Ajker Patrika

পাকিস্তান দিচ্ছে না নাগরিকত্ব পরিত্যাগপত্র, ভারতে রাষ্ট্রহীন দুই বোন

বিবিসি বাংলা
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯: ০৭
পাকিস্তান দিচ্ছে না নাগরিকত্ব পরিত্যাগপত্র, ভারতে রাষ্ট্রহীন দুই বোন

২০০৮ সালে ভারতের কেরালায় বেড়াতে আসে এক পাকিস্তানি পরিবার। কেরালায় আদিনিবাস হওয়ায় নাড়ির টানে বড় ছেলে ও ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মা। বাবা চলে যান পাকিস্তানে। এরপর কেটে যায় বেশ কয়েক বছর। ২০১৭ সালে মা ও বড় ছেলে আবেদনের পরপরই পেয়ে যান ভারতের নাগরিকত্ব।

কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার অজুহাতে ছোট দুই বোনকে নাগরিকত্ব পরিত্যাগপত্র দেয়নি পাকিস্তান।আজও পাকিস্তান দিচ্ছে না সেই সনদটি। ফলে ভারতও তাদের নাগরিকত্ব দিতে পারছে না। দুই বোন এখন ভারতে যাপন করছেন এক রাষ্ট্রহীন জীবন।

২০০৮ সাল থেকে ভারতের কেরালায় বসবাসরত দুই বোন আদালতে জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে পাকিস্তান দূতাবাসে তারা নিজেদের পাসপোর্ট জমা দেন। কিন্তু সেই সময়ে তাদের বয়স ২১ বছর হয়নি, আর পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী ২১ বছর বয়স না হলে নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করা যায় না। তাই নাগরিকত্ব পরিত্যাগের সনদপত্র তাদের দেওয়া হয়নি। তবে ২১ বছর বয়স হওয়ার পরে তারা যখন আবারও পাকিস্তানের দূতাবাসের কাছে নাগরিকত্ব পরিত্যাগের সনদপত্র নিতে যান, তখনো সেই নথি তাদের দেওয়া হয়নি। এর কোনো কারণও দেখানো হয়নি বলে জানিয়েছেন ওই দুই বোনের মা রাশিদা বানো। তবে এ বিষয়ে তাঁর দুই মেয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে চাননি।

মা ও ছেলে ভারতীয়, দুই মেয়ে রাষ্ট্রহীন

রাশিদা বানো ও তাঁর ছেলে অবশ্য ইতিমধ্যেই ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে গেছেন, তবে তাঁর দুই মেয়ে ভারতের নাগরিকত্ব না পাওয়ায় দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সবাই। এই পরিস্থিতিতে তাঁর দুই মেয়ে পাসপোর্টের জন্যও আবেদন করতে পারছেন না। এ বিষয়ে জানতে, ভারতের পাকিস্তান দূতাবাসে যোগাযোগ করেছিল বিবিসি। কিন্তু সেখান থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চলতেই থাকে, কখনো সেটা সংঘর্ষেও গড়ায়, যেমনটা হয়েছিল চলতি বছরের মে মাসে। কিন্তু তার মধ্যেও অভিবাসন চলতেই থাকে—বিশেষত ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে যেসব পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি আলাদা দেশে রয়ে গিয়েছিলেন। গত কয়েক দশকে এই প্রক্রিয়াটা আরও কঠিন হয়ে গেছে, কারণ এখন নথিপত্র যাচাইয়ের কাজে খুব বেশি কড়াকড়ি করা হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, সাত হাজারেরও বেশি পাকিস্তানির ভারতীয় নাগরিকত্বের আবেদন অমীমাংসিত হয়ে পড়ে রয়েছে। ভারতের সংসদে এই তথ্য পেশ করা হয়েছিল।

নাগরিকত্ব পেতে আদালতে

রাশিদা বানো জানান, পাকিস্তান দূতাবাস থেকে যখন তাঁর মেয়েদের নাগরিকত্ব পরিত্যাগের সনদ দেওয়া হল না, তখন তারা অনুরোধ করেছিলেন যাতে তাদের পাকিস্তানি পাসপোর্টগুলো ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলোও দেওয়া হয়নি।

তাঁর দুই মেয়ের কাছে এখন শুধু ২০১৮ সালে পাকিস্তান দূতাবাসের দেওয়া একটি করে নথি আছে। ওই নথিতে লেখা আছে যে, তারা পাকিস্তানের পাসপোর্ট জমা দিয়েছে এবং তাদের যদি ভারতের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়, তাহলে পাকিস্তানের কোনো আপত্তি নেই।

তবে ‘নাগরিকত্ব পরিত্যাগের সনদপত্র’ হিসেবে এই নথি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করতে চায়নি। এরপরেই ওই দুই বোন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

গত বছর কেরালা হাইকোর্টের এক-সদস্যের বেঞ্চ তাদের পক্ষেই রায় দেয়। আদালত বলে, আবেদনকারীরা যে ওই নথিটি পেশ করতে পারবেন না, তা স্পষ্ট। ‘একটা অসম্ভব কাজ করতে বলা হচ্ছে তাদের,’ এমন মন্তব্য করে ভারত সরকারকে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেন কোর্ট।

তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোর্টের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন করে। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২৩শে আগস্ট কেরালা হাইকোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ আগের রায় বদলে দেয়।

রায়ে বলা হয়, ‘কোনো ব্যক্তি ভারতের নাগরিক হওয়ার যোগ্য কী না, তা ভারতীয় রাষ্ট্রই একমাত্র তা চূড়ান্ত করতে পারে, এ ক্ষেত্রে কোনো বিপরীত দাবি যদি অন্য কোনো দেশের সরকার করে, তা গ্রাহ্য হতে পারে না। আনুষ্ঠানিকভাবে নাগরিকত্ব পরিত্যাগেই এই প্রক্রিয়ার আইনি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।’

এরপরও অবশ্য ওই দুই বোনের সামনে অবশ্য উচ্চতর আদালতে আবেদন করার সুযোগ আছে। কিন্তু ভারতের কোর্ট যে নথি চাচ্ছে, সেটি তাদের কাছে নেই।

২০১৭ সালে পাকিস্তান দূতাবাসে তারা নিজেদের পাসপোর্ট জমা দেন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
২০১৭ সালে পাকিস্তান দূতাবাসে তারা নিজেদের পাসপোর্ট জমা দেন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ভারত থেকেই পাকিস্তানে যায় পরিবারটি

পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী ২১ বছরের কম বয়সী কেউ নিজে নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে না পারলেও তাদের বাবা যদি নাগরিকত্ব পরিত্যাগের আবেদন করেন, সেই আবেদনে তাদেরও নাম অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এই দুই বোনের বাবা মুহাম্মদ মারুফের জন্ম হয়েছিল কেরালাতেই। কিন্তু নয় বছর বয়সে তিনি অনাথ হয়ে যাওয়ায় তাঁর দাদি তাঁকে দত্তক নিয়েছিলেন। তিনি যখন ১৯৭৭ সালে পাকিস্তানে চলে যান, তখন নাতিকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।

রাশিদা বানো জানান, তাঁর বাবা-মা ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। ১৯৭১ সালে আত্মীয়দের সঙ্গে পাকিস্তানে বেড়াতে গিয়ে তারা আটকে পড়েন। যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় দুই দেশের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সেই সময়ে। বেশ কয়েক মাস সেখানে আটকে থাকার পরে রাশিদা বানোর বাবা সিদ্ধান্ত নেন, পাকিস্তানের নাগরিকত্বের আবেদন করাটা বোধ হয় সহজতর হবে। এর কয়েক বছর পরেই রাশিদা বানোর জন্ম হয়।

এরপর পাকিস্তানে মুহাম্মদ মারুফের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। পরে তিনি চারটি সন্তানের জন্ম দেন। একসময় নিজেদের শিকড়ের কাছাকাছি থাকবেন বলে, পুরো পরিবার ২০০৮ সালে দীর্ঘমেয়াদি ভিসা নিয়ে ভারতে চলে আসেন। কিন্তু মুহাম্মদ মারুফ ভারতের জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি। তখন তিনি পাকিস্তানে ফিরে যান। অন্যদিকে, রাশিদা বানো ও তাঁর ছেলে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেয়ে যান।

পাকিস্তানি পরিচয়পত্র দেখালে কটূক্তি

রাশিদা বানো বলেন, তারা পাকিস্তানি পরিচয়পত্র দেখালে মাঝে মাঝেই তাঁর পরিবারকে কটূক্তি সহ্য করতে হয়। কিন্তু তাদের কাছে তো অন্তত কোনো একটা নথি রয়েছে–তার দুই মেয়ের তো সেটুকুও নেই। মোবাইল ফোনের সংযোগ নেওয়ার মতো ছোটখাটো কাজ হোক বা তাঁর দুই মেয়ের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হয়েছে এই পরিবারটিকে। ভারত সরকার অবশ্য তাঁর দুই মেয়েকে আধার কার্ড প্রদান করেছে—যা মোটামুটিভাবে পরিচয়পত্র হিসেবেই ভারতে বিবেচিত হয়। কিন্তু নাগরিকত্বের প্রমাণ না থাকার ফলে তারা ন্যূনতম অধিকারও ভোগ করতে পারেন না।

পাসপোর্ট না থাকার ফলে তাঁর দুই মেয়ের ব্যক্তিগত জীবনেও সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানান রাশিদা বানো। তাঁর এক মেয়ের স্বামীকে মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি ছেড়ে ভারতে ফিরে আসতে হয়েছে, কারণ তাঁর মেয়ে বিদেশে যেতে পারবেন না। আবার অন্য মেয়ের একমাত্র নাতির বিদেশে চিকিৎসা করানোর দরকার থাকলেও তারা ভারত ছেড়ে যেতে পারছেন না।

তাদের আইনজীবী এম শশীধরণ বললেন, ‘২০১৭ সালে এই দুই বোন নথি হাতে পায়নি, কারণ তারা সেই সময়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল। এখন তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেছে, আবার তারা পাকিস্তানে ফিরেও যেতে পারবে না কারণ তারা পাকিস্তানি পাসপোর্ট তো জমা দিয়ে দিয়েছে। তাহলে তারা ওই সনদপত্র পাবে কী করে?’ তাদের জীবন এখানেই আটকে গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বলরুম তৈরিতে অর্থ জোগাচ্ছে কারা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৫৯
ট্রাম্পের শখের বলরুম নির্মাণে হোয়াইট হাউসের একাংশ ভাঙা হচ্ছে। ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের শখের বলরুম নির্মাণে হোয়াইট হাউসের একাংশ ভাঙা হচ্ছে। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে নতুন এক বিশাল বলরুম নির্মাণ করছেন। এই বলরুম তৈরিতে খরচ হবে প্রায় ২৫ কোটি ডলার। তবে এই বিপুল অর্থের বড় অংশ আসছে গোপন দাতা ও কোম্পানির কাছ থেকে, যাদের পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

স্থানীয় সময় গত সোমবার হোয়াইট হাউসের ইস্ট উইংয়ে ৯০ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই বিলাসবহুল বলরুমের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নিজে এর একটি বড় অংশের অর্থ দেবেন। তবে বেশ কিছু ‘অজ্ঞাত’ দাতা অনুদান দিতে রাজি হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এই অনুদানের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও নৈতিকতা বিশেষজ্ঞরা। সাবেক হোয়াইট হাউস নীতিনৈতিকতা আইনজীবী রিচার্ড পেইন্টার বলেছেন, ‘এটা নৈতিকতার দিক থেকে খুব বিপজ্জনক। হোয়াইট হাউসে প্রবেশাধিকার বিক্রি করে অর্থ তোলা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছ থেকে কিছু না কিছু সুবিধা পাওয়ার আশাতেই অনুদান দিচ্ছে।’

১৫ অক্টোবর হোয়াইট হাউসে সম্ভাব্য দাতাদের জন্য এক নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বড় বড় মার্কিন কোম্পানির প্রধানেরা—ব্ল্যাকস্টোন, ওপেনএআই, মাইক্রোসফট, আমাজন, গুগল, প্যালান্টির, লকহিড মার্টিন ও কয়েনবেসের কর্মকর্তারা। ছিলেন নিউইয়র্ক জেটস ফুটবল দলের মালিক উডি জনসন এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মালিক গ্লেজার পরিবারও।

সিবিএস নিউজের হাতে পাওয়া এক নথিতে দেখা গেছে, অনুদানদাতাদের ‘বিশেষ স্বীকৃতি’ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এমনকি তাদের নাম বলরুমের ভেতরের দেয়ালে খোদাই করে রাখার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত শুধু একটি কোম্পানির নাম প্রকাশ পেয়েছে—ইউটিউব। আদালতের নথি অনুযায়ী, ট্রাম্পের সঙ্গে মামলার নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে ইউটিউব দিচ্ছে ২ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০২১ সালে ক্যাপিটল হামলার পর ট্রাম্পের ইউটিউব অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছিল, সেই মামলা নিষ্পত্তির অংশ এটি।

বাকি দাতাদের নাম ও অনুদানের পরিমাণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সব অনুদান পরিচালনা করবে ‘ট্রাস্ট ফর দ্য ন্যাশনাল মল’ নামের একটি অলাভজনক সংস্থা। তারা হোয়াইট হাউস ও ন্যাশনাল পার্কের উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ সংগ্রহ করে।

হোয়াইট হাউসের দাবি, এতে কোনো অনিয়ম নেই এবং ভবিষ্যতের প্রশাসনও এই বলরুম ব্যবহার করতে পারবে। ফলে করদাতাদের এক পয়সাও খরচ হবে না। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এটি এক ধরনের ‘পে-টু-প্লে’ ব্যবস্থা; অর্থাৎ অনুদানের বিনিময়ে রাজনৈতিক প্রভাব বা সুবিধা নেওয়ার পথ খুলে দেওয়া।

রিচার্ড পেইন্টার বলেন, ‘আগে জায়গা কম থাকায় সবাইকে আমন্ত্রণ দেওয়া যেত না, সেটা ভালো ছিল। কিন্তু এখন এই বিশাল বলরুম রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহের বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে সরাসরি কোনো ঘুষ বা চুক্তির প্রমাণ দেওয়া যাবে না, তবে ট্রাম্প প্রশাসন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।’

অন্যদিকে সাবেক হোয়াইট হাউস শেফ মার্টিন মঞ্জিয়েলো বলছেন, ‘এই বিনিয়োগ শেষ পর্যন্ত খরচ বাঁচাবে। আগে বড় অনুষ্ঠানের জন্য বাইরে তাঁবু বসাতে হতো, যার খরচ এক মিলিয়ন ডলারের বেশি পড়ত।’

নতুন বলরুমটি হবে একসঙ্গে প্রায় এক হাজার মানুষের আসন সংবলিত, যা আগে পরিকল্পনা ছিল ৬৫০ জনের জন্য। ট্রাম্পের মতে, এটি শুধু বিলাসিতা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ ও আন্তর্জাতিক আয়োজনে প্রয়োজনীয় একটি সংযোজন। এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই কোটি কোটি ডলারের অনুদান আসছে কার কাছ থেকে, আর এর বিনিময়ে তারা কী পেতে চায়?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিঙ্গাপুরে ফিলিস্তিনপন্থী মিছিল করে গ্রেপ্তার, বেকসুর খালাস পেলেন ভাইরাল ৩ তরুণী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৩৪
(বাঁ থেকে) সিতি আমিরাহ মোহাম্মদ আসরোরি, কোকিলা আন্নামালাই এবং মোসাম্মদ সাবিকুন নাহার। ছবি: কোকিলা আন্নামালাই
(বাঁ থেকে) সিতি আমিরাহ মোহাম্মদ আসরোরি, কোকিলা আন্নামালাই এবং মোসাম্মদ সাবিকুন নাহার। ছবি: কোকিলা আন্নামালাই

ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় পর্যন্ত পদযাত্রার আয়োজন করেছিলেন তিন তরুণী। তবে বেআইনি তৎপরতার অভিযোগে তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার তিনজনকেই বেকসুর খালাস দিয়েছেন সিঙ্গাপুরের একটি আদালত। ‘অবৈধ মিছিল’ আয়োজনের জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। বিচারক রায়ে বলেছেন, তাঁদের কর্মকাণ্ড অভিযোগের সম্পূর্ণ ধারা পূরণ করেনি।

সামাজিক সংগঠক মোসাম্মদ সাবিকুন নাহার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর সিতি আমিরাহ মোহাম্মদ আসরোরি এবং কোকিলা আন্নামালাই—এই তিনজনের বিরুদ্ধে গত ফেব্রুয়ারিতে ইস্তানার (প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) আশপাশে পুলিশের অনুমতি ছাড়া একটি পদযাত্রা আয়োজনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেই পদযাত্রায় প্রায় ৭০ জন মানুষ অংশ নেন এবং তাঁরা ফিলিস্তিনি প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে তরমুজের মতো রং করা ছাতা বহন করেন।

আদালত রায়ে বলেছেন, যদিও নারীরা পদযাত্রাটি আয়োজন করেছিলেন, তবে তাঁরা ‘জানতেন না’ যে ইস্তানার চারপাশের রাস্তাটি একটি সংরক্ষিত এলাকা। বিচারক উল্লেখ করেন, তাঁরা একটি সাধারণ ফুটপাত ব্যবহার করেছিলেন এবং সেখানে কোনো নিষেধাজ্ঞার চিহ্ন ছিল না। বিচারক মন্তব্য করেন, ‘প্রমাণ থেকে স্পষ্ট, তাঁরা তিনজনই আইন ভাঙা থেকে নিজেদের বিরত রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলেন।’

দোষী সাব্যস্ত হলে এই তিন তরুণীর প্রত্যেকের ১০ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার পর্যন্ত জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড হতে পারত।

আদালতের রায়ে মুক্তি পাওয়ার পর সমর্থকদের সঙ্গে তিন তরুণী। ছবি: কোকিলা আন্নামালাই
আদালতের রায়ে মুক্তি পাওয়ার পর সমর্থকদের সঙ্গে তিন তরুণী। ছবি: কোকিলা আন্নামালাই

খালাস পাওয়ার পর অধিকারকর্মী কোকিলা আন্নামালাই বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই অপ্রত্যাশিত রায় সিঙ্গাপুরের অধিকারকর্মীদের মধ্যে ‘নতুন শক্তি এবং আশা’ জাগিয়ে তুলবে। তিনি বলেন, তাঁরা সাজার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলেন এবং খালাস পাওয়াটা ‘আশ্চর্যজনক’। তিনি আরও যোগ করেন, ‘প্রথমত, আমাদের অভিযুক্তই করা উচিত ছিল না।’

এ মামলাটি সিঙ্গাপুরে ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। আদালতে শুনানিতে ফিলিস্তিনি পতাকার রঙে পোশাক পরে এবং কেফিয়াহ স্কার্ফ পরে এই তিন তরুণীর উপস্থিতি অনলাইন জগতে ভাইরাল হয়েছিল।

সিঙ্গাপুরে জনসমাবেশের বিষয়ে কঠোর নিয়ম রয়েছে এবং কোনো কারণ প্রচারের জন্য পুলিশি অনুমতি বাধ্যতামূলক। কর্তৃপক্ষ কার্যকরভাবে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ-সম্পর্কিত সব জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। কারণ, তাদের মতে, এই ধরনের ঘটনা ‘জনশৃঙ্খলার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে’।

যদিও সরকার দাবি করে, এই নিয়মগুলো দেশে শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয়। সমালোচকেরা মনে করেন, এগুলো বাক্‌স্বাধীনতা দমন করারই কৌশল।

এদিকে সিঙ্গাপুরের প্রসিকিউটরিয়াল অফিস জানিয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে। পুলিশ ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ-সম্পর্কিত অন্যান্য অফলাইন এবং অনলাইন ইভেন্ট নিয়েও তদন্ত শুরু করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দীর্ঘ বিরতির পর একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল কিমের কোরিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৪১
কয়েক মাসের বিরতির পর আবারও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। ছবি: সংগৃহীত
কয়েক মাসের বিরতির পর আবারও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। ছবি: সংগৃহীত

উত্তর কোরিয়া তাদের পূর্ব উপকূলের জলসীমায় একাধিক স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী। বিগত কয়েক মাসের মধ্যে এটাই উত্তর কোরিয়ার প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ। আজ বুধবার সকালে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছোড়া হয়। খবর আল জাজিরার।

এই ক্ষেপণাস্ত্র এমন এক সময়ে ছোড়া হলো, যার এক সপ্তাহ পরই দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়োংজু শহরে শুরু হতে যাচ্ছে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলন। সেখানে যোগ দেবেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বের শীর্ষ নেতারা।

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর বরাতে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপ জানিয়েছে, ‘আমরা কয়েকটি বস্তু শনাক্ত করেছি, যা স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বলে ধারণা করা হচ্ছে। এগুলো পূর্ব সাগর (জাপান সাগর নামেও পরিচিত) অভিমুখে নিক্ষেপ করা হয়।’ সিউলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার (২১৭ মাইল) পথ অতিক্রম করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ বাহিনী কমান্ড এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘অতিরিক্ত নিক্ষেপের সম্ভাবনা মাথায় রেখে আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করছি। সেনাবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।’

ইয়োনহাপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ উত্তর কোরিয়া ৮ ও ২২ মে স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল। অর্থাৎ এটাই দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা। তিনি গত জুনে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করেছিলেন, এপেক সম্মেলনের আগে বা চলাকালীন সময় উত্তর কোরিয়া উসকানিমূলক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে পারে, যাতে নিজেদের পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টা জোরদার করা যায়।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে পিয়ংইয়ংয়ে অনুষ্ঠিত বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন দেশটির নতুন দূরপাল্লার ‘হোয়াসং-২০’ আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করেন। একে উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র বলা হচ্ছে। ওই কুচকাওয়াজে চীন, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের উচ্চপর্যায়ের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

দেশটির শাসক ওয়ার্কার্স পার্টির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই প্যারেডে কিম জং-উনের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি এবং পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম উন্নত অস্ত্র তৈরির ধারাবাহিক প্রচেষ্টা স্পষ্ট হয়। পিয়ংইয়ং বহুদিন ধরে তথাকথিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অস্ত্র উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে এসব অস্ত্র তৈরি জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে কিম জং-উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন, চলতি বছর আবারও কিমের সঙ্গে দেখা করার আশা করছেন। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, কিম জং-উন ভবিষ্যতে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহী, তবে শর্ত হলো পিয়ংইয়ং কখনোই তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুতিনের সঙ্গে ‘অকারণ বৈঠকে সময় নষ্ট’ করতে চান না ট্রাম্প, সম্ভাবনা নেই ‘অদূর ভবিষ্যতেও’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে নির্ধারিত বৈঠকের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা কিয়েভের কোনো ভূখণ্ড ছাড় না দিয়ে যুদ্ধবিরতির দাবিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত আসে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে ‘অদূর ভবিষ্যতে’ কোনো বৈঠকের পরিকল্পনা নেই। গত সপ্তাহের শেষে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় যুদ্ধের অবসানেও কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের মধ্যে ফোনালাপের পর এই বিষয়টি সামনে এল। ওই আলাপে লাভরভ জানান, রাশিয়ার আলোচনার অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।

লাভরভ বলেন, ‘আমি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করছি—আলাস্কা সম্মেলনে যে সমঝোতা হয়েছিল, তার পর থেকে রাশিয়ার অবস্থান বদলায়নি।’ তিনি আরও জানান, রুবিওকেও তিনি আগের দিন একই কথা বলেছেন।

গত রাতে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, তিনি ‘অকারণ বৈঠক’ চান না। তাঁর ভাষায়, ‘সময় নষ্ট করতে চাই না। দেখি কী হয়।’

বুদাপেস্ট সম্মেলন স্থগিত হওয়ার মানে হলো গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প–পুতিন ফোনালাপের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সংক্ষিপ্ত এক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সমাপ্তি।

ওই ফোনালাপে পুতিন নাকি প্রস্তাব দিয়েছিলেন—রুশ বাহিনীর দখলে থাকা খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া প্রদেশের কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে দোনেৎস্ক অঞ্চলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মস্কোকে দিতে। এই দোনেৎস্ক অঞ্চলকে রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের লক্ষ্য হিসেবে দেখে আসছে, যদিও ইউক্রেনের কাছে এটি দেশটির মধ্যাঞ্চলে প্রবেশের প্রধান দ্বার।

পুতিনের প্রস্তাবে প্রথমে কিছুটা ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও রোববার ট্রাম্প সেই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, দোনেৎস্ক ‘যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকা উচিত।’ এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘তারা চাইলে পরে আলোচনা করতে পারে, কিন্তু আমি বলেছি, বর্তমান ফ্রন্টলাইনেই থামো। ঘরে ফিরে যাও। যুদ্ধ থামাও, মানুষ মারা বন্ধ করো।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, তাঁর দেশ পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে ‘একই অবস্থানে’ আছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্প ইউক্রেনকে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিলম্বিত করায় রাশিয়া ‘গুরুতর আলোচনায় আগ্রহ হারিয়েছে।’

গত শুক্রবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কি ওয়াশিংটনে বৈঠক করেন—যা হয়েছিল ট্রাম্পের পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের এক দিন পর। ওই বৈঠক ছিল বেশ উত্তেজনাপূর্ণ। হোয়াইট হাউস সেখানে ইউক্রেনের সম্ভাব্য ভূখণ্ড ছাড়ের বিষয়টি তুলেছিল, যা কিয়েভ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে। একই সঙ্গে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র কেনার অনুরোধও স্থগিত হয়ে যায়।

কিয়েভের ধারণা, প্রায় এক হাজার মাইল পাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারলে তারা রাশিয়ার ওপর সামরিক চাপ বাড়াতে পারবে। ইউক্রেন এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার সামরিক শিল্পাঞ্চল ও তেলশোধনাগারে হামলার অনুমতি চায়। তবে ক্রেমলিন বলেছে, এমন কোনো পদক্ষেপকে তারা যুদ্ধের উত্তেজনা বৃদ্ধির ইঙ্গিত হিসেবে দেখবে।

এর আগে মঙ্গলবার জেলেনস্কি ও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং আরও পাঁচটি ইউরোপীয় দেশের নেতারা বর্তমান যুদ্ধক্ষেত্রের সীমারেখা ধরে যুদ্ধবিরতির ট্রাম্পের আহ্বানকে সমর্থন করেন। যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘বর্তমান যোগাযোগের সীমারেখাই আলোচনার সূচনাবিন্দু হওয়া উচিত।’

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেরৎস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক।

এছাড়া ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও ডেনমার্কের নেতারা, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লায়েন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কোস্তাও ওই বিবৃতিতে সমর্থন জানান।

কিয়েভ বলেছে, রাশিয়ার দখলে থাকা কোনো ভূখণ্ডকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবে না। তবে ইউক্রেন বিদ্যমান সীমারেখায় যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে রাজি আছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায়—মস্কো বর্তমানে ইউক্রেনের যে প্রায় এক-পঞ্চমাংশ দখল করে রেখেছে, তা কার্যত তাদের নিয়ন্ত্রণেই থেকে যাবে, কারণ সামরিকভাবে ইউক্রেন এখনো দখলদার বাহিনীকে পুরোপুরি সরাতে পারেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত