Ajker Patrika

রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা কমানোর ঘোষণা সত্ত্বেও চ্যালেঞ্জের মাত্রা কমেনি: জেলেনস্কি

আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২২, ১০: ২৯
রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা কমানোর ঘোষণা সত্ত্বেও চ্যালেঞ্জের মাত্রা কমেনি: জেলেনস্কি

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা কমানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও এখনো ইউক্রেনে ‘রুশ বোমাবর্ষণ কমেনি’ বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের এ দাবি করেছেন। আজ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে আপনারা খবরটি দেখেছেন—রাশিয়ার সামরিক বাহিনী কিয়েভ ও চেরনিহিভ এলাকায় তাদের সামরিক তৎপরতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু ইউক্রেন সতর্ক অবস্থা ত্যাগ করতে চায় না এবং সেরকম পরিস্থিতি এখনো হয়ে ওঠেনি। চ্যালেঞ্জের মাত্রা কমেনি। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর এখনো আমাদের দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের কাছে প্রচুর সরঞ্জাম ও লোক রয়েছে।’ 

জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘“শত্রু” এখনো আমাদের ভূখণ্ডে রয়েছে। তারা আমাদের শহরে গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। মারিওপোল অবরুদ্ধ। রকেট ও বিমান হামলা থামছে না।’ 

তবে ভাষণে জেলেনস্কি আলোচনা চালিয়ে যেতে ইউক্রেনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন, ‘ইউক্রেন আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। আমাদের দেশের জন্য প্রকৃত নিরাপত্তা অর্জন করতে হবে।’ 

এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কিছু দেশ আশা করতে পারে, চলমান আলোচনা রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ওপর প্রভাব ফেলবে। যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে না, যতক্ষণ না আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পাই এবং যতক্ষণ না আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাসপোর্ট সূচকে কেন ভারতের এত পতন, কূটনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৬
পাসপোর্ট সূচকে কেন ভারতের এত পতন, কূটনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন

ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। অথচ দেশের অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে পাসপোর্টের ক্ষমতার কোনো সামঞ্জস্য নেই। সম্প্রতি প্রকাশিত হেনলি পাসপোর্ট সূচকে ভারতের পাসপোর্টের দুর্বলতা আবারও প্রকট হয়েছে। ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুবিধার ওপর ভিত্তি করে তৈরি এই সূচকে ভারত গত বছরের তুলনায় পাঁচ ধাপ পিছিয়ে ৮৫তম স্থানে নেমে এসেছে।

ভারতীয় নাগরিকদের জন্য পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে ভিসা প্রাপ্তি এখনো একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহল ভারতের ‘সফট পাওয়ার’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

বিশ্বের মোট ১৯৯টি পাসপোর্টের মধ্যে ভারতের বর্তমান অবস্থান ৮৫তম। এটি হতাশাজনক বলছেন পর্যবেক্ষকেরা। এর বিপরীতে রুয়ান্ডা (৭৮তম), ঘানা (৭৪তম) এবং আজারবাইজানের (৭২তম) মতো ভারতের তুলনায় অনেক ছোট অর্থনীতির দেশগুলো সূচকে এগিয়ে রয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা মাত্র ৫৭টি দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশের সুবিধা পান, যা আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ার নাগরিকদের সমান।

অবশ্য গত দশকেও পাসপোর্ট সূচকে ভারত ৮০-এর ঘরেই ওঠানামা করেছে, এমনকি ২০২১ সালে ৯০-এর ঘরে নেমে গিয়েছিল। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুরের মতো এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় ভারতের জন্য এটি মোটেও সম্মানজনক নয়। এশিয়ার এই দেশগুলোর পাসপোর্ট বরাবরই সূচকের শীর্ষস্থানে থাকে।

গত বছরের মতো চলতি বছরও সিঙ্গাপুর ১৯৩টি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা নিয়ে সূচকের শীর্ষে অবস্থান করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান দ্বিতীয়, ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা আছে ১৯০টি দেশে। ১৮৯টি দেশে ভিসামুক্ত সুবিধা নিয়ে জাপানের অবস্থান তৃতীয়।

যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০। বাংলাদেশি পাসপোর্টে ভিসামুক্ত গন্তব্যের সংখ্যা মাত্র ৩৮টি। উত্তর কোরিয়ার অবস্থানও একই।

পাসপোর্টের ক্ষমতা কেবল একটি ভ্রমণ নথি নয়; এটি একটি দেশের ‘সফট পাওয়ার’ এবং বৈশ্বিক প্রভাবকে প্রতিফলিত করে। একটি দুর্বল পাসপোর্ট নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যবসা, উচ্চশিক্ষা এবং পেশাগত সুযোগ সীমিত করে। এর ফলে ভিসা খরচ বাড়ে এবং ভ্রমণের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার সময় তৈরি হয়।

বিগত এক দশকে ভারতে ভিসামুক্ত প্রবেশের সুযোগ দেওয়া দেশের সংখ্যা বাড়লেও, র‍্যাঙ্ক কেন পিছিয়েছে?

২০১৪ সালে ভারতে যখন প্রথম নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসে তখন ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ ছিল ৫২টি দেশে এবং র‍্যাঙ্ক ছিল ৭৬তম। এর এক বছর পরই বড় ধাক্কা খায় ভারতীয় ভিসা, অবস্থান একলাফে ৮৫-তে নেমে যায়। এরপর ২০২৩ ও ২০২৪ সালে একটু উন্নতি হয়, ৮০তম স্থানে ওঠে। এরপর ২০২৫ সালে আবার নেমে ৮৫তম স্থানে চলে গেছে। এই সময় ভারতীয়দের ভিসামুক্ত ভ্রমণ গন্তব্য ২০১৫ সালের ৫২ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৬০ এবং ২০২৪ সালে ৬২টি হয়েছে। স্পষ্টত ২০২৫ সালে ভিসা গন্তব্য ৫৭টিতে ঠেকলেও তা ২০১৫ সালের (৫২) তুলনায় বেশি। এরপরও পাসপোর্ট সূচকে ৮৫-তে নেমে যাওয়ার কারণ কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ হলো বিশ্বব্যাপী ভূরাজনৈতিক গতিপ্রকৃতিতে তীব্র প্রতিযোগিতা। বৈশ্বিক গড় ভিসামুক্ত গন্তব্যের সংখ্যা ২০০৬ সালের ৫৮ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ১০৯ হয়েছে। এর অর্থ হলো, বিশ্বের অন্যান্য দেশ দ্রুতগতিতে তাদের নাগরিকদের জন্য নতুন ভ্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক দৌড়ে ভারত পিছিয়ে পড়েছে।

যেখানে গত এক দশকে চীন তাদের ভিসামুক্ত গন্তব্যের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৮২ করেছে, যার ফলে তাদের র‍্যাঙ্ক ৯৪ থেকে ৬০-এ উন্নীত হয়েছে। এই উদাহরণ স্পষ্ট করে, কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে র‍্যাঙ্ক দ্রুত উন্নত করা সম্ভব।

র‍্যাঙ্ক পতনের নেপথ্যে রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক ও নিরাপত্তাও বড় কারণ। সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত আচল মালহোত্রা এই র‍্যাঙ্ক পতনের পেছনে একাধিক অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কারণ তুলে ধরেছেন।

মালহোত্রার মতে, ১৯৭০-এর দশকে ভারতীয়রা অনেক পশ্চিমা দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারতেন। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে খালিস্তান আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ভারতের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিকে আঘাত করে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো ভিসা নীতি কঠোর করে। পরবর্তী রাজনৈতিক উত্থান-পতন ভারতের স্থিতিশীলতা নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তোলে।

মালহোত্রা উল্লেখ করেন, অনেক দেশই বর্তমানে অভিবাসন নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক। ভারত থেকে অন্য দেশে স্থায়ীভাবে যাওয়া বা ভিসার মেয়াদ শেষেও থেকে যাওয়ার হার বেশি হওয়ায় তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের সুনামের ওপর প্রভাব ফেলছে।

এ ছাড়া পাসপোর্টের নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং জটিল পদ্ধতিকেও এই পতনের জন্য দায়ী করেছেন মালহোত্রা। তিনি বলেন, পাসপোর্টের নিরাপত্তা এবং অভিবাসন পদ্ধতিও ভিসামুক্ত প্রবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ২০২৪ সালে শুধু দিল্লি পুলিশই ভিসা এবং পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে ২০৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ভারতের ধীরগতির ভিসা প্রক্রিয়াকরণ এবং জটিল অভিবাসন পদ্ধতিও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও বিশ্ব রাজনীতিতে ‘আইসোলেশন’ বা বিচ্ছিন্নতার প্রবণতার কারণে সূচকে ঐতিহাসিক সর্বনিম্ন ১২তম স্থানে নেমে এসেছে। যেখানে আগের বছরও শীর্ষ ১০-এ ছিল।

এদিকে পাসপোর্টের নিরাপত্তা বাড়ানো এবং অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য ভারত সম্প্রতি ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট চালু করেছে। এতে ছোট একটি চিপের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষিত থাকে, যা জালিয়াতি রোধে অত্যন্ত কার্যকর হবে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মত হলো, শুধু প্রযুক্তিগত উন্নতিই যথেষ্ট নয়। ভারতীয়দের বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাব বাড়াতে হলে ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে এবং দ্রুত নতুন নতুন ভ্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাসপোর্টের র‍্যাঙ্ক উন্নত করতে সরকারের এই বিষয়ে আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এবার তেলের খনি নাইজেরিয়াতে নজর ট্রাম্পের, অজুহাত—খ্রিষ্টানরা ভালো নেই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৪২
নাইজেরিয়াকে বিশেষ তালিকাভুক্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ছবি: সংগৃহীত
নাইজেরিয়াকে বিশেষ তালিকাভুক্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ছবি: সংগৃহীত

আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়াতে ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে বলে দেশটিতে বিশেষ নজর রাখার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নাইজেরিয়াকে ধর্মীয় স্বাধীনতা-সংক্রান্ত নজরদারির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্পের অভিযোগ, দেশটির মুসলিম জনগোষ্ঠীর হাতে খ্রিষ্টানরা ‘গণহত্যার’ শিকার হচ্ছেন। এই ধরনের গুরুতর এবং অস্পষ্ট দাবির ভিত্তিতেই আফ্রিকান এ দেশটিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ বা কান্ট্রিস অব পার্টিকুলার কনসার্নের (সিপিসি) তালিকায় যুক্ত করা হবে।

সমালোচকেরা বলছেন, এই তকমা নাইজেরিয়ার ওপর ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক বা অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা জারির পথ প্রশস্ত করতে পারে।

গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লেখেন, ‘নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান ধর্ম এক অস্তিত্বের সংকটের মুখে। হাজার হাজার খ্রিষ্টানকে হত্যা করা হচ্ছে। কট্টর ইসলামপন্থীরা এই গণহত্যার জন্য দায়ী। আমি এই কারণে নাইজেরিয়াকে একটি “বিশেষ উদ্বেগের দেশ” ঘোষণা করছি।’

তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন, ১৯৯৮-এর অধীনে এই সিপিসি ক্যাটাগরি তৈরি করা হয়েছিল ধর্মীয় নিপীড়ন পর্যবেক্ষণ এবং তা বন্ধ করার পক্ষে কথা বলার জন্য। সাধারণত কংগ্রেস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দ্বিদলীয় গ্রুপ ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘ সুপারিশের ভিত্তিতেই এই তকমা দেওয়া হয়।

ট্রাম্প এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মতামত না নিয়েই দ্রুত তদন্তের জন্য হাউস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস কমিটি এবং দুই রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য—রিপ্রেজেনটেটিভ রাইলি মুর ও টম কোলকে নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্পের এই অভিযোগগুলো ডানপন্থী আইনপ্রণেতারা বহু দিন ধরে প্রচার করে আসছেন। তাঁদের ভাষ্য, যা নাইজেরিয়ার অভ্যন্তরীণ সংঘাতকে কেবল কট্টর ইসলামপন্থীদের দ্বারা খ্রিষ্টানদের ওপর আক্রমণ হিসেবে তুলে ধরে।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এই ধরনের সরল ব্যাখ্যাকে ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, নাইজেরিয়ার অভ্যন্তরীণ সংঘাতগুলো কেবল ধর্মীয় পার্থক্যের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করা যায় না।

নাইজেরিয়া মূলত দুটি অংশে বিভক্ত: সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর এবং প্রধানত খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দক্ষিণ। এক দশকের বেশি সময় ধরে উগ্রবাদী গোষ্ঠী বোকো হারামের সহিংস আক্রমণের ফলে দেশটি চরম অস্থিরতা ও বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীন হয়েছে। এর পাশাপাশি পানি ও চারণভূমির মতো সম্পদের সংকট নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছে। এর ফলে প্রধানত খ্রিষ্টান কৃষক এবং মুসলিম পশুপালকদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নাইজেরিয়া সরকার দাবি করে, এই সংঘর্ষগুলোতে প্রাথমিকভাবে ধর্মের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

তা সত্ত্বেও, রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ এবং প্রতিনিধি রাইলি মুর ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মুর বলেন, নাইজেরিয়ার খ্রিষ্টানদের জন্য আন্তর্জাতিক মনোযোগ, চাপ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে তিনি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।

এদিকে নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের রক্ষার কথা বললেও ট্রাম্প প্রশাসনের শরণার্থী নীতি নতুন করে সমালোচনায় এসেছে। স্বদেশ থেকে নিপীড়ন বা সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা নাইজেরিয়ার মানুষের জন্য কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।

গত বুধবার ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে (মাত্র ৭৫০০ জন) সীমিত করা হবে। কোটা বেশির ভাগই ‘দক্ষিণ আফ্রিকার আফ্রিকানার এবং ‘অবৈধ বা অন্যায্য বৈষম্যের শিকার’ ব্যক্তিদের মধ্যে বরাদ্দ করা হবে।

সমালোচকেরা এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করে যুক্তি দিয়েছেন, শরণার্থী মর্যাদা দেওয়া হয় নিয়মতান্ত্রিক নিপীড়ন বিবেচনায়, কেবল বৈষম্যের ভিত্তিতে নয়। ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানাররা ‘গণহত্যা’র শিকার হচ্ছে বলে ভুল দাবি করে কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে চলেছেন। এ ধরনের প্রচারণা চরম ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোই করে থাকে।

উল্লেখ্য, নাইজেরিয়াকে ‘আফ্রিকার দৈত্য’ বলা হয়। এর কারণ শুধু এর বিপুল জনসংখ্যা নয়, বরং এর বিশাল অর্থনৈতিক আকার এবং বিশ্ববাজারে খনিজ তেলের (পেট্রোলিয়াম) ক্ষেত্রে দেশটির প্রধান ভূমিকা। নাইজেরিয়ার অর্থনীতির মূল ভিত্তি খনিজ তেল সম্পদ। দেশটির দক্ষিণ অংশে, বিশেষত নাইজার নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে, খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের সমৃদ্ধ মজুত রয়েছে, যা আগামী বহু দশক ধরে ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট। নাইজেরিয়া বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম অর্থনীতি। তেল উৎপাদন এবং রপ্তানির ওপর ভিত্তি করেই দেশটি এই অবস্থান ধরে রেখেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে নাইজেরিয়ার তেল রপ্তানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাপক সামরিক মহড়ার পর ট্রাম্প বললেন, ভেনেজুয়েলায় হামলার চিন্তা নেই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ০৬
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: বিবিসি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: বিবিসি

ভেনেজুয়েলার উপকূলের দিকে বিশ্বের বৃহত্তম রণতরিসহ বিপুলসংখ্যক যুদ্ধজাহাজ ও সেনা মোতায়েন করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, ভেনেজুয়েলার ভূখণ্ডে হামলার কোনো চিন্তাভাবনা তাঁর নেই। এই মন্তব্য চলতি মাসের শুরুর দিকে মাদক পাচার নিয়ে দেওয়া তাঁর আগ্রাসী মন্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুদ্ধবিমান, রণতরি এবং হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। এর মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড ভেনেজুয়েলার উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

তবে এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে হামলার পরিকল্পনার খবর সরাসরি অস্বীকার করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একই বার্তা দেন। তিনি এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ওয়াশিংটনের বাহিনী ভেনেজুয়েলায় আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেটা ‘গালগল্প’।

ট্রাম্পের এই সংক্ষিপ্ত জবাব চলতি মাসের শুরুতে ভেনেজুয়েলা প্রসঙ্গে তাঁর দেওয়া অন্তত দুটি মন্তব্যের বিপরীত। গত সপ্তাহে তিনি বলেছিলেন, তিনি মাদক পাচারকারীদের ‘হত্যা করবেন’ এবং এর জন্য ‘যুদ্ধ ঘোষণার’ প্রয়োজন নেই। তিনি আরও যোগ করেন, ‘এখন মাদক আসছে স্থলপথে...বুঝলেন! স্থলই হতে চলেছে পরবর্তী লক্ষ্য।’

গত সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনী ক্যারিবীয় এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের জলযানগুলোতে একাধিক হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ৬২ জন নিহত এবং ১৪টি নৌকা ও একটি ডুবোজাহাজ ধ্বংস হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছে, এসব হামলায় মাদক পাচারকারীরা লক্ষ্যবস্তু ছিল, যদিও দাবির সমর্থনে এখনো কোনো প্রমাণ হাজির করেনি।

মার্কিন সিনেট আর্মড সার্ভিসেস কমিটির রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতারা জানিয়েছেন, ক্যারিবিয়ায় জলযানগুলোতে মার্কিন হামলার আইনি ভিত্তি সম্পর্কে তথ্য চেয়ে তাঁদের অনুরোধের কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি। কমিটির রিপাবলিকান চেয়ারম্যান সিনেটর রজার উইকার এবং শীর্ষ ডেমোক্র্যাট জ্যাক রিড এক বিরল দ্বিদলীয় পদক্ষেপে এ বিষয়ে আরও তথ্য চেয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের কাছে লেখা দুটি চিঠি প্রকাশ করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত অনুরোধ করা নথিগুলো সরবরাহ করা হয়নি।

এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই হামলা এবং এর ক্রমবর্ধমান মানবিক ক্ষয়ক্ষতিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে নিন্দা করেছেন। তুর্ক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে এই ধরনের হামলা বন্ধ করতে হবে এবং এই নৌকাগুলোর আরোহীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যা-ই হোক না কেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এদিকে মার্কিন সামরিক বাড়াবাড়ির প্রতিক্রিয়ায় ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো অভিযোগ করেছেন, আমেরিকা তাঁর বিরুদ্ধে একটি নতুন ‘অনন্ত যুদ্ধ’ বাধাতে চায়। মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের মাদক-সংক্রান্ত দাবিও অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলা এমন একটি দেশ, যারা কোকেন উৎপাদন করে না।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশির ভাগ মাদক মার্কিন নাগরিকেরা মেক্সিকোর স্থল সীমান্ত দিয়ে আমেরিকায় পাচার করে।

অন্যদিকে শুক্রবার প্রকাশিত এক ইউগভ (YouGov) জনমত জরিপে দেখা গেছে, ভেনেজুয়েলার আশপাশে মার্কিন নৌবাহিনীর উপস্থিতির প্রতি আমেরিকানদের সমর্থন সেপ্টেম্বরের তুলনায় কমেছে। সর্বশেষ জরিপে মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ নৌবাহিনী মোতায়েনকে সমর্থন করেছে, যেখানে ৩৭ শতাংশ এর বিরোধিতা করেছে।

ট্রাম্প ও রুবিওর মন্তব্য সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ত্রিনিদাদ ও টোবাগো শুক্রবার তাদের সামরিক বাহিনীকে ‘স্টেট ওয়ান অ্যালার্ট লেভেল’-এ রেখেছে এবং সব কর্মীকে ঘাঁটিতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

দ্বীপরাষ্ট্র ত্রিনিদাদ ও টোবাগো মার্কিন রণতরি ইউএসএস গ্রেভেলিকে স্বাগত জানানোর কারণে ভেনেজুয়েলা মঙ্গলবার তাদের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস চুক্তি স্থগিত করেছে। ত্রিনিদাদ ও টোবাগো অবশ্য দাবি করেছে, রণতরিটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিয়মিত, পূর্বপরিকল্পিত যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে সেখানে গিয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্রিটিশ রাজপরিবারে যৌন কেলেঙ্কারি

অ্যান্ড্রু আর ‘প্রিন্স’ নন, হারালেন রাজবাড়িও

  • মেয়ে বিট্রিসের জন্মদিনে দাওয়াত দিয়েছিলেন কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক এপস্টেইনকে
  • দুই প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে প্রিন্সেস ইউজিনি ও প্রিন্সেস বিট্রিসের রাজকীয় উপাধি থাকছে
  • ৯৯ একরের রাজকীয় বাসভবন ‘রয়্লায লজ’ ছাড়তে হচ্ছে
  • যুক্তরাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামে নির্বাসনে যেতে হচ্ছে অ্যান্ড্রুকে
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৫
প্রিন্স অ্যান্ড্রু।
প্রিন্স অ্যান্ড্রু।

ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য অ্যান্ড্রু হারাচ্ছেন তাঁর ‘প্রিন্স’ উপাধি। রাজা তৃতীয় চার্লস এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। যৌন কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় সাজা হচ্ছে তাঁর। এখানেই শেষ নয়। তাঁকে ছাড়তে হবে উইন্ডসরে বরাদ্দ দেওয়া রাজকীয় বাসভবন ‘রয়্যাল লজ’।

যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক হিসেবে দোষী সাব্যস্ত জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র সমালোচনার মধ্যে আছেন অ্যান্ড্রু। আর এ অবস্থায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। বিবিসির খবরে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার রাতে বাকিংহাম প্যালেসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাজার ভাই এখন থেকে অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসর নামে পরিচিত হবেন।

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ৬৫ বছর বয়সী এই সাবেক প্রিন্সের জাঁকালো জীবনযাপনের ইতি ঘটতে যাচ্ছে রাজা তৃতীয় চার্লসের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এরপর থেকে তিনি আর কোনো রাজকীয় সুযোগ-সুবিধাও পাবেন না। ২০ বছর ধরে যে বাড়িতে তিনি বসবাস করেছেন, সেটিও ছেড়ে দিতে হচ্ছে। আর এই রয়্যাল লজ ছেড়ে এখন গ্রামে গিয়ে থাকতে হবে তাঁকে। এটি হবে অ্যান্ড্রুর জন্য একধরনের নির্বাসিত জীবনযাপন।

যৌন নিপীড়কের ইতিহাসে এক ভয়ংকর নাম এপস্টেইন। কুখ্যাত এই নিপীড়ক নিউইয়র্কের কারাগারে ২০১৯ সালে আত্মহত্যা করেন। তবে তাঁকে নিয়ে এখনো আলোচনা হচ্ছে। এর পেছনে কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। এ ছাড়া তাঁর সাবেক প্রেমিকা গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল এবং আরেক যৌন নিপীড়ক হার্ভি ওয়াইনস্টিনকে নিজের বাড়িতে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু।

অ্যান্ড্রুর মেয়ে বিট্রিসের ১৮তম জন্মদিন উদ্‌যাপনের জন্য এপস্টেইন, ম্যাক্সওয়েল ও হলিউডের সাবেক প্রযোজক ওয়াইনস্টিন ২০০৬ সালে উইন্ডসর ক্যাসেলে যান। অথচ এর দুই মাস আগে এক মেয়েশিশুর ওপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। সম্প্রতি অ্যান্ড্রুকে জড়িয়ে এসব তথ্য প্রকাশের পর থেকেই রাজপরিবারের বিরুদ্ধে সমালোচনা বাড়ছিল। এরপর রাজা তৃতীয় চার্লস এমন সিদ্ধান্ত নিলেন।

বিবিসি বলছে, এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ককে কেন্দ্র করে সমালোচনার মুখে চলতি মাসের শুরুতে ‘ডিউক অব ইয়র্ক’সহ রাজকীয় নানা পদবি ব্যবহার না করার ঘোষণা দেন অ্যান্ড্রু। বিশেষ করে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগকারী নারী ভার্জিনিয়া জিউফ্রের একটি স্মৃতিকথা প্রকাশের পর তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা আরও বেড়ে যায়। জিউফ্রের মৃত্যুর পর চলতি মাসের শুরুর দিকে এ স্মৃতিকথা প্রকাশ করা হয়েছে। আত্মজীবনীতে জিউফ্রে অভিযোগ করেছেন, কিশোরী বয়সে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তাঁর কয়েকবার যৌন সম্পর্ক হয়েছে। জীবিত থাকাকালেও অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন জিউফ্রে। অ্যান্ড্রু ২০২২ সালে জিউফ্রের সঙ্গে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে মামলাটি মীমাংসা করেন।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বাকিংহাম প্যালেসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অ্যান্ড্রুর সব ধরনের উপাধি, সম্মাননা ও রাজকীয় মর্যাদা আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন রাজা তৃতীয় চার্লস। অ্যান্ড্রুকে দেওয়া রয়্যাল লজও ছাড়তে হবে। অ্যান্ড্রু নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করলেও এ শাস্তিগুলো অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়েছে। বাকিংহাম প্যালেসের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সব ধরনের নির্যাতনের শিকারদের প্রতি’ সমর্থন ও সহানুভূতি প্রকাশ করছে রাজপরিবার।

এদিকে অ্যান্ড্রুর উপাধি বাতিল হলেও দুই প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে প্রিন্সেস ইউজিনি ও প্রিন্সেস বিট্রিসের রাজকীয় উপাধি বহাল থাকবে। অ্যান্ড্রুর সাবেক স্ত্রী সারা ফার্গুসনও রয়্যাল লজ ছাড়বেন। অবশ্য তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই ‘ডিউক অব ইয়র্ক’ উপাধি ত্যাগ করেছেন। এরপর তিনি নিজের পারিবারিক নাম ফার্গুসন ব্যবহার করতে শুরু করেন।

কী আছে সেই বাড়িতে

যুক্তরাজ্যের অন্যতম বিলাসবহুল বাড়ি রয়্যাল লজ। ‘৩০ রুম ম্যানশন’খ্যাত এই বাড়িতে অ্যান্ড্রু আছেন ২০০৩ সাল থেকে। বাড়িটির আয়তন ৯৯ একর। সেখানে সুইমিং পুল, পাখি পালনের বন্দোবস্ত, ছয়টি লজ কটেজ, একটি বাগান কটেজ, এমনকি রাজপরিবারের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। রয়্যাল লজে নামের বাড়িটি যুক্তরাজ্য সরকারের মালিকানাধীন। অ্যান্ড্রু সেখানে অনেকটা বিনা ভাড়ায় থাকার সুবিধা পেতেন।

১৬৬০ সালের দিকে এই বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল। তবে বিভিন্ন সময় এই বাড়ি আধুনিকায়ন করা হয়েছে। রাজা চতুর্থ জর্জের আমলে এই বাড়ির আদলে পরিবর্তন আনা হয়। ১৮২০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে এটি রয়্যাল লজ নামে পরিচিতি পায়। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছোটবেলা কেটেছে এই বাড়িতে। ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত রানির পরিবারের সদস্যরা এই বাড়িতে ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত