Ajker Patrika

নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন বহিষ্কৃত, ব্যাকবেঞ্চার ও ফাঁকিবাজ ছাত্ররাও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৫০
আইনস্টাইন, ফ্রান্সেস আর্নল্ড, ডেভিড কার্ড এবং এলিনর অস্ট্রোমদের নোবেল প্রাপ্তির পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। ছবি: সংগৃহীত
আইনস্টাইন, ফ্রান্সেস আর্নল্ড, ডেভিড কার্ড এবং এলিনর অস্ট্রোমদের নোবেল প্রাপ্তির পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। ছবি: সংগৃহীত

নোবেলজয়ী বেশির ভাগ ব্যক্তির জীবনের শুরুটা ছিল একেবারেই ভিন্ন রকম। কেউ কেউ ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় সেরা, আবার কেউ কেউ ক্লাস ফাঁকি দেওয়া, আবার কেউ স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হওয়া, এমনকি কেউ কেউ তো ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কায় ছিলেন।

খ্যাতিমান নোবেল বিজয়ীদের একজন আলবার্ট আইনস্টাইনও কিন্তু তরুণ বয়সে সাধারণ মানের ছাত্র ছিলেন। তিনি পড়তেন জুরিখ পলিটেকনিক স্কুলে, যা এখন ETH Zurich নামে পরিচিত। সে সময় আইনস্টাইন নিয়মিত ক্লাসে যেতেন না। শুধু পদার্থবিদ্যা পড়তে চাইতেন। ১৯০০ সালে তিনি ক্লাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন নম্বর পেয়ে পাস করেন। স্নাতক শেষে তাঁর সহপাঠীরা রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা গবেষণা সহকারী হিসেবে সুযোগ পেলেও তিনিই ছিলেন একমাত্র, যিনি সেই প্রস্তাব পাননি। অথচ পরে ১৯২১ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান আইনস্টাইন।

২০১৮ সালে রসায়নে নোবেল পাওয়া ফ্রান্সেস আর্নল্ডও ছোটবেলায় স্কুল ফাঁকি দিয়েছেন। ষাট-সত্তরের দশকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার শুরুতে তাঁর শিক্ষাজীবন ছিল অস্থির। এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম দুষ্ট, সহজে ক্লাসে মন বসত না। পড়াশোনার চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলাম, তাই শিক্ষকেরা আমাকে ক্লাস সাজানোর মতো বাড়তি কাজ দিতেন।’

ফ্রান্সেস আর্নল্ডও মাত্র ১০ বছর বয়সে জ্যামিতির মতো বিষয়ে হাইস্কুলে পড়াশোনার সুযোগ পান। প্রথমে বিষয়গুলো উপভোগ করলেও কিশোর বয়সে স্কুল তাঁর কাছে একঘেয়ে হয়ে ওঠে। একসময় তিনি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন, এমনকি বহিষ্কৃতও হন। তিনি বলেন, ‘আমার আগ্রহ ছিল না। যা জানতে চাইতাম, নিজের মতো বই পড়ে শিখতাম। ক্লাসে না গিয়েও পরীক্ষায় পাস করে যেতাম।’

এখন বয়স ৬৯, আর্নল্ড স্বীকার করেন, তাঁর পথ অন্যদের জন্য অনুসরণের মতো নয়। তবে তাঁর মতে, স্কুলগুলোতে আরও নমনীয় থাকা উচিত। তিনি বলেন, ‘যেসব শিশুর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা দরকার, তা নিশ্চিত করা স্কুলগুলোর সামর্থ্যে নেই।’

২০২১ সালে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ডেভিড কার্ডও পড়াশোনার শুরু করেছিলেন ভিন্ন পথে। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির পিএইচডি প্রোগ্রামে যারা আসে, তাদের মধ্যে আমার মতো কেউ নেই। আমি তো গ্রামীণ স্কুলে পড়েছি।’ পঞ্চাশের দশকে কানাডার এক খামারে জন্ম নেওয়া কার্ড পড়তেন ছোট্ট একটি স্কুলে, যেখানে একজন শিক্ষক প্রায় ৩০ জন ছাত্রকে একসঙ্গে পড়াতেন। কার্ড বলেন, ‘আমার শ্রেণির বাইরের পড়াতেও মনোযোগ দিতাম। এতে করে দ্রুত অনেক কিছু শিখে ফেলতে পারতাম।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, যাদের বাড়তি মনোযোগের দরকার, সেই শিক্ষার্থীদের জন্য এই ব্যবস্থা ভালো ছিল না।

নোবেল ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, আরও অনেক বিজয়ী শুরুতে শিক্ষাগত বাধার মুখোমুখি হয়েছিলেন। অর্থনীতিতে প্রথম নারী নোবেল বিজয়ী এলিনর অস্ট্রোম পিএইচডি করার সুযোগ পাননি। ২০০৯ সালের চিকিৎসায় নোবেলজয়ী ক্যারোল গ্রেইডার শিশু বয়সে ডিসলেক্সিয়ায় ভুগতেন। আবার ২০১৫ সালের রসায়নে নোবেল বিজয়ী টোমাস লিন্ডাহল স্কুলে পড়ার সময় রসায়নেই ফেল করেছিলেন।

আর্নল্ড ও কার্ড—দুজনেই ছোটবেলা থেকে অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করেছেন। তাঁদের মতে, সেটি জীবনের বড় অভিজ্ঞতা। আর্নল্ড কিশোর বয়সে ওয়েট্রেস, রিসেপশনিস্ট এমনকি ট্যাক্সিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কাজ করলে বোঝা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কতটা মূল্যবান। এটা আপনাকে এমন একটি পেশার পথে নিয়ে যেতে পারে, যা হয়তো সারা জীবন চালিয়ে যেতে চান। একই সঙ্গে সময় ব্যবস্থাপনাও শেখায়।’

কার্ডও খুব ছোটবেলা থেকে খামারের কাজে বাবাকে সাহায্য করতেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্কুলে তেমন হোমওয়ার্ক থাকত না। তাই কাজ করার সময় পেতাম। আমি ১১ বছর বয়সে ট্রাক্টর চালাতে শিখেছি। প্রতিদিন ভোরে উঠে বাবার সঙ্গে গরুর দুধ দোহাতাম। তারপর গোসল করে স্কুলে যেতাম।’

তাঁরা দুজনেই পড়াশোনার শুরুতে ভিন্ন বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছিলেন। আর্নল্ড প্রথমে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও অ্যারোনটিকসে পড়েন। পরে ঝোঁকেন রসায়নে। তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম না, জীবনে কী করতে চাই। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বেছে নিয়েছিলাম; কারণ, এতে সবচেয়ে কম শর্ত ছিল।’

অন্যদিকে, কার্ড প্রথমে পদার্থবিদ্যা পড়তে শুরু করলেও পরে অর্থনীতিতে চলে আসেন। অবশেষে ভিন্ন ভিন্ন পথ ঘুরে তাঁরা পৌঁছেছেন অসাধারণ সাফল্যে।

তথ্যসূত্র: এএফপি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জুলাই যোদ্ধাকে’ জুলাই ফাউন্ডেশনে পাইপ দিয়ে মারধর, ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ভারতের হারে বাংলাদেশের বিদায়, হামজার হতাশা

এবার দলগুলো পেল চূড়ান্ত জুলাই সনদ ও স্বাক্ষরের আমন্ত্রণপত্র

সেনা কর্মকর্তাদের জন্য ‘সাবজেল’ ঘোষণার যৌক্তিকতা কী, টিআইবির প্রশ্ন

ভাবিকে হত্যার ১০ বছর পরে ভাতিজিকে পিটিয়ে হত্যা করলেন হাবিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত