Ajker Patrika

ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিন কি একা হয়ে পড়ছেন

আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২২, ১১: ০৪
ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিন কি একা হয়ে পড়ছেন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত ৩০ সেপ্টেম্বর ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে তাঁর দেশের অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেন। ওই সময় এক আবেগঘন ভাষণে তিনি রুশ দার্শনিক ইভান আইয়িনকে সার্বিকভাবে পশ্চিমা শক্তি এবং বিশেষভাবে মার্কিন আধিপত্যবিরোধী বৈশ্বিক লড়াইয়ের একজন নায়ক বলে উল্লেখ করেন। এ বৈশ্বিক লড়াইয়ে তাঁর মিত্রদেরও জোরালো সমর্থন চেয়েছিলেন পুতিন। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে এখন মিত্ররা ক্রমেই দূরত্ব বজায় রেখে চলছে রাশিয়ার কাছ থেকে। এই প্রেক্ষাপটে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে কি তাহলে পুতিন একা হয়ে পড়ছেন?

আল-জাজিরার এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পুতিনের অন্যায্য সম্প্রসারণ ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেনীয় সেনারা দোনেৎস্কের লাইম্যান শহর পুনর্দখল করে নিয়েছেন। তার এক সপ্তাহ পর গত শনিবার রাশিয়া ও ক্রিমিয়ার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী একমাত্র রেল সেতুটি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এক ট্রাক বিস্ফোরণে। কের্চ সেতু নামে পরিচিত এ সেতুটি অন্য যেকোনো অবকাঠামোর তুলনায় সামরিক কৌশলগত দিক দিয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রচার করত ক্রেমলিন। এসব ঘটনায় পুতিনের যুদ্ধ পরিকল্পনা যেমন হোঁচট খাচ্ছে, আবার রাশিয়া এবং তার মিত্ররাও পড়ছে চাপের মুখে।

আল-জাজিরায় ম্যাক্সিমিলিয়ান হেসের ওই বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, আগে রাশিয়া যেসব দেশকে মিত্র ভেবেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে যারা ‘নতি’ স্বীকার না করার এবং ‘রাশিয়াকে সহযোগিতার যৌক্তিক পছন্দ’ বেছে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা মনে হয় ক্রেমলিনের সঙ্গে থাকতে আর খুব একটা আগ্রহী নয়।

সরকারবিরোধী ব্যাপক আন্দোলনের মুখে পড়া ইরানের উদাহরণ দিয়ে বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, চলমান পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ইরান সরকার। একই কারণে তারা রাশিয়ার সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব রাখার নীতি নিয়েছে। আরেক বড় শক্তি চীনও এখন রাশিয়ার যুদ্ধ প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখছে। মার্কিন ডলার নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থার অবসানের লক্ষ্যে পুতিনের প্রয়াসে যুক্ত হতেও আর কোনো আগ্রহ নেই চীনের। পুতিন যেখানে বিরাজমান পুরো ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে আগ্রহী, সেখানে চীনের লক্ষ্য বরং মূল প্রভাবক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে ওই ব্যবস্থায় নিজেকে প্রতিস্থাপন করার। ফলে ‘সম্প্রসারিত’ ভূখণ্ডে রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের প্রতি বেইজিংয়ের স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

অন্যদিকে নিজস্ব কিছু ইস্যু নিয়ে পশ্চিমের সঙ্গে বিরোধে জড়ানো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও এখন রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলার চিন্তা করছেন। পুতিনের দেওয়া বক্তৃতার এক দিন আগে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বেলজিয়ামভিত্তিক সুইফটের বিকল্প হিসেবে রাশিয়ার এমআইআর ব্যবস্থায় লেনদেনে আর উৎসাহী নয় তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন দাবি করে আঙ্কারা পুতিনের ‘সম্প্রসারণ’ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিন একা হয়ে পড়ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে বাস-ট্রাক সংঘর্ষ: নিহত ২০, নুড়িপাথরে চাপা পড়া মানুষের আর্তনাদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পড়া নুড়িপাথরের নিচে চাপা পড়েন অনেক যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত
পড়া নুড়িপাথরের নিচে চাপা পড়েন অনেক যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত

ভারতে হায়দরাবাদ-বিজাপুর জাতীয় সড়কে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অন্তত ২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও বহু যাত্রী। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে আজ সোমবার সকালে তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাঙ্গারেড্ডি জেলায়।

তেলেঙ্গানা স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (টিএসআরটিসি)-এর একটি যাত্রীবাহী বাস তাণ্ডুর থেকে ভিকারাবাদ জেলা হয়ে হায়দরাবাদ অভিমুখে যাচ্ছিল। বাসটিতে প্রায় ৭০ জন যাত্রী ছিলেন বলে জানা যায়। পথেই নির্মাণ সামগ্রী (নুড়িপাথর) বোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

ট্রাকে বোঝাই করা নুড়িপাথর বাসের ভেতরে ছিটকে এসে পড়ে। নুড়ির স্তূপের নিচে চাপা পড়ে বহু যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান।

নিহতদের মধ্যে ১০ জন নারী, ১০ মাস বয়সী একটি শিশু এবং দুর্ঘটনা কবলিত দুই গাড়ির (বাস ও ট্রাক) চালকও রয়েছেন। বাসের চালকের আসন এবং ঠিক তাঁর পেছনের ছয়টি সারির যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এই অংশেই বেশি প্রাণহানি ঘটেছে।

স্থানীয় পুলিশ ও উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। ধ্বংসস্তূপ এবং নুড়ির নিচে চাপা পড়া মানুষের আর্তচিৎকারে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। নুড়ির স্তূপ এবং বাসের ভেঙে যাওয়া কাঠামোর জন্য আহত ও মৃতদেহ উদ্ধারে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। পরে গাসকাটার দিয়ে বাসের অংশ কেটে অনেক মৃতদেহ উদ্ধার করতে হয়।

আহত যাত্রীদের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

দুর্ঘটনার খবরে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী এ রেভান্থ রেড্ডি। তিনি অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমকে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

পরিবহন মন্ত্রী পন্নম প্রভাকর এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ জানতে টিএসআরটিসি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াই নাগিরেড্ডির সঙ্গে কথা বলেছেন। একই সঙ্গে তিনি রাঙ্গারেড্ডি জেলার কালেক্টরকে আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

তেলেঙ্গানার প্রধান বিরোধী দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)-এর কার্যকরী সভাপতি কেটি রামা রাও এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি সরকারের কাছে নিহতদের পরিবারকে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি এই ভয়ানক দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুলেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার দুদিন পরই নারীকেই পিটিয়ে হত্যা করেছে ভবঘুরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ১৯
ভিক্টোরিয়া অ্যাডামস ও আপাপলে অ্যাডোম
ভিক্টোরিয়া অ্যাডামস ও আপাপলে অ্যাডোম

দয়াপরবশ হয়ে এক ভবঘুরেকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন ভিক্টোরিয়া অ্যাডামস (৩৭)। কিন্তু সেই ভবঘুরে দুই দিন পরই অ্যাডামসকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

যুক্তরাজ্যের পশ্চিম লন্ডনের হ্যামারস্মিথের ঘটনা এটি। সম্প্রতি অভিযুক্ত ৩৯ বছর বয়সী আপাপলে অ্যাডোমকে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।

আদালতের নথির বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ভিক্টোরিয়া অ্যাডামসের ফ্ল্যাট থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে। পুলিশ ভাঙচুর ও জোর করে প্রবেশের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল। জানা যায়, ভিক্টোরিয়া অ্যাডামসকে নির্মমভাবে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়।

ওল্ড বেইলির বিচারপতি নাইজেল লিকলি অ্যাডোমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন এবং কমপক্ষে ২১ বছর জেলে ভরে রাখার নির্দেশ দেন। বিচারপতি বলেন, ‘ভিক্টোরিয়া অ্যাডামসের দয়া এবং ভালো স্বভাবের সুযোগ নিয়ে অ্যাডোম তাঁর বিশ্বাসের চরম অবমাননা করেছে।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভিক্টোরিয়া যখন অ্যাডোমকে চলে যেতে বলেন, তখনই সে এই ‘বর্বর ও হিংস্র’ আক্রমণটি চালায়। বিচার শুরুর আগেই অ্যাডোম হত্যার অভিযোগ স্বীকার করেছিল।

ভিক্টোরিয়া অ্যাডামস ছিলেন চার সন্তানের মা। আদালতের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে তাঁর খালা ক্যাথি অ্যাডামস বলেন, ‘ভিকি সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করত, সে ছিল উদার মনের মানুষ। অন্যদের কাছ থেকে তিনি যে দয়া পেয়েছিলেন, সেটি নিজেও ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন—আর এর জন্য তাঁকে নিজের জীবন দিয়ে দিতে হলো।’

ভিক্টোরিয়ার ছোট বোন সোফি লাফ তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, ‘একজনকে সাহায্য করার চেষ্টা করতে গিয়ে, প্রায় অচেনা এক ব্যক্তির হাতে নিজের বাড়িতে খুন হলেন তিনি।’

প্রসিকিউটর আদালতকে জানান, অ্যাডোম গত ৬ ফেব্রুয়ারি একটি ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্রে ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে পরিচিত হয়। এর দু’দিন পরেই সে ভিক্টোরিয়াকে নির্মমভাবে আক্রমণ করে। প্রসিকিউটর আরও জানান, অভিযুক্তের আগেও সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে এবং গ্রেপ্তারের সময় তার কাছে দুটি ছুরি এবং একটি স্ক্রুড্রাইভার পাওয়া যায়।

জানা যায়, ভিক্টোরিয়া কেবল অ্যাডোমকে সাহায্য করতেই চেয়েছিলেন এমন নয়। স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা তাঁকে বারবার হুমকি দিচ্ছিল। নিজের নিরাপত্তার জন্য তিনি অ্যাডোমকে বাড়িতে আনেন। তবে প্রসিকিউটর মন্তব্য করেন, তিনি হয়তো পরে অনুতপ্ত হয়েছিলেন। কারণ অ্যাডোম হঠাৎ করেই হিংস্র হয়ে ওঠেন। ভিক্টোরিয়া সম্ভবত অ্যাডোমকে ভয় পেতে শুরু করেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাদুরোকে সরাতে ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক পদক্ষেপের পক্ষে নোবেলজয়ী মাচাদো

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। ছবি: সংগৃহীত
ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলা উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি দেশটিতে সরকার পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত এই রাজনীতিক জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে সরাতে সহায়তা করলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপকেও স্বাগত জানাবেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাচাদো এই কথা বলেছেন। তিনি এমন এক সময়ে এই অবস্থান ব্যক্ত করলেন, যখন কোনো প্রমাণ ছাড়াই ওয়াশিংটন মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদকচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে। তাঁকে বলা হচ্ছে ‘নার্কোটেররিস্ট’ বা মাদক-সন্ত্রাসী। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পশ্চিম ক্যারিবীয় সাগরে এক নৌবহর মোতায়েন করেন। সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী ভেনেজুয়েলার উপকূলে কথিত মাদকবাহী জাহাজে হামলা চালিয়ে আসছে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ওই এলাকায় নৌবাহিনীর উপস্থিতি আরও বাড়াচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযানের লক্ষ্য মাদকবিরোধী অভিযানের বাইরেও বিস্তৃত হতে পারে। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, ভেনেজুয়েলার ভেতরে সরাসরি হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই, তবু তিনি সম্ভাব্য টার্গেটের তালিকা পর্যালোচনা করেছেন বলে জানা গেছে।

ব্লুমবার্গের দ্য মিশাল হোসেন শোতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাচাদোকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপকে সমর্থন করেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, এখন যে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে, সেটাই একমাত্র উপায় মাদুরোকে বুঝিয়ে দেওয়ার যে, তার এখন চলে যাওয়ার সময় এসেছে।’

মাচাদো দাবি করেন, মাদুরো গত বছরের নির্বাচনে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন। সেই নির্বাচনে মাচাদো নিজে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। তিনি আরও বলেন, ওই নির্বাচনে বিরোধীদলীয় প্রার্থী এডমুন্ডো গনসালেজ উররুতিয়া জয়ী হয়েছিলেন। মাচাদোর ভাষায়, মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো ‘প্রচলিত অর্থে সরকার পরিবর্তন নয়’, কারণ ‘তিনি বৈধ প্রেসিডেন্ট নন, বরং এক মাদক-সন্ত্রাসী কাঠামোর প্রধান।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এটা কোনো রেজিম পরিবর্তন নয়, এটা ভেনেজুয়েলার জনগণের ইচ্ছা কার্যকর করার প্রক্রিয়া।’

অন্যদিকে মাদুরো অভিযোগ করেছেন, মাচাদো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করছেন। তাঁর মতে, মাচাদো আসলে ওয়াশিংটনের হয়ে কাজ করছেন এবং ভেনেজুয়েলায় হস্তক্ষেপের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। দীর্ঘদিন ধরেই মাচাদোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২০০৫ সালে তিনি তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

মাচাদোকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, মাদুরোকে সরাতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি কি একমাত্র পথ, তিনি বলেন, ‘শুধু হুমকিটাই যথেষ্ট হতে পারে। একটি বিশ্বাসযোগ্য হুমকি থাকা ছিল একেবারে অপরিহার্য।’

তিনি আরও দাবি করেন, ভেনেজুয়েলার বিরোধী শিবির ‘সরকার পরিচালনার জন্য প্রস্তুত।’ তাদের পাশে রয়েছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর বড় অংশ। মাচাদোর ভাষায়, ‘তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি এই পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত এবং পরিস্থিতি শুরু হলেই তারা শৃঙ্খলাপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে অংশ নেবে।’

মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের মাদক পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ট্রাম্প ‘এক নতুন অনন্ত যুদ্ধ তৈরি করছেন।’ কারাকাস যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানকে দেশটির সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা ও এক ধরনের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছে। ভেনেজুয়েলা ইতিমধ্যে রাশিয়া, চীন ও ইরানের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা জোরদারে সহযোগিতা চেয়েছে।

রাশিয়া সোমবার ভেনেজুয়েলার সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি অনুমোদন করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে বকেয়া মজুরি চাওয়ায় পিটিয়ে মারা হলো দলিত কৃষককে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৩
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ভারতের উত্তর প্রদেশের আমেথির এক গ্রামে মজুরি চাওয়ায় এক দলিত কৃষি শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করেছে এক ধনী জমিদার ও তার সহযোগীরা। গতকাল রোববার এমন অভিযোগ তুলেছেন নিহতের পরিবার। নিহতের নাম হৌসিলা প্রসাদ। তবে ঘটনা অক্টোবরে দ্বিতীয় সপ্তাহের এবং ঘটেছে উত্তর প্রদেশের রামবারি মজারে সরাই মহেশা গ্রামে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বলা হয়েছে, হৌসিলা প্রসাদের মৃত্যু ঘটল এমন এক সময়, যখন এর আগে পাশের রায়বেরেলিতে গত ১ অক্টোবর রাতে এক দলিতকে ‘ড্রোন চোর’ সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। আমেথি ও রায়বেরেলি—দুটোই নেহরু-গান্ধী পরিবারের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

এই ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত উচ্চবর্ণের জমিদার শুভম সিংকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগ, হামলায় ৪ জন জড়িত থাকলেও পুলিশের এজাহারে কেবল একজনের নাম আছে। তাদের আরও অভিযোগ, শুভমের বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃত খুনের’ মামলা না দিয়ে শুধু ‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের’ ধারা ব্যবহার করেছে পুলিশ।

নিহতের স্ত্রী কীর্তি জানান, ৪০ বছর বয়সী হৌসিলা প্রসাদকে ‘শুভম সিং এবং তাঁর তিন আত্মীয় ও বন্ধুরা জোর করে তাদের জমিতে কাজ করতে নিয়ে গিয়েছিল।’ কীর্তি বলেন, তাঁর স্বামী এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৩৫০ রুপি মজুরিতে কাজ করেছিলেন। কিন্তু কাজ শেষে টাকা দেওয়া হয়নি।

কীর্তি আরও বলেন, ‘২৬ অক্টোবর তিনি বকেয়া টাকা চাইতে গেলে ওরা লোহার রড দিয়ে তাঁকে মারধর করে। অজ্ঞান হয়ে পড়লে তারা জিপে করে বাড়ির সামনে এনে ফেলে চলে যায়।’ মাথায় গুরুতর আঘাতসহ নানা জখম নিয়ে হৌসিলা এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরতে থাকেন। পরে তাঁকে লক্ষ্ণৌয়ের কিং জর্জ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে নেওয়া হয়। সেখানে রোববার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

উত্তর প্রদেশ পুলিশের সার্কেল অফিসার দিনেশ কুমার মিশ্র জানান, শুভম সিংকে ‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।

নিহতের এক আত্মীয় মনীশ প্রসাদ বলেন, ‘আমরা মরদেহ নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান ধর্মঘট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের হুমকি দেয় এবং দ্রুত দাহ সম্পন্ন করতে বাধ্য করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে পুলিশ ঘটনাটিকে ছোটখাটো মারামারি বলে চালিয়ে দেয়। পরে কেবল একজনের নামে অবহেলাজনিত হত্যার মামলা করে। অথচ গোটা গ্রাম জানে, অন্তত চারজন মিলে হৌসিলা প্রসাদকে মেরেছিল।’

ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তিন দিন পর পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তখন অভিযোগ ‘অবহেলাজনিত হত্যা’ থেকে বাড়িয়ে ‘ইচ্ছাকৃত খুন’-এ রূপ দেওয়া হয়, বিশেষ করে খবরটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর।

উত্তর প্রদেশের অন্য জায়গা থেকেও দলিতদের ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে। লক্ষ্ণৌয়ের কাকরি এলাকার শীতলা মাতা মন্দিরে ৬৫ বছর বয়সী রামপালকে নিজের মূত্র চাটতে বাধ্য করা হয়। তিনি তখন প্রস্রাবনালির সংক্রমণে ভুগছিলেন। ঘটনাটি ঘটে ২০ অক্টোবর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত