Ajker Patrika

আফগানিস্তান নিয়ে রাশিয়ার উদ্বেগ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২১, ০০: ১১
আফগানিস্তান নিয়ে রাশিয়ার উদ্বেগ

মার্কিন ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহারের পর বড় ধরনের নিরাপত্তা শূন্যতা তৈরি হয়েছে আফগানিস্তানে। এ অবস্থায় প্রতিবেশী পাকিস্তান, ইরান, চীন বা মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর বাইরে রাশিয়া ও ভারত দেশটির সার্বিক অবস্থা গভীরভাবে নজরে রাখছে। সংগত কারণেই ভারতের চেয়ে রাশিয়া এ ক্ষেত্রে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। 
 
বুধবার (৭ জুলাই) রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই লাভরভ লাওস সফরকালে সাংবাদিকদের বলেন, আফগানিস্তানের অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখতে যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত মস্কো। এর আগে গত সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাকমনের সঙ্গে কথা বলেন। পুতিন বলেন, তাজিকিস্তান সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ। তাই ন্যাটো সেনা প্রত্যাহারের ফলে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী হিসেবে নিরাপত্তা রক্ষায় আপনাদের কোনো সহায়তা দরকার হলে, আমরা পাশে আছি। 

একই দিন রুশ উপপররাষ্ট্র মন্ত্রী আন্দ্রেই রুদেনকো বলেন, যা বলা হচ্ছে প্রকৃত অবস্থা এর চেয়েও ভয়াবহ। আফগান–তাজিকিস্তান সীমান্তের প্রায় ৭০ শতাংশ এরই মধ্যে তালেবানেরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দুটি রুশ এমআই–২৪ জঙ্গি ও দুটি সামরিক পরিবহন হেলিকপ্টার গত সোমবার তাজিকিস্তানে মহড়ায় অংশ নিয়েছে। 

একই দিন অতিরিক্ত ২০ হাজার সেনা আফগান সীমান্তে পাঠিয়েছে তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট রাকমন। সম্প্রতি তালেবানদের হামলায় এক হাজারের বেশি আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য তাজিকিস্তানে পালিয়ে আসে। এমন পরিস্থিতিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। 
 
১৯৯১ সালে সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে যাওয়ার পর স্বাধীন হয়ে যাওয়া দেশগুলো নিয়ে যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থা (সিএসটিও) করে রাশিয়া। এ সামরিক চুক্তির অধীনে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোয় রুশ সেনাবাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে। তাজিকিস্তানের রুশ সেনা ঘাঁটি এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়। এতে ট্যাংক, হেলিকপ্টার, ড্রোনসহ অন্য সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে। এই দিকে ইঙ্গিত করে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলে আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। তাই এখানকার স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে আমরা প্রয়োজনে সামরিক শক্তি ব্যবহার করব। মার্কিন ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহার সম্পর্কে তিনি বলেন, দু দশক অবস্থান করে ওরা নিষ্ফলভাবে আফগানিস্তান ত্যাগ করেছে। 

কিন্তু ইতিহাস বলে, আফগানিস্তানে মুজাহিদীন ও মাওয়িস্টদের বিরুদ্ধে নয় বছর (১৯৭৯–৮৯) যুদ্ধ করে অনেকটা আজকের মার্কিন ও ন্যাটো সেনাদের মতো ব্যর্থ হয়ে ফিরে গিয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত সেনাবাহিনী। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পেছনে এ যুদ্ধও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। 
 
এদিকে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মধ্যে কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দর নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। মার্কিন ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহারের পর বন্দরটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে চায় তুরস্ক। এ নিয়ে তাঁরা আলোচনা করবেন। 
 
আফগানিস্তান ছাড়ার পর দেশটির সঙ্গে সার্বিক যোগযোগ রক্ষার জন্য পশ্চিমাদের জন্য এ বন্দরটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সৈন্য ফিরিয়ে নেওয়ার পর, আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে এর ভার দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন না তাঁরা। তাই ন্যাটোর সদস্য তুরস্কের কাছে এর জিম্মাদারি রাখতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য মিত্ররা। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মহলে দর-কষাকষি করার জন্য কাবুলে নিজেদের একটা ঘাঁটি রাখতে আঙ্কারারও একটা ব্যগ্র ভাব আছে। 
 
আফগানিস্তানে রাশিয়, মার্কিন ও ন্যাটোর যুদ্ধের অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত সার হলো—সামরিকভাবে দেশটির সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এই জন্য ভেতর থেকে জেগে ওঠা বড় ধরনের আর্থ–সামাজিক, রাজনৈতিক সংস্কারের বিকল্প নেই। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত