Ajker Patrika

বাল্ট্রা দ্বীপের রহস্য: বৃষ্টি হয় না, পশুপাখি নেই—এ দাবি সঠিক নয়

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৫: ৫৩
বাল্ট্রা দ্বীপের রহস্য: বৃষ্টি হয় না, পশুপাখি নেই—এ দাবি সঠিক নয়

প্রশান্ত মহাসাগরে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে একটি দ্বীপ বাল্ট্রা! যে দ্বীপে বৃষ্টি হয় না, পাখিও ওড়ে না! এ দ্বীপে গেলেই নাকি নাবিকেরা অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। নাবিক বা অভিযাত্রীদের সঙ্গে থাকা কম্পাসের আচরণও বদলে যায়। সবসময় উত্তর দিক নির্দেশকারী কম্পাসের কাঁটা এখানে কোনো সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে! কখনো এলোপাতাড়ি ঘুরতে থাকে অথবা ভুল দিক নির্দেশ করে। 

সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হলো, বাল্ট্রা দ্বীপের ওপরের আকাশে থাকার সময় উড়োজাহাজের কম্পাসও এমন অদ্ভুত আচরণ করে। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক হয়ে যা।

বাল্ট্রা নামের এই দ্বীপ নিয়ে গত ১১ মার্চ ‘বিশ্ব ও মহাকাশ’ নামে ১ লাখ ২৬ হাজার সদস্যের একটি ফেসবুক গ্রুপে ইউসুফ সরকার নামের একটি মডারেটর অ্যাকাউন্ট থেকে এই তথ্যগুলো উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। পোস্টটি আজ শুক্রবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩শ শেয়ার হয়েছে, রিয়েকশন পড়েছে সাড়ে ৮ হাজারের বেশি। কমেন্ট পড়েছে দেড়শর বেশি।

পোস্টটিতে বাল্ট্রা দ্বীপ সম্পর্কে আরও দাবি করা হয়, ‘দ্বীপটির আরেকটি অদ্ভুত দিক হলো, এর মানসিক দিক। বাল্ট্রায় পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে কারও মাথা অনেক হালকা হয়ে যায়। অজানা-অচেনা কোন এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার আশ্চর্য রকম অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। বেশিক্ষণ এ দ্বীপে থাকলে দ্বীপ থেকে চলে আসার পর কিছুদিন সেই আশ্চর্য অনুভূতি থেকে যায়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। অদ্ভুত দ্বীপ বাল্ট্রায় কোন গাছ নেই। নেই কোনো পশুপাখি। কোনো পশুপাখি এ দ্বীপে আসতেও চায় না। জোর করে এলেও কোনো পশুপাখিকে বসতি করানো যায়নি। বাল্ট্রার পাশ দিয়ে প্রাণী হেঁটে গেলেও এ দ্বীপে প্রবেশ করেনা। শুধু তাই নয়, পাখিরাও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসেই ফিরে যায়। দেখে মনে হয় যেন কোনো দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ওরা। আরেকটি রহস্য হলো ওই দ্বীপটির চারপাশে প্রচুর বৃষ্টি হলেও এর ভেতরে কোন বৃষ্টির ফোটা পড়ে না! এমন অনেক আজব আজব রহস্যের কোন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।’ 

দ্বীপটি নিয়ে দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেল সময় এন্টারটেইনমেন্টে ২০২২ সালের ২৩ মে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতেও দাবি করা হয়, বাল্ট্রা দ্বীপে কখনো বৃষ্টি হয় না এবং বাল্ট্রা দ্বীপ একদম প্রাণীশূন্য। সময় টিভির এই প্রতিবেদন ছাড়াও দেশীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম যেমন, জাগোনিউজ ২৪, বাংলা নিউজ ২৪, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অনলাইন নিউজ পোর্টাল আরএমপির ওয়েবসাইট, ভারতের দ্য ওয়ালের বাংলা সংস্করণসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দ্বীপটি সম্পর্কিত প্রতিবেদনে একই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বাল্ট্রা দ্বীপটি কোথায়?
বিশ্বকোষ ব্রিটানিকা সূত্রে জানা যায়, বাল্ট্রা গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম ছোট একটি দ্বীপ। এর আয়তন ৮ বর্গমাইল বা ২১ বর্গকিলোমিটার। এটি ইকুয়েডর থেকে প্রায় ৬০০ মাইল বা ১ হাজার কিলোমিটার পশ্চিমে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। দ্বীপটি সান্তা ক্রুজ নামে আরেকটি দ্বীপের অংশ ছিল। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাবে এর বিচ্যুতি ঘটে এবং আলাদা একটি দ্বীপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইকুয়েডর দ্বীপটিতে বিমানঘাঁটি স্থাপনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুমতি দেয়। ১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র বিমানঘাঁটি নির্মাণ শুরু করে এবং দুই মাসের মাথায় দ্বীপটিতে প্রায় এক মাইল দীর্ঘ একটি এয়ারস্ট্রিপ (বিমান চলাচলের উপযোগী জায়গা) নির্মাণ করে। পরে দ্বীপটিকে ঘিরে পর্যটনের গুরুত্ব বাড়লে ইকুয়েডর সরকার বিমানঘাঁটিটি সংস্কার করে। এটি এখন দেশটির একটি সক্রিয় সামরিক ঘাঁটি।

বাল্ট্রা দ্বীপে বৃষ্টি পড়ে, আছে পাখি, উদ্ভিদ। ছবি: গ্যালাপাগোস ক্রুসেরোসদ্বীপটি নিয়ে প্রচারিত তথ্যগুলোর ভিত্তি কী?
বাল্ট্রা দ্বীপে কখনো বৃষ্টি হয় না—এমন দাবির সত্যতা অনুসন্ধানে পৃথিবীর যেসব স্থানে বৃষ্টিপাত খুবই কম হয় বা হয় না এমন জায়গা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদমাধ্যম লাইভ সায়েন্সে পৃথিবীর এমন দশটি জায়গার একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। এই তালিকায় দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের একাধিক দেশ ও অ্যান্টার্কটিকার নাম খুঁজে পাওয়া গেলেও বাল্ট্রা দ্বীপের নাম নেই। লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনটিতে এই স্থানগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে, এসব স্থানে বৃষ্টি খুব কমই হয় এবং কিছু স্থানে লাখ লাখ বছরেও বৃষ্টিপাত হয়নি। এমন শুষ্ক জলবায়ুতে কোনো প্রাণের বেড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। কারণ, ক্রমাগত বাষ্পীভবনের কারণে প্রাণের জন্য অপরিহার্য পানি মাটিতে জমে থাকে না।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ফোর্বসের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, পৃথিবীর শুষ্কতম অঞ্চলগুলোর একটি উত্তর আফ্রিকা। বিশ্বের বৃহত্তম উষ্ণ মরুভূমি সাহারার অবস্থান এখানে। এই অঞ্চল অত্যন্ত শুষ্ক, এখানে কিছু জায়গায় টানা এক বছরেরও বেশি সময় বৃষ্টিপাত না হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। 

শিক্ষামূলক স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ডিসকোভারির ওয়েবসাইটে পৃথিবীর শুষ্কতম অঞ্চল নিয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আতাকামা মরুভূমি। এই মরুভূমি চিলির আরিকাতে অবস্থিত। আতাকামা মরুভূমিতেও বৃষ্টি হয়। যদিও স্থানটিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র শূন্য দশমিক ০৩ ইঞ্চি।

আন্তদেশীয় মহাকাশ সংস্থা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ওয়েবসাইটেও আতাকামা মরুভূমিকে পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

ওপরে উল্লেখিত ওয়েবসাইটগুলোর বর্ণনায় কোথাও বাল্ট্রা দ্বীপের নাম পাওয়া যায়নি। 

বরং গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ কেন্দ্রিক বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও গবেষণা নিবন্ধ সূত্রে জানা যায়, বাল্ট্রা দ্বীপে বৃষ্টিপাত হয়। গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে বৃষ্টিপাত ও সেখানে বসবাসরত ফিঞ্চ পাখির ডেমোগ্রাফি (পরিসংখ্যান) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার দুজন গবেষকের করা একটি গবেষণা নিবন্ধ পাওয়া যায়। নিবন্ধটি আমেরিকান অর্নিথোলজিক্যাল সোসাইটির গবেষণা সাময়িকী অর্নিথোলজিতে ১৯৮০ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য দ্বীপের তুলনায় বাল্ট্রাতে বার্ষিক বৃষ্টিপাত অনেক কম। গবেষণা চলাকালে দ্বীপটিতে ১৯৬৭ এবং ১৯৭০ উভয় সময়েই ১ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।

এঞ্জি ড্রেক নামে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমন বিষয়ক উদ্যোক্তা বাল্ট্রা দ্বীপ ঘুরে এসে ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট নট ইয়ুর অ্যাভারেজ আমেরিকান নামের একটি ট্রাভেল ব্লগে নিজের অভিজ্ঞতা লেখেন। সেখানে ড্রেক জানান, তাঁরা যখন বাল্ট্রাতে পৌঁছান, সেখানে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল এবং তখন বর্ষাকাল ছিল। ব্লগে তিনি সেখানকার বৃষ্টির ছবিও যুক্ত করেন।

দ্বীপটি সম্পর্কে গ্যালাপাগোস কনজারভেন্সি নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ইকুয়েডরের সঙ্গে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জকে সংযোগকারী দুটি বিমানবন্দরের একটির অবস্থান এই বাল্ট্রা দ্বীপে। দ্বীপটি এখন গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে পর্যটকদের প্রধান প্রবেশদ্বার। গ্যালাপাগোসে প্রতি বছর ২ হাজারেরও বেশি বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলে, যার প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ বাল্ট্রায় ওঠা–নামা করে। প্রতি বছর কয়েকশ ব্যক্তিগত উড়োজাহাজও নামে। 

তবে বাল্ট্রা বেশ শুষ্ক। দ্বীপে গাছপালার মধ্যে আছে– লবণ সহিষ্ণু উদ্ভিদ, ক্যাকটাস এবং পালো সান্টো নামের এক জাতীয় উদ্ভিদ। দ্বীপটিতে বুবি এবং ফ্রিগেটবার্ডসহ প্রচুর পাখি রয়েছে।

বাল্ট্রা দ্বীপের প্রাণী ল্যান্ড ইগুয়ানা। ছবি: গ্যালাপাগোস কনজারভেন্সিগ্যালাপাগোস ক্রুসেরোস নামের আরেকটি ওয়েবসাইট থেকেও বাল্ট্রা দ্বীপটির প্রাণী ও উদ্ভিদ সম্পর্কে প্রায় একই তথ্য পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটটি থেকে জানায়, বাল্ট্রা দ্বীপে প্রচুর পরিমাণে ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ এবং পালো সান্টো নামের এক জাতীয় উদ্ভিদ আছে। দ্বীপটিতে বসবাসরত প্রাণীর মধ্যে রয়েছে— ল্যান্ড ইগুয়ানা নামের এক ধরনের বড় আকৃতির টিকটিকি, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক পাখি, যেমন: নীল পায়ের বুবি এবং পেলিকান। 

প্রজনন ঋতুতে পাখিদের দ্বীপটির পাহাড় এবং সৈকতে ভিড় করতে দেখা যায়। সামুদ্রিক পাখি ছাড়াও বাল্ট্রা দ্বীপে সি গাল এবং বাজপাখির মতো পাখিরও দেখা মেলে। এ ছাড়া বাল্ট্রা দ্বীপের সৈকত এবং উপকূলে সি লায়নদের দেখা পাওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। এদের বাল্ট্রার বালুময় সৈকতে বিশ্রাম নিতে বা আশেপাশের জলে সাঁতার কাটতে দেখা যায়। দ্বীপটিতে ডিসেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে ঘন ঘন বৃষ্টিপাতও হয় বলে ওয়েবসাইটটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

হোয়্যার অ্যান্ড হোয়েন নামের একটি ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বাল্ট্রাতে ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। দ্বীপটিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০০ মিলিমিটার। সর্বনিম্ন ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় অক্টোবরে এবং সর্বোচ্চ ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় ফেব্রুয়ারিতে।

অনুসন্ধানে বাল্ট্রা দ্বীপটি সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটে প্রচারিত দাবিগুলোর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং দেখা যাচ্ছে, দ্বীপটিতে প্রচুর পর্যটকের আনাগোনা রয়েছে। আছে কয়েক প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণী। এ ছাড়া দ্বীপটিতে বেশ বৃষ্টিপাতও হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন ৩ ব্যাটালিয়ন, দুই হাজার ২৫৮ পদ সৃষ্টি

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

‘মুসলমানদের মতো হইয়ো না’ বলা জাভেদ আখতারকে একহাত নিলেন লাকি আলী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫০
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন ৩ ব্যাটালিয়ন, দুই হাজার ২৫৮ পদ সৃষ্টি

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

‘মুসলমানদের মতো হইয়ো না’ বলা জাভেদ আখতারকে একহাত নিলেন লাকি আলী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গোপালগঞ্জ সহিংসতা নিয়ে অসম্পর্কিত ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে আ. লীগ: প্রেস উইং

বাসস  
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০৩
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস

গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

গতকাল বুধবার সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে নানা পোস্ট ছড়ানো হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল এ দিনের সহিংস ঘটনার মনগড়া বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি সংগঠিত প্রোপাগান্ডা অভিযানের অংশ হিসেবে প্রভাবশালী আ. লীগপন্থীরা পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন একাধিক ছবি শেয়ার করেছেন, যা এদিনের সহিংসতার দৃশ্য বলে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এসএম জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকনসহ কয়েকজন ব্যক্তি ছবি পোস্ট করে দাবি করেন, ‘ইউনূস গ্যাং’ এবং বিরোধীদলীয় কর্মীরা সাধারণ মানুষকে হিংসাত্মকভাবে আক্রমণ করছে।

একটি ছবিতে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন এক আহত কিশোরকে বহন করছে, পেছনে আগুন জ্বলছে এবং উত্তেজিত জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। ছবিটি গোপালগঞ্জে ঘটে যাওয়া সহিংসতার নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়। অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে-এই ছবিটি ২০২৪ সালের ১০ আগস্টের একটি ভিন্ন ঘটনার।

আরেকটি বহুল প্রচারিত পোস্টে দেখা যায়, জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুড়ছেন।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব পোস্টে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। পোস্টে তাঁরা উল্লেখ করেন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন এবং এনসিপি নেতা-কর্মীদের উসকানিতে এই সহিংসতা শুরু হয়। এতে বলা হয়, ‘বাস্তবতা হলো, ছবিটি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপি সমাবেশের সময়ের, যেখানে ডিবি কর্মকর্তা কনককে জনতার দিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়।’

জাকির হোসেন আরেকটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তিনিও দাবি করেন, এটি গোপালগঞ্জের আজকের সংঘর্ষের ফলাফল। তবে প্রেস উইং বলেছে, ‘তবে এই ছবিটিও ভিন্ন ঘটনার। ছবিটি ২০২৩ সালের ২০ মার্চ এক সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনার সময় তোলা হয়েছিল।’

একই ভুয়া প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি শিশুর ছবি ছড়ানো হয়—যেখানে তাকে লাঠি হাতে দেখা যায়। দাবি করা হয়, ছবিটি ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে তোলা এবং ওই শিশু নাকি সহিংসতায় অংশ নেয়। ছবিটি এই মিথ্যা বার্তা ছড়াতে ব্যবহার করা হয় যে, রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের পর্যন্ত জড়ানো হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ছবির একটি ডিজিটালি সম্পাদিত (সম্ভবত এআই-নির্মিত) সংস্করণ শেয়ার করেন নিঝুম মজুমদার, যিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজন অনলাইন প্রোপাগান্ডিস্ট হিসেবে পরিচিত বলে প্রেস উইং দাবি করেছে।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে এই বিষয়ে বলা হয়, ‘প্রকৃতপক্ষে, শিশুর এই ছবিটি গোপালগঞ্জে তোলা হয়নি, বরং গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় ধারণ করা একটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। মূল ভিডিওটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিল।’

এসব বিভ্রান্তিকর ছবির পাশাপাশি, আওয়ামী লীগপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো ভিত্তিহীনভাবে দাবি করে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নাকি বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এসব মিথ্যা প্রচারণা জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়। প্রেস উইংয়ের মতে এসব ভুয়া প্রচারণা ও যাচাইকৃত সূত্রভিত্তিক তথ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।

আজকের সহিংসতা শুরু হয় যখন গোপালগঞ্জ শহরে নির্ধারিত সমাবেশ শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের বহর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা আক্রমণ করে। এই আক্রমণ দ্রুত বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। পুলিশের গাড়ির পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি গাড়িও আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, ১৬ জুলাই রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কঠোর কারফিউ জারি করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয় ‘মাঠের বাস্তব ঘটনার বিপরীতে, আওয়ামী লীগপন্থী সামাজিক মাধ্যম চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর, প্রাসঙ্গিকতা-বর্জিত ও মনগড়া ছবি ছড়িয়ে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন ৩ ব্যাটালিয়ন, দুই হাজার ২৫৮ পদ সৃষ্টি

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

‘মুসলমানদের মতো হইয়ো না’ বলা জাভেদ আখতারকে একহাত নিলেন লাকি আলী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০০
নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তথা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগকে হিন্দু বলে প্রচার করেছে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেক ইউনিট সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল রোববার এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেস উইং জানিয়েছে, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে এবং ইওনসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন বলে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সোহাগের বাবার নাম মো. আয়ুব আলী এবং মায়ের নাম আলেয়া বেগম। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী লাকি বেগম, বোন ফাতেমা এবং একমাত্র ছেলে সোহানকে রেখে গেছেন।

গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর নিথর দেহেও বোল্ডার ছুড়ে মারা হয়। নৃশংস এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার জানাজা শেষে সোহাগকে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ গ্রাম বন্দরগাছিয়ায় তাঁর মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

ভারতের যেসব সংবাদমাধ্যম সোহাগকে হিন্দু বলে উল্লেখ করেছে, তারা তাদের প্রতিবেদনে তার ধর্ম বা পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেনি। বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম নিয়মিত ভিত্তিহীন ও ভুল তথ্য প্রচার করে আসছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন ৩ ব্যাটালিয়ন, দুই হাজার ২৫৮ পদ সৃষ্টি

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

‘মুসলমানদের মতো হইয়ো না’ বলা জাভেদ আখতারকে একহাত নিলেন লাকি আলী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /নাটকের দৃশ্যকে ধর্ষণের পর হত্যা দাবিতে প্রচার

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, ১৯: ০০
বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রেখে গেছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। এটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।

৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একজন তরুণী হাত বাঁধা অবস্থায় কংক্রিটের মেঝেতে পড়ে আছেন। পাশেই একজন মধ্যবয়সী তরুণীটির বাবা পরিচয়ে আর্তনাদ করছেন। তাঁকে আরেকজন যুবক সান্ত্বনা দিচ্ছেন। পুলিশের পোশাক পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তি তরুণীকে ঘিরে পর্যবেক্ষণ করছেন। ভিডিওর শেষাংশে পুলিশকে তরুণীর মরদেহ ব্যাগে ভরতে দেখা যায়।

‘Md Nishad Hossain’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আজ সোমবার (৩০ জুন) সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘আহারে নির্মমতা এবং একজন বাবার আর্তনাদ। বাংলাদেশ ২০২৪’র আগস্ট মাস থেকে সারা দেশে নারী ধর্ষণ করেই চলছে বিএনপি জামাতের মব সন্ত্রাসীরা। একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে রেখে গেছে। মেয়ের পিতার আহাজারী কে শুনবে দেশে এখন বিচার নাই। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী হায়ানারা যা যা করছে ২০২৪ ’র বাংলাদেশে বিএনপি জামাত তার চেয়ে বেশি করছে।’ (বানান অপরিবর্তিত)

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভিডিওটি ১৯ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ৫১৫টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৫৬টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১৮৫ বার।

এসব কমেন্টে অনেকে ভিডিওটি নাটক উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে সত্য মনে করেও কমেন্ট করেছে। Shilvi Akther নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছে, ‘আহারে জীবন! মানুষ কিভাবে এতো নির্মম হয়? একজন বাবার আর্তনাদ কি কারো মনকে মর্মাহত করে না?’ (বানান অপরিবর্তিত) Narayon Saha লিখেছে,’ এই দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট বাবার কান্দে সন্তানের লাশ হায়রে দুনিয়া।’ (বানান অপরিবর্তিত)

S M Salam Patwari, গর্জে ওঠো আরেকবার বাংলাদেশ এবং গাজীপুর জেলা যুবলীগ শাখা নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ‘Short Film BD’ নামে একটি লোগো লক্ষ করা যায়। এই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Short Film BD’ নামে একটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি গত ২০ জুনে প্রকাশিত। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মেঝেতে পড়ে থাকা তরুণী, পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তি, আহাজারি করা ব্যক্তি ও আশপাশের দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Short Film BD ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Short Film BD ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘মৌসুমীর সাথে কি হলো।’ ৪ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখে বোঝা যায়, এটি একটি নাটিকার দৃশ্য।

Short Film BD নামে ফেসবুক পেজটিতে একই তারিখে একই ভিডিও প্রকাশ করে ক্যাপশনে লিখেছে, ‘মেয়ের কি হইছে জানতে চায় অসহায় বাবা।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট
Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

Short Film BD ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে বিভিন্ন ধরনের নাটিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে অভিনয় করা একাধিক ব্যক্তিকে অন্যান্য ভিডিওতেও (, ) দেখা গেছে।

এ ছাড়া এই পেজের ইন্ট্রোতে লেখা, ‘শর্টফিল্ম ও নাটক দেখুন এবং উপভোগ করুন। আমাদের সঙ্গেই থাকুন।’ (ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তরিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট
Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

সুতরাং, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে একটি নাটক।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন ৩ ব্যাটালিয়ন, দুই হাজার ২৫৮ পদ সৃষ্টি

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

‘মুসলমানদের মতো হইয়ো না’ বলা জাভেদ আখতারকে একহাত নিলেন লাকি আলী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত