Ajker Patrika

অস্ট্রেলিয়ায় মাশরুম খাইয়ে শ্বশুর-শাশুড়ি হত্যায় নারীকে দোষী সাব্যস্ত

অনলাইন ডেস্ক
বিচারে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এরিন প্যাটারসন। ছবি: সংগৃহীত
বিচারে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এরিন প্যাটারসন। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার গ্রামীণ শহর মোরওয়েলের আদালতে ৯ সপ্তাহ ধরে চলেছে এক অভূতপূর্ব বিচার। এখানে অভিযুক্ত ছিলেন ৪৯ বছর বয়সী এরিন প্যাটারসন। ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই তাঁর বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রিত পাঁচজনের মধ্যে তিনজন মারা যান এবং একজন মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।

এই ঘটনাটি আদালতে গড়ালে অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক কৌতূহলের জন্ম দেয়। অবশেষে বিচারকেরা রায় দিয়েছেন—এরিন ইচ্ছাকৃতভাবে বিষাক্ত মাশরুম দিয়ে খাবার তৈরি করে তিন আত্মীয়কে হত্যা করেছেন। চতুর্থ আরেক আত্মীয় এই হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন।

সেদিনের ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন—এরিনের সাবেক শ্বশুর ডন প্যাটারসন (৭০), শাশুড়ি গেইল প্যাটারসন (৭০) এবং গেইলের বোন হিদার উইলকিনসন (৬৬)। আর বেঁচে গিয়েছিলেন হিদারের স্বামী ও স্থানীয় পাদরি ইয়ান উইলকিনসন। তিনি কোমা থেকে উঠে এসে আদালতে সাক্ষ্য দেন।

এরিন দাবি করেছিলেন, সবকিছুই দুর্ঘটনাবশত ঘটেছে। তিনি নিজেকে একজন মাশরুমপ্রেমী ও অপেশাদার ‘খাদ্য সংগ্রহকারী’ হিসেবে পরিচয় দেন। কিন্তু দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ায় উঠে এসেছে বিপরীত চিত্র।

আদালতের বরাত দিয়ে আজ সোমবার বিবিসি জানিয়েছে, ঘটনার দিন এরিন নিজের হাতে রান্না করেছিলেন বিফ ওয়েলিংটন, যা ছিল মূলত মাশরুম পেস্টে মোড়া ও মণ্ড দিয়ে ঘেরা গরুর মাংসের কাটা টুকরো। রান্না করা খাবার পাঁচ অতিথির জন্য ধূসর রঙের প্লেটে পরিবেশন করেছিলেন এরিন। আর নিজের ভাগেরটুকু একটি কমলা রঙের প্লেটে নিয়েছিলেন তিনি। আদালতের মতে, আলাদা প্লেটে খাবার পরিবেশন করা ছিল একটি রহস্যজনক পদক্ষেপ।

আদালতে উঠে এসেছে, মধ্যাহ্নভোজ শেষে এরিন জানান তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। কিন্তু এটি ছিল মিথ্যা তথ্য। অতিথিরা তাঁকে সান্ত্বনা দেন। কিন্তু সেই রাতেই সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ডন ৩০ বার বমি করেছিলেন বলে চিকিৎসককে জানান। পরে ধরা পড়ে, তাঁরা বিষাক্ত ‘ডেথ ক্যাপ’ মাশরুম খেয়েছিলেন।

এই ঘটনার শুরুর দিকে এরিন নিজে অসুস্থ নন দাবি করলেও পরে জানান, তিনি বমি করে আরাম পেয়েছিলেন এবং দুই দিন পর হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ও তাঁর সন্তানদের শরীরে বিষক্রিয়ার কোনো প্রমাণ না পাওয়া গেলে চিকিৎসকেরা বিস্মিত হয়ে পুলিশে খবর দেন।

আদালতে প্রসিকিউশন প্রমাণ করে, ঘটনার পরদিন এরিন একটি ফুড ডিহাইড্রেটর ফেলে দিয়েছিলেন। এটিতে পরে বিষাক্ত মাশরুমের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাঁর ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোনের মধ্যে দুটি গায়েব হয়ে গিয়েছিল। আর তাঁর অনলাইন পোস্ট ও ছবিতে দেখা গেছে, ডেথ ক্যাপ মাশরুম স্কেলে ওজন করা হচ্ছে।

এরিন দাবি করেন, স্টোর থেকে কেনা ও সংগ্রহ করা মাশরুম একসঙ্গে হয়ে গিয়েছিল ভুলবশত। আর তিনি ভয় পেয়ে বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্যা বলতে শুরু করেছিলেন।

ঘটনাটির মোটিভ ছিল বিচারক ও পুলিশদের জন্যও প্রশ্নবোধক। এরিন জানান, তিনি পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। কিন্তু আদালতে উপস্থাপিত মেসেজে দেখা যায়, তিনি তাঁর প্রাক্তন স্বামী ও তাঁর পরিবারকে অপমানজনক ভাষায় গালি দিয়েছিলেন।

প্রসিকিউশনের মতে, অসংখ্য মিথ্যা দিয়ে সত্য আড়াল করার চেষ্টা করেছিলেন এরিন। তাঁরা বলেন, ‘এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়, ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’

শেষ পর্যন্ত, বিচারকেরা মাশরুম হত্যার বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এরিন প্যাটারসনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। শিগগিরই এরিনের সাজা ঘোষণা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত