Ajker Patrika

এবার যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি তুলে ধরে চীনের প্রতিবেদন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩০ মে ২০২৪, ১৬: ০৮
এবার যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি তুলে ধরে চীনের প্রতিবেদন

যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালজুড়েই মানবাধিকারের ব্যাপক বিপর্যয় ঘটেছে। বিশেষ করে সাধারণ মার্কিনিরা একধরনের মেরুকরণের মধ্যে পড়ে গেছেন। যেখানে তাদের কোনো প্রাধান্য নেই। সব প্রাধান্য যারা আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে উচ্চশ্রেণির—তাদের। গতকাল বুধবার চীনের স্টেট কাউন্সিল প্রকাশিত এক মানবাধিকার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, মানবাধিকার প্রসঙ্গে প্রকাশিত চীনা এই প্রতিবেদনের নাম ‘দ্য রিপোর্ট অন হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন ইন দ্য ইউএসএ ইন ২০২৩’। প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত তথ্য-উপাত্তগুলো উন্মুক্ত মার্কিন গণমাধ্যম ও গবেষণা থেকে নেওয়া হয়েছে। গবেষকের বলছেন, এই প্রতিবেদন মানবাধিকারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভণ্ডামি ও দ্বিমুখী অবস্থান উন্মোচনের সার্থক পরিশ্রম। 

বার্ষিক প্রতিবেদনটিতে মার্কিন সমাজে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের অবক্ষয়, বর্ণবাদের গভীর আঘাতের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য, নারী ও শিশুদের অধিকারের ক্রমবর্ধমান লঙ্ঘন এবং অনথিভুক্ত অভিবাসীদের ওপর মার্কিন আধিপত্যের কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকটসহ ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। 

প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমবর্ধমানহারে মেরুকরণ করা হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সংঘাত, সরকারের অযোগ্যতা এবং শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে অকার্যকর করে তুলেছে। 

এ প্রতিবেদনটি রচনায় অংশ নেওয়া তিয়ানজিনের নানকাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবাধিকার গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক চ্যাং জিয়ান গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, মানবাধিকারের মেরুকৃত প্রকৃতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার পরিস্থিতির মৌলিক চিত্র। মানবাধিকার কেবল গুটিকয়েকের জন্য সংরক্ষিত। বিশেষ করে, যারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষমতার অধিকারী তাদের জন্যই মানবাধিকার। এর মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে প্রান্তিক হিসেবে ঠেলে দেওয়া হয়েছে দূরে। 

বিশদভাবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ৬৫৪টি বড় ধরনের বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে প্রায় ৪৩ হাজার জন মারা গেছে। সেই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ১১৭ জন করে মারা গেছে। এ ছাড়া, সরকার নাগরিকদের গোপনীয়তা পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পাসে নিজের মতপ্রকাশ করায় ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের শাস্তি বা বরখাস্তের ঘটনা গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। 

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি বর্বরতায় মৃত্যু রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে চীনা মানবাধিকার প্রতিবেদনে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি বর্বরতার কারণে ১ হাজার ২৪৭ জন নিহত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৩ জন করের মার্কিনি নিহত হয়েছে পুলিশ হেফাজতে। পুলিশি ক্ষমতা প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জবাবদিহি ব্যবস্থা কার্যত অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। আশঙ্কার বিষয় হলো, মার্কিন রোগ গবেষণা সংস্থা সিডিসির পুলিশ হেফাজতে অর্ধেকেরও বেশি ‘সাধারণ মৃত্যু বা আত্মহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। 

চীনের মানবাধিকার প্রতিবেদন অনুসারে, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের কারণে দরিদ্রদের জীবন অত্যন্ত কঠিন হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে গৃহহীন ২০২৩ সালে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখের বেশি ছিল; যা ২০০৭ সালের পর সর্বোচ্চ। মাদকের অপব্যবহার এবং আত্মহত্যার হার ক্রমেই বেড়েই চলেছে।

বেইজিংয়ের এই মানবাধিকার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্যবাদ অনুসরণ এবং ক্ষমতার রাজনীতি অনুশীলন করেছে এবং এতে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধগুলোতে মোট ৪৫ থেকে ৪৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মানবাধিকার সমস্যা বিশ্ব মানবাধিকারের সুস্থ বিকাশকে মারাত্মকভাবে হুমকি ও বাধাগ্রস্ত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত