Ajker Patrika

ভাইরাল ভিডিওগুলো নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষক প্রশিক্ষণের নয়

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১: ০৪
ভাইরাল ভিডিওগুলো নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষক প্রশিক্ষণের নয়

বাংলাদেশে চলতি বছর প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই পাঠ্যক্রম নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছে। ফেসবুকে নতুন কারিকুলামের কার্যক্রম দাবি করে বিভিন্ন ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। যেসব ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, এগুলো নতুন কারিকুলামের ভিত্তিতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য। 

এর মধ্যে ঘাসফুল নামের একটি ফেসবুক পেজে গত শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) পোস্ট করা একটি ভিডিও আজ সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে একটি কক্ষে একজন ব্যক্তিকে ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’ ছড়া কেটে নেচে গেয়ে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওতে প্রতিক্রিয়া পড়েছে ৬৩ হাজার, এর মধ্যে হা হা প্রতিক্রিয়াই পড়েছে ৩২ হাজার, রাগের প্রতিক্রিয়া পড়েছে ১০ হাজার। ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে ১৬ হাজার বারের বেশি, মন্তব্য পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার।

ভিডিওটি দেখুন এখানে। 

এমন আরও কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানেএখানে

ফ্রলিক জাকির নামের আরেকটি পেজ থেকে শিক্ষকদের নতুন কারিকুলাম বিষয়ক প্রশিক্ষণ দাবিতে আরেকটি ভিডিও প্রচার হতে দেখা যাচ্ছে। গত ৩০ নভেম্বর প্রচারিত ভিডিওটি আজ সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রায় ১৩  লাখ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে একটি শ্রেণিকক্ষে কিছু ব্যক্তিকে ‘প্যাক প্যাক’ শব্দ করে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যাচ্ছে। এ ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া পড়েছে ৯ হাজারের বেশি, এর মধ্যে হা হা প্রতিক্রিয়া পড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার, দুঃখের প্রতিক্রিয়া পড়েছে ১ হাজার। ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে ১৭ হাজার বারের বেশি, মন্তব্য পড়েছে প্রায় ২ হাজারের বেশি।

নতুন কারিকুলামের ভিত্তিতে শিক্ষক প্রশিক্ষণের দাবিতে প্রচারিত পোস্টভিডিওটি দেখুন এখানে। 

এমন আরও কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানেএখানে। 


এসব ভিডিওটিতে নেটিজেনরা এমন প্রশিক্ষণ ও নতুন কারিকুলামের সমালোচনা করে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওগুলোর সঙ্গে দেশে চলতি বছর শুরু হওয়া নতুন শিক্ষা কারিকুলামের কোনো সম্পর্ক নেই। 

ভিডিও যাচাই ১:
ফেসবুকে ভাইরাল ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’ ভিডিওটি নিয়ে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে এস তানজিম নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত রোবরাব (৩ ডিসেম্বর ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে করা একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। এস তানজিমের প্রোফাইলে লেখা রয়েছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের স্বেচ্ছাসেবক ও ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের সদস্য। তিনি ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’ ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘এই যে ভিডিওটা ভাইরাল হইছে, এইটা বাংলাদেশের ভিডিওই না। এই শিক্ষক ভারতের আসামের এবং ঘটনাও ভারতের। আপনারা যারা সারাদিন এই ভিডিওকে আমাদের দেশের কারিকুলামের প্রশিক্ষণ হিসেবে প্রচার করেছেন তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা। এই সেই ‘‘সাইকেল চালাই’’ এর অরিজিনাল ভিডিও।’

এস তানজিমের এ পোস্টের সূত্রে রতন লাল সাহা নামের একটি পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। পেজটি ভারতের আসাম রাজ্যের ফকিরগঞ্জের ধুবরি থেকে পরিচালিত হয়। পেজটির পরিচালনাকারীর পেশা দেওয়া রয়েছে শিক্ষকতা। রতন লাল সাহা গত রোবরাব (৩ ডিসেম্বর) ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’ ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘টিলিং টিলিং সাইক্লিং, যা ২০২২ সালে আসামে ভাইরাল হয়েছিল। এবার বাংলাদেশেও ভাইরাল।’ 

পেজটি ঘুরে আরও দেখা যায়, গত ১৭ নভেম্বর রতন লাল সাহা ‘এফএলএন ট্রেনিং অন পয়েম পোস্টার ফর ওরাল ল্যাঙ্গুয়েজ ডেভেলপমেন্ট’ ক্যাপশনে ভিডিওটি প্রথম পোস্ট করেন। 

রতন সাহার ফেসবুক পোস্টপরবর্তীতে ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে রতন লাল সাহার ফেসবুক পেজে দেওয়া নম্বরে তাঁর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে থেকে যোগাযোগ করা হয়। রতন লাল সাহা আজকের পত্রিকাকে জানান, তিনি আসামের আম্বারি শিশু কল্যাণ এলপি স্কুলের সহকারী শিক্ষক। পাশাপাশি তিনি শিক্ষকদের প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেন। বাংলাদেশের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রশিক্ষক হিসেবে তাঁকেই দেখা যাচ্ছে। এটি শিশুদের জন্য ভারত সরকারের জয়ফুল লার্নিং বা আনন্দদায়ক শিক্ষণ কার্যক্রমের এফএলএন ট্রেনিং বা ফান্ডামেন্টাল লিটারেসি অ্যান্ড নিউমেরাসি প্রশিক্ষণের অংশ। এখানে যে ছড়াটি আবৃত্তি করা হয়েছে, সেটি আসামের প্রথম শ্রেণির অঙ্কুরণ নামের একটি বইয়ে রয়েছে। বইটির ৪২ নম্বর পৃষ্ঠায় ছড়াটি রয়েছে। এ কবিতা রতন লালের মাধ্যমে ২০২২ সালেও আসামে ভাইরাল হয়েছিল। ওই বছরের ১৭ আগস্ট তিনি এ ছড়ার মাধ্যমে পাঠদান দিয়ে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাওয়ার্ডও পান।

রতন লাল সাহা আরও বলেন, ‘এ ধরনের প্রশিক্ষণ ও পাঠ্যক্রম শিশুদের জন্য অনেক উপকারী। শিশুরা এর মাধ্যমে আনন্দের সঙ্গে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।’ তাঁর স্কুলে তিনি এ প্রশিক্ষণের ভালো ফল পেয়েছেন। স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি থাকে। এমনও হয়েছে, তিনি কোনো দিন ক্লাস না নিলে শিশুরা মিডডে মিল (মিডডে মিল ভারতে স্কুল খাবার প্রোগ্রাম, যা দেশব্যাপী স্কুলগামী শিশুদের পুষ্টির অবস্থাকে আরও উন্নত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে) নেওয়া থেকে বিরত থাকে। পরবর্তীতে তিনি ক্লাস নেবেন এমন আশ্বাস দিয়ে শিশুদের মিডডে মিল খাইয়েছেন— এমন দাবি রতন লালের।

এ ছাড়া ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, যে কক্ষে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে সেখানে ঝোলানো ব্যানারেও ধুবরি, আসাম শব্দগুলো রয়েছে।

ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’ ভিডিওটি বাংলাদেশের শিক্ষকদের নতুন কারিকুলামের ওপর প্রশিক্ষণের কোনো ভিডিও নয়। 

ভিডিও যাচাই ২: 
এ ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি যে শ্রেণিকক্ষে ধারণ করা হয়েছে, সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ শীর্ষক একটি ব্যানার। ব্যানারে আরও লেখা রয়েছে, ‘৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে’। ব্যানারটির ওপরে ডান কোণায় মুজিব বর্ষের ও বাম কোণায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের লোগো দেখা যায়। এ ব্যানারটির সূত্রে কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে গাজীপুর সিটি (Gazipur City) নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ১১ মার্চ পোস্ট করা একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা আছে, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয় ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ চলছে।’ পোস্টটিতে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য নেই।

২০২২ সালে প্রচারিত একই ভিডিওতবে প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে সে সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এ প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন উপজেলাতে অনুষ্ঠিত এ প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে। 

ভিডিওটি নিয়ে ওই সময়ও ফেসবুকে আলোচনা–সমালোচনা হতে দেখা যায়। যেমন, ভিডিওটির সমর্থনে টেকনাফের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূর মোহাম্মদ লেখেন, ‘সারা দেশে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৬ (ছয়) দিনব্যাপী অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে বিষয় ভিত্তিক ‘‘গণিত’’ প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষণটির ব্যানারে শিরা ভাগেই লেখা আছে “আনন্দে গণিত শিখি”। কোমলমতি শিশুদের গণিত–ভীতি দূর করা এবং আনন্দদায়ক পরিবেশে বিভিন্ন গেমের মাধ্যমে গণিতের জটিল বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে সহজভাবে  উপস্থাপনের জন্য প্রশিক্ষণটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রশিক্ষণের একটি অংশে দশমিক ভগ্নাংশের ধারণা দেওয়া জন্য মা ও বাচ্চা হাঁসের একটি গেম রোল প্লে করা হয়েছে। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় কিছু অসুস্থ প্রকৃতির মানুষ বিষয়টি না বুঝেই প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করছে, যা খুবই দুঃখজনক। ভাইরাল রোগে আক্রান্ত এসব নোংরা মানসিকতার মানুষগুলো দেশে কিছু একটা হলেই বাছবিচার না করেই ট্রলের প্রতিযোগিতায় নেমে যান। অনেকের ট্রলের ভাষা এতই দুর্গন্ধযুক্ত যে, যা দেখলে তাদেরকে রুচিবোধ সম্পন্ন মানুষ বলে প্রতীয়মান হয় না।’ 

আবার ভিডিওটির সমালোচনা করে কুষ্টিয়ায় অবস্থিত রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মুফরাদ হোসাইন অলিন্দ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার ঠিক জানা নেই, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এভাবেই হয় কিনা!? যদি হয়েও থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে আমরা কোমায় চলে গিয়েছি। এভাবে হতে পারে না! আবর্জনা দিয়ে ভরে যাওয়া সিস্টেম আবর্জনা দিয়েই পরিষ্কার করার কথা ভাবাটা বাতুলতা। কারা করে এই ট্রেনিং ডিজাইন? এটা বোধগম্য হচ্ছে না। কতটা কেয়ারলেস ফুল হলে মাস এডুকেশন নিয়ে এ রকম করা যায়! এই শিক্ষকদের জন্য আমার সিম্প্যাথি আসছে। ভীষণ বিব্রত বোধ করছি।’

বদলগাছি তরুণ শিক্ষক নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে একই বছরের ৬ অক্টোবর একটি পোস্ট খুঁজে পায়। এতে উল্লেখিত তথ্যানুযায়ী, পোস্টটি ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়–ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত। এ প্রশিক্ষণ নওগাঁর বদলগাছি উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এ পোস্টে সংযুক্ত ভিডিওতে প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা যায়। তবে আলোচিত ভিডিওটি সেখানে পাওয়া যায়নি। পোস্টে সংযুক্ত একটি ছবিতে ভাইরাল ভিডিওতে থাকা ব্যানারটি দেখা যায়। ব্যানারটি থেকে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। 

এসব পোস্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, বাংলাদেশের শিক্ষকদের নতুন কারিকুলামের ওপর প্রশিক্ষণের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সঙ্গে নতুন কারিকুলামের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং ভিডিওটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে বাস্তবায়িত ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সময়ে ধারণকৃত।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বক্তব্য
গত রোববার (৩ ডিসেম্বর) এনসিটিবির সচিব মোসা. নাজমা আখতার স্বাক্ষরিত একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে এনসিটিবি। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা প্রচার সংবলিত কনটেন্ট আপলোড, শেয়ার বা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। হিন্দি গানের সঙ্গে স্কুলের পোশাক পরা কিছু ছেলেমেয়ে ও ব্যক্তির অশ্লীল নাচ আপলোড করে বলা হচ্ছে, শিক্ষাক্রমের নির্দেশনা, যা মিথ্যা। কিছু লোক ব্যাঙের লাফ বা হাঁসের ডাক দিচ্ছে—এমন ভিডিও আপলোড করে বলা হচ্ছে, এটি নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ, যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। 

এনসিটিবির এই বিজ্ঞপ্তির খবর আজকের পত্রিকাসহ দেশের প্রায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

সিদ্ধান্ত 
বাংলাদেশে চলতি বছর প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আগামী বছর বাস্তবায়ন করা হবে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এ নতুন পাঠ্যক্রম বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্তত দুটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভিডিওগুলোর সঙ্গে নতুন কারিকুলামের কোনো সম্পর্ক নেই। এর একটি ভিডিও ভারতের আসামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের এবং অন্যটি ২০২২ সালের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে বাস্তবায়িত ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের অংশ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫০
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গোপালগঞ্জ সহিংসতা নিয়ে অসম্পর্কিত ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে আ. লীগ: প্রেস উইং

বাসস  
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০৩
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস

গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

গতকাল বুধবার সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে নানা পোস্ট ছড়ানো হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল এ দিনের সহিংস ঘটনার মনগড়া বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি সংগঠিত প্রোপাগান্ডা অভিযানের অংশ হিসেবে প্রভাবশালী আ. লীগপন্থীরা পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন একাধিক ছবি শেয়ার করেছেন, যা এদিনের সহিংসতার দৃশ্য বলে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এসএম জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকনসহ কয়েকজন ব্যক্তি ছবি পোস্ট করে দাবি করেন, ‘ইউনূস গ্যাং’ এবং বিরোধীদলীয় কর্মীরা সাধারণ মানুষকে হিংসাত্মকভাবে আক্রমণ করছে।

একটি ছবিতে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন এক আহত কিশোরকে বহন করছে, পেছনে আগুন জ্বলছে এবং উত্তেজিত জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। ছবিটি গোপালগঞ্জে ঘটে যাওয়া সহিংসতার নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়। অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে-এই ছবিটি ২০২৪ সালের ১০ আগস্টের একটি ভিন্ন ঘটনার।

আরেকটি বহুল প্রচারিত পোস্টে দেখা যায়, জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুড়ছেন।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব পোস্টে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। পোস্টে তাঁরা উল্লেখ করেন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন এবং এনসিপি নেতা-কর্মীদের উসকানিতে এই সহিংসতা শুরু হয়। এতে বলা হয়, ‘বাস্তবতা হলো, ছবিটি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপি সমাবেশের সময়ের, যেখানে ডিবি কর্মকর্তা কনককে জনতার দিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়।’

জাকির হোসেন আরেকটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তিনিও দাবি করেন, এটি গোপালগঞ্জের আজকের সংঘর্ষের ফলাফল। তবে প্রেস উইং বলেছে, ‘তবে এই ছবিটিও ভিন্ন ঘটনার। ছবিটি ২০২৩ সালের ২০ মার্চ এক সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনার সময় তোলা হয়েছিল।’

একই ভুয়া প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি শিশুর ছবি ছড়ানো হয়—যেখানে তাকে লাঠি হাতে দেখা যায়। দাবি করা হয়, ছবিটি ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে তোলা এবং ওই শিশু নাকি সহিংসতায় অংশ নেয়। ছবিটি এই মিথ্যা বার্তা ছড়াতে ব্যবহার করা হয় যে, রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের পর্যন্ত জড়ানো হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ছবির একটি ডিজিটালি সম্পাদিত (সম্ভবত এআই-নির্মিত) সংস্করণ শেয়ার করেন নিঝুম মজুমদার, যিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজন অনলাইন প্রোপাগান্ডিস্ট হিসেবে পরিচিত বলে প্রেস উইং দাবি করেছে।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে এই বিষয়ে বলা হয়, ‘প্রকৃতপক্ষে, শিশুর এই ছবিটি গোপালগঞ্জে তোলা হয়নি, বরং গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় ধারণ করা একটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। মূল ভিডিওটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিল।’

এসব বিভ্রান্তিকর ছবির পাশাপাশি, আওয়ামী লীগপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো ভিত্তিহীনভাবে দাবি করে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নাকি বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এসব মিথ্যা প্রচারণা জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়। প্রেস উইংয়ের মতে এসব ভুয়া প্রচারণা ও যাচাইকৃত সূত্রভিত্তিক তথ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।

আজকের সহিংসতা শুরু হয় যখন গোপালগঞ্জ শহরে নির্ধারিত সমাবেশ শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের বহর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা আক্রমণ করে। এই আক্রমণ দ্রুত বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। পুলিশের গাড়ির পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি গাড়িও আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, ১৬ জুলাই রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কঠোর কারফিউ জারি করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয় ‘মাঠের বাস্তব ঘটনার বিপরীতে, আওয়ামী লীগপন্থী সামাজিক মাধ্যম চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর, প্রাসঙ্গিকতা-বর্জিত ও মনগড়া ছবি ছড়িয়ে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০০
নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তথা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগকে হিন্দু বলে প্রচার করেছে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেক ইউনিট সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল রোববার এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেস উইং জানিয়েছে, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে এবং ইওনসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন বলে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সোহাগের বাবার নাম মো. আয়ুব আলী এবং মায়ের নাম আলেয়া বেগম। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী লাকি বেগম, বোন ফাতেমা এবং একমাত্র ছেলে সোহানকে রেখে গেছেন।

গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর নিথর দেহেও বোল্ডার ছুড়ে মারা হয়। নৃশংস এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার জানাজা শেষে সোহাগকে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ গ্রাম বন্দরগাছিয়ায় তাঁর মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

ভারতের যেসব সংবাদমাধ্যম সোহাগকে হিন্দু বলে উল্লেখ করেছে, তারা তাদের প্রতিবেদনে তার ধর্ম বা পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেনি। বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম নিয়মিত ভিত্তিহীন ও ভুল তথ্য প্রচার করে আসছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /নাটকের দৃশ্যকে ধর্ষণের পর হত্যা দাবিতে প্রচার

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, ১৯: ০০
বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রেখে গেছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। এটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।

৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একজন তরুণী হাত বাঁধা অবস্থায় কংক্রিটের মেঝেতে পড়ে আছেন। পাশেই একজন মধ্যবয়সী তরুণীটির বাবা পরিচয়ে আর্তনাদ করছেন। তাঁকে আরেকজন যুবক সান্ত্বনা দিচ্ছেন। পুলিশের পোশাক পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তি তরুণীকে ঘিরে পর্যবেক্ষণ করছেন। ভিডিওর শেষাংশে পুলিশকে তরুণীর মরদেহ ব্যাগে ভরতে দেখা যায়।

‘Md Nishad Hossain’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আজ সোমবার (৩০ জুন) সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘আহারে নির্মমতা এবং একজন বাবার আর্তনাদ। বাংলাদেশ ২০২৪’র আগস্ট মাস থেকে সারা দেশে নারী ধর্ষণ করেই চলছে বিএনপি জামাতের মব সন্ত্রাসীরা। একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে রেখে গেছে। মেয়ের পিতার আহাজারী কে শুনবে দেশে এখন বিচার নাই। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী হায়ানারা যা যা করছে ২০২৪ ’র বাংলাদেশে বিএনপি জামাত তার চেয়ে বেশি করছে।’ (বানান অপরিবর্তিত)

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভিডিওটি ১৯ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ৫১৫টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৫৬টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১৮৫ বার।

এসব কমেন্টে অনেকে ভিডিওটি নাটক উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে সত্য মনে করেও কমেন্ট করেছে। Shilvi Akther নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছে, ‘আহারে জীবন! মানুষ কিভাবে এতো নির্মম হয়? একজন বাবার আর্তনাদ কি কারো মনকে মর্মাহত করে না?’ (বানান অপরিবর্তিত) Narayon Saha লিখেছে,’ এই দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট বাবার কান্দে সন্তানের লাশ হায়রে দুনিয়া।’ (বানান অপরিবর্তিত)

S M Salam Patwari, গর্জে ওঠো আরেকবার বাংলাদেশ এবং গাজীপুর জেলা যুবলীগ শাখা নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ‘Short Film BD’ নামে একটি লোগো লক্ষ করা যায়। এই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Short Film BD’ নামে একটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি গত ২০ জুনে প্রকাশিত। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মেঝেতে পড়ে থাকা তরুণী, পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তি, আহাজারি করা ব্যক্তি ও আশপাশের দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Short Film BD ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Short Film BD ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘মৌসুমীর সাথে কি হলো।’ ৪ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখে বোঝা যায়, এটি একটি নাটিকার দৃশ্য।

Short Film BD নামে ফেসবুক পেজটিতে একই তারিখে একই ভিডিও প্রকাশ করে ক্যাপশনে লিখেছে, ‘মেয়ের কি হইছে জানতে চায় অসহায় বাবা।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট
Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

Short Film BD ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে বিভিন্ন ধরনের নাটিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে অভিনয় করা একাধিক ব্যক্তিকে অন্যান্য ভিডিওতেও (, ) দেখা গেছে।

এ ছাড়া এই পেজের ইন্ট্রোতে লেখা, ‘শর্টফিল্ম ও নাটক দেখুন এবং উপভোগ করুন। আমাদের সঙ্গেই থাকুন।’ (ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তরিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট
Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

সুতরাং, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে একটি নাটক।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত