Ajker Patrika

যে দেশে ক্রিসমাস হলো দ্বিতীয় ভ্যালেন্টাইন ডে

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

সুমিরে সেকিনো নামে এক তরুণীর স্মৃতির ভান্ডারে একটি বিশেষ ক্রিসমাস রয়েছে। সেই দিনটি তিনি কাটিয়েছিলেন টোকিওর বেশ কিছু বিখ্যাত ডেটিং স্পটে, তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে।

দিনটি শুরু হয়েছিল টিমল্যাব নামে এক ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিজিটাল আর্ট গ্যালারিতে ছবি তুলে। পরে তাঁরা শিবুয়া স্কাইয়ে যান, যা ৭৫১ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত একটি পর্যবেক্ষণ ডেক। সেখান থেকে টোকিও শহরের প্যানোরামিক দৃশ্য উপভোগ করেছিলেন সুমিরে এবং তাঁর প্রেমিক। সুমিরে বলেন, ‘তখন আমাদের সম্পর্কের মাত্র এক মাস হয়েছে। আমরা দুজনই কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। তবে একসঙ্গে প্রথমবার এই জায়গাগুলোতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা খুবই আনন্দদায়ক ছিল।’

স্মৃতি হাতড়ে আকাও তাকাও নামে এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, এক ক্রিসমাসে তিনি তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে একটি ক্রিসমাস মার্কেট ঘুরে দেখেছিলেন। দিনটি শেষ হয়েছিল গরম চকোলেট খেয়ে।

তাকাও বলেন, ‘অসাধারণ একটি অভিজ্ঞতা হয়েছিল।’

পশ্চিমা সংস্কৃতিতে ক্রিসমাস মানে পরিবারকে সময় দেওয়া। বিশেষ এই দিনটিতে পরিবারের সদস্যরা যে যেখানেই থাকুক, তাঁরা এক হওয়ার চেষ্টা করেন, একে অপরকে উপহার দেন এবং উৎসব উদ্‌যাপন করেন। কিন্তু জাপানে ক্রিসমাসের অন্যরকম একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। খ্রিষ্ট ধর্মীয় এই উৎসব দেশটিতে ভালোবাসার দিন হিসেবে উদ্‌যাপিত হয়। ঠিক যেন আরেকটি ভ্যালেন্টাইন ডে।

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, ক্রিসমাস ইভে জাপানি প্রেমিক-প্রেমিকারা রোমান্টিক ডেটে যান। তাঁরা আলোকসজ্জা দেখতে বের হন, বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয় ডিনার করেন এবং হোটেলে রাত কাটান। এই রোমান্টিক পরিবেশ অনেক সময় বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্যও আদর্শ হয়ে ওঠে।

বলা যায়, জাপানের টোকিও থেকে হোক্কাইডো পর্যন্ত ক্রিসমাস উদ্‌যাপনের আবহে রোমান্টিকতার ছোঁয়া থাকে। তাই এই দিনটিতে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায় এমন একটি বিলাসবহুল হোটেলের কক্ষ এক রাতের জন্যই প্রায় ২ হাজার ডলার খরচ হতে পারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

জাপানিদের এমন রোমান্টিক বড়দিনকে সামনে রেখে এবার টোকিওর রিটজ-কার্লটন হোটেল ‘রোমান্টিক এস্কেপ’ প্যাকেজ অফার করেছে। এই প্যাকেজের মধ্যে ডিনার এবং একটি আউটডোর স্কেটিংয়ের অভিজ্ঞতাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

অন্যদিকে গ্র্যান্ড হায়াত নামে টোকিওর আরেকটি হোটেল ‘রোমান্টিক ইভনিং’ প্যাকেজ নিয়ে এসেছে। এই প্যাকেজের মাধ্যমে যুগলদের জন্য আলোকিত গাছের দৃশ্য দেখা যায় এমন কক্ষের ব্যবস্থা রয়েছে।

খ্রিষ্টধর্ম জাপানে প্রথম আসে ষোড়শ শতকে। কিন্তু তোকুগাওয়া আমলে দেশটিতে এই ধর্ম প্রায় আড়াই শ বছর নিষিদ্ধ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকান সংস্কৃতির মাধ্যমে ক্রিসমাস আবার জাপানে ফিরে আসে।

তবে ক্রিসমাস উদ্‌যাপনে নিজস্ব ঘরানা তৈরি করেছে জাপান। নিউজিল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব অটাগোর জাপানি সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ রয় স্টারস বলেন, ‘জাপান উচ্চমানের নান্দনিকতাকে গুরুত্ব দেয়। তাই বরফে ঢাকা আলোকিত পরিবেশ একটি রোমান্টিক শ্বেতশুভ্র ক্রিসমাসের জন্য উপযুক্ত।’

তবে বর্তমানে জাপানের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তরুণ প্রজন্ম এখন সাশ্রয়ী উপায়ে ক্রিসমাস উদ্‌যাপনের পথ খুঁজছে। ইনোয়ে শোগো নামে ২৩ বছরের এক যুবক বলেন, ‘বিলাসবহুল হোটেলে থাকা এখন অনেক খরচের। তাই আমরা জাপানি খাবারের ওপর নির্ভর করি, যা তুলনামূলক সস্তা।’

সাম্প্রতিক এক জরিপেও দেখা গেছে, জাপানের তরুণ প্রজন্ম ক্রিসমাস উদ্‌যাপন করতে বাড়িতে থাকার এবং সস্তা উপায়ে উদ্‌যাপন করার দিকে ঝুঁকছে। ১৯ বছর বয়সী ইউহি হাসেগাওয়া বলেন, ‘অতিরিক্ত খরচের চেয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোই গুরুত্বপূর্ণ। বাড়িতে থেকে সিনেমা দেখা এবং ভালোবাসা উদ্‌যাপন করাই সেরা সমাধান হতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত