Ajker Patrika

অনলাইনে বিড়ালকে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন ও হত্যার ভিডিও, টাকা দিয়ে দেখছে মানুষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ১৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বিড়াল ও বিড়ালছানাকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও হত্যার ভিডিও আদান-প্রদানের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে বিবিসি। এই নেটওয়ার্কের হাজার হাজার সদস্য রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই নেটওয়ার্কের এত বিপুলসংখ্যক সদস্য বিড়ালকে আহত করা এবং হত্যা করার সহিংস ভিডিও ও ছবি অনলাইনে পোস্ট করে, শেয়ার করে এবং বিক্রি করে। একটি এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপের গ্রুপে বিবিসি প্রমাণ পেয়েছে, যুক্তরাজ্যের কিছু সদস্য আরএসপিসিএ (দ্য রয়্যাল সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেল) থেকে বিড়ালছানা দত্তক নিয়ে সেগুলোকে নির্যাতন করার পরামর্শ দিচ্ছে।

এই অনুসন্ধানের পর যুক্তরাজ্যের উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের রুইসলিপ পার্কে মে মাসে দুটি বিড়ালছানাকে নির্যাতন ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত দুই কিশোর-কিশোরী তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে। আজ সোমবার তাদের সাজা ঘোষণার কথা রয়েছে।

১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী এবং ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর, যাদের নাম আইনগত কারণে প্রকাশ করা হয়নি, তারা এই নৃশংস অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। তারা বিড়ালছানা দুটিকে কেটে ঝুলিয়ে রেখেছিল। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ছুরি, ব্লোটর্চ ও কাঁচি উদ্ধার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিড়াল নির্যাতনকারীদের ওই নেটওয়ার্কের সঙ্গে এই ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনেই জন্ম এই নেটওয়ার্কের। পরে এটি পুরো বিশ্বে বিস্তৃত হয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে এই নেটওয়ার্কের সদস্যদের শনাক্ত করেছে বিবিসি। প্রাণী অধিকারবিষয়ক সংগঠন ‘ফেলিন গার্ডিয়ান্স’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত প্রতি ১৪ ঘণ্টায় গড়ে একটি করে বিড়াল নির্যাতন কিংবা হত্যার নতুন ভিডিও আপলোড করা হয়েছে এই নেটওয়ার্কে। এই বছর এ ধরনের অন্তত ২৪টি সক্রিয় গ্রুপের সন্ধান পেয়েছে ফেলিন গার্ডিয়ান্স, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রুপের সদস্যসংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। গ্রুপের সবচেয়ে সক্রিয় সদস্য ২০০টিরও বেশি বিড়ালকে নির্যাতন ও হত্যার ভিডিও ওই নেটওয়ার্কে আপলোড করেছে।

বিবিসি বলছে, যুক্তরাজ্যের কিছু অ্যাকাউন্ট বিড়াল সংগ্রহ করে সেগুলোকে কীভাবে নির্যাতন করা যায়, তা নিয়ে ওই সব গ্রুপে নিয়েমিত আলোচনা করে। কীভাবে আরএসপিসিএ থেকে বিড়ালছানা দত্তক নিতে হয়, আবেদন করতে হয় তা-ও ওই সব গ্রুপে পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে বিবিসি দেখেছে, যুক্তরাজ্যের বিড়াল বিক্রির একটি বিজ্ঞাপন শেয়ার করে একজন লিখেছে, ‘সে এদের খুব বাজেভাবে নির্যাতন করতে চায়।’

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ফেলিন গার্ডিয়ান্সের স্বেচ্ছাসেবক লারা (নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি) দীর্ঘদিন ধরে পরিচয় গোপন রেখে এই নেটওয়ার্কের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘ওদের পোস্ট করা ভিডিও-ছবি, ওদের কথোপকথন প্রতি মুহূর্তে আমার হৃদয় ভেঙে যায়। এমন একটি দিনও নেই যেদিন আমার বুকটা ভার হয়ে যায় না।’ এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে শয়তানি কার্যকলাপের চরম রূপ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘নির্যাতনকারীরা বিড়ালগুলোকে যেকোনো মাত্রার কষ্ট দিতে প্রস্তুত।’

বিবিসি বলছে, ওই নেটওয়ার্কে প্রকাশিত ভিডিওগুলো খুবই বীভৎস ও ভয়ংকর। পানিতে ডুবিয়ে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে হত্যা, খাঁচার মধ্যে বন্দী করে খাবার না দিয়ে অনাহারে হত্যার মতো বীভৎস ভিডিও দেওয়া হয় ওই নেটওয়ার্কে। মৃতপ্রায় বিড়ালকে কীভাবে শক দিয়ে জীবিত করে আবার নির্যাতন করা হয়—এমন নির্দয় ও অমানবিক বিবরণও দিয়েছে কোনো কোনো নির্যাতনকারী।

নতুন সদস্যদের নির্যাতন করে ভিডিও পোস্ট করতে উৎসাহিত করা হয়, যাতে নেটওয়ার্ক আরও বড় হয়। আরও ভয়ংকর তথ্য হলো, এসব নির্যাতনকারীর অনেকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক। বিবিসি বলছে, অনুসন্ধানে তারা একটি পোস্ট দেখেছে যাতে লেখা ছিল, ‘আমার বয়স ১০ এবং আমি বিড়াল নির্যাতন করতে ভালোবাসি।’

বিড়াল নির্যাতনের একটি গ্রুপে ‘১০০ বিড়াল হত্যা’ নামে একটি প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছিল!

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ধারণা করা হয়, ২০২৩ সালে চীন থেকে এই নেটওয়ার্কের সৃষ্টি। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে চীনের ওয়াং চাওই নামে এক চীনা ব্যক্তি বিড়াল নির্যাতনের দুটি গ্রাফিক ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিও দুটি চীনা ও পশ্চিমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। পরে, এর জেরে ওয়াংকে আটক করে কর্তৃপক্ষ। ১৫ দিন বন্দী থাকতে হয় তাঁকে। পরে একটি অনুতাপপত্র লিখে মুক্ত হন তিনি।

মূলত ওয়াংয়ের ওই ভিডিওগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই অনেকে নতুন করে একই ধরনের নির্যাতনের কনটেন্ট তৈরি করতে শুরু করে। একাধিক এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপে গড়ে ওঠে চক্রভিত্তিক গ্রুপ। একটি ওয়েবসাইট নিজেদের ‘ক্যাট লাভার্স কমিউনিটি’ বলে দাবি করলেও সেখানে প্রবেশাধিকার পেতে হলে ব্যবহারকারীদের বিড়াল নির্যাতনের প্রমাণ দিতে হয়।

এই নেটওয়ার্কে ‘লিটল উইনি’ নামটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এতে প্রোফাইল ছবিতে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের একটি ব্যঙ্গচিত্র থাকে, যেখানে তাঁকে কার্টুন চরিত্র উইনি দ্য পুহের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এমন অ্যাকাউন্ট একাধিক চক্রে প্রশাসক হিসেবেও যুক্ত।

প্রাণী অধিকার সংগঠন ফেলিন গার্ডিয়ান্সের পরিচালক লারা ছদ্মবেশে এই চক্রে প্রবেশ করেন। তিনি জানান, ‘লিটল উইনি’ নামের একটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে তিনি গ্রুপে ঢোকার সুযোগ পান। এরপর সেখানে তিনি একের পর এক নির্যাতনের ভিডিও দেখেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে একপ্রকার অনুভূতিহীন করে রেখেছিলাম, নইলে এই ভিডিওগুলো দেখা সম্ভব ছিল না।’

কয়েক সপ্তাহ পর ওই কর্মী অভিযুক্তের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন। তদন্তে জানা যায়, তিনি জাপানের টোকিওতে বসবাসরত ২৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তবে বিবিসির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ওই ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং ভিডিও তৈরিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।

সংগঠনটির পরিচালক লারা বলেন, ‘এই ধরনের চক্র যদি এখনই রোধ না করা হয়, তাহলে এটি আরও বিস্তৃত হবে এবং ভয়ংকর রূপ নেবে।’ তিনি জানান, লন্ডনে চীনা দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে বেইজিংয়ের প্রতি কড়া আইন প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। লারা বলেন, ‘চীনে প্রাণী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর কোনো আইন নেই। শাস্তির ভয় না থাকায় এমন জঘন্য কাজ চালিয়ে যেতে পারছে অপরাধীরা। একবার এসব ভিডিও অনলাইনে এলে তা শুধু চীনা সীমায় থাকে না, তখন এটি বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এই ভিডিওগুলো শিশুদের কাছেও সহজেই পৌঁছাচ্ছে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে।’

ব্রিটিশ প্রাণী সুরক্ষা সংস্থা আরএসপিসিএর বিশেষ অভিযান ইউনিটের প্রধান ইয়ান ব্রিগস বলেন, ‘প্রাণীদের প্রতি এমন অমানবিক আচরণ একটি সভ্য সমাজে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যেখানে অধিকাংশ মানুষ প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল, সেখানে এ ধরনের সহিংসতা গভীর উদ্বেগের বিষয়।’

ব্রিটিশ সংসদের অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অন ক্যাটসের চেয়ারপারসন এমপি জোহানা ব্যাক্সটার বলেন, ‘এই চক্রগুলো তরুণদের মধ্যে এক উদ্বেগজনক প্রবণতা তৈরি করছে। প্রাণী নির্যাতন ভবিষ্যতের মানবিক সহিংসতারই পূর্বাভাস।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের উদ্যোগে এই আয়োজন করা হয়েছে। ছবি: এনডিটিভি
তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের উদ্যোগে এই আয়োজন করা হয়েছে। ছবি: এনডিটিভি

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় নতুন করে ‘বাবরি মসজিদ’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবির। আজ শনিবার এই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা রয়েছে। এ আয়োজনে সৌদি আরব থেকে আলেমদের নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ আয়োজনকে ঘিরে ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না করা হচ্ছে বিরিয়ানি।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কংগ্রেস ও বিজেপি ঘুরে তৃণমূলে আসেন মুর্শিদাবাদের প্রভাবশালী নেতা। গত বৃহস্পতিবার দলবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তাঁকে বহিস্কার করা হয়। এর মধ্যেই তিনি এই মসজিদ নিয়ে উঠেপড়ে লেগে আছেন। বহিস্কার নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া বা প্রশাসনের তৎপরতা নিয়ে কোনোভাবেই বিচলিত নন এই নেতা।

হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের জানান, শনিবার মোরাদিঘির কাছে ২৫ বিঘা জুড়ে প্রায় ৩ লাখ মানুষ জড়ো হবে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে ধর্মীয় নেতারা উপস্থিত হবে এখানে।

তিনি আরও জানান, সকালে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিশেষ কনভয়ে করে সৌদি আরব থেকে দুইজন আলেম আসবেন।

রাজ্যের একমাত্র উত্তর-দক্ষিণ মহাসড়ক এনএইচ-১২ লাগোয়া বিশাল এক এলাকায় চলছে এই আয়োজন। মুর্শিদাবাদের সাতটি কেটারিং প্রতিষ্ঠানকে শাহী বিরিয়ানি রান্নার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হুমায়ুন কবিরের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী জানান, অতিথিদের জন্য প্রায় ৪০ হাজার প্যাকেট এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য আরও ২০ হাজার প্যাকেট তৈরি করা হচ্ছে। শুধু খাবারের ব্যয়ই ৩০ লাখ রুপির বেশি হয়ে যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে আয়োজনের বাজেট ৬০–৭০ লাখ রুপিতে পৌঁছাবে বলে জানান তিনি।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের জন্য ধানখেতের ওপর ১৫০ ফুট লম্বা ও ৮০ ফুট চওড়া এক বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এ মঞ্চে প্রায় ৪০০ অতিথির বসার ব্যবস্থা থাকবে। এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ রুপি।

আয়োজকেরা জানান, প্রায় ৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে ২ হাজার জন শুক্রবার ভোর থেকেই কাজ শুরু করেছেন। তাঁরা এই বড় জনস্রোত নিয়ন্ত্রণ, প্রবেশপথ সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা ও এনএইচ-১২–তে যাতে জ্যাম না লেগে যায় সেই বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।

হুমায়ুন কবির জানান, সকাল ১০টায় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হবে। এরপর দুপুর ১২টায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকতা দুই ঘণ্টা আগে থেকেই শুরু হবে। পুলিশি নির্দেশনা অনুযায়ী বিকেল ৪টার মধ্যে মাঠ খালি করা হবে।’

এদিকে এত বিশাল আয়োজন প্রশাসনের উদ্বেগও বাড়িয়ে দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশনার পর জেলা পুলিশ হুমায়ুন কবিরের দলের সঙ্গে এক দফা আলোচনায় বসে। জনশৃঙ্খলা বজায় এবং এনএইচ-১২–তে যান চলাচল ঠিক রাখতে বৈঠক করে তারা।

একজন জ্যেষ্ঠ জেলা পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বেলডাঙা ও রানীনগর থানার আওতাজুড়ে প্রায় ৩ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান উদ্বেগ হচ্ছে জাতীয় মহাসড়ক সচল রাখা। সদর দপ্তর থেকে অতিরিক্ত ফোর্স এসে গেছে। একাধিক ডাইভারশন পরিকল্পনা প্রস্তুত আছে।’

মুর্শিদাবাদের অন্যতম বড় মহাসড়ক এনএইচ-১২–তে এই বিশাল আয়োজনের কারণে যানজট ও জনজট তৈরি হতে পারে এ আশঙ্কায় আছেন তাঁরা।

বলা হচ্ছে, এই মসজিদ উদ্যোগ তৃণমূল কংগ্রেসের ভেতরে অস্বস্তি তৈরি করছে। হুমায়ুন কবিরের জন্য এই আয়োজন একদিকে যেমন জনসমাবেশ গঠনের পরীক্ষা, তেমনি একপ্রকার প্রতিরোধ প্রদর্শনও।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং নিরাপত্তাবলয়ের চিন্তা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ আসবে, কারণ এটি এই এলাকার জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সীমান্তে ফের সংঘাতে জড়াল পাকিস্তান ও আফগান তালেবান, নিহত ৪

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০০
উত্তর ওয়াজিরিস্তানের গোলাম খান এলাকার সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহল। ছবি: এএফপি
উত্তর ওয়াজিরিস্তানের গোলাম খান এলাকার সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহল। ছবি: এএফপি

কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় হওয়া ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তালেবান বাহিনীর মধ্যে নতুন করে সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। উভয় পক্ষই এই সংঘর্ষের জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে।

২ হাজার ৫৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তরেখা বরাবর অবস্থিত আফগানিস্তানের শহর স্পিন বোলদাক থেকে বাসিন্দারা সারা রাত ধরে পালিয়ে গেছেন। কান্দাহার শহরের একটি মেডিকেল সূত্র বিবিসি পশতুকে জানিয়েছে, স্থানীয় হাসপাতাল চারজনের মরদেহ গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের দিক থেকে তিনজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

উভয় পক্ষই রাতভর চার ঘণ্টার এই সংঘর্ষের কথা নিশ্চিত করেছে। তবে কে প্রথমে গুলি চালায়, তা নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মুখপাত্র মোশাররফ জাইদি তালেবানকে ‘বিনা উসকানিতে গুলিবর্ষণ’-এর জন্য অভিযুক্ত করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাৎক্ষণিক, উপযুক্ত এবং তীব্র জবাব দিয়েছে। পাকিস্তান তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ সতর্ক ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

অন্যদিকে, তালেবানের এক মুখপাত্রের দাবি, পাকিস্তান ‘আবারও হামলা শুরু করেছে’ এবং তাঁরা জবাব দিতে বাধ্য হয়েছেন।

সংঘর্ষের পর প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক আফগান নাগরিক হেঁটে ও যানবাহনে করে স্পিন বোলদাক থেকে পালাচ্ছেন। আশপাশের শহরগুলোর বাসিন্দারাও নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন।

এই সংঘাত এমন এক সময়ে শুরু হলো, যখন দুই মাসেরও কম সময় আগে কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষ একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর এটি ছিল দুই পক্ষের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ লড়াইয়ের সমাপ্তি, যদিও তারপর থেকে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে রয়েছে।

ইসলামাবাদ সরকার দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের শাসক তালেবানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। এই গোষ্ঠীগুলো প্রায়ই পাকিস্তানে হামলা চালায়। তবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং ‘নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিজস্ব ব্যর্থতার’ জন্য পাকিস্তান অন্যকে দোষারোপ করে বলে অভিযোগ করে এসেছে।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদল বৃহত্তর বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সৌদি আরবে চতুর্থ দফা আলোচনায় মিলিত হয়েছিল। যদিও কোনো চুক্তি হয়নি, তবে সূত্র জানায়, উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতি চালিয়ে যেতে রাজি হয়েছে। সেই ঐকমত্য সত্ত্বেও, এই রক্তক্ষয়ী সংঘাত আঞ্চলিক অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে তুলল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শশী থারুর কি কংগ্রেস ছাড়ছেন, জবাবে যা বললেন তিনি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০০
ভারতের প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। ফাইল ছবি
ভারতের প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। ফাইল ছবি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের সময় গতকাল শুক্রবার রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত উচ্চপর্যায়ের নৈশভোজে একমাত্র কংগ্রেস নেতা হিসেবে শশী থারুর আমন্ত্রণ পেয়েছেন। এতে দলের অভ্যন্তরে এবং রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। লোকসভা ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতাদের (রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গে) আমন্ত্রণ না জানানোর আবহে শশী থারুরের এই যোগদান নিঃসন্দেহে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। থারুর নিজেই এই নৈশভোজকে ‘চমৎকার’ বলে বর্ণনা করেছেন।

থারুর স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাঁর এই আমন্ত্রণের নেপথ্যে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই; বরং তাঁর পদাধিকারের গুরুত্ব রয়েছে। তিনি বর্তমানে বিদেশবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান। এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শশী থারুর বলেন, ‘কিছুদিন পর আবার রাষ্ট্রপতি ভবনে এলাম। আমার মনে হয়, বেশ কিছু বছর ধরে একটি ভিন্ন মনোভাব ছিল, কিন্তু এবার তারা অন্য কণ্ঠস্বরদের জন্য একটু বেশি দরজা খুলে দিতে রাজি হয়েছে। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক যেহেতু সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দেখভাল করে, তাই আলাপ-আলোচনার পরিবেশ এবং কথোপকথনের কিছু অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া সহায়ক। এই কারণেই আমি এখানে এসে খুব খুশি। এর চেয়ে বেশি বা কম কিছু নয়।’

থারুর আরও গর্বের সঙ্গে স্মরণ করেন যে প্রায় ২০ বছর আগে ভূরাজনৈতিক সংহতি নিয়ে তিনি যে শব্দটি তৈরি করেছিলেন, তা আজ আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

তবে বিরোধী দলনেতাদের অনুপস্থিতি নিয়ে দলের নেতা পবন খেড়া এবং জয়রাম রমেশ যে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সে প্রসঙ্গে থারুর বলেন, আমন্ত্রণ জানানোর ভিত্তি সম্পর্কে তিনি অবগত নন, কিন্তু আমন্ত্রিত হয়ে তিনি অবশ্যই সম্মানিত।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে শশী থারুরকে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে দেখা গেছে। এটি তাঁর নিজ দলের অসন্তোষ বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে থারুর সরকারের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে তাঁর নীতি ব্যাখ্যা করেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচনী এলাকার উন্নতির জন্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করা একটি ভিন্ন আলোচনা, যার সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে আমন্ত্রিত হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।

শশী থারুর বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার প্রশ্নে আপনি আপনার বিশ্বাস বা নীতিগুলো বিসর্জন দেন না, বরং আপনি সাধারণ ভিত্তি খুঁজে বের করেন। গণতন্ত্রের একটি অংশ হলো সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে সাধারণ ভিত্তি খুঁজে নিয়ে কাজ করা। আমরা কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করি, কিছু বিষয়ে একমত, এবং যেখানে আমরা একমত, সেখানে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।’

কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মতো কূটনৈতিক মিশনে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনা কংগ্রেসের জন্য বারবার অস্বস্তির কারণ হয়েছে। এই আবহে কেরালার তিরুবনন্তপুরমের এই সংসদ সদস্য কি কোনো বড় রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে চলেছেন?

এই জল্পনার জবাবে থারুর একটি পরিমিত এবং রহস্যময় উত্তর দেন: ‘আমি জানি না কেন এই প্রশ্নটি করতে হবে। আমি কংগ্রেস পার্টির একজন সংসদ সদস্য। আমি নির্বাচিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট কষ্ট করেছি। অন্য কিছু হতে গেলে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা এবং বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করতে হবে।’

থারুর দৃঢ়ভাবে জানান, ভোটারদের প্রতি তাঁর দায়িত্ব সবার আগে। তিনি বলেন, ‘ভোটারদের এবং আমার নির্বাচনী এলাকার প্রতি আমার বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। এমনকি নৈশভোজের আগে কিছু কথোপকথনেও আমি আমাদের সরকারের কয়েকজন কর্মকর্তার কাছে আমার নির্বাচনী এলাকার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছিলাম। জনগণের জন্য কাজ আদায় করার এটাই রাজনৈতিক জীবনের মূল চালিকাশক্তি বা লাইফ ব্লাড।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আদালতে শিনজো আবের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইলেন হত্যায় অভিযুক্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শিনজো আবে হত্যায় অভিযুক্ত ইয়ামাগামি। ছবি: সংগৃহীত
শিনজো আবে হত্যায় অভিযুক্ত ইয়ামাগামি। ছবি: সংগৃহীত

২০২২ সালের জুলাইয়ে নির্বাচনী প্রচারণার সময় জাপানের নারা শহরে স্থানীয়ভাবে তৈরি বন্দুক দিয়ে গুলি করে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে হত্যা করেন ৪৫ বছর বয়সী ইয়ামাগামি। কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং অত্যন্ত কম অপরাধ প্রবণতার দেশ জাপানে এই হত্যাকাণ্ড বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে।

শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, নারা জেলা আদালতে ১৪ তম শুনানিতে হাজির হয়ে আবে পরিবারের প্রতি গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন ইয়ামাগামি। আদালতে তিনি বলেন, ‘আমি আবে পরিবারের ভোগান্তির জন্য অনুতপ্ত। তিন বছর ছয় মাস ধরে তারা যে কষ্টে আছে, তা আমি চাইনি, কিন্তু তা হয়েছে—এ জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’

তিনি জানান, নিজের পরিবারেও একজনকে হারানোর অভিজ্ঞতা থাকায় এই কষ্টের মূল্য তিনি বোঝেন।

ইয়ামাগামি স্বীকার করেছেন, তিনি পরিকল্পিতভাবেই ওই হামলা চালিয়েছিলেন। এর আগে আদালতে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমিই হত্যা করেছি। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

হত্যাকাণ্ডের পেছনে ইয়ামাগামির উদ্দেশ্য ছিল ‘ইউনিফিকেশন চার্চ’ নিয়ে ক্ষোভ। তিনি দাবি করেন, এই ধর্মীয় সংগঠনে তাঁর মা বিপুল অর্থ দান করায় তাঁদের পরিবার দেউলিয়া হয়ে পড়ে। ইয়ামাগামির ভাষায়, আবে ছিলেন এই চার্চের অন্যতম প্রভাবশালী সমর্থক, তাই তিনি তাঁকে লক্ষ্য বানান।

ইয়ামাগামির আইনজীবী আদালতকে জানান, ব্যবহৃত অস্ত্রটি হাতে তৈরি হওয়ায় জাপানের ‘ফায়ারআর্মস অ্যান্ড সোয়ার্ডস কন্ট্রোল অ্যাক্ট’-এর অধীনে সাধারণ আগ্নেয়াস্ত্র হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়। তাই শাস্তি কমানোর অনুরোধ জানানো হয়।

ইউনিফিকেশন চার্চের বিরুদ্ধে জাপানে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থ সংগ্রহ এবং সদস্য নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। আবে হত্যার পর সংগঠনটির কার্যক্রম তদন্তের আওতায় আসে। চলতি বছরের মার্চে আদালত চার্চ বিলুপ্তির আদেশ দেয়, যদিও সংগঠনটি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

আদালতের শুনানিতে শিনজো আবের স্ত্রী আকিয়ে আবেও উপস্থিত থাকেন। তবে ক্ষমা প্রার্থনার দিন তিনি আদালতে ছিলেন না। আগের দিন তিনি হত্যাকারীর মুখোমুখি হন এবং নীরবে শুনানি পর্যবেক্ষণ করেন।

মামলার রায় এখনো ঘোষণা হয়নি। তবে জাপানে এটি সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত