Ajker Patrika

লন্ডনে মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্যে ‘গান্ধী ও মোদি সন্ত্রাসী’ লেখা গ্রাফিতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫৬
লন্ডনের ট্যাভিস্টিক স্কোয়ারে স্থাপিত গান্ধীর ভাস্কর্য। ছবি: এক্স
লন্ডনের ট্যাভিস্টিক স্কোয়ারে স্থাপিত গান্ধীর ভাস্কর্য। ছবি: এক্স

লন্ডনের ঐতিহাসিক ট্যাভিস্টক স্কয়ারে স্থাপিত মহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর ভাস্কর্যে আপত্তিকর গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। ভাস্কর্যের ভিত্তির দেয়ালে আপত্তিকর কথাও লেখা হয়েছে। ইংরেজিতে গান্ধী, নরেন্দ্র মোদি এবং হিন্দুস্তানিদের সন্ত্রাসী বলা হয়েছে। গত সোমবার (স্থানীয় সময়) এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকী এবং জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস (২ অক্টোবর) উদ্‌যাপনের কয়েক দিন আগে এমন ঘটনা ঘটল।

যোগাসন ভঙ্গিতে বসা গান্ধীর আইকনিক ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যটির পাদদেশে ভারতবিরোধী গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। এ ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লন্ডনস্থ ভারতীয় হাইকমিশন তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে একটি ‘লজ্জাজনক কাজ’ অভিহিত করে বিবৃতি দিয়েছে।

ভারতীয় হাইকমিশন এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এ ঘটনাকে কেবল সম্পত্তির ক্ষতি নয়, বরং ‘অহিংসার ধারণার ওপর একটি সহিংস আক্রমণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। হাইকমিশন বলেছে, আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবসের মাত্র তিন দিন আগে এমন ঘটনা মহাত্মা গান্ধীর উত্তরাধিকারের ওপর আঘাত।

লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং স্থানীয় ক্যামডেন কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, তারা এই ভাঙচুরের অভিযোগ তদন্ত করে দেখছে। অপরাধীদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

ট্যাভিস্টক স্কয়ারে যেখানে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছে, সেই স্থান লন্ডনে ‘শান্তি উদ্যান’ হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। শিল্পী ফ্রেড্ডা ব্রিলিয়ান্ট নির্মিত ব্রোঞ্জের এই ভাস্কর্য ইন্ডিয়া লিগের সমর্থনে ১৯৬৮ সালে উন্মোচিত হয়।

এই স্কয়ার মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বহন করে। তিনি পার্শ্ববর্তী ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনের ছাত্র ছিলেন।

ভাস্কর্যের চারপাশে পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকটি শান্তি স্মারক যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: হিরোশিমা বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে রোপণ করা একটি চেরি গাছ, ১৯৮৬ সালে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শান্তি বছরকে চিহ্নিত করার জন্য রোপণ করা একটি ফিল্ড ম্যাপল এবং ‘বিবেকবান প্রতিবাদীদের’ সম্মানে ১৯৯৫ সালে উন্মোচিত একটি গ্রানাইট স্মারক। এসব স্থাপনার কারণে ট্যাভিস্টক স্কয়ার লন্ডনের শান্তি উদ্যান হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে।

প্রতি বছর ২ অক্টোবর গান্ধীজয়ন্তীতে এই ভাস্কর্যের সামনে গান্ধীর প্রিয় ভজন গেয়ে এবং পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে দিনটি পালন করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমি বিএনপি করি, তবে শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’

রেডিট পোস্টের জেরে মধ্যরাতে উত্তাল বুয়েট, ছাত্রকে বহিষ্কারের পর মামলা

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

ড্রাইভিং লাইসেন্সে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

সেনানিবাসের সাবজেলেই রাখা হবে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে: কারা মহাপরিদর্শক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লন্ডনের রিচমন্ড এলাকার বাসিন্দা বুরজু ইয়েসিলিউর্ত। ছবি: বিবিসি
লন্ডনের রিচমন্ড এলাকার বাসিন্দা বুরজু ইয়েসিলিউর্ত। ছবি: বিবিসি

লন্ডনের পশ্চিমাঞ্চলে একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপের অবিশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় এক নারীকে ১৫০ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৪ হাজার টাকারও বেশি। এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে স্থানীয় কাউন্সিলে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই।

বুধবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমস জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে গত ১০ অক্টোবর রিচমন্ড অঞ্চলে। কিউ এলাকার বাসিন্দা বুরজু ইয়েসিলিউর্ত সকালে কাজে যাওয়ার পথে তাঁর কাপে বাকি থাকা সামান্য কফি রাস্তার পাশের ড্রেনে ঢেলে দেন। কারণ তিনি ভেবেছিলেন, বাসে উঠতে গিয়ে ওই কফিটুকু শরীরে ছিটকে পড়তে পারে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তিন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা ওই বাসটিকে তাড়া করে এসে থামান এবং ১৯৯০ সালের ব্রিটিশ পরিবেশ সুরক্ষা আইন-এর ৩৩ নম্বর ধারায় বুরজু ইয়েসিলিউর্তকে জরিমানা করেন।

এই বিষয়ে পরে অপর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে ইয়েসিলিউর্ত বলেন, ‘আমি ভাবলাম দায়িত্বশীল কাজ করছি। কিন্তু হঠাৎ তিন অফিসার এসে আমাকে ঘিরে ধরলেন—এটা সত্যিই ধাক্কার মতো ছিল।’

তিনি জানান, তাঁকে জানানো হয়, তরল বর্জ্যও ড্রেনে ফেলা আইনত নিষিদ্ধ এবং তা পরিবেশদূষণ হিসেবে গণ্য হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কফির অবশিষ্ট অংশটুকু নিকটস্থ ডাস্টবিনে ফেলা উচিত ছিল।

ইয়েসিলিউর্ত অভিযোগ করেন, ঘটনাস্থলের কোথাও কোনো সতর্কবার্তা বা সাইনবোর্ড ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, কোনো সাইন আছে কি? তারা কিছু বলল না।’ ঘটনাটি তাঁকে ভীত ও অস্থির করে তুললেও পরে তিনি তাঁর কাজে যান।

জরিমানার পরিমাণ ১৫০ পাউন্ড হলেও ১৪ দিনের মধ্যে তা পরিশোধ করলে ১০০ পাউন্ডে নামানো যাবে। ইয়েসিলিউর্ত অবশ্য এখনো অর্থ পরিশোধ করেননি। এর বদলে তিনি কাউন্সিলে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘আইনটি যদি এত কড়াকড়ি হয়, তবে সড়ক ও বাসস্টপে স্পষ্টভাবে সতর্কতামূলক সাইন থাকা উচিত।’

এদিকে এই বিষয়ে রিচমন্ড কাউন্সিল জানিয়েছে, ইয়েসিলিউর্তকে বৈধভাবেই জরিমানা করা হয়েছে এবং কর্মকর্তারা পেশাদার ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছেন। কাউন্সিলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা রিচমন্ডের জলপথ ও সড়ক পরিষ্কার রাখতে বদ্ধপরিকর। প্রয়োজন হলে আইন প্রয়োগ করা হয়। কেউ যদি মনে করেন তাঁর ওপর আরোপ করা জরিমানাটি অন্যায্য, তবে তিনি পর্যালোচনার আবেদন করতে পারেন।’

যুক্তরাজ্যের পরিবেশ সুরক্ষা আইনে বলা আছে, এমন কোনো বর্জ্য বা তরল ফেলা অপরাধ যা মাটি বা জল দূষণের কারণ হতে পারে। এমনকি রাস্তার পাশে থাকা ড্রেনে তরল ঢালাও এর অন্তর্ভুক্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমি বিএনপি করি, তবে শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’

রেডিট পোস্টের জেরে মধ্যরাতে উত্তাল বুয়েট, ছাত্রকে বহিষ্কারের পর মামলা

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

ড্রাইভিং লাইসেন্সে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

সেনানিবাসের সাবজেলেই রাখা হবে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে: কারা মহাপরিদর্শক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

একজন প্রভাবশালী প্রধানমন্ত্রীও ধর্ষণ করেছিলেন—জিউফ্রের স্মৃতিকথায় চাঞ্চল্যকর দাবি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভার্জিনিয়া জিউফ্রে যে বয়সে জেফরি এপস্টেইনের যৌনদাসীতে পরিণত হয়েছিলেন। ছবি: দ্য টাইমস
ভার্জিনিয়া জিউফ্রে যে বয়সে জেফরি এপস্টেইনের যৌনদাসীতে পরিণত হয়েছিলেন। ছবি: দ্য টাইমস

জেফ্রি এপস্টেইনের কুখ্যাত যৌন পাচার চক্রের অন্যতম ভুক্তভোগী ভার্জিনিয়া জিউফ্রের মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে তাঁর স্মৃতিকথা। ‘নোবডিজ গার্ল’ নামের এই বইটিতে ভার্জিনিয়া দাবি করেছেন, একজন প্রখ্যাত প্রধানমন্ত্রীও তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন।

ভার্জিনিয়ার আত্মহত্যার ছয় মাস পর গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ‘নোবডিজ গার্ল’ শিরোনামের বইটি। এতে তিনি তাঁর ওপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, একসময় তিনি ভেবেছিলেন হয়তো যৌন দাসী হিসেবেই তাঁর মৃত্যু হবে। তবে ১৯ বছর বয়সেই তিনি এপস্টেইনের কবল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

বইটিতে ভার্জিনিয়া লিখেছেন, ‘তারা আমাকে অসংখ্য ধনী ও ক্ষমতাধর মানুষের হাতে তুলে দিত। আমাকে মাঝেমধ্যেই অপমান, মারধর ও রক্তাক্ত করা হতো।’

তিনি দাবি করেন, এপস্টেইনের ক্যারিবীয় দ্বীপে অবস্থানকালে তাঁকে এমন একজন ব্যক্তির কাছে পাঠানো হয় যিনি তাঁকে সবচেয়ে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করেছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।

তিনি আরও লেখেন, ‘সেই মানুষটি আমাকে একাধিকবার শ্বাসরোধ করেছিল, আমার ভয় দেখে আনন্দ পেয়েছিল। আমাকে যখন আঘাত করছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তখন ভয়ংকরভাবে হাসছিলেন।’

পরে কেঁদে কেঁদে তিনি এপস্টেইনকে অনুরোধ করেন যেন তাঁকে আর সেই ব্যক্তির কাছে না পাঠানো হয়। কিন্তু এপস্টেইন ঠান্ডা গলায় উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এ রকমটা মাঝে মাঝে হবেই।’

বুধবার (২২ অক্টোবর) সিএনএন জানিয়েছে, বইটির যুক্তরাষ্ট্র সংস্করণে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ‘একজন প্রখ্যাত প্রধানমন্ত্রী’ বলা হয়েছে। তবে যুক্তরাজ্য সংস্করণে ওই ব্যক্তিকে ‘সাবেক মন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই পার্থক্যের কারণ এখনো স্পষ্ট নয়।

এই আত্মজীবনী প্রকাশের ফলে নতুন করে আলোচনায় এসেছে ধনী ও ক্ষমতাধরদের সঙ্গে এপস্টেইনের সম্পর্ক। বিশেষ করে, ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম আবারও সামনে এসেছে। ভার্জিনিয়ার আগে অভিযোগ করেছিলেন, এপস্টেইন তাঁকে অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তিনবার যৌন সম্পর্কে বাধ্য করেছিলেন। এর মধ্যে প্রথমবার যখন তিনি অ্যান্ড্রুর সঙ্গে মিলিত হন তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর।

অ্যান্ড্রু সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও ২০২২ সালে তিনি ভার্জিনিয়ার সঙ্গে আদালতের বাইরে মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন। ভার্জিনিয়া দাবি করেছেন, সেই সময়টিতে অ্যান্ড্রুর দল অনলাইনে ‘ট্রল’ ভাড়া করে তাঁকে হয়রানির চেষ্টা করেছিল।

এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘মেইল অন সানডে’ জানিয়েছে, অ্যান্ড্রু ২০১১ সালে নিজের এক দেহরক্ষীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ভার্জিনিয়ার বিরুদ্ধে প্রমাণ খুঁজে বের করতে। এই বিষয়ে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্ত করছে।

এই স্মৃতিকথা প্রকাশের ফলে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সুনাম আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যদিও ব্রিটিশ রাজপরিবার বহু বছর ধরেই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছিল। সম্প্রতি এই কেলেঙ্কারির দায়ে রাজপরিবারের উপাধি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন অ্যান্ড্রু।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমি বিএনপি করি, তবে শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’

রেডিট পোস্টের জেরে মধ্যরাতে উত্তাল বুয়েট, ছাত্রকে বহিষ্কারের পর মামলা

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

ড্রাইভিং লাইসেন্সে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

সেনানিবাসের সাবজেলেই রাখা হবে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে: কারা মহাপরিদর্শক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কর্মীদের আর সাইকেল চালানোর শাস্তি দেবে না ‘জাপান পোস্ট’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জাপানের ডাক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ‘জাপান পোস্ট’। ছবি: সংগৃহীত
জাপানের ডাক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ‘জাপান পোস্ট’। ছবি: সংগৃহীত

বিতর্কের মুখে একটি পুরোনো প্রথা বন্ধ করেছে জাপানের ডাক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ‘জাপান পোস্ট’। এই প্রথা অনুযায়ী, ছোটখাটো কোনো দুর্ঘটনা কিংবা ভুল-ভ্রান্তির জন্য জড়িত ডাক কর্মীদের মোটরসাইকেলের পরিবর্তে সাইকেলে ডেলিভারি করতে বাধ্য করা হতো। এমনকি প্রচণ্ড গরম বা প্রতিকূল আবহাওয়ার মাঝেও এই শাস্তি দেওয়া হতো। সম্প্রতি একটি তদন্তের পর প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করেছে—এই প্রথাটি কর্মক্ষেত্রের হয়রানি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

বুধবার (২২ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত টোকিওর এক ডাক কর্মীকে কেন্দ্র করে। গত আগস্টের শেষ দিকে পার্ক করা একটি গাড়ির কিছুটা ক্ষতি সাধন করেছিলেন তিনি। পরে এর শাস্তি হিসেবে মোটরসাইকেলের বদলে সাইকেল চালিয়ে চিঠি বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে। এভাবে প্রতিদিন কয়েক ডজন কেজি ওজনের ডাক বহন করতে গিয়ে ওই কর্মী শারীরিক ও মানসিক কষ্টে ভুগেছিলেন। তাঁর এই কষ্ট গণমাধ্যমের দৃষ্টিগোচর হয় এবং তা সাধারণ মানুষও জানতে পারে।

জাপান পোস্ট তখন দাবি করেছিল, এটি শাস্তি নয় বরং ভবিষ্যতে ভুল এড়ানোর প্রশিক্ষণ। তবে পরে প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করে নেয়, শাস্তি দেওয়ার সময়টি অযৌক্তিক ছিল এবং এই নির্দেশের উদ্দেশ্যও স্পষ্ট করা হয়নি। ওই কর্মী টানা আট দিন কাজ করেন, যার মধ্যে পাঁচ দিনই তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।

তীব্র জনসমালোচনার পর কোম্পানির অভ্যন্তরীণ এক নোটে বলা হয়েছে, ‘এই প্রথার কোনো কার্যকর কোনো প্রয়োজন নেই; বরং এটি হয়রানিমূলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।’

তদন্তে দেখা যায়, জাপান পোস্টের অন্যান্য শাখাতেও এই ধরনের শাস্তিমূলক সাইকেল চালানোর ঘটনা ঘটেছে এবং কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই এর বিরোধিতা করছিলেন। তিন বছর আগে একটি প্রস্তাবনাতেও এই প্রথা বাতিলের আহ্বান জানানো হয়েছিল, কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘যে ডেলিভারি এলাকা মোটরসাইকেলের জন্য নির্ধারিত, সেখানে সাইকেল চালানো অসম্ভব। এটি নিঃসন্দেহে হয়রানি।’

এই বিষয়ে জাপান পোস্টের এক কর্মকর্তা সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেছেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি, অনেক সময় কর্মীদের কাছে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয় না।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ঘটনা জাপানের কর্মসংস্কৃতির গভীরে থাকা এক মানসিকতার প্রতিফলন—যেখানে ‘প্রশিক্ষণ’ বা ‘প্রেরণা’ নামের আড়ালে প্রায়ই শাস্তিমূলক আচরণ লুকিয়ে থাকে। কর্মক্ষেত্র গবেষক কানেকো মাসাওমি বলেন, ‘জাপানি কর্মসংস্কৃতি ঐতিহ্যগতভাবে অধ্যবসায়কে গুরুত্ব দেয়। কিন্তু কর্মীবান্ধব পরিবেশই শেষ পর্যন্ত কর্মদক্ষতা বাড়ায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমি বিএনপি করি, তবে শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’

রেডিট পোস্টের জেরে মধ্যরাতে উত্তাল বুয়েট, ছাত্রকে বহিষ্কারের পর মামলা

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

ড্রাইভিং লাইসেন্সে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

সেনানিবাসের সাবজেলেই রাখা হবে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে: কারা মহাপরিদর্শক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রমাণ ছাড়া শুধু ‘শারীরিক সম্পর্ক’ বললেই ধর্ষণ নয়: দিল্লি হাইকোর্ট

প্রতিনিধি কলকাতা 
ছবি: পিটিআই
ছবি: পিটিআই

ভারতের দিল্লি হাইকোর্ট এক রায়ে জানিয়েছেন, কেবল ‘শারীরিক সম্পর্ক’ কথাটির ব্যবহারকে ধর্ষণের প্রমাণ হিসেবে ধরা যাবে না। আদালতের পর্যবেক্ষণ, এমন শব্দের ব্যবহার যদি প্রমাণসহ সমর্থিত না হয়, তাহলে তা ধর্ষণ বা জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কের আইনি সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। গত শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এক ব্যক্তির ১০ বছরের কারাদণ্ড বাতিল করে এ রায় দেন বিচারপতি মনোজ কুমার ওহরির বেঞ্চ। রায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খালাসও দেওয়া হয়।

মামলাটি শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালে। অভিযোগ ছিল বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে এক কিশোরীর সঙ্গে এক বছরের বেশি সময় ধরে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু আদালতে বিচার চলাকালে যে বক্তব্য ও প্রমাণ হাজির করা হয়, সেখানে শুধু ‘শারীরিক সম্পর্ক’ কথাটিই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এর অর্থ, প্রকৃতি বা তা আদৌ যৌন নিপীড়নের পর্যায়ে পড়ে কি না, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি।

বিচারপতি ওহরি বলেন, এ মামলার বিশেষ প্রেক্ষাপটে ‘শারীরিক সম্পর্ক’ শব্দের ব্যবহার কোনো নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা বা প্রমাণ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। ধারা ৩৭৬ (ধর্ষণ) ও পকসো আইনের (শিশুদের যৌন অপরাধ থেকে সুরক্ষা আইন) ধারা ৬-এর অধীনে তাঁর দণ্ড আইনসংগত নয়।

আদালত রায়ে আরও উল্লেখ করেন, দুঃখজনক হলেও এই মামলায় প্রসিকিউশন বা নিম্ন আদালত কেউই কিশোরীকে প্রশ্ন করেনি—ঠিক কী বোঝাতে সে ‘শারীরিক সম্পর্ক’ বলেছে। ফলে আদালতের কাছে অপরাধের প্রকৃতি, জোরপূর্বক কিংবা প্রতারণার উপাদান কিছুই স্পষ্ট হয়নি। বিচারপতি বলেন, কোনো শিশুসাক্ষীর সাক্ষ্যে যদি প্রয়োজনীয় তথ্যের ঘাটতি থাকে, আদালতের দায়িত্ব সেখানে প্রশ্ন করে বিষয়টি পরিষ্কার করা। আদালত কখনোই নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারেন না। তিনি আরও বলেন, প্রসিকিউশন যদি তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করে, আদালতকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এসে সত্য উদ্‌ঘাটন করতে হবে।

রায়ে বলা হয়, শিশু ও তার অভিভাবকেরা শুধু বলেছে যে—অভিযুক্ত ব্যক্তি ‘শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন’, কিন্তু ঠিক কীভাবে বা কী ঘটেছে, এর কোনো বর্ণনা দেওয়া হয়নি। কোনো ফরেনসিক বা চিকিৎসা প্রতিবেদনও আদালতের সামনে উপস্থাপিত হয়নি। ফলে শুধু মৌখিক সাক্ষ্যেই পুরো মামলা নির্ভর করেছিল।

আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, ‘শারীরিক সম্পর্ক’ শব্দটি ভারতীয় দণ্ডবিধি বা পকসো আইনে কোথাও সংজ্ঞায়িত নয়। তাই এর ব্যাখ্যা নির্ভর করে সাক্ষীর বক্তব্যে কী বোঝানো হয়েছে, তার ওপর। যেহেতু সেই অংশ অনুপস্থিত, তাই অপরাধ প্রমাণিত বলা যাবে না। বিচারপতি ওহরি আরও বলেন, এটা দুঃখজনক, কিন্তু আদালত আবেগে নয়, প্রমাণে চলেন। তাই এ মামলায় খালাস দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।

আদালত একই সঙ্গে ভবিষ্যতে তদন্ত ও বিচারকার্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনাও দেন—শিশুসাক্ষীর ক্ষেত্রে আদালতের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য, যাতে তারা যে ঘটনা বলতে চায়, তা সম্পূর্ণভাবে রেকর্ডে আসে। রায়ের পর আইনজীবী মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, এ রায় নতুন করে ধর্ষণসংক্রান্ত মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের মানদণ্ড ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে। কারণ, আদালত এখানে কেবল শব্দের ব্যাখ্যা নয়, প্রমাণের গুরুত্বকেও তুলে ধরেছেন।

দিল্লি হাইকোর্টের মতে, আইনের চোখে ন্যায়বিচার মানে কেবল শাস্তি নয়, সঠিক প্রক্রিয়ার নিশ্চয়তা।

আদালত একই সঙ্গে ভবিষ্যতে তদন্ত ও বিচারকার্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনাও দেন—শিশুসাক্ষীর ক্ষেত্রে আদালতের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য, যাতে তারা যে ঘটনা বলতে চায়, তা সম্পূর্ণভাবে রেকর্ডে আসে। রায়ের পর আইনজীবী মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, এ রায় নতুন করে ধর্ষণসংক্রান্ত মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের মানদণ্ড ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে। কারণ, আদালত এখানে কেবল শব্দের ব্যাখ্যা নয়, প্রমাণের গুরুত্বকেও তুলে ধরেছেন।

দিল্লি হাইকোর্টের মতে, আইনের চোখে ন্যায়বিচার মানে কেবল শাস্তি নয়, সঠিক প্রক্রিয়ার নিশ্চয়তা।

এ মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি দীর্ঘ ১০ বছর সাজাভোগের মুখে ছিলেন। কিন্তু আদালতের বিশ্লেষণে দেখা যায়, যেভাবে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তাতে অপরাধের উপাদান সম্পূর্ণ অনির্দিষ্ট রয়ে গেছে। এমনকি ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা’ অংশটিও আদালতে যথাযথ প্রমাণিত হয়নি। আদালত রায়ে আরও মনে করিয়ে দেন, শিশু বা কিশোর সাক্ষীর বয়স অনুযায়ী তার বক্তব্য বোঝার চেষ্টা করাও আদালতের দায়িত্ব। শিশুরা প্রায়ই এমন ভাষা ব্যবহার করে, যা আইনগত সংজ্ঞার সঙ্গে মেলে না। তাই তদন্ত ও বিচারকাজে সংবেদনশীলতা ও ব্যাখ্যাশক্তি দুটোই প্রয়োজন। আদালতের ভাষায়, যেখানে রাষ্ট্র নিজের পক্ষ থেকে ব্যর্থ হয়, সেখানে আদালতকে নীরব থাকা চলবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমি বিএনপি করি, তবে শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’

রেডিট পোস্টের জেরে মধ্যরাতে উত্তাল বুয়েট, ছাত্রকে বহিষ্কারের পর মামলা

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

ড্রাইভিং লাইসেন্সে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

সেনানিবাসের সাবজেলেই রাখা হবে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে: কারা মহাপরিদর্শক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত