Ajker Patrika

গ্র্যান্ডমাস্টারকে হারিয়ে সর্বকনিষ্ঠ নারী খেলোয়াড়ের রেকর্ড ভাঙল ১০ বছরের কন্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ২১: ৪৩
বোধনা শিবানন্দন। ছবি: সিএনএন
বোধনা শিবানন্দন। ছবি: সিএনএন

ব্রিটেনের মাত্র ১০ বছর বয়সী এক দাবাড়ু ইতিহাস গড়লেন। বোধনা শিবানন্দন নামের এই মেয়ে উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের বাসিন্দা। ২০২৫ সালের ব্রিটিশ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে এক গ্র্যান্ডমাস্টারকে পরাজিত করে সর্বকনিষ্ঠ নারী দাবাড়ুর খেতাব অর্জন করেছেন তিনি।

শুক্রবার সিএনএন জানিয়েছে, লিভারপুলে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার শেষ রাউন্ডে ৬০ বছর বয়সী গ্র্যান্ডমাস্টার পিট ওয়েলসকে হারান বোধনা। ১০ বছর ৫ মাস ৩ দিন বয়সে তিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করেন, যা পূর্ববর্তী রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন।

এর আগে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যারিসা ইয়িপ ১০ বছর ১১ মাস ২০ দিন বয়সে একজন গ্র্যান্ডমাস্টারকে হারিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশন (এফআইডিই)।

এই জয়ের ফলে বোধনা এখন নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার মর্যাদা অর্জন করেছেন—যা নারী গ্র্যান্ডমাস্টারের এক ধাপ নিচে। দাবা জগতে সর্বোচ্চ খেতাব গ্র্যান্ডমাস্টার, যা বর্তমানে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন গুকেশ দুম্মারাজু এবং বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ম্যাগনাস কার্লসেনের রয়েছেন।

বোধনার বাবা ২০২৪ সালে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের কেউ আগে কখনো দাবায় বিশেষ দক্ষ ছিলেন না।

বোধনা বলেন, তিনি করোনা মহামারির সময় পাঁচ বছর বয়সে দাবা খেলা শুরু করেন। বাবার এক বন্ধুর দেওয়া খেলনা ও বইয়ের মধ্যে একটি দাবার বোর্ড পেয়ে তাঁর আগ্রহ জন্মায়। তার ভাষায়, ‘আমি প্রথমে ঘুঁটিগুলো খেলনা হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাবা বললেন, এগুলো দিয়ে খেলা যায়। সেখান থেকেই আমার শুরু।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সীমান্তে নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে সংঘাত, নিহত ৭

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যেই সীমান্তবর্তী একটি এলাকায় ভারী অস্ত্রশস্ত্রের বহর নিয়ে যাচ্ছে কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী। ছবি: এএফপি
সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যেই সীমান্তবর্তী একটি এলাকায় ভারী অস্ত্রশস্ত্রের বহর নিয়ে যাচ্ছে কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দুই দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তে আবারও সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। থাইল্যান্ড আজ মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে, তারা তাদের ভূখণ্ড থেকে কম্বোডিয়ার সেনাদের উৎখাত করার ব্যবস্থা নিচ্ছে। সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, এখন পর্যন্ত ৭ জন নিহত হয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

উভয় পক্ষই এই সংঘর্ষের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছে। এই সংঘাতের ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল তা বানচাল হয়ে গেল। এর আগে, গত জুলাই মাসে দুই দেশই পাঁচ দিনের লড়াইয়ের জড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক প্রাণহানি এবং বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটে।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার রাতভর সংঘর্ষে দুই সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন। এর ফলে, সেখানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয়জনে। এই লড়াইয়ে এক থাই সেনার মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে এক বিবৃতিতে থাই নৌবাহিনী বলেছে, উপকূলীয় প্রদেশ ত্রাতে থাই ভূখণ্ডের ভেতরে কম্বোডিয়ার সেনাদের উপস্থিতি টের পাওয়া গেছে। তাদের বিতাড়িত করতে সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে। যদিও বিস্তারিত আর কিছু জানানো হয়নি।

কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত সোমবার গভীর রাতে বলেছেন, থাইল্যান্ডের ‘নিজ সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়ার অজুহাতে বেসামরিক গ্রামগুলোতে আক্রমণ করতে সামরিক শক্তি ব্যবহার করা উচিত নয়।’ এর আগে কম্বোডিয়া জানিয়েছিল, তাদের বাহিনী সুদীর্ঘ আক্রমণের মুখে পড়লেও তারা কোনো পাল্টা আঘাত করেনি।

থাই নৌবাহিনী বলেছে, কম্বোডিয়ার সীমান্তে সেনারা তাদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে, তারা স্নাইপার ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করছে, সুরক্ষিত অবস্থানগুলো আরও উন্নত করছে এবং ট্রেঞ্চ বা পরিখা খনন করছে। তারা মনে করে এই সব কার্যকলাপ ‘থাইল্যান্ডের সার্বভৌমত্বের প্রতি একটি প্রত্যক্ষ ও গুরুতর হুমকি।’

গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের ভয়াবহ সংঘর্ষে অন্তত ৪৮ জন নিহত হয় এবং ৩ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হয়। তখন ট্রাম্প মধ্যস্থতা করে যুদ্ধবিরতি ঘটিয়েছিলেন। সে সময় থাইল্যান্ড পাঁচটি সীমান্ত প্রদেশ থেকে ৪ লাখ ৩৮ হাজার সাধারণ নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছিল। কম্বোডিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। থাই সেনাবাহিনী বলেছিল, তাদের ১৮ জন সেনা আহত হয়েছে এবং কম্বোডিয়ার সরকার জানিয়েছে নয়জন সাধারণ নাগরিক আহত হয়েছেন।

থাইল্যান্ড আর কম্বোডিয়া এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তাদের ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থল সীমান্তের অনির্ধারিত স্থানগুলোতে সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিবাদ করে আসছে। প্রাচীন মন্দির নিয়ে চলা বিতর্ক প্রায়ই জাতীয়তাবাদী উন্মাদনা বাড়িয়েছে এবং মাঝে মাঝে সশস্ত্র সংঘাতের জন্ম দিয়েছে, যার মধ্যে ২০১১ সালের এক সপ্তাহব্যাপী মারাত্মক সংঘাতও রয়েছে।

মে মাসে এক সংঘর্ষে এক কম্বোডীয় সেনার মৃত্যুর পর উত্তেজনা আবার বাড়ে। উভয় পক্ষই সীমান্তে প্রচুর সেনা জড়ো করে এবং এর ফলে কূটনৈতিক সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া ও সশস্ত্র সংঘর্ষের দিকে পরিস্থিতি গড়ায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে জাপানে আহত ৩০, সরিয়ে নেওয়া হয়েছে হাজারো মানুষকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৭
আগামী কয়েক দিনে আরও শক্তিশালী কম্পন হতে পারে এমন সতর্কতা দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ছবি: সিবিসি নিউজ
আগামী কয়েক দিনে আরও শক্তিশালী কম্পন হতে পারে এমন সতর্কতা দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ছবি: সিবিসি নিউজ

জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গতকাল সোমবার রাতে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এই ভূমিকম্পে দেশটিতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। সুনামির আশঙ্কায় হাজারো মানুষকে ঘরবাড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

দেশটির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল রাত ১১টা ১৫ মিনিটে (জিএমটি ১৪:১৫) আঘাত হানা ভূমিকম্পটির উৎস ছিল উপকূল থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে আওমোরি অঞ্চলের সাগরে ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৫০ কিমি (৩১ মাইল) গভীরে। ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।

ভূমিকম্পের পর কিছু এলাকায় রেলসেবা স্থগিত রাখা হয়। বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ-সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।

জাপানের স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগামী কয়েক দিনে আরও শক্তিশালী কম্পন হতে পারে এমন সতর্কতা দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় অন্তত এক সপ্তাহ উচ্চ সতর্কতা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের উদ্দেশে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি বলেন, ‘ভূম্পিকম্পের প্রস্তুতি নিশ্চিত করুন। ঘরের আসবাব ঠিকমতো রাখুন। কোনো ধরনের কম্পন অনুভব করলে সঙ্গে সঙ্গে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিন।’

রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রায় ৯০ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আওমোরি প্রিফেকচারাল প্রশাসন জানিয়েছে, এলাকায় প্রায় ২ হাজার ৭০০ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ইস্ট জাপান রেলওয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রেল পরিষেবাও স্থগিত করেছে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সংকট ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে একটি প্রতিক্রিয়া দপ্তর খুলে জরুরি দল গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মিনোরু কিহারা।

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এবং উদ্ধার ও ত্রাণসহ জরুরি দুর্যোগ মোকাবিলা কার্যক্রম বাস্তবায়নে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’

তোহোকু ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের হিগাশিদোরি এবং ওনাগাওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো ধরনের সমস্যা পাওয়া যায়নি।

জাপানি কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে (আইএইএ) জানিয়েছে, ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকাতেও কোনো অস্বাভাবিকতা শনাক্ত হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১১ মার্চ পূর্ব উপকূলে ৯.০ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার সময় ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ওই ভূমিকম্পে সুনামি হয়ে হনশু দ্বীপের বিস্তীর্ণ অংশ তলিয়ে যায়। এতে ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় এবং বহু শহর মানচিত্র থেকে প্রায় মুছে যায়।

জাপান বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। দেশটি ‘রিং অব ফায়ার’-এর ওপর অবস্থান করায় বছরে প্রায় ১ হাজার ৫০০টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

এ বছরের শুরুর দিকে জাপানের ভূমিকম্প অনুসন্ধান প্যানেল জানায়, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে নানকাই ট্রাফে একটি বৃহৎ ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা ৬০-৯০ শতাংশ। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে এমন একটি কম্পনে ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে এবং বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে।

জাপানের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলজুড়ে বিস্তৃত ভূকম্পন-সক্রিয় একটি অঞ্চল নানকাই ট্রাফ। এই অঞ্চলের কাছাকাছি হওয়া ভূমিকম্পগুলোতে অতীতেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিরিয়ায় বাশারের পতনের ১ বছর: স্বপ্ন কিছুটা সত্যি, এখনো অনেক কাজ বাকি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উমাইয়া স্কোয়ারে বাশার আল–আসাদের পতনের এক বছর পূর্তির অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ছবি: এএফপি
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উমাইয়া স্কোয়ারে বাশার আল–আসাদের পতনের এক বছর পূর্তির অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ছবি: এএফপি

সিরিয়ার জনগণ স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের অপসারণের প্রথম বার্ষিকী উদ্‌যাপন করতে রাস্তায় নেমে এসেছেন। দীর্ঘ প্রায় চৌদ্দ বছরের যুদ্ধের ধাক্কা সামলে উঠে দেশটি যত এগোচ্ছে, ততই যেন পরিস্থিতি আরও ভালো হয়ে ওঠার নতুন আশা দেখছেন নাগরিকেরা।

সোমবার গোটা দেশ জুড়ে শহরে শহরে আতশবাজি আর পতাকার ঝলকানি দেখা গেল। বাশার বিরোধীরা মাত্র এগারো দিনের ঝটিকা অভিযানের পর আসাদ রাজবংশের তিপ্পান্ন বছরের শাসনের অবসান ঘটায়। যার এক বছর পূর্তি হলো গতকাল। দামেস্কে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা সাবেক শাসনকে উৎখাত করার জন্য সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন।

আল–শারা বললেন, ‘ইতিহাসের এই কেন্দ্রে আপনারা যাঁরা আজ উপস্থিত, তাঁরা সাহস আর বীরত্বের এক নতুন গল্প রচনা করছেন। আজ আমরা স্বৈরাচার আর একনায়কত্বের শৃঙ্খল থেকে সিরিয়াকে মুক্ত করার প্রথম বছর পূর্ণ করলাম, দেশকে আবারও তার মহত্ত্বের জায়গায় ফিরিয়ে এনেছি। মাথা উঁচু করে দাঁড়ান আপনারা। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা আমাদের স্বদেশ হারিয়েছিলাম, যখন এই চক্রটি তার সভ্যতা, ইতিহাস আর ঐতিহ্য কেড়ে নিতে চেয়েছিল।’

এর আগে, বার্ষিকী স্মরণে সামরিক পোশাকে আল-শারা উমাইয়া মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘কেউ আমাদের পথে বাধা দিতে পারবে না, সে যত বড় বা ক্ষমতাশালীই হোক না কেন। আমরা সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করব, ইনশা আল্লাহ। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম—আমরা এমন এক শক্তিশালী সিরিয়া আবার গড়ে তুলব যা তার বর্তমান আর অতীতের যোগ্য। এমন এক সিরিয়া যা নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়াবে এবং মানুষের মধ্যে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে।’

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দামেস্ক এবং হামা, হোমস ও দেইর আজ–জোরসহ বিভিন্ন প্রদেশে সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে, বাশার আল–আসাদের পতনের পর নতুন সরকার নাগরিকদের জন্য মৌলিক পরিষেবা প্রদানে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। গত জুনে এক প্রেসিডেনশিয়াল ডিক্রি অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম মাসিক বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। যার ফলে গত পনেরো বছরে প্রথমবারের মতো আলেপ্পো, হোমস এবং দামেস্কের মতো প্রধান শহরগুলো পরীক্ষামূলকভাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে শুরু করেছে।

সিরিয়ার জনগণের মনে অন্ধকার স্মৃতি রেখে যাওয়া সেদনায়া, মেজেহ সামরিক কারাগার, এবং খাতিবের মতো জেলখানাগুলোকেও পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে আল-জাজিরার প্রতিনিধি আসসেদ বেইগ আলেপ্পো থেকে জানালেন, গোটা জাতি আনন্দের মেজাজে রয়েছে, মানুষজন রাস্তায় নেমে উল্লাস করছে, গান গাইছে, পতাকা ওড়াচ্ছে, তবুও ‘অনেক কাজ বাকি।’

তিনি জানান, ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিরোধী যোদ্ধা আর আসাদসমর্থক বাহিনীর মধ্যে ভাগ হয়ে থাকা আলেপ্পো শহরটি ‘ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’ এবং ‘পুনর্গঠন ও মেরামতের জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ হবে।’ বেইগ বলেন, ‘সে কারণেই সরকার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের দিকে বিনিয়োগের আশায় তাকিয়ে আছে, এই দেশকে, বিশেষ করে আলেপ্পোকে পুনর্গঠনে সাহায্য করার জন্য। কারণ এখানে লড়াই ছিল খুবই ভয়ংকর।’

এদিকে, লাখ লাখ শরণার্থী এবং প্রবাসী এক বছর আগে রাশিয়া পালিয়ে যাওয়া আসাদের পতনের পর দেশে ফিরে জীবন নতুন করে গোড়ার সিদ্ধান্তটি নিয়ে দোটানায় আছেন। ২০১১ সালের মার্চে আসাদের বিরুদ্ধে প্রধানত নিরস্ত্র অভ্যুত্থান হিসেবে শুরু হওয়া যুদ্ধ দ্রুতই এক পূর্ণাঙ্গ সংঘাতে রূপ নেয়, যাতে প্রাণ হারান কয়েক লাখ মানুষ। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অভিবাসন সংকটেরও জন্ম দেয়; যুদ্ধের চরম সময়ে, ২০২১ সালে, জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ প্রায় আটষট্টি লাখ সিরিয়ান দেশ ছেড়ে যে যেখানে পেরেছেন আশ্রয় খুঁজেছিলেন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে সাত লাখ বিরাশি হাজারেরও বেশি সিরিয়ার অন্য দেশ থেকে ফিরেছেন। ফিরে আসার সংখ্যা বাড়লেও, সীমিত চাকরির সুযোগ আর জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনে বাধা দিচ্ছে। অনেকের জন্য আবাসন এখনো ক্রয়ক্ষমতার বাইরে, ফলে ফিরে আসা মানুষজন ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি কিংবা দামি ভাড়া বাড়িতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

সিরিয়ার তরুণ প্রজন্ম পরিবর্তনের ব্যাপারে বিশেষভাবে আশাবাদী, তবে আরও বেশি কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং অর্থনীতিকে চাঙা করে তোলার প্রয়োজনীয়তা জরুরি। মাহা খলিল নামে এক তরুণী শিক্ষার্থী আল-জাজিরাকে বলেন, ‘স্বপ্নের কেবল কিছুটা সত্যি হয়েছে। আমরা বিজয়ী হয়েছি, কিন্তু বছর, বাড়িঘর, আর সন্তানদের হারিয়েছি। আসল গল্পটা এখন শুরু। আমরা আশা করি পুনর্গঠন করতে পারব, কিন্তু যুবকেরা বিদেশে যাওয়ার কথা ভাবছে। আর যাঁরা বিদেশে আছেন, তাঁরা ফিরে আসতে ভয় পাচ্ছেন।’

বাশার আল–আসাদের পতনের বার্ষিকী উপলক্ষে সিরিয়া আন্তর্জাতিক সমর্থনও পেয়েছে। জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস সিরিয়ার রাজনৈতিক উত্তরণ নিশ্চিত করার জন্য সংস্থার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই বার্ষিকীতে, আমরা এক লক্ষ্য নিয়ে ঐক্যবদ্ধ—শান্তি ও সমৃদ্ধির ভিত্তি তৈরি করা এবং একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, ঐক্যবদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সিরিয়ার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার নতুন করে জানানো।’

থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরাক, সিরিয়া ও লেবানন প্রকল্পের পরিচালক হেইকো উইমেন আল-জাজিরাকে বললেন, আল-শারার আন্তর্জাতিক বৈধতা পাওয়াটা ‘এক অভাবনীয় সাফল্য’ হলেও, সরকারকে এবার দেশের অভ্যন্তরের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। উইমেন বললেন, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সরকারের উচিত হবে প্রধানত অর্থনীতি পুনর্গঠনের দিকে নজর দেওয়া, ‘যেটাতে সময় লাগবেই, কারণ মূলধন ও বিনিয়োগ সতর্ক থাকে, যা হওয়া উচিত।’ তিনি আরও যোগ করেন, সরকারের উচিত ‘রাজনৈতিক প্রাণচাঞ্চল্যকে পুনরুজ্জীবিত করা।’

বহু বছর ধরে সিরিয়ার নেতারা ক্ষমতা ‘একচেটিয়াভাবে’ নিজেদের হাতে রাখতে অভ্যস্ত ছিলেন, কিন্তু এখন যেহেতু তাঁরা সমস্ত নাগরিককে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছেন, তাই এই পদ্ধতি আর চলবে না। উইমেন বললেন, ‘সিরিয়ার প্রত্যেক মানুষকে নিশ্চিত হতে হবে যে, যে দেশটি গড়া হচ্ছে, সেখানে তাদেরও মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকবে—এবং তাদেরও একটা জায়গা থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি, এবার টার্গেট কৃষিপণ্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৭
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে দিয়েছেন, তিনি কৃষি আমদানির ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করতে পারেন। বিশেষ করে ভারত থেকে চাল আমদানি এবং কানাডা থেকে সার আমদানির ওপর। কারণ, উভয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছাড়াই চলছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। ওই বৈঠকে তিনি আমেরিকান কৃষকদের জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলারের একটি কৃষি ত্রাণ প্যাকেজ উন্মোচন করেন এবং একই সঙ্গে ভারত ও অন্যান্য এশীয় সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কৃষি আমদানির তীব্র সমালোচনা করেন।

রিপাবলিকান এই নেতা দাবি করেন, আমদানি দেশীয় উৎপাদকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে এবং তিনি আমেরিকান উৎপাদকদের রক্ষা করার জন্য শুল্ককে আক্রমণাত্মকভাবে ব্যবহার করে এই সমস্যা সমাধানের তাঁর উদ্দেশ্যের পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি বলেন, তাঁর প্রশাসন ‘আমেরিকান কৃষকদের জন্য ১২ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা’ বরাদ্দ করবে, যার অর্থায়ন হবে বাণিজ্য অংশীদারদের কাছ থেকে ইউএস যে শুল্ক রাজস্ব সংগ্রহ করছে তা থেকে।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আসলে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার নিচ্ছি, যদি আপনি একটু ভেবে দেখেন’ এবং যোগ করেন, দেশগুলো ‘এমনভাবে আমাদের সুযোগ নিয়েছে, যা আগে কেউ দেখেনি।’

তিনি এই নতুন সাহায্যকে খামার অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য বলে অভিহিত করেন, যা তিনি বারবার উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া মুদ্রাস্ফীতি এবং হতাশাজনক পণ্যমূল্যের ফলে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘কৃষকেরা অপরিহার্য জাতীয় সম্পদ, আমেরিকার মেরুদণ্ডের অংশ।’ তিনি যুক্তি দেন, মার্কিন কৃষিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য শুল্কের সুবিধা কাজে লাগানো তাঁর কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু।

চাল আমদানির ওপর এক দীর্ঘ আলোচনার সময় ভারত বিশেষভাবে একটি উদাহরণ হিসেবে উঠে আসে। এই বিষয়টিকে লুইজিয়ানার এক উৎপাদক দক্ষিণ অঞ্চলের চাষিদের জন্য ‘ধ্বংসাত্মক’ বলে বর্ণনা করেন।

যখন ট্রাম্পকে জানানো হয়, ভারতীয় সংস্থাগুলো মার্কিন খুচরা চালের বাজারে ‘সবচেয়ে বড় দুটি ব্র্যান্ডের’ মালিক, তখন ট্রাম্প বলেন, ‘ঠিক আছে, এবং আমরা এটির যত্ন নেব। এটা দারুণ। এটা খুবই সহজ... শুল্ক, আবারও, দুই মিনিটের মধ্যে সমস্যার সমাধান করে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘তাদের ডাম্পিং করা উচিত নয়... মানে, আমি এটা শুনেছি, আমি অন্যদের কাছ থেকে এটা শুনেছি। আপনারা এটা করতে পারবেন না।’

তিনি স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করার জন্য কানাডা থেকে আসা সারের ওপরও সম্ভাব্য শুল্ক ব্যবস্থার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘এর অনেকটাই কানাডা থেকে আসে, এবং তাই আমাদের যদি প্রয়োজন হয় তবে আমরা সেটির উপর খুব কঠোর শুল্ক আরোপ করব। কারণ, এটিই সেই উপায়, যার মাধ্যমে আপনি এখানে জোরদার করতে চান।’ তিনি যোগ করেন, ‘এবং আমরা এটি এখানে করতে পারি। আমরা সবাই এটি এখানে করতে পারি।’

ভারত-মার্কিন কৃষি বাণিজ্য গত দশকে বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ভারত বাসমতি, অন্যান্য চাল পণ্য, মসলা এবং সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানি করে এবং ইউএস থেকে বাদাম, তুলা এবং ডাল আমদানি করে। ভর্তুকি, বাজার প্রবেশাধিকার এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অভিযোগ বিশেষ করে চাল ও চিনি সংক্রান্ত বিরোধগুলো পর্যায়ক্রমে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় চাপ সৃষ্টি করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত