ্নিত করেছে। চুরি যাওয়া সামগ্রীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিদর্শন ভারতসহ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন উপনিবেশ থেকে সংগৃহীত।

পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে এই চুরির ঘটনা ঘটে। রাত ১টা থেকে ২টার মধ্যে চারজন অজ্ঞাতপরিচয় শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ব্রিস্টলের কিউম্বারল্যান্ড রোড এলাকার একটি গুদামে প্রবেশ করে, যেখানে জাদুঘরের ‘ব্রিটিশ এম্পায়ার অ্যান্ড কমনওয়েলথ’ সংগ্রহশালার সামগ্রী সংরক্ষিত ছিল। মূল জাদুঘর নয়, বরং গুদাম থেকে এই বিশাল সংখ্যক প্রত্নবস্তু চুরি যাওয়ায় সংগ্রহশালাটির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুরি যাওয়া সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক কর্মকর্তার কোমরের বেল্টের বাকল, হাতির দাঁতের খোদাই করা একটি বুদ্ধমূর্তি, সামরিক পদক, ব্যাজ, গয়না, রুপার বাসন, ব্রোঞ্জের মূর্তি এবং ভূতাত্ত্বিক নমুনা। প্রতিটি সামগ্রীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক মূল্য অনেক।

ঘটনাটি সেপ্টেম্বরে ঘটলেও, দু’মাসেরও বেশি সময় পর পুলিশ চলতি মাসে সন্দেহভাজন চার ব্যক্তির সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করে জনগণের সহায়তা চেয়েছে। প্রকাশিত ঝাপসা ফুটেজে দেখা গেছে, চারজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ওই এলাকায় ব্যাগ নিয়ে ঘুরছে।

এই বিলম্ব প্রসঙ্গে পুলিশ কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা না দিলেও, অ্যাভন ও সমারসেট পুলিশের গোয়েন্দা কনস্টেবল ড্যান বার্গান এক বিবৃতিতে চুরির ঘটনাকে শহরের জন্য ‘এক বিশাল সাংস্কৃতিক ক্ষতি’ বলে উল্লেখ করেছেন।

গোয়েন্দা কনস্টেবল বার্গান আরও বলেন, ‘চুরি হওয়া এই জিনিসগুলোর অনেকগুলোই ব্যক্তিগত দান, যা ব্রিটিশ ইতিহাসের একটি বহু-স্তরীয় দিক সম্পর্কে গভীর ধারণা দেয়। এই সংগ্রহশালাটি ঔপনিবেশিক ইতিহাস, সাম্রাজ্যের কাঠামো এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার বিরল দলিল।’

পুলিশ আশা করছে, এই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সম্পদগুলো উদ্ধার এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসবেন। গোয়েন্দা দল বর্তমানে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, ফরেনসিক তদন্ত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতীয় কারিগরদের তৈরি চপ্পল লাখ টাকায় বিক্রি করবে প্রাডা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের ঐতিহ্যবাহী ‘কোলাপুরি’ চপ্পলের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত এটি তৈরি করছে প্রাডা। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের ঐতিহ্যবাহী ‘কোলাপুরি’ চপ্পলের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত এটি তৈরি করছে প্রাডা। ছবি: সংগৃহীত

ইতালির বিলাসবহুল ব্র্যান্ড প্রাডা ভারতের ঐতিহ্যবাহী ‘কোলাপুরি’ চপ্পলের অনুকরণে সীমিত সংস্করণের কিছু স্যান্ডেল বাজারে আনতে যাচ্ছে। প্রতিটি স্যান্ডেলের মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ৮০০ ইউরো বা ৯৩০ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার টাকা। চলতি বছরের জুনে পেটেন্ট নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে প্রাডা ভারতীয় কারিগরদের সঙ্গে মিলে নতুন এই উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রাডার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী লোরেঞ্জো বেরতেল্লি এসব তথ্য জানিয়েছেন।

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেরতেল্লি জানান, প্রাডা প্রথম পর্যায়ে মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে ২ হাজার জোড়া স্যান্ডেল তৈরি করবে। সেখানে ভারতীয় কারিগরদের দক্ষতা ও ইতালিয়ান প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটবে। এ জন্য প্রাডা ভারতের দুটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো—লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড চর্মাকার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ও ড. বাবু জগজীবন রাম লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন।

বেরতেল্লি বলেন, ‘আমরা স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের ঐতিহ্যগত দক্ষতার সঙ্গে আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং টেকনিক যুক্ত করব।’ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বব্যাপী ৪০টি প্রাডা স্টোর ও অনলাইনে এই সংস্করণের বিক্রি শুরু হবে।

ছয় মাস আগে মিলানের শোতে প্রাডা একটি স্যান্ডেল প্রদর্শন করে, যা দেখতে অনেকটাই ১২শ শতকের ভারতীয় কোলাপুরি চপ্পলের মতো ছিল। সেই ছবি ভাইরাল হলে ভারতীয় কারিগর ও রাজনীতিবিদেরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। পরে প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করে যে তাদের নকশা ভারতীয় ঐতিহ্য থেকে অনুপ্রাণিত এবং এরপরই ভারতীয় কারিগরদের সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

চুক্তি অনুযায়ী, তিন বছরের অংশীদারত্বের আওতায় কারিগরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ভারতেই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থাকবে, পাশাপাশি কারিগরেরা স্বল্প সময়ের জন্য ইতালির প্রাডা একাডেমিতেও শেখার সুযোগ পাবেন।

মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে কোলাপুরি চপ্পলের উৎপত্তি। এগুলো মূলত এখনো ওই অঞ্চলের প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে তৈরি হয়। শিল্পীরা আশা করছেন, প্রাডার সহযোগিতা নতুন প্রজন্মকে কাজে আকৃষ্ট করবে এবং দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এই ঐতিহ্য নতুনভাবে বাঁচবে।

লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড চর্মাকার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রেরণা দেশভরত বলেন, ‘প্রাডা যখন এই কারুকর্মকে বিলাসবহুল পণ্যের মর্যাদা দেবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই এর চাহিদা বাড়বে।’

বেরতেল্লি জানান, এই প্রকল্পে কয়েক মিলিয়ন ইউরো ব্যয় হবে এবং কারিগরদের ন্যায্য পারিশ্রমিক দেওয়া হবে।

যদিও প্রাডা এ বছর দিল্লিতে তাদের প্রথম বিউটি স্টোর খুলেছে। তবে বেরতেল্লি জানান, আগামী বছরে ভারতে নতুন কোনো রিটেইল ফ্যাশন আউটলেট বা কারখানা খোলার পরিকল্পনা নেই। তিন থেকে পাঁচ বছর পর বিষয়টি বিবেচনায় আসতে পারে।

বেরতেল্লি বলেন, ভারতে এখনই নতুন কোনো স্টোরের পরিকল্পনা নেই, তবে এটি নিয়ে আমরা গুরুত্বসহকারে ভাবছি। ভারতই আমাদের জন্য ‘পরবর্তী বড় সম্ভাবনাময় বাজার’।

বৈশ্বিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেলয়েট গ্লোবালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতের বিলাসবহুল পণ্যের বাজারের মূল্য ছিল প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। তবে এটি এখনো চীনের তুলনায় অনেক ছোট; যেখানে ২০২৪ সালে বাজারের আকার ছিল প্রায় ৪৯.৫ বিলিয়ন ডলার।

বেশির ভাগ গ্লোবাল ব্র্যান্ডই ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করেছে রিলায়েন্স বা আদিত্য বিরলা গ্রুপের মতো বড় কনগ্লোমারেটের অংশীদারত্বে। তবে বেশি সময় লাগলেও প্রাডা নিজেরাই ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে চায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত