Ajker Patrika

ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে প্যারাসিটামল তৈরির উপায় পেলেন বিজ্ঞানীরা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৫ জুন ২০২৫, ১৮: ২৪
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে প্যারাসিটামলের মতো ব্যথানাশক ওষুধ তৈরি করা সম্ভব। গবেষকেরা এমনই এক অভিনব উপায় খুঁজে পেয়েছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এতে টেকসই উপায়ে এসব ওষুধ উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হলো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

রসায়নের গবেষকেরা দেখিয়েছেন, প্লাস্টিক বোতল থেকে ল্যাবরেটরিতে তৈরি একধরনের পদার্থ ব্যবহার করে ইশেরেশিয়া কোলাই ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে প্যারাসিটামল (অ্যাসিটামিনোফেন নামেও পরিচিত) তৈরি করা যায়। গবেষক দলের প্রধান ও ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার অধ্যাপক স্টিফেন ওয়ালেস বলেন, ‘অনেকে হয়তো জানেন না, বর্তমানে প্যারাসিটামল তৈরি হয় তেল বা পেট্রোলিয়াম থেকে। আমাদের প্রযুক্তি দেখাচ্ছে, জীববিজ্ঞান ও রসায়নের মিশ্রণে আমরা প্রথমবারের মতো প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করেও টেকসইভাবে প্যারাসিটামল তৈরি করতে পারি।’

বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকী নেচার কেমিস্ট্রিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ওয়ালেস ও তাঁর সহকর্মীরা জানান, তাঁরা ‘লসেন রি-অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামের একধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ে কাজ করেছেন, যা আগে কখনো প্রকৃতিতে দেখা যায়নি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এটি জীবন্ত কোষের মধ্যে কোনো ক্ষতি ছাড়াই ঘটে যেতে পারে।

গবেষকেরা সাধারণ খাবারের মোড়ক ও বোতলে ব্যবহৃত প্লাস্টিক, অর্থাৎ পলিইথিলিন টেরেফথ্যালেট (পিইটি) নিয়ে পরিবেশবান্ধব রাসায়নিক পদ্ধতিতে এক নতুন পদার্থে রূপান্তর করেন। এরপর এই পদার্থ ইশেরেশিয়া কোলাই ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মিশিয়ে দেখেন। তাঁরা দেখতে পান, এর ফলে ‘PABA’ বা প্যাবা নামে একধরনের পদার্থে পরিণত হচ্ছে। আর এই পুরো প্রক্রিয়ায় ‘লসেন রি-অ্যারেঞ্জমেন্ট’ বিক্রিয়াটি ঘটছে।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, সাধারণত লসেন রি-অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে কঠোর ল্যাবের পরিবেশ লাগে। কিন্তু এখানে দেখা গেছে, ইশেরেশিয়া কোলাইয়ের উপস্থিতিতে কোষের ভেতরের ফসফেটই এটির অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। গবেষকেরা আরও জানান, প্যাবা হলো ব্যাকটেরিয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এক পদার্থ, যা তাদের ডিএনএ তৈরির লাগে। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া নিজের ভেতরে অন্যান্য উপাদান থেকে এটি তৈরি করে। তবে গবেষণার জন্য ব্যবহৃত ইশেরেশিয়ায় কোলাই এমনভাবে জেনেটিকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে, যাতে তাদের এই স্বাভাবিক পথ বন্ধ থাকে। ফলে তাদের পিইটি প্লাস্টিক থেকে তৈরি করা নতুন পদার্থই ব্যবহার করতে হয়েছে।

গবেষকদের মতে, এর মাধ্যমে বোঝা যায়, প্লাস্টিক বর্জ্যকে জীববিজ্ঞানভিত্তিক দরকারি পদার্থে পরিণত করা সম্ভব। অধ্যাপক ওয়ালেস বলেন, ‘এটা হলো একেবারে প্লাস্টিক বর্জ্য গিলে ফেলার মতো একটা ব্যবস্থা।’ এরপর তাঁরা ইশেরেশিয়া কোলাই ব্যাকটেরিয়াকে আরও পরিবর্তন করেন। মাশরুম ও মাটির ব্যাকটেরিয়া থেকে দুটি জিন নিয়ে ইশেরেশিয়া কোলাইয়ের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। ফলে ব্যাকটেরিয়াটি প্যাবা থেকে প্যারাসিটামল তৈরি করতে সক্ষম হয়।

গবেষকেরা জানান, এই নতুন ধরনের ইশেরেশিয়া কোলাই ব্যবহার করে পিইটি প্লাস্টিকের ভিত্তি পদার্থ থেকে ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে কম দূষণ ও প্রায় ৯২ শতাংশ উৎপাদনশীলতায় প্যারাসিটামল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে বড় পরিসরে এভাবে প্যারাসিটামল তৈরির জন্য আরও গবেষণা দরকার বলে জানিয়েছেন তাঁরা। অধ্যাপক ওয়ালেস বলেন, ‘এভাবে প্রথমবারের মতো শুধু জীববিজ্ঞান বা শুধু রসায়নের ওপর নির্ভর না করে, দুইয়ের সমন্বয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে প্যারাসিটামল তৈরির পথ খুলে গেল।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত