Ajker Patrika

‘রাজনীতিকদের সম্পদ বাড়ছে, আর আমাদের ভোগান্তি, তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার ফেলে দিয়েছি’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৮
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

জেন-জিদের তুমুল বিক্ষোভের মুখে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় নেপালের সরকারের পতন হয়। একে ইতিহাসের অন্যতম বিজয় হিসেবেই দেখছে দেশটির জনগণ। তবে, এই বিজয়ের জন্য তাদের চুকাতে হয়েছে চরম মূল্য। আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক তনুজা পান্ডে বলেন, ‘আমরা গর্বিত। তবে, একই সঙ্গে প্রচণ্ড রাগ-দুঃখ-অনুশোচনাও কাজ করছে।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই আন্দোলনে দেশটিতে ৭২ জন নিহত হয়েছে। দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে একে ভয়াবহতম সহিংসতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। ওই আন্দোলনে সরকারি ভবন, রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িঘর, এমনকি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে খোলা হিলটন হোটেলের মতো বিলাসবহুল স্থাপনাও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া, দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে দেদারসে চলে ভাঙচুর-লুটতরাজ। উত্তেজিত জনতার দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন এক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী।

আন্তর্জাতিক সংকট সংস্থার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আশীষ প্রধান বলেন, এ বিক্ষোভ ছিল ‘দশকের পর দশক ধরে চলা দুর্নীতি আর রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহারের দায়ে রাজনৈতিক শ্রেণিকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান।’ তবে তিনি সতর্ক করেন, সরকারি সেবার ক্ষয়ক্ষতি ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের মতো ভয়াবহ হতে পারে। ওই দুর্যোগে প্রায় ৯ হাজার মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। ধ্বংসযজ্ঞ শুধু রাজধানী কাঠমান্ডুতেই সীমিত ছিল না, দেশজুড়ে অন্তত ৩০০ স্থানীয় সরকারি কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের হিসেবে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৩ ট্রিলিয়ন নেপালি রুপি (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার), যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেক। এমনকি কাঠমান্ডু পোস্টের অফিসও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়।

৮ সেপ্টেম্বরের সেই রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের দুই দিন আগে ২৪ বছর বয়সী পরিবেশ কর্মী পান্ডে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চুরে পর্বত এলাকায় এক খনির দৃশ্য দেখিয়ে ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেন, ‘নেপালের সম্পদ জনগণের, রাজনীতিবিদদের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নয়।’ দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে নামতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই আন্দোলন মূলত নেতৃত্বহীন ছিল। সরকার যখন দেশে ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়, তখন ক্ষোভ তীব্র হয়ে ওঠে। সরকারের যুক্তি ছিল, এসব প্ল্যাটফর্ম স্থানীয়ভাবে নিবন্ধন করেনি। এরই মধ্যে মাসের পর মাস ধরে ক্ষোভ জমে উঠছিল তথাকথিত ‘নেপো বেবি’দের বিরুদ্ধে। নেপো বেবি বলতে এখানে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বোঝানো হচ্ছে। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের বিলাসবহুল জীবন-যাপন ও সম্পদের প্রদর্শনী চালিয়ে যাচ্ছিল।

সবচেয়ে আলোচিত ছবিগুলোর একটি ছিল প্রাদেশিক মন্ত্রীর ছেলে সৌগত থাপার, যিনি লুই ভিতো, গুচি ও কার্টিয়ারের মতো বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের বাক্স দিয়ে সাজানো এক ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ক্ষুব্ধ জনগণের ভাষ্য—দেশের জনগণ যেখানে মৌলিক চাহিদার জোগান নিশ্চিত করতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে রাজনীতিবিদদের সন্তানেরা এত বিলাসবহুল জীবন কীভাবে যাপন করছে। সমালোচনার জবাবে সৌগত বলেন, ‘এটি অন্যায্য ও ভুল ব্যাখ্যা’। তার দাবি, তার বাবা একজন সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে যা আয় করেছেন তার প্রতিটি পয়সাই তিনি জনগণের কাজেই ব্যয় করেছেন।

নেপালকে তরুণ গণতন্ত্র বলা হয়, কারণ দেশটি খুব বেশি দিন হয়নি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এসেছে। দীর্ঘ রাজতন্ত্র ও এক দশকব্যাপী মাওবাদী গৃহযুদ্ধের পর ২০০৮ সালে রাজা উৎখাত হয় এবং নেপাল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। সেই যুদ্ধে ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। কিন্তু প্রতিশ্রুত স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আজও অধরা। গত ১৭ বছরে নেপাল ১৪টি সরকার দেখেছে। কোনো সরকারই পূর্ণ পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। কমিউনিস্ট ও নেপালি কংগ্রেস দল পালাক্রমে ক্ষমতায় এসেছে। একই নেতা, যেমন কেপি শর্মা ওলি, একাধিকবার ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন।

দেশটির মাথাপিছু জিডিপি এখনো দেড় হাজার ডলারের নিচে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। প্রায় ১৪ শতাংশ নেপালি বিদেশে কাজ করেন এবং প্রতি তিনটি পরিবারের একটিতে রেমিট্যান্স আসে। পান্ডে পূর্ব নেপালের এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছেন। তাঁর বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষক। তিন বছর আগে তাঁর মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ে। চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে পান্ডের পরিবারের প্রায় দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। পরিবারের হাল ধরতে তাঁর বড় বোনকে বিদেশে পাড়ি জমাতে হচ্ছে।

বিক্ষোভের আগে পান্ডে ও তাঁর সহযোদ্ধারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য নির্দেশিকা তৈরি করেছিলেন। তাতে সহিংসতা এড়িয়ে চলা ও অশান্তি সৃষ্টিকারীদের থেকে সাবধান থাকার আহ্বান জানানো হয়। ৮ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি বন্ধুদের নিয়ে কাঠমান্ডুর কেন্দ্রীয় মৈতিঘর মণ্ডলায় পৌঁছান। তাঁর ধারণা ছিল হয়তো কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হবেন। কিন্তু জনতা ক্রমেই ফুলে উঠতে থাকে। আন্দোলনকারী আকৃতি ঘিমিরে (২৬) বলেন, ‘প্রথমে পরিবেশটা শান্তিপূর্ণ আর মিলনমেলার মতো ছিল। আমরা সবাই বসে পুরোনো নেপালি গান গাইছিলাম, স্লোগানগুলোও ছিল হাস্যরসাত্মক।’

কিন্তু দুপুর নাগাদ পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। জনতা নতুন বানেশ্বরে পার্লামেন্টের দিকে অগ্রসর হয়। পান্ডে ও ঘিমিরে দুজনেই দেখেন, মোটরসাইকেলযোগে কিছু মানুষ সেখানে আসছেন, যাদের বয়স গড়পড়তা জেন-জি আন্দোলনকারীদের চেয়ে বেশি। এরা উসকানিদাতা বলে সন্দেহ হয় তাদের। এরপর কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে শুরু করে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকজন নিরাপত্তা ভেঙে সংসদ ভবনে ঢোকার চেষ্টা করে। তাদের থামাতে টিয়ার গ্যাস ও জল কামান ব্যবহার করে পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে যে, পুলিশ বিক্ষোভকারী এমনকি স্কুলশিক্ষার্থীদেরও লক্ষ্য করে গুলি চালায়।

পরের দিন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বিক্ষোভকারীরা প্রতিশোধ নিতে সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও অন্য সরকারি স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পান্ডে ও ঘিমিরে ঘরে বসে অনলাইনে ঘটনাপ্রবাহ দেখেন। ঘিমিরে বলেন, ‘অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন, কারণ অবশেষে রাজনীতিবিদরা তাঁদের কাজের ফল ভোগ করছিলেন।’ কিন্তু আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। পান্ডে বলেন, ‘আমি দেখেছি মানুষ মোটরসাইকেল থেকে পেট্রোল নিয়ে বোতলে ভরে সংসদে হামলা করছে।’

সুপ্রিম কোর্টে আগুন লাগতে দেখে আইনজীবী পান্ডে কেঁদে ফেলেন। তাঁর কাছে আদালত ছিল মন্দিরের মতো। তাঁর বন্ধুদের কেউ কেউ আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন, যদিও জানতেন সেটা বৃথা চেষ্টা। ঘিমিরে প্রশ্ন তোলেন, ‘সবাই বলছে, এগুলো পুড়িয়ে দিতে যারা এসেছিল, তাদের আলাদা উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু এরা আসলে কারা?’ ভিডিওতে দেখা যায়, হামলাকারীদের মুখ ঢাকা ছিল।

শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোতায়েন হলে কিছুটা শান্তি ফেরে। পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত করতে বেশ কয়েক দিন কারফিউ জারি রাখা হয়। সপ্তাহের শেষে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী করা হয়। আন্দোলনকারীরাই তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চেয়েছে। পান্ডে আশা করছেন, তিনি দেশকে দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দেবেন, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করবেন এবং ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেবেন।

তবে দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ রুমেলা সেন বলছেন, ‘সেনাবাহিনীকে অভূতপূর্বভাবে স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে দেখা উদ্বেগজনক।’

আরও বিতর্কের জন্ম দেয় দুর্গা প্রসাইয়ের ভূমিকা। সেনাবাহিনীর আমন্ত্রণে তিনি আলোচনায় যোগ দেন। অথচ গত মার্চে সহিংস রাজতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তিনি ভারতে পালালেও ফেরত আনা হয়। এ কারণে জেন-জি আন্দোলনকারীরা আলোচনা থেকে সরে দাঁড়ান।

তবুও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী থাকতে চান পান্ডে। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের প্রজন্মের রাজনৈতিক জাগরণ। আমরা আর নীরব থাকব না, অন্যায় মেনে নেব না। এটা কেবল হালকা প্রতিবাদ নয়, বরং এক সাহসী চ্যালেঞ্জ সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, যারা দশকের পর দশক ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে ৪২ দেশের নাগরিকদের দিতে হবে সোশ্যাল মিডিয়ার ৫ বছরের রেকর্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৩
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

মার্কিন কাস্টম অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন ডিপার্টমেন্ট বা শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা দপ্তর (সিবিপি) গতকাল মঙ্গলবার একটি প্রস্তাব পেশ করেছে। প্রস্তাব অনুসারে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ থেকে আসা পর্যটকদের অচিরেই হয়তো বিগত পাঁচ বছর পর্যন্ত তাদের সামাজিক মাধ্যমের ইতিহাস খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, এই পরিবর্তনের জেরে সেই সব পর্যটকেরা প্রভাবিত হবেন, যারা ভিসা মওকুফ কর্মসূচির যোগ্য। এই কর্মসূচি অনুযায়ী ৪২টি দেশের নাগরিকেরা ইলেকট্রনিক ভ্রমণ অনুমোদন পেলে ভিসা ছাড়াই ৯০ দিন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারেন।

ফেডারেল রেজিস্ট্রারে মঙ্গলবার পেশ করা একটি নথিতে সিবিপি জানিয়েছে, তারা আবেদনকারীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত তথ্যের একটি লম্বা তালিকা চাইবে, যার মধ্যে থাকবে সামাজিকমাধ্যম, গত দশ বছরজুড়ে ব্যবহার করা ই–মেইল ঠিকানা এবং বাবা-মা, জীবনসঙ্গী, ভাই-বোন ও সন্তানদের নাম, জন্মতারিখ, বাসস্থান ও জন্মস্থান।

বর্তমানে ভিসা মওকুফ পাওয়া দেশগুলোর আবেদনকারীদের ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথোরাইজেশন কর্মসূচিতে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। তাঁরা ৪০ ডলার দিয়ে একটি ই-মেইল ঠিকানা, বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং জরুরি যোগাযোগের তথ্য জমা দেন। এই অনুমোদনের মেয়াদ থাকে দুই বছর।

সিবিপির এই পদক্ষেপ মার্কিন সরকারের পূর্বের অনুরূপ কার্যক্রমের মতোই। সরকার ইতিমধ্যে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য এইচ১–বি ভিসা এবং শিক্ষার্থী ও গবেষক ভিসার আবেদনকারীদের জন্য সামাজিকমাধ্যম পর্যালোচনার ব্যবস্থা চালু করেছে। এ ছাড়া সরকারের একটি নতুন ২৫০ ডলারের ভিসা ইনটিগ্রিটি ফি সংগ্রহের পরিকল্পনা আছে, যা অনেক ভ্রমণকারীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে, যদিও ভিসা মওকুফ পাওয়া দেশের ভ্রমণকারীরা সেই ফি থেকে ছাড় পাবেন।

ভিসা ইনটিগ্রিটি ফি নিয়ে ট্রাভেল বা পর্যটন শিল্প আপত্তি জানিয়েছে। গত নভেম্বরে ২০ টিরও বেশি পর্যটন ও ভ্রমণ ব্যবসার একটি জোট বিরোধিতা করে একটি চিঠি স্বাক্ষর করে। তাঁদের উদ্বেগের কারণ, এই ফি আরোপের ফলে আগামী বছরের বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইচ্ছুক কোটি কোটি আন্তর্জাতিক পর্যটককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করবে।

এক পর্যটন কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রেখে কথা বলেছেন, সিবিপি এই পরিকল্পনা নিয়ে শিল্পের অংশীজনদের কিছু জানায়নি। তিনি একে যাত্রী যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এক ‘গুরুত্বপূর্ণ বাড়াবাড়ি’ বলে অভিহিত করেছেন। নোটিশে সিবিপি জানিয়েছে যে, তারা এই প্রস্তাবের ওপর ৬০ দিনের জন্য জনসাধারণের মন্তব্য গ্রহণ করবে।

যদি এই পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়, তবে সিবিপি কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে পরিবর্তনগুলি কার্যকর করতে পারে, এমনটাই জানিয়েছে ইমিগ্রেশন আইন সংস্থা ফ্রাগোমেন (Fragomen) . ফ্রাগোমেন-এর অংশীদার বো কুপার সরকারের সামাজিক মাধ্যম পর্যালোচনার নতুন এই পদ্ধতিকে ‘প্যারাডাইম শিফট বা ধারণার আমূল পরিবর্তন’ বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ এর আগে সংস্থাগুলি নির্দিষ্ট তথ্য, যেমন অপরাধমূলক কার্যকলাপ, যাচাইয়ের জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করত।

কুপার বলেন, ‘নতুন পদ্ধতিতে অনলাইন আলাপ-আলোচনা দেখা হবে এবং কী ধরনের কথা বলা হয়েছে সে বিষয়ে নিজস্ব বিবেচনা ও নীতির ভিত্তিতে ভ্রমণ বাতিল করা হবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘পর্যটন সংখ্যা কেমন থাকে, তা দেখতে বেশ আগ্রহ থাকবে।’

ডিজিটাল অধিকার গোষ্ঠী ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি সোফিয়া কোপ বিবৃতিতে বলেন, সামাজিক মাধ্যমের বাধ্যতামূলক প্রকাশ ও নজরদারি ‘নাগরিক স্বাধীনতার ক্ষতিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদী এবং অন্যান্য বাজে লোককে খুঁজে বার করতে এটা কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়নি। তবে এটি নিরপরাধ ভ্রমণকারী এবং তাদের আমেরিকান পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের বাক্‌স্বাধীনতাকে স্তব্ধ করেছে এবং তাদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছে।’

সিবিপি এই বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া দেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওর মুখ ও ঠোঁট সুন্দর, মেশিনগানের মতো—প্রেস সেক্রেটারি লেভিট সম্পর্কে ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাঁর প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটের ‘সুন্দর মুখ’ আর ‘ঠোঁট’-এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। এক অর্থনৈতিক কর্মসূচির প্রচারের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেওয়ার সময় সেখানেই এহেন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

খবরে বলা হয়েছে, পেনসিলভানিয়ায় এক জনসভায় ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনের অর্থনৈতিক সফলতার কথা বলছিলেন। তখনই মূল বিষয় থেকে সরে গিয়ে তাঁর ২৮ বছর বয়সী প্রেস সেক্রেটারি কত ‘চমৎকার’ তা নিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা আমাদের সুপারস্টার ক্যারোলিনকে পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। সে কি দারুণ না? ক্যারোলিন কি অসাধারণ?’ উল্লসিত জনতাকে তিনি প্রশ্ন করেন।

এরপর তিনি লেভিটের শারীরিক সৌন্দর্য ও আত্মবিশ্বাসের প্রশংসা করতে শুরু করেন। লেভিট তাঁর চেয়ে ৫০ বছরেরও বেশি ছোট। ট্রাম্প বলেন, ‘যখন সে ফক্সের টেলিভিশন চ্যানেলে যায়, সেখানে সে দাপিয়ে বেড়ায়, দাপিয়ে বেড়ায়...সে যখন মঞ্চে ওঠে তাঁর ওই সুন্দর মুখ আর সেই ঠোঁট নিয়ে, যা থামে না, যেন একটা ছোট্ট মেশিনগান।’

ট্রাম্প বলেন, ‘তাঁর কোনো ভয়ডর নেই...কারণ আমাদের নীতি সঠিক। আমাদের এখানে নারীদের খেলায় পুরুষেরা অংশ নেয় না...আমাদের সবাইকে রূপান্তরকামী হতে বাধ্য করতে হয় না, আর আমাদের উন্মুক্ত সীমান্ত নীতিও নেই যেখান থেকে গোটা বিশ্ব—জেলখানা ও অন্য সব জায়গা থেকে—আমাদের দেশে ঢুকতে পারবে, তাই ওর কাজটা একটু সহজ। আমি তো অন্য পক্ষের প্রেস সেক্রেটারি হতে চাইতাম না।’

এই রিপাবলিকান নেতা আগস্টে নিউজম্যাক্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও লেভিটকে নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। তিনি সে সময় বলেছিলেন, ‘ওই মুখটা, ওই মস্তিষ্কটা, ওই ঠোঁট, যেভাবে চলে। মনে হয় যেন সে একটা মেশিনগান। আমার মনে হয় না ক্যারোলিনের চেয়ে ভালো প্রেস সেক্রেটারি আর কারও হয়েছে।’

লেভিট ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সহকারী প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছিলেন। নিউ হ্যাম্পশায়ারের বাসিন্দা লেভিট ৬০ বছর বয়সী রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার নিকোলাস রিক্কিও’র সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ এবং তাঁদের নিকো নামে একটি পুত্র সন্তান আছে। কংগ্রেস নির্বাচনে জিততে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি জানুয়ারি মাসে আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন এবং ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রেস সেক্রেটারি হন। ট্রাম্পের পঞ্চম প্রেস সেক্রেটারি তিনি এবং তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম প্রেস সেক্রেটারি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোশ্যাল মিডিয়া খতিয়ে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতীয়দের এইচ-১বি ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থগিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সোশ্যাল মিডিয়া খতিয়ে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতীয়দের এইচ-১বি ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থগিত

এইচ-১বি ভিসা প্রার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট যাচাই-বাছাই করবে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই নতুন সোশ্যাল মিডিয়া নীতিতে আটকে গেল ভারতের আবেদনকারীদের ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট। গতকাল মঙ্গলবার রাতে এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা দিয়েছে ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। সেখানে বলা হয়, ভিসা আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকারের তারিখ আগামী বছরে পেছানো হয়েছে।

দূতাবাসের বার্তায় আরও বলা হয়, যদি আপনি আপনার ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে ইমেইল পেয়ে থাকেন, তবে মিশন ইন্ডিয়া আপনার নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট তারিখে নিতে সহায়তা করতে আগ্রহী।’

বার্তায় সতর্ক করে দূতাবাস আরও জানায়, পুনর্নির্ধারণের নোটিফিকেশন পাওয়ার পরও আগের নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত হলে দূতাবাস বা কনস্যুলেটে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শেষভাগে যেসব সাক্ষাৎকার নির্ধারিত ছিল, সেগুলো আগামী বছরের মার্চে নেওয়া হচ্ছে। তবে ঠিক কতগুলো অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থগিত হয়েছে, তা জানা যায়নি।

শীর্ষ ব্যবসায়িক অভিবাসন আইন প্রতিষ্ঠানের অ্যাটর্নি স্টিভেন ব্রাউন বলেন, ‘মিশন ইন্ডিয়া যা নিশ্চিত করেছে, তা-ই আমরা শুনছিলাম। সোশ্যাল মিডিয়া যাচাইয়ের কারণে তারা আগামী কয়েক সপ্তাহের বেশ কিছু অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করে মার্চে পুনর্নির্ধারণ করেছে।’

এইচ-১বি ভিসা আবেদনকারী ও এইচ-৪ নির্ভরশীলদের জন্য স্ক্রিনিং ও যাচাই–বাছাইয়ের পরিধি বাড়িয়েছে মার্কিন সরকার। নতুন নির্দেশনায় আবেদনকারীদের সব সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের প্রাইভেসি সেটিং ‘পাবলিক’ রাখতে বলা হয়েছে।

আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য বা জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা জননিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারেন কি না তা চিহ্নিত করতে ১৫ ডিসেম্বর থেকে কর্মকর্তারা তাঁদের অনলাইন উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। তবে শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আবেদনকারীরা আগে থেকেই এমন পর্যবেক্ষণের আওতায় ছিলেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, প্রতিটি ভিসার ক্ষেত্রেই জাতীয় নিরাপত্তার কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের অন্যতম প্রধান পথ এইচ-১বি ভিসা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নিয়মকানুনের সর্বশেষ আঘাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি। গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নতুন এইচ-১বি ভিসার ওপর একবারের জন্য ১ লাখ ডলারের অতিরিক্ত ফি আরোপ করেন। এর কিছুদিন পর, আফগান বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তির গুলিতে ন্যাশনাল গার্ড সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র ১৯টি দেশকে ‘উদ্বেগজনক দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করে আবেদনকারীদের গ্রিন কার্ড, মার্কিন নাগরিকত্ব ও অন্যান্য অভিবাসন প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনের আগেই চুক্তি চান ট্রাম্প, প্রস্তাব মানতে জেলেনস্কিকে আলটিমেটাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছেন, বর্তমান রণক্ষেত্র অনুসারেই যুদ্ধবিরতিতে যেতে। ছবিতে, হালকা গোলাপী রঙে চিহ্নিত অঞ্চলটি রাশিয়া দখলে যাওয়া ইউক্রেনীয় অঞ্চল। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছেন, বর্তমান রণক্ষেত্র অনুসারেই যুদ্ধবিরতিতে যেতে। ছবিতে, হালকা গোলাপী রঙে চিহ্নিত অঞ্চলটি রাশিয়া দখলে যাওয়া ইউক্রেনীয় অঞ্চল। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সময় বেঁধে দিয়েছেন, তাঁর প্রস্তাবিত শান্তিচুক্তি মেনে নিতে। কারণ, ট্রাম্প আগামী বড় দিন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বরের আগেই একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে চান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমস নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তবে বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মার্কিন আলোচকেরা ইউক্রেনের নেতা ভ্লাদিমির জেলেনস্কিকে শান্তি প্রস্তাবের জবাব দেওয়ার জন্য কয়েক দিন সময় দিয়েছেন। এই প্রস্তাবে কিয়েভকে কিছু অনির্দিষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বড়দিনের আগেই একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আশা করছেন। খবরে বলা হয়েছে, জেলেনস্কি মার্কিন দূতদের বলেছেন—কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য তাঁর সময়ের প্রয়োজন।

যদিও ট্রাম্প গত মাসে বলেছিলেন, তিনি থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের মধ্যে একটি চুক্তি দেখতে চান, পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে তাঁর কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নভেম্বরে এক শান্তি পরিকল্পনা উত্থাপন করেন, যাতে ইউক্রেনকে দনবাসের সেই অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানানো হয়েছিল, যা বর্তমানে দেশটির নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিস্তৃত যুদ্ধবিরতির জন্য মস্কোর অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল।

সোমবার লন্ডন সফরকালে জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ‘একটি বড় ধরনের বাধার’ মুখে ঠেলে দিচ্ছে, তবে তিনি যোগ করেছেন যে—ভূখণ্ড নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, ইউক্রেন লড়াই না করে কোনো জমি ছেড়ে দিতে রাজি নয়।

রাশিয়ার সৈন্যরা ফ্রন্ট লাইনের বিভিন্ন অংশে দৃঢ়ভাবে অগ্রগতি অর্জন করে চলেছে, আর ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা বলছেন—তাদের কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্র নেই এবং নতুন সৈন্যদের দিয়ে যুদ্ধের ক্ষতি পূরণ করতে তারা সংগ্রাম করছেন। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ক্রাসনোয়ার্মেইস্ক (পোকরোভস্ক) শহর মুক্তির ঘোষণা করে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দনবাসের এই শহরটিকে পরবর্তী আক্রমণের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ‘সেতুবন্ধন’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

এদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী ক্রমেই নাকাল হয়ে পড়ছে। এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে সেনাবাহিনী থেকে সদস্যদের পলায়ন ও অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিতি। সরকারি হিসাব অনুসারে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ সেনা অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিত বা পলাতক; এবং সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

অক্টোবরে ইউক্রেনীয় কৌঁসুলিরা জানান, রাশিয়া ২০২২ সালে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার সেনা অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিত রয়েছেন এবং প্রায় ৫৪ হাজার সেনা পলায়ন করেছেন। গত বছর থেকে এই সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিতি ১ লাখ ৭৬ হাজার এবং পলায়নের ২৫ হাজার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত