Ajker Patrika

জন্মশতবার্ষিকীতে কেন এই নীরবতা

সাহস মোস্তাফিজ
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২: ৫১
জন্মশতবার্ষিকীতে কেন এই নীরবতা

কৃষ্ণচূড়ার রঙে রাঙা ভেজা পথে উৎসবের মিছিল নেই, নেই কোলাহল। মহামারির বাস্তবতায় লকডাউন বা শাটডাউনের ফাঁদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম জন্মবার্ষিকী। ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। করোনা আসার পর থেকেই অবশ্য দুনিয়াজুড়ে উৎসব-উপলক্ষ আবর্তিত হচ্ছে সামাজিক মাধ্যম ঘিরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছর! এ দেশের ইতিহাসে এমন আনন্দের উপলক্ষ আর কয়টাই বা এসেছে।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট, অফিশিয়াল ইউটিউব, ফেসবুক ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা যাচ্ছে, উৎসবের কোনো রং নেই। বিলেতের অক্সফোর্ড ইন্টারনেট দুনিয়ায় বছরজুড়েই যতটা সরব, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড যেন ততটাই নীরব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি শতবর্ষের উপলক্ষকেদেশের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচিত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ধরা হয় তার ওয়েবসাইটকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ওপরের দিকে সর্বশেষ টেমপ্লেটে (ব্যানার ছবি) যে ছবি ও তথ্য দেওয়া আছে, তা গত ২৬ মার্চ আপলোড করা।

‘লেটেস্ট নিউজ’ অংশে অবশ্য শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে তিনটি সংবাদ আপলোড করা হয়েছে, তবে উৎসবের ব্যাপকতা কোনোভাবেই বোঝা যাচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে নেই কোনো আয়োজনওয়েবসাইটেই পেয়ে যাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ইউটিউবের লিংক। সেখানে গত ২৭ মে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকীতে উপাচার্যের পুষ্পস্তবক অর্পণের ভিডিওটিই সর্বশেষ। ১০০ বছর পূর্তির রং এখানে সর্বশেষ লেগেছিল এক বছর আগে, যেদিন ঢাবি পদার্পণ করেছিল ১০০ বছরে। ২০২০ সালের ৩০ জুন এই ইউটিউব চ্যানেলে একটি ডকুমেন্টারি আপলোড করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সর্বশেষ পোস্ট দুই বছর আগেইউটিউব থেকেই পেয়ে যাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুকের লিংক। ভেরিফায়েড পেজ হলেও সেখানে সর্বশেষ কোনো পোস্ট করা হয় ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট। ফেসবুকেও ঢাবির ১০০ বছর পূর্তির কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। ৭ লাখ ২১ হাজার লাইকের এ পেজটি দীর্ঘদিন হালনাগাদ করা হয়নি।

ঢাবি ফেসবুকের কার্যক্রমে হতাশ নেটিজেনরাভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের এ অবস্থা দেখে একজন ব্যবহারকারী সর্বশেষ পোস্টে দুঃখ করে লিখেছেন, ‘আহারে আমার বিশ্ববিদ্যালয়, ২ বছর আগে একটা পোস্ট দিয়েছিল, আপাতত কোমাতে আছে, আগামী দুই বছর পরে হয়তো আরেকটা পোস্ট দিবে। ভাবা যায় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের এই করুণ অবস্থা, যে বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষার্থীদের কথা ভাবার কথাও ভুলে গেছে। করোনার এই মহামারীতেও কোনো পোস্ট করেনি। ২০২০ তুমি বিখ্যাত ভাই, তোমার বছরে কোনো পোস্টই দেয়নি, ২০২১ এও আশাকরি ২০২০ এর ট্রেন্ড কে ফলো করবে’।

ঢাবি অ্যালামনাই-এর ওয়েবসাইট শতবর্ষপূর্তিতে নিরবঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে গিয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঐতিহাসিক দিনের ছোঁয়া দেখা যায়নি। সেখানে এ–সংক্রান্ত কোনো লেখা বা ছবি এমনকি শতবর্ষপূর্তির লোগোটিও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অফিশিয়াল কোনো ফেসবুক পেজ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই নামে একটি গ্রুপ খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে ব্যক্তিগত আইডি থেকে অনেকেই ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নানা রকম পোস্ট দিয়েছেন।

ব্যক্তি উদ্যোগে খোলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক্স স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপটি বেশ সরবতবে এই ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি সরব কয়েকজন ব্যক্তির উদ্যোগে সম্প্রতি খোলা ফেসবুক গ্রুপ ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি এক্স স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’। ঢাবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এই গ্রুপে কিছুদিন ধরেই তাঁদের পরিচয় ও কার্যক্রম বর্ণনা করে পোস্ট দিয়ে আসছিলেন। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ৯১ হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থীর এই গ্রুপে ঘুরে ১০০ বছর পূর্তির রং ভালোভাবেই চোখে পড়েছে।

বিশ্বের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এখন সরব। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যসহ নানা রকম তথ্য ছড়িয়ে দিতে সামাজিক মাধ্যমের এই প্ল্যাটফর্মগুলো এখন আর হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। শতবর্ষের মতো একটি উপলক্ষেও অনলাইন মাধ্যমগুলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন নীরবতা সবাইকে হতাশ করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত