Ajker Patrika

ইতিহাসের এই দিনে /দুনিয়া দাপানো রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির উত্থান

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সোভিয়েত ইউনিয়নের বিস্ময়কর উত্থান এবং পতনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিল বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি। রুশ ভাষায় কমিতইয়েত গসুদারস্তভেনয় বেজোপাসনোস্তির সংক্ষিপ্ত রূপ কেজিবি। আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৯৫৪ সালের ১৩ মার্চ দুনিয়ায় দাপিয়ে বেড়ানো প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯১৭ সালের অক্টোবরে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর মাত্র দুই মাসের মাথায় চেকা নামে যে সংস্থা গঠিত হয়েছিল, সেটিই পরবর্তী সময়ে নানা রূপান্তরের মধ্য দিয়ে কেজিবিতে পরিণত হয়। পরে এটি সোভিয়েত রাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থার মূল স্তম্ভ হয়ে ওঠে।

কেজিবির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। তবে কেজিবি কার্যক্রম শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পশ্চিমা বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর অভ্যন্তরে নীরবে প্রবেশ করা, গোপন তথ্য সংগ্রহ করা এবং সমাজতান্ত্রিক মতবাদ প্রচারের মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা ছিল কেজিবির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। কেজিবি শুধু তথ্য সংগ্রহ করত না; বরং গোপন অভিযান পরিচালনা, শত্রুদের দমন, ভিন্নমতাবলম্বীদের শাস্তি দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের ওপর প্রভাব বিস্তার করাও তাদের অন্যতম কৌশল ছিল।

বিশ্ব রাজনীতিতে কেজিবির ভূমিকা

কেজিবি কার্যত গোটা সোভিয়েত ব্লকের নিরাপত্তা অভিভাবকের ভূমিকা পালন করত। তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশে সরাসরি হস্তক্ষেপ করত। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরিয়ান বিপ্লব এবং ১৯৬৮ সালে প্রাগ বসন্ত দমনে কেজিবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়াও, আফগানিস্তানে সোভিয়েত হস্তক্ষেপের পেছনেও কেজিবির সক্রিয় ভূমিকা ছিল।

কোল্ড ওয়ারের সময়, কেজিবি বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে নিজেদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করে। বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের ব্যবহার করে গোপন তথ্য সংগ্রহ করা তাদের অন্যতম কার্যক্রম ছিল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে কেজিবির চরবৃত্তি কার্যক্রম চলত। বিশেষ করে ক্যামব্রিজ ফাইভ নামের পরিচিত ব্রিটিশ গোয়েন্দা এজেন্টদের একটি গোপন দল দীর্ঘদিন ধরে কেজিবির হয়ে কাজ করেছিল।

তথ্য সংগ্রহ ও কৌশল

কেজিবির অন্যতম শক্তিশালী দিক ছিল তাদের বহুমুখী তথ্য সংগ্রহ কৌশল। মিডিয়া মনিটরিং, গোপন চরবৃত্তি, সরাসরি তথ্য চুরি, অর্থের বিনিময়ে তথ্য সংগ্রহ, ব্ল্যাকমেল এবং সাইবার গোয়েন্দাগিরি ছিল তাদের প্রধান অস্ত্র।

কেজিবি সাধারণত টার্গেট দেশগুলোর ভেতরে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের অনুসারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদেরকে নিজেদের পক্ষে টানত। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের অনুগত ব্যক্তিদের বসানোর জন্য কেজিবি গোপনে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করত। শুধু তাই নয়, তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমন, রাষ্ট্রবিরোধী চক্র ধ্বংস, এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্মূল করার জন্যও ব্যাপক ক্ষমতা ছিল।

পতন ও উত্তরাধিকার

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ১৯৯১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কেজিবি বিলুপ্ত হয়। যদিও কেজিবির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, তবে তাদের উত্তরসূরি হিসেবে রাশিয়ায় নতুন গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি গঠিত হয়, যা এখনো কার্যকরভাবে কাজ করছে। যদিও কেজিবি সোভিয়েত ইউনিয়নকে শক্তিশালী করেছিল, শেষ পর্যন্ত তারা পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাড়ি থেকে ভিজিএফের চাল উদ্ধার দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার

দেশ টিভির কার্যালয়ে ১২০০ বস্তা চাল পাঠানো প্রয়োজন: উপদেষ্টা আসিফ

অপমানিত সহকর্মীর ছাদ থেকে লাফ, শ্রমিক বিক্ষোভে রণক্ষেত্র শ্রীপুর, আহত শতাধিক

সরকারি কর্মচারীদের ১০–১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

জাদুঘরে রাখা হলো একটি কনডম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত