ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

২০১৫ সালের মার্চ মাস। কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে টেড (টেকনোলজি, এন্টারটেইনমেন্ট, ডিজাইন) কনফারেন্সে হাজির হয়ে বিল গেটস এক চরম হুঁশিয়ারি দিলেন।
সম্মেলনে তিনি বললেন, ‘বিশ্বে পরবর্তী মহামারির জন্য আমরা প্রস্তুত নই’। বিশ্বের কাছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভালোভাবে প্রস্তুত থাকার বার্তা দিয়েছিলেন বিল গেটস। তিনি বলেছিলেন, ‘আগামী কয়েক দশকের মধ্যে এক কোটি মানুষ মারা যাবে। কোনও মিসাইল নয়, জীবাণুই মারবে। যা যুদ্ধের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক হবে’।
তার এই দূরদর্শী বক্তব্য সেসময় বিবিসিসহ কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রচার পেয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তার কথার খুব একটা গুরুত্ব দেননি।
কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর তার সেই বক্তৃতা বারবার শুনছে মানুষ। বিল গেটস কী বলেছেন সেটিতে নয়, কেন তিনি এমনটি বলেছিলেন, সে বিষয়েই বেশিরভাগ মানুষের আগ্রহ।
বিল গেটসকে নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। অনেকের অভিযোগ, বিল গেটস আসলে বিশ্বের এলিট বা সুবিধাভোগী শ্রেণীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্য কিছু মানুষের বিশ্বাস, বিল গেটস আসলে পৃথিবীকে জনশূন্য করার চেষ্টা করছেন।
আবার অন্য একদল আছেন, যাদের অভিযোগ, বিল গেটস টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করছেন। কেউ কেউ আরও একধাপ এগিয়ে অভিযোগ তুলছেন, বিল গেটস টিকার নামে সব মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দিতে চান।
যড়যন্ত্র তত্ত্বের শুরু যেভাবে
রোরি স্মিথ ‘ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ’ নামের একটি ফ্যাক্ট চেকিং বা তথ্য যাচাইকারী ওয়েবসাইটে কাজ করেন। তিনি বলছেন, বিল গেটসকে নিয়ে বহু রকমের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সঙ্গে বিল গেটসকে জড়িয়ে যেসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হয়েছে, সেগুলো শুধু গতবছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তিন মাসে টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্তত ১২ লাখবার উল্লেখ করা হয়েছে। এই সমীক্ষাটি চালিয়েছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং জিগনাল ল্যাবস।
এরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সাধারণত ফেসবুক গ্রুপে ছড়ানো হয়, এরপর সেগুলো শেয়ার হয় লাখ লাখবার।
ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ দেখেছে, চীনা শর্ট ভিডিও শেয়ারিং সাইট টিকটক এ ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের নতুন আখড়া হয়ে উঠেছে।
বিল গেটসকে নিয়ে বেশকিছু আজগুবি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চালু আছে। এ নিয়ে বিবিসির অ্যান্টি-ডিসইনফরমেশন বা ভুয়া তথ্যবিরোধী টিম একটি অনুসন্ধান চালিয়েছে।
টিকা নিয়ে পরীক্ষা ও আফ্রিকায় মৃত্যু
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন আফ্রিকা এবং ভারতে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছে। এর ফলে সেখানে হাজার হাজার শিশু হয় মারা গেছে, নয়তো অপূরণীয় শারীরিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। একটি পোস্টে তো এমন দাবিও করা হয়েছে যে, এ কারণে ভারতে বিল গেটসের বিচার চলছে।
টিকার নামে গর্ভপাতের ওষুধ
কেনিয়ায় তিনি ধনুষ্টঙ্কারের এমন টিকা চালু করেছেন যার ভেতরে আসলে আছে গর্ভপাতের ওষুধ।
বিশ্বকে মানবশূন্য করতে চাইছেন গেটস
‘দ্য নিউ আমেরিকান ম্যাগাজিন’ বলে একটি ওয়েবসাইটের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। এখানেও সেই একই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব- বিল গেটস টিকা আর গর্ভপাতের মাধ্যমে বিশ্বকে মানবশূন্য করতে চাইছেন। এটিতে আবার বিল গেটসের সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গাঁটছড়া আছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই ভিডিও শেয়ার হয়েছে সাড়ে ছয় হাজারবার এবং দুই লাখবারের বেশি এটি দেখা হয়েছে।
মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকাতে চান
বেশ কিছু ভিডিওতে অভিযোগ করা হচ্ছে, বিল গেটস কোভিড টিকার মাধ্যমে মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢোকাতে চান। ইউটিউবে এমন ভিডিও লাখ লাখ শেয়ার হয়েছে।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ব্যাখ্যা
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, নিজের এবং স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বের জনস্বাস্থ্যের জন্য শত শত কোটি ডলার ঢেলেছেন। এমন একজন ব্যক্তি কীভাবে কোভিড-১৯ ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলেন?
ইউনিভার্সিটি অব মায়ামির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জোসেফ উসিনস্কি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সম্পর্কে বেশ কিছু বই লিখেছেন। তার মতে, বিল গেটস ধনী এবং বিখ্যাত বলেই ষড়যন্ত্রকারীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন।
‘বেশিরভাগ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আসলে ক্ষমতাবান লোকদের নিয়েই, তাদের বিরুদ্ধে মারাত্মক কোনো কিছুর অভিযোগ আনা হয়’, বলছেন তিনি।
‘আর ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো প্রায় একই রকম, শুধু নামগুলো বদলে যায়। বিল গেটসের আগে ছিল জর্জ সোরোস, কিংবা রথচাইল্ডস বা রকেফেলারদের নাম’। যোগ করেন অধ্যাপক উসিনস্কি।
বেশিরভাগ ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মৃত্যু ঘটে আসলে খুব বেশি ডালপালা গজাবার আগেই। তবে কিছু টিকে থাকে। সাধারণত যেসব তত্ত্বে ভিলেনরা থাকে খুব বড় কেউ এবং যে ইস্যুতে মানুষের খুব বেশি আগ্রহ থাকে, সেরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বেশ দীর্ঘায়ু পায়।
জোসেফ উসিনস্কি বলেন, ‘ধনী লোকজন এবং বড় করপোরেশনগুলোর বিরুদ্ধে মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের এই যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, এর কারণ এরকম আশংকা আমাদের মধ্যে আছে। এরকম ভয় বা আশংকা আসলে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের এক বিরাট মশলা’।
জোসেফ উসিনস্কি মনে করেন, এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই। কিন্তু তারপরও মানুষ এগুলো বিশ্বাস করতে পছন্দ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক চতুর্থাংশ মানুষ এবং ৪৪ শতাংশ রিপাবলিকান বিশ্বাস করে, বিল গেটস কোভিড-১৯ টিকা ব্যবহার করে মানুষের ত্বকের নিচে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দিতে চান। এই জরিপটি চালিয়েছিল ইয়াহু নিউজ এবং ইউগভ।
যেমন, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন গত বছর একটি গবেষণার জন্য তহবিল দিয়েছিল, যেটি চালিয়েছিল ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। কোনো রোগীর টিকা নেওয়ার রেকর্ড বা ইতিহাস বিশেষ কোনো রঙের প্যাটার্নের মধ্যে সংরক্ষণ করা যায় কিনা, সেটা দেখা ছিল এই গবেষণার লক্ষ্য। খালি চোখে এটি দেখা যাবে না এবং এটি টিকা দেওয়ার সময়ই মানুষের ত্বকের নিচে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের শুরুটা কীভাবে তা অনুমান করা কঠিন। কিন্তু এরকম আজগুবি তত্ত্ব বহু মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি ইন্টারনেট অনেক সহজ করে দিয়েছে।
উসিনস্কির মতে, ইন্টারনেট যুগের আগে এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তাদের নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু এখন ইন্টারনেটের বদৌলতে ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তার মানুষ, ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দ্রুত এসব ছড়িয়ে যাচ্ছে। কাজেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এখন ইন্টারনেটের আগের জমানার চেয়ে অনেক বেশি মূলধারায় চলে আসার সুযোগ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিশ্ব মহামারির সময় আরও বেশি বাড়ছে। কারণ মানুষ এখন মনস্তাত্ত্বিকভাবে অনেক বেশি নাজুক অবস্থায় আছে।
তার মতে, মানুষ এরকম সংকটের সময় সবার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কোনো কিছুর অর্থ বোঝার চেষ্টা করে।
উসিনস্কি বলেন, ‘যে কোনো তথ্য পেলেই আমরা তার মানে বোঝার চেষ্টা করি। আর তখনই শুরু হয় গুজব ছড়ানোর কাজ। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তখন এই শূন্যস্থান পূরণ করতে থাকে, বিশেষ করে বিল গেটস জাতীয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় এ পর্যন্ত ৩০ কোটি ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এর মধ্যে বিপুল অর্থ ছাড় করা হয়েছে।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন কী বলছে?
এক বিবৃতিতে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বলেছে, আমাদের সম্পর্কে অনলাইনে যেসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে এবং এর ফলে জনস্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হতে পারে সেটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
‘এরকম একটা সময়, যখন বিশ্ব এক অভূতপূর্ব স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক সংকটের মুখে, তখন কিছু লোক যে এভাবে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে, তা খুবই পীড়াদায়ক। অথচ এখন আমাদের সবার উচিত মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য সহযোগিতা করা। কোভিড-১৯–এর বিস্তার ঠেকাতে যে ভালো কাজটা এখন আমরা সবাই করতে পারি তা হলো সঠিক তথ্য প্রচার করা’।
বিল গেটস বলেন, তাকে ঘিরে যে এতসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে সেটি জেনে তিনি বিস্মিত।
‘এরকম পাগলামি যে চলছে, তা আসলেই যন্ত্রণাদায়ক। আমরা যখন টিকা তৈরি করবো, আমরা চাই মোট জনসংখ্যার ৮০ ভাগ মানুষ এই টিকা নিক। এখন যদি তারা এরকম একটা ষড়যন্ত্রের কথা শোনে এবং লোকে টিকা নিতে না চায় তখন তো এই রোগে মানুষের মৃত্যু অব্যাহত থাকবে’।
‘আমি একরকম বিস্মিত যে, এসব আমাকে ঘিরেই বলা হচ্ছে। আমরা তো কেবল অর্থ দিচ্ছি, চেক লিখছি... হ্যাঁ, আমরা চাই শিশুদের যেন রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করা যায়। কিন্তু এর সঙ্গে তো মাইক্রোচিপ বা সেরকম কিছুর সম্পর্ক নেই। এসব শুনলে মাঝে-মাঝে হাসি পায়’, বলেন গেটস।
বিল গেটস এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডেরেক মুলারের অত্যন্ত জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল ‘ভেরিটাসিয়াম (Veritasium)–এ উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, আমার কথা মিলে গেল বলে কোনও সুখানুভূতি নেই আমার। আমার কি আরও প্ররোচিত করা উচিত ছিল?’ মুলার জানতে চেয়েছিলেন যে, কী করে মহামারির ব্যাপারে বিল গেটস এত নিশ্চিত ছিলেন? মাইক্রোসফট প্রধান বলেন, ‘নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি ভাইরাস রয়েছে। সেগুলো একের পর এক আসবে। শ্বাসযন্ত্রের রোগগুলো অত্যন্ত ভয়ের। কারণ সংক্রমিত হওয়ার পরেও মানুষ উড়োজাহাজ কিংবা বাসে চড়ে, চলাফেরা করে। যেখানে ইবোলার মতো ভাইরাস সংক্রমণ হলে হাসপাতালেই কাটাতে হয় অধিকাংশ সময়।’
মুলার ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের ব্যাপারে আলোকপাত করতে বললে বিল গেটস বলেন, এর একটি জলবায়ু পরিবর্তন। এটিতে প্রতি বছর মৃতের সংখ্যা বাড়বে। মহামারিজনিত মৃত্যুর চেয়েও মারাত্মক হবে। অন্যটি ‘বায়ো-টেরোরিজম’। যে ক্ষতি করতে চাইবে, সে নিজের খরচে কোনো ভাইরাস তৈরি করবে। যার ফল মহামারির থেকেও ভয়ঙ্কর হবে।
বিল গেটস স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ফের ভয়ঙ্কর মহামারি আসবে। সেটিতে প্রতিরোধ করার মতো ক্ষমতা মানুষের থাকবে না।

২০১৫ সালের মার্চ মাস। কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে টেড (টেকনোলজি, এন্টারটেইনমেন্ট, ডিজাইন) কনফারেন্সে হাজির হয়ে বিল গেটস এক চরম হুঁশিয়ারি দিলেন।
সম্মেলনে তিনি বললেন, ‘বিশ্বে পরবর্তী মহামারির জন্য আমরা প্রস্তুত নই’। বিশ্বের কাছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভালোভাবে প্রস্তুত থাকার বার্তা দিয়েছিলেন বিল গেটস। তিনি বলেছিলেন, ‘আগামী কয়েক দশকের মধ্যে এক কোটি মানুষ মারা যাবে। কোনও মিসাইল নয়, জীবাণুই মারবে। যা যুদ্ধের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক হবে’।
তার এই দূরদর্শী বক্তব্য সেসময় বিবিসিসহ কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রচার পেয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তার কথার খুব একটা গুরুত্ব দেননি।
কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর তার সেই বক্তৃতা বারবার শুনছে মানুষ। বিল গেটস কী বলেছেন সেটিতে নয়, কেন তিনি এমনটি বলেছিলেন, সে বিষয়েই বেশিরভাগ মানুষের আগ্রহ।
বিল গেটসকে নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। অনেকের অভিযোগ, বিল গেটস আসলে বিশ্বের এলিট বা সুবিধাভোগী শ্রেণীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্য কিছু মানুষের বিশ্বাস, বিল গেটস আসলে পৃথিবীকে জনশূন্য করার চেষ্টা করছেন।
আবার অন্য একদল আছেন, যাদের অভিযোগ, বিল গেটস টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করছেন। কেউ কেউ আরও একধাপ এগিয়ে অভিযোগ তুলছেন, বিল গেটস টিকার নামে সব মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দিতে চান।
যড়যন্ত্র তত্ত্বের শুরু যেভাবে
রোরি স্মিথ ‘ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ’ নামের একটি ফ্যাক্ট চেকিং বা তথ্য যাচাইকারী ওয়েবসাইটে কাজ করেন। তিনি বলছেন, বিল গেটসকে নিয়ে বহু রকমের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সঙ্গে বিল গেটসকে জড়িয়ে যেসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হয়েছে, সেগুলো শুধু গতবছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তিন মাসে টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্তত ১২ লাখবার উল্লেখ করা হয়েছে। এই সমীক্ষাটি চালিয়েছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং জিগনাল ল্যাবস।
এরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সাধারণত ফেসবুক গ্রুপে ছড়ানো হয়, এরপর সেগুলো শেয়ার হয় লাখ লাখবার।
ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ দেখেছে, চীনা শর্ট ভিডিও শেয়ারিং সাইট টিকটক এ ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের নতুন আখড়া হয়ে উঠেছে।
বিল গেটসকে নিয়ে বেশকিছু আজগুবি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চালু আছে। এ নিয়ে বিবিসির অ্যান্টি-ডিসইনফরমেশন বা ভুয়া তথ্যবিরোধী টিম একটি অনুসন্ধান চালিয়েছে।
টিকা নিয়ে পরীক্ষা ও আফ্রিকায় মৃত্যু
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন আফ্রিকা এবং ভারতে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছে। এর ফলে সেখানে হাজার হাজার শিশু হয় মারা গেছে, নয়তো অপূরণীয় শারীরিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। একটি পোস্টে তো এমন দাবিও করা হয়েছে যে, এ কারণে ভারতে বিল গেটসের বিচার চলছে।
টিকার নামে গর্ভপাতের ওষুধ
কেনিয়ায় তিনি ধনুষ্টঙ্কারের এমন টিকা চালু করেছেন যার ভেতরে আসলে আছে গর্ভপাতের ওষুধ।
বিশ্বকে মানবশূন্য করতে চাইছেন গেটস
‘দ্য নিউ আমেরিকান ম্যাগাজিন’ বলে একটি ওয়েবসাইটের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। এখানেও সেই একই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব- বিল গেটস টিকা আর গর্ভপাতের মাধ্যমে বিশ্বকে মানবশূন্য করতে চাইছেন। এটিতে আবার বিল গেটসের সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গাঁটছড়া আছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই ভিডিও শেয়ার হয়েছে সাড়ে ছয় হাজারবার এবং দুই লাখবারের বেশি এটি দেখা হয়েছে।
মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকাতে চান
বেশ কিছু ভিডিওতে অভিযোগ করা হচ্ছে, বিল গেটস কোভিড টিকার মাধ্যমে মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢোকাতে চান। ইউটিউবে এমন ভিডিও লাখ লাখ শেয়ার হয়েছে।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ব্যাখ্যা
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, নিজের এবং স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বের জনস্বাস্থ্যের জন্য শত শত কোটি ডলার ঢেলেছেন। এমন একজন ব্যক্তি কীভাবে কোভিড-১৯ ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলেন?
ইউনিভার্সিটি অব মায়ামির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জোসেফ উসিনস্কি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সম্পর্কে বেশ কিছু বই লিখেছেন। তার মতে, বিল গেটস ধনী এবং বিখ্যাত বলেই ষড়যন্ত্রকারীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন।
‘বেশিরভাগ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আসলে ক্ষমতাবান লোকদের নিয়েই, তাদের বিরুদ্ধে মারাত্মক কোনো কিছুর অভিযোগ আনা হয়’, বলছেন তিনি।
‘আর ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো প্রায় একই রকম, শুধু নামগুলো বদলে যায়। বিল গেটসের আগে ছিল জর্জ সোরোস, কিংবা রথচাইল্ডস বা রকেফেলারদের নাম’। যোগ করেন অধ্যাপক উসিনস্কি।
বেশিরভাগ ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মৃত্যু ঘটে আসলে খুব বেশি ডালপালা গজাবার আগেই। তবে কিছু টিকে থাকে। সাধারণত যেসব তত্ত্বে ভিলেনরা থাকে খুব বড় কেউ এবং যে ইস্যুতে মানুষের খুব বেশি আগ্রহ থাকে, সেরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বেশ দীর্ঘায়ু পায়।
জোসেফ উসিনস্কি বলেন, ‘ধনী লোকজন এবং বড় করপোরেশনগুলোর বিরুদ্ধে মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের এই যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, এর কারণ এরকম আশংকা আমাদের মধ্যে আছে। এরকম ভয় বা আশংকা আসলে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের এক বিরাট মশলা’।
জোসেফ উসিনস্কি মনে করেন, এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই। কিন্তু তারপরও মানুষ এগুলো বিশ্বাস করতে পছন্দ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক চতুর্থাংশ মানুষ এবং ৪৪ শতাংশ রিপাবলিকান বিশ্বাস করে, বিল গেটস কোভিড-১৯ টিকা ব্যবহার করে মানুষের ত্বকের নিচে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দিতে চান। এই জরিপটি চালিয়েছিল ইয়াহু নিউজ এবং ইউগভ।
যেমন, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন গত বছর একটি গবেষণার জন্য তহবিল দিয়েছিল, যেটি চালিয়েছিল ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। কোনো রোগীর টিকা নেওয়ার রেকর্ড বা ইতিহাস বিশেষ কোনো রঙের প্যাটার্নের মধ্যে সংরক্ষণ করা যায় কিনা, সেটা দেখা ছিল এই গবেষণার লক্ষ্য। খালি চোখে এটি দেখা যাবে না এবং এটি টিকা দেওয়ার সময়ই মানুষের ত্বকের নিচে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের শুরুটা কীভাবে তা অনুমান করা কঠিন। কিন্তু এরকম আজগুবি তত্ত্ব বহু মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি ইন্টারনেট অনেক সহজ করে দিয়েছে।
উসিনস্কির মতে, ইন্টারনেট যুগের আগে এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তাদের নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু এখন ইন্টারনেটের বদৌলতে ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তার মানুষ, ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দ্রুত এসব ছড়িয়ে যাচ্ছে। কাজেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এখন ইন্টারনেটের আগের জমানার চেয়ে অনেক বেশি মূলধারায় চলে আসার সুযোগ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিশ্ব মহামারির সময় আরও বেশি বাড়ছে। কারণ মানুষ এখন মনস্তাত্ত্বিকভাবে অনেক বেশি নাজুক অবস্থায় আছে।
তার মতে, মানুষ এরকম সংকটের সময় সবার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কোনো কিছুর অর্থ বোঝার চেষ্টা করে।
উসিনস্কি বলেন, ‘যে কোনো তথ্য পেলেই আমরা তার মানে বোঝার চেষ্টা করি। আর তখনই শুরু হয় গুজব ছড়ানোর কাজ। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তখন এই শূন্যস্থান পূরণ করতে থাকে, বিশেষ করে বিল গেটস জাতীয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় এ পর্যন্ত ৩০ কোটি ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এর মধ্যে বিপুল অর্থ ছাড় করা হয়েছে।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন কী বলছে?
এক বিবৃতিতে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বলেছে, আমাদের সম্পর্কে অনলাইনে যেসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে এবং এর ফলে জনস্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হতে পারে সেটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
‘এরকম একটা সময়, যখন বিশ্ব এক অভূতপূর্ব স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক সংকটের মুখে, তখন কিছু লোক যে এভাবে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে, তা খুবই পীড়াদায়ক। অথচ এখন আমাদের সবার উচিত মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য সহযোগিতা করা। কোভিড-১৯–এর বিস্তার ঠেকাতে যে ভালো কাজটা এখন আমরা সবাই করতে পারি তা হলো সঠিক তথ্য প্রচার করা’।
বিল গেটস বলেন, তাকে ঘিরে যে এতসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে সেটি জেনে তিনি বিস্মিত।
‘এরকম পাগলামি যে চলছে, তা আসলেই যন্ত্রণাদায়ক। আমরা যখন টিকা তৈরি করবো, আমরা চাই মোট জনসংখ্যার ৮০ ভাগ মানুষ এই টিকা নিক। এখন যদি তারা এরকম একটা ষড়যন্ত্রের কথা শোনে এবং লোকে টিকা নিতে না চায় তখন তো এই রোগে মানুষের মৃত্যু অব্যাহত থাকবে’।
‘আমি একরকম বিস্মিত যে, এসব আমাকে ঘিরেই বলা হচ্ছে। আমরা তো কেবল অর্থ দিচ্ছি, চেক লিখছি... হ্যাঁ, আমরা চাই শিশুদের যেন রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করা যায়। কিন্তু এর সঙ্গে তো মাইক্রোচিপ বা সেরকম কিছুর সম্পর্ক নেই। এসব শুনলে মাঝে-মাঝে হাসি পায়’, বলেন গেটস।
বিল গেটস এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডেরেক মুলারের অত্যন্ত জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল ‘ভেরিটাসিয়াম (Veritasium)–এ উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, আমার কথা মিলে গেল বলে কোনও সুখানুভূতি নেই আমার। আমার কি আরও প্ররোচিত করা উচিত ছিল?’ মুলার জানতে চেয়েছিলেন যে, কী করে মহামারির ব্যাপারে বিল গেটস এত নিশ্চিত ছিলেন? মাইক্রোসফট প্রধান বলেন, ‘নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি ভাইরাস রয়েছে। সেগুলো একের পর এক আসবে। শ্বাসযন্ত্রের রোগগুলো অত্যন্ত ভয়ের। কারণ সংক্রমিত হওয়ার পরেও মানুষ উড়োজাহাজ কিংবা বাসে চড়ে, চলাফেরা করে। যেখানে ইবোলার মতো ভাইরাস সংক্রমণ হলে হাসপাতালেই কাটাতে হয় অধিকাংশ সময়।’
মুলার ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের ব্যাপারে আলোকপাত করতে বললে বিল গেটস বলেন, এর একটি জলবায়ু পরিবর্তন। এটিতে প্রতি বছর মৃতের সংখ্যা বাড়বে। মহামারিজনিত মৃত্যুর চেয়েও মারাত্মক হবে। অন্যটি ‘বায়ো-টেরোরিজম’। যে ক্ষতি করতে চাইবে, সে নিজের খরচে কোনো ভাইরাস তৈরি করবে। যার ফল মহামারির থেকেও ভয়ঙ্কর হবে।
বিল গেটস স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ফের ভয়ঙ্কর মহামারি আসবে। সেটিতে প্রতিরোধ করার মতো ক্ষমতা মানুষের থাকবে না।
ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

২০১৫ সালের মার্চ মাস। কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে টেড (টেকনোলজি, এন্টারটেইনমেন্ট, ডিজাইন) কনফারেন্সে হাজির হয়ে বিল গেটস এক চরম হুঁশিয়ারি দিলেন।
সম্মেলনে তিনি বললেন, ‘বিশ্বে পরবর্তী মহামারির জন্য আমরা প্রস্তুত নই’। বিশ্বের কাছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভালোভাবে প্রস্তুত থাকার বার্তা দিয়েছিলেন বিল গেটস। তিনি বলেছিলেন, ‘আগামী কয়েক দশকের মধ্যে এক কোটি মানুষ মারা যাবে। কোনও মিসাইল নয়, জীবাণুই মারবে। যা যুদ্ধের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক হবে’।
তার এই দূরদর্শী বক্তব্য সেসময় বিবিসিসহ কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রচার পেয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তার কথার খুব একটা গুরুত্ব দেননি।
কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর তার সেই বক্তৃতা বারবার শুনছে মানুষ। বিল গেটস কী বলেছেন সেটিতে নয়, কেন তিনি এমনটি বলেছিলেন, সে বিষয়েই বেশিরভাগ মানুষের আগ্রহ।
বিল গেটসকে নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। অনেকের অভিযোগ, বিল গেটস আসলে বিশ্বের এলিট বা সুবিধাভোগী শ্রেণীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্য কিছু মানুষের বিশ্বাস, বিল গেটস আসলে পৃথিবীকে জনশূন্য করার চেষ্টা করছেন।
আবার অন্য একদল আছেন, যাদের অভিযোগ, বিল গেটস টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করছেন। কেউ কেউ আরও একধাপ এগিয়ে অভিযোগ তুলছেন, বিল গেটস টিকার নামে সব মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দিতে চান।
যড়যন্ত্র তত্ত্বের শুরু যেভাবে
রোরি স্মিথ ‘ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ’ নামের একটি ফ্যাক্ট চেকিং বা তথ্য যাচাইকারী ওয়েবসাইটে কাজ করেন। তিনি বলছেন, বিল গেটসকে নিয়ে বহু রকমের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সঙ্গে বিল গেটসকে জড়িয়ে যেসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হয়েছে, সেগুলো শুধু গতবছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তিন মাসে টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্তত ১২ লাখবার উল্লেখ করা হয়েছে। এই সমীক্ষাটি চালিয়েছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং জিগনাল ল্যাবস।
এরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সাধারণত ফেসবুক গ্রুপে ছড়ানো হয়, এরপর সেগুলো শেয়ার হয় লাখ লাখবার।
ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ দেখেছে, চীনা শর্ট ভিডিও শেয়ারিং সাইট টিকটক এ ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের নতুন আখড়া হয়ে উঠেছে।
বিল গেটসকে নিয়ে বেশকিছু আজগুবি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চালু আছে। এ নিয়ে বিবিসির অ্যান্টি-ডিসইনফরমেশন বা ভুয়া তথ্যবিরোধী টিম একটি অনুসন্ধান চালিয়েছে।
টিকা নিয়ে পরীক্ষা ও আফ্রিকায় মৃত্যু
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন আফ্রিকা এবং ভারতে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছে। এর ফলে সেখানে হাজার হাজার শিশু হয় মারা গেছে, নয়তো অপূরণীয় শারীরিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। একটি পোস্টে তো এমন দাবিও করা হয়েছে যে, এ কারণে ভারতে বিল গেটসের বিচার চলছে।
টিকার নামে গর্ভপাতের ওষুধ
কেনিয়ায় তিনি ধনুষ্টঙ্কারের এমন টিকা চালু করেছেন যার ভেতরে আসলে আছে গর্ভপাতের ওষুধ।
বিশ্বকে মানবশূন্য করতে চাইছেন গেটস
‘দ্য নিউ আমেরিকান ম্যাগাজিন’ বলে একটি ওয়েবসাইটের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। এখানেও সেই একই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব- বিল গেটস টিকা আর গর্ভপাতের মাধ্যমে বিশ্বকে মানবশূন্য করতে চাইছেন। এটিতে আবার বিল গেটসের সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গাঁটছড়া আছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই ভিডিও শেয়ার হয়েছে সাড়ে ছয় হাজারবার এবং দুই লাখবারের বেশি এটি দেখা হয়েছে।
মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকাতে চান
বেশ কিছু ভিডিওতে অভিযোগ করা হচ্ছে, বিল গেটস কোভিড টিকার মাধ্যমে মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢোকাতে চান। ইউটিউবে এমন ভিডিও লাখ লাখ শেয়ার হয়েছে।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ব্যাখ্যা
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, নিজের এবং স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বের জনস্বাস্থ্যের জন্য শত শত কোটি ডলার ঢেলেছেন। এমন একজন ব্যক্তি কীভাবে কোভিড-১৯ ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলেন?
ইউনিভার্সিটি অব মায়ামির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জোসেফ উসিনস্কি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সম্পর্কে বেশ কিছু বই লিখেছেন। তার মতে, বিল গেটস ধনী এবং বিখ্যাত বলেই ষড়যন্ত্রকারীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন।
‘বেশিরভাগ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আসলে ক্ষমতাবান লোকদের নিয়েই, তাদের বিরুদ্ধে মারাত্মক কোনো কিছুর অভিযোগ আনা হয়’, বলছেন তিনি।
‘আর ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো প্রায় একই রকম, শুধু নামগুলো বদলে যায়। বিল গেটসের আগে ছিল জর্জ সোরোস, কিংবা রথচাইল্ডস বা রকেফেলারদের নাম’। যোগ করেন অধ্যাপক উসিনস্কি।
বেশিরভাগ ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মৃত্যু ঘটে আসলে খুব বেশি ডালপালা গজাবার আগেই। তবে কিছু টিকে থাকে। সাধারণত যেসব তত্ত্বে ভিলেনরা থাকে খুব বড় কেউ এবং যে ইস্যুতে মানুষের খুব বেশি আগ্রহ থাকে, সেরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বেশ দীর্ঘায়ু পায়।
জোসেফ উসিনস্কি বলেন, ‘ধনী লোকজন এবং বড় করপোরেশনগুলোর বিরুদ্ধে মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের এই যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, এর কারণ এরকম আশংকা আমাদের মধ্যে আছে। এরকম ভয় বা আশংকা আসলে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের এক বিরাট মশলা’।
জোসেফ উসিনস্কি মনে করেন, এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই। কিন্তু তারপরও মানুষ এগুলো বিশ্বাস করতে পছন্দ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক চতুর্থাংশ মানুষ এবং ৪৪ শতাংশ রিপাবলিকান বিশ্বাস করে, বিল গেটস কোভিড-১৯ টিকা ব্যবহার করে মানুষের ত্বকের নিচে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দিতে চান। এই জরিপটি চালিয়েছিল ইয়াহু নিউজ এবং ইউগভ।
যেমন, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন গত বছর একটি গবেষণার জন্য তহবিল দিয়েছিল, যেটি চালিয়েছিল ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। কোনো রোগীর টিকা নেওয়ার রেকর্ড বা ইতিহাস বিশেষ কোনো রঙের প্যাটার্নের মধ্যে সংরক্ষণ করা যায় কিনা, সেটা দেখা ছিল এই গবেষণার লক্ষ্য। খালি চোখে এটি দেখা যাবে না এবং এটি টিকা দেওয়ার সময়ই মানুষের ত্বকের নিচে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের শুরুটা কীভাবে তা অনুমান করা কঠিন। কিন্তু এরকম আজগুবি তত্ত্ব বহু মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি ইন্টারনেট অনেক সহজ করে দিয়েছে।
উসিনস্কির মতে, ইন্টারনেট যুগের আগে এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তাদের নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু এখন ইন্টারনেটের বদৌলতে ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তার মানুষ, ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দ্রুত এসব ছড়িয়ে যাচ্ছে। কাজেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এখন ইন্টারনেটের আগের জমানার চেয়ে অনেক বেশি মূলধারায় চলে আসার সুযোগ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিশ্ব মহামারির সময় আরও বেশি বাড়ছে। কারণ মানুষ এখন মনস্তাত্ত্বিকভাবে অনেক বেশি নাজুক অবস্থায় আছে।
তার মতে, মানুষ এরকম সংকটের সময় সবার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কোনো কিছুর অর্থ বোঝার চেষ্টা করে।
উসিনস্কি বলেন, ‘যে কোনো তথ্য পেলেই আমরা তার মানে বোঝার চেষ্টা করি। আর তখনই শুরু হয় গুজব ছড়ানোর কাজ। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তখন এই শূন্যস্থান পূরণ করতে থাকে, বিশেষ করে বিল গেটস জাতীয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় এ পর্যন্ত ৩০ কোটি ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এর মধ্যে বিপুল অর্থ ছাড় করা হয়েছে।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন কী বলছে?
এক বিবৃতিতে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বলেছে, আমাদের সম্পর্কে অনলাইনে যেসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে এবং এর ফলে জনস্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হতে পারে সেটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
‘এরকম একটা সময়, যখন বিশ্ব এক অভূতপূর্ব স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক সংকটের মুখে, তখন কিছু লোক যে এভাবে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে, তা খুবই পীড়াদায়ক। অথচ এখন আমাদের সবার উচিত মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য সহযোগিতা করা। কোভিড-১৯–এর বিস্তার ঠেকাতে যে ভালো কাজটা এখন আমরা সবাই করতে পারি তা হলো সঠিক তথ্য প্রচার করা’।
বিল গেটস বলেন, তাকে ঘিরে যে এতসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে সেটি জেনে তিনি বিস্মিত।
‘এরকম পাগলামি যে চলছে, তা আসলেই যন্ত্রণাদায়ক। আমরা যখন টিকা তৈরি করবো, আমরা চাই মোট জনসংখ্যার ৮০ ভাগ মানুষ এই টিকা নিক। এখন যদি তারা এরকম একটা ষড়যন্ত্রের কথা শোনে এবং লোকে টিকা নিতে না চায় তখন তো এই রোগে মানুষের মৃত্যু অব্যাহত থাকবে’।
‘আমি একরকম বিস্মিত যে, এসব আমাকে ঘিরেই বলা হচ্ছে। আমরা তো কেবল অর্থ দিচ্ছি, চেক লিখছি... হ্যাঁ, আমরা চাই শিশুদের যেন রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করা যায়। কিন্তু এর সঙ্গে তো মাইক্রোচিপ বা সেরকম কিছুর সম্পর্ক নেই। এসব শুনলে মাঝে-মাঝে হাসি পায়’, বলেন গেটস।
বিল গেটস এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডেরেক মুলারের অত্যন্ত জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল ‘ভেরিটাসিয়াম (Veritasium)–এ উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, আমার কথা মিলে গেল বলে কোনও সুখানুভূতি নেই আমার। আমার কি আরও প্ররোচিত করা উচিত ছিল?’ মুলার জানতে চেয়েছিলেন যে, কী করে মহামারির ব্যাপারে বিল গেটস এত নিশ্চিত ছিলেন? মাইক্রোসফট প্রধান বলেন, ‘নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি ভাইরাস রয়েছে। সেগুলো একের পর এক আসবে। শ্বাসযন্ত্রের রোগগুলো অত্যন্ত ভয়ের। কারণ সংক্রমিত হওয়ার পরেও মানুষ উড়োজাহাজ কিংবা বাসে চড়ে, চলাফেরা করে। যেখানে ইবোলার মতো ভাইরাস সংক্রমণ হলে হাসপাতালেই কাটাতে হয় অধিকাংশ সময়।’
মুলার ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের ব্যাপারে আলোকপাত করতে বললে বিল গেটস বলেন, এর একটি জলবায়ু পরিবর্তন। এটিতে প্রতি বছর মৃতের সংখ্যা বাড়বে। মহামারিজনিত মৃত্যুর চেয়েও মারাত্মক হবে। অন্যটি ‘বায়ো-টেরোরিজম’। যে ক্ষতি করতে চাইবে, সে নিজের খরচে কোনো ভাইরাস তৈরি করবে। যার ফল মহামারির থেকেও ভয়ঙ্কর হবে।
বিল গেটস স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ফের ভয়ঙ্কর মহামারি আসবে। সেটিতে প্রতিরোধ করার মতো ক্ষমতা মানুষের থাকবে না।

২০১৫ সালের মার্চ মাস। কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে টেড (টেকনোলজি, এন্টারটেইনমেন্ট, ডিজাইন) কনফারেন্সে হাজির হয়ে বিল গেটস এক চরম হুঁশিয়ারি দিলেন।
সম্মেলনে তিনি বললেন, ‘বিশ্বে পরবর্তী মহামারির জন্য আমরা প্রস্তুত নই’। বিশ্বের কাছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভালোভাবে প্রস্তুত থাকার বার্তা দিয়েছিলেন বিল গেটস। তিনি বলেছিলেন, ‘আগামী কয়েক দশকের মধ্যে এক কোটি মানুষ মারা যাবে। কোনও মিসাইল নয়, জীবাণুই মারবে। যা যুদ্ধের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক হবে’।
তার এই দূরদর্শী বক্তব্য সেসময় বিবিসিসহ কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রচার পেয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তার কথার খুব একটা গুরুত্ব দেননি।
কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর তার সেই বক্তৃতা বারবার শুনছে মানুষ। বিল গেটস কী বলেছেন সেটিতে নয়, কেন তিনি এমনটি বলেছিলেন, সে বিষয়েই বেশিরভাগ মানুষের আগ্রহ।
বিল গেটসকে নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। অনেকের অভিযোগ, বিল গেটস আসলে বিশ্বের এলিট বা সুবিধাভোগী শ্রেণীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্য কিছু মানুষের বিশ্বাস, বিল গেটস আসলে পৃথিবীকে জনশূন্য করার চেষ্টা করছেন।
আবার অন্য একদল আছেন, যাদের অভিযোগ, বিল গেটস টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করছেন। কেউ কেউ আরও একধাপ এগিয়ে অভিযোগ তুলছেন, বিল গেটস টিকার নামে সব মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দিতে চান।
যড়যন্ত্র তত্ত্বের শুরু যেভাবে
রোরি স্মিথ ‘ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ’ নামের একটি ফ্যাক্ট চেকিং বা তথ্য যাচাইকারী ওয়েবসাইটে কাজ করেন। তিনি বলছেন, বিল গেটসকে নিয়ে বহু রকমের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সঙ্গে বিল গেটসকে জড়িয়ে যেসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হয়েছে, সেগুলো শুধু গতবছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তিন মাসে টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্তত ১২ লাখবার উল্লেখ করা হয়েছে। এই সমীক্ষাটি চালিয়েছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং জিগনাল ল্যাবস।
এরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সাধারণত ফেসবুক গ্রুপে ছড়ানো হয়, এরপর সেগুলো শেয়ার হয় লাখ লাখবার।
ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ দেখেছে, চীনা শর্ট ভিডিও শেয়ারিং সাইট টিকটক এ ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের নতুন আখড়া হয়ে উঠেছে।
বিল গেটসকে নিয়ে বেশকিছু আজগুবি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চালু আছে। এ নিয়ে বিবিসির অ্যান্টি-ডিসইনফরমেশন বা ভুয়া তথ্যবিরোধী টিম একটি অনুসন্ধান চালিয়েছে।
টিকা নিয়ে পরীক্ষা ও আফ্রিকায় মৃত্যু
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন আফ্রিকা এবং ভারতে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছে। এর ফলে সেখানে হাজার হাজার শিশু হয় মারা গেছে, নয়তো অপূরণীয় শারীরিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। একটি পোস্টে তো এমন দাবিও করা হয়েছে যে, এ কারণে ভারতে বিল গেটসের বিচার চলছে।
টিকার নামে গর্ভপাতের ওষুধ
কেনিয়ায় তিনি ধনুষ্টঙ্কারের এমন টিকা চালু করেছেন যার ভেতরে আসলে আছে গর্ভপাতের ওষুধ।
বিশ্বকে মানবশূন্য করতে চাইছেন গেটস
‘দ্য নিউ আমেরিকান ম্যাগাজিন’ বলে একটি ওয়েবসাইটের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। এখানেও সেই একই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব- বিল গেটস টিকা আর গর্ভপাতের মাধ্যমে বিশ্বকে মানবশূন্য করতে চাইছেন। এটিতে আবার বিল গেটসের সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গাঁটছড়া আছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই ভিডিও শেয়ার হয়েছে সাড়ে ছয় হাজারবার এবং দুই লাখবারের বেশি এটি দেখা হয়েছে।
মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকাতে চান
বেশ কিছু ভিডিওতে অভিযোগ করা হচ্ছে, বিল গেটস কোভিড টিকার মাধ্যমে মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢোকাতে চান। ইউটিউবে এমন ভিডিও লাখ লাখ শেয়ার হয়েছে।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ব্যাখ্যা
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, নিজের এবং স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বের জনস্বাস্থ্যের জন্য শত শত কোটি ডলার ঢেলেছেন। এমন একজন ব্যক্তি কীভাবে কোভিড-১৯ ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলেন?
ইউনিভার্সিটি অব মায়ামির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জোসেফ উসিনস্কি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সম্পর্কে বেশ কিছু বই লিখেছেন। তার মতে, বিল গেটস ধনী এবং বিখ্যাত বলেই ষড়যন্ত্রকারীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন।
‘বেশিরভাগ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আসলে ক্ষমতাবান লোকদের নিয়েই, তাদের বিরুদ্ধে মারাত্মক কোনো কিছুর অভিযোগ আনা হয়’, বলছেন তিনি।
‘আর ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো প্রায় একই রকম, শুধু নামগুলো বদলে যায়। বিল গেটসের আগে ছিল জর্জ সোরোস, কিংবা রথচাইল্ডস বা রকেফেলারদের নাম’। যোগ করেন অধ্যাপক উসিনস্কি।
বেশিরভাগ ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মৃত্যু ঘটে আসলে খুব বেশি ডালপালা গজাবার আগেই। তবে কিছু টিকে থাকে। সাধারণত যেসব তত্ত্বে ভিলেনরা থাকে খুব বড় কেউ এবং যে ইস্যুতে মানুষের খুব বেশি আগ্রহ থাকে, সেরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বেশ দীর্ঘায়ু পায়।
জোসেফ উসিনস্কি বলেন, ‘ধনী লোকজন এবং বড় করপোরেশনগুলোর বিরুদ্ধে মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের এই যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, এর কারণ এরকম আশংকা আমাদের মধ্যে আছে। এরকম ভয় বা আশংকা আসলে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের এক বিরাট মশলা’।
জোসেফ উসিনস্কি মনে করেন, এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই। কিন্তু তারপরও মানুষ এগুলো বিশ্বাস করতে পছন্দ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক চতুর্থাংশ মানুষ এবং ৪৪ শতাংশ রিপাবলিকান বিশ্বাস করে, বিল গেটস কোভিড-১৯ টিকা ব্যবহার করে মানুষের ত্বকের নিচে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দিতে চান। এই জরিপটি চালিয়েছিল ইয়াহু নিউজ এবং ইউগভ।
যেমন, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন গত বছর একটি গবেষণার জন্য তহবিল দিয়েছিল, যেটি চালিয়েছিল ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। কোনো রোগীর টিকা নেওয়ার রেকর্ড বা ইতিহাস বিশেষ কোনো রঙের প্যাটার্নের মধ্যে সংরক্ষণ করা যায় কিনা, সেটা দেখা ছিল এই গবেষণার লক্ষ্য। খালি চোখে এটি দেখা যাবে না এবং এটি টিকা দেওয়ার সময়ই মানুষের ত্বকের নিচে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের শুরুটা কীভাবে তা অনুমান করা কঠিন। কিন্তু এরকম আজগুবি তত্ত্ব বহু মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি ইন্টারনেট অনেক সহজ করে দিয়েছে।
উসিনস্কির মতে, ইন্টারনেট যুগের আগে এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তাদের নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু এখন ইন্টারনেটের বদৌলতে ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তার মানুষ, ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দ্রুত এসব ছড়িয়ে যাচ্ছে। কাজেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এখন ইন্টারনেটের আগের জমানার চেয়ে অনেক বেশি মূলধারায় চলে আসার সুযোগ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিশ্ব মহামারির সময় আরও বেশি বাড়ছে। কারণ মানুষ এখন মনস্তাত্ত্বিকভাবে অনেক বেশি নাজুক অবস্থায় আছে।
তার মতে, মানুষ এরকম সংকটের সময় সবার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কোনো কিছুর অর্থ বোঝার চেষ্টা করে।
উসিনস্কি বলেন, ‘যে কোনো তথ্য পেলেই আমরা তার মানে বোঝার চেষ্টা করি। আর তখনই শুরু হয় গুজব ছড়ানোর কাজ। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তখন এই শূন্যস্থান পূরণ করতে থাকে, বিশেষ করে বিল গেটস জাতীয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় এ পর্যন্ত ৩০ কোটি ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এর মধ্যে বিপুল অর্থ ছাড় করা হয়েছে।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন কী বলছে?
এক বিবৃতিতে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বলেছে, আমাদের সম্পর্কে অনলাইনে যেসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে এবং এর ফলে জনস্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হতে পারে সেটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
‘এরকম একটা সময়, যখন বিশ্ব এক অভূতপূর্ব স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক সংকটের মুখে, তখন কিছু লোক যে এভাবে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে, তা খুবই পীড়াদায়ক। অথচ এখন আমাদের সবার উচিত মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য সহযোগিতা করা। কোভিড-১৯–এর বিস্তার ঠেকাতে যে ভালো কাজটা এখন আমরা সবাই করতে পারি তা হলো সঠিক তথ্য প্রচার করা’।
বিল গেটস বলেন, তাকে ঘিরে যে এতসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে সেটি জেনে তিনি বিস্মিত।
‘এরকম পাগলামি যে চলছে, তা আসলেই যন্ত্রণাদায়ক। আমরা যখন টিকা তৈরি করবো, আমরা চাই মোট জনসংখ্যার ৮০ ভাগ মানুষ এই টিকা নিক। এখন যদি তারা এরকম একটা ষড়যন্ত্রের কথা শোনে এবং লোকে টিকা নিতে না চায় তখন তো এই রোগে মানুষের মৃত্যু অব্যাহত থাকবে’।
‘আমি একরকম বিস্মিত যে, এসব আমাকে ঘিরেই বলা হচ্ছে। আমরা তো কেবল অর্থ দিচ্ছি, চেক লিখছি... হ্যাঁ, আমরা চাই শিশুদের যেন রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করা যায়। কিন্তু এর সঙ্গে তো মাইক্রোচিপ বা সেরকম কিছুর সম্পর্ক নেই। এসব শুনলে মাঝে-মাঝে হাসি পায়’, বলেন গেটস।
বিল গেটস এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডেরেক মুলারের অত্যন্ত জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল ‘ভেরিটাসিয়াম (Veritasium)–এ উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, আমার কথা মিলে গেল বলে কোনও সুখানুভূতি নেই আমার। আমার কি আরও প্ররোচিত করা উচিত ছিল?’ মুলার জানতে চেয়েছিলেন যে, কী করে মহামারির ব্যাপারে বিল গেটস এত নিশ্চিত ছিলেন? মাইক্রোসফট প্রধান বলেন, ‘নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি ভাইরাস রয়েছে। সেগুলো একের পর এক আসবে। শ্বাসযন্ত্রের রোগগুলো অত্যন্ত ভয়ের। কারণ সংক্রমিত হওয়ার পরেও মানুষ উড়োজাহাজ কিংবা বাসে চড়ে, চলাফেরা করে। যেখানে ইবোলার মতো ভাইরাস সংক্রমণ হলে হাসপাতালেই কাটাতে হয় অধিকাংশ সময়।’
মুলার ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের ব্যাপারে আলোকপাত করতে বললে বিল গেটস বলেন, এর একটি জলবায়ু পরিবর্তন। এটিতে প্রতি বছর মৃতের সংখ্যা বাড়বে। মহামারিজনিত মৃত্যুর চেয়েও মারাত্মক হবে। অন্যটি ‘বায়ো-টেরোরিজম’। যে ক্ষতি করতে চাইবে, সে নিজের খরচে কোনো ভাইরাস তৈরি করবে। যার ফল মহামারির থেকেও ভয়ঙ্কর হবে।
বিল গেটস স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ফের ভয়ঙ্কর মহামারি আসবে। সেটিতে প্রতিরোধ করার মতো ক্ষমতা মানুষের থাকবে না।

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
১৩ আগস্ট ২০২৫
গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
১৭ জুলাই ২০২৫
রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তথা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগকে হিন্দু বলে প্রচার করেছে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো...
১৪ জুলাই ২০২৫বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রেখে গেছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। এটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।
৩০ জুন ২০২৫ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।
ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে
ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।
ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই
ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত
ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।
সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল
এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।
কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়
বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।
কথিত জেসিকা র্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।
ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে
ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।
ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই
ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত
ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।
সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল
এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।
কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়
বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।
কথিত জেসিকা র্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

২০১৫ সালের মার্চ মাস। কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে টেড (টেকনোলজি, এন্টারটেইনমেন্ট, ডিজাইন) কনফারেন্সে হাজির হয়ে বিল গেটস এক চরম হুঁশিয়ারি দিলেন।
০৫ মে ২০২১
গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
১৭ জুলাই ২০২৫
রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তথা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগকে হিন্দু বলে প্রচার করেছে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো...
১৪ জুলাই ২০২৫বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রেখে গেছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। এটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।
৩০ জুন ২০২৫বাসস

গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
গতকাল বুধবার সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে নানা পোস্ট ছড়ানো হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল এ দিনের সহিংস ঘটনার মনগড়া বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করা।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি সংগঠিত প্রোপাগান্ডা অভিযানের অংশ হিসেবে প্রভাবশালী আ. লীগপন্থীরা পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন একাধিক ছবি শেয়ার করেছেন, যা এদিনের সহিংসতার দৃশ্য বলে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এসএম জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকনসহ কয়েকজন ব্যক্তি ছবি পোস্ট করে দাবি করেন, ‘ইউনূস গ্যাং’ এবং বিরোধীদলীয় কর্মীরা সাধারণ মানুষকে হিংসাত্মকভাবে আক্রমণ করছে।
একটি ছবিতে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন এক আহত কিশোরকে বহন করছে, পেছনে আগুন জ্বলছে এবং উত্তেজিত জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। ছবিটি গোপালগঞ্জে ঘটে যাওয়া সহিংসতার নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়। অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে-এই ছবিটি ২০২৪ সালের ১০ আগস্টের একটি ভিন্ন ঘটনার।
আরেকটি বহুল প্রচারিত পোস্টে দেখা যায়, জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুড়ছেন।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব পোস্টে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। পোস্টে তাঁরা উল্লেখ করেন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন এবং এনসিপি নেতা-কর্মীদের উসকানিতে এই সহিংসতা শুরু হয়। এতে বলা হয়, ‘বাস্তবতা হলো, ছবিটি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপি সমাবেশের সময়ের, যেখানে ডিবি কর্মকর্তা কনককে জনতার দিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়।’
জাকির হোসেন আরেকটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তিনিও দাবি করেন, এটি গোপালগঞ্জের আজকের সংঘর্ষের ফলাফল। তবে প্রেস উইং বলেছে, ‘তবে এই ছবিটিও ভিন্ন ঘটনার। ছবিটি ২০২৩ সালের ২০ মার্চ এক সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনার সময় তোলা হয়েছিল।’
একই ভুয়া প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি শিশুর ছবি ছড়ানো হয়—যেখানে তাকে লাঠি হাতে দেখা যায়। দাবি করা হয়, ছবিটি ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে তোলা এবং ওই শিশু নাকি সহিংসতায় অংশ নেয়। ছবিটি এই মিথ্যা বার্তা ছড়াতে ব্যবহার করা হয় যে, রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের পর্যন্ত জড়ানো হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ছবির একটি ডিজিটালি সম্পাদিত (সম্ভবত এআই-নির্মিত) সংস্করণ শেয়ার করেন নিঝুম মজুমদার, যিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজন অনলাইন প্রোপাগান্ডিস্ট হিসেবে পরিচিত বলে প্রেস উইং দাবি করেছে।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে এই বিষয়ে বলা হয়, ‘প্রকৃতপক্ষে, শিশুর এই ছবিটি গোপালগঞ্জে তোলা হয়নি, বরং গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় ধারণ করা একটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। মূল ভিডিওটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিল।’
এসব বিভ্রান্তিকর ছবির পাশাপাশি, আওয়ামী লীগপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো ভিত্তিহীনভাবে দাবি করে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নাকি বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এসব মিথ্যা প্রচারণা জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়। প্রেস উইংয়ের মতে এসব ভুয়া প্রচারণা ও যাচাইকৃত সূত্রভিত্তিক তথ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।
আজকের সহিংসতা শুরু হয় যখন গোপালগঞ্জ শহরে নির্ধারিত সমাবেশ শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের বহর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা আক্রমণ করে। এই আক্রমণ দ্রুত বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। পুলিশের গাড়ির পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি গাড়িও আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, ১৬ জুলাই রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কঠোর কারফিউ জারি করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয় ‘মাঠের বাস্তব ঘটনার বিপরীতে, আওয়ামী লীগপন্থী সামাজিক মাধ্যম চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর, প্রাসঙ্গিকতা-বর্জিত ও মনগড়া ছবি ছড়িয়ে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে।’

গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
গতকাল বুধবার সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে নানা পোস্ট ছড়ানো হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল এ দিনের সহিংস ঘটনার মনগড়া বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করা।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি সংগঠিত প্রোপাগান্ডা অভিযানের অংশ হিসেবে প্রভাবশালী আ. লীগপন্থীরা পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন একাধিক ছবি শেয়ার করেছেন, যা এদিনের সহিংসতার দৃশ্য বলে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এসএম জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকনসহ কয়েকজন ব্যক্তি ছবি পোস্ট করে দাবি করেন, ‘ইউনূস গ্যাং’ এবং বিরোধীদলীয় কর্মীরা সাধারণ মানুষকে হিংসাত্মকভাবে আক্রমণ করছে।
একটি ছবিতে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন এক আহত কিশোরকে বহন করছে, পেছনে আগুন জ্বলছে এবং উত্তেজিত জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। ছবিটি গোপালগঞ্জে ঘটে যাওয়া সহিংসতার নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়। অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে-এই ছবিটি ২০২৪ সালের ১০ আগস্টের একটি ভিন্ন ঘটনার।
আরেকটি বহুল প্রচারিত পোস্টে দেখা যায়, জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুড়ছেন।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব পোস্টে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। পোস্টে তাঁরা উল্লেখ করেন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন এবং এনসিপি নেতা-কর্মীদের উসকানিতে এই সহিংসতা শুরু হয়। এতে বলা হয়, ‘বাস্তবতা হলো, ছবিটি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপি সমাবেশের সময়ের, যেখানে ডিবি কর্মকর্তা কনককে জনতার দিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়।’
জাকির হোসেন আরেকটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তিনিও দাবি করেন, এটি গোপালগঞ্জের আজকের সংঘর্ষের ফলাফল। তবে প্রেস উইং বলেছে, ‘তবে এই ছবিটিও ভিন্ন ঘটনার। ছবিটি ২০২৩ সালের ২০ মার্চ এক সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনার সময় তোলা হয়েছিল।’
একই ভুয়া প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি শিশুর ছবি ছড়ানো হয়—যেখানে তাকে লাঠি হাতে দেখা যায়। দাবি করা হয়, ছবিটি ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে তোলা এবং ওই শিশু নাকি সহিংসতায় অংশ নেয়। ছবিটি এই মিথ্যা বার্তা ছড়াতে ব্যবহার করা হয় যে, রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের পর্যন্ত জড়ানো হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ছবির একটি ডিজিটালি সম্পাদিত (সম্ভবত এআই-নির্মিত) সংস্করণ শেয়ার করেন নিঝুম মজুমদার, যিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজন অনলাইন প্রোপাগান্ডিস্ট হিসেবে পরিচিত বলে প্রেস উইং দাবি করেছে।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে এই বিষয়ে বলা হয়, ‘প্রকৃতপক্ষে, শিশুর এই ছবিটি গোপালগঞ্জে তোলা হয়নি, বরং গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় ধারণ করা একটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। মূল ভিডিওটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিল।’
এসব বিভ্রান্তিকর ছবির পাশাপাশি, আওয়ামী লীগপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো ভিত্তিহীনভাবে দাবি করে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নাকি বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এসব মিথ্যা প্রচারণা জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়। প্রেস উইংয়ের মতে এসব ভুয়া প্রচারণা ও যাচাইকৃত সূত্রভিত্তিক তথ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।
আজকের সহিংসতা শুরু হয় যখন গোপালগঞ্জ শহরে নির্ধারিত সমাবেশ শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের বহর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা আক্রমণ করে। এই আক্রমণ দ্রুত বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। পুলিশের গাড়ির পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি গাড়িও আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, ১৬ জুলাই রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কঠোর কারফিউ জারি করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয় ‘মাঠের বাস্তব ঘটনার বিপরীতে, আওয়ামী লীগপন্থী সামাজিক মাধ্যম চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর, প্রাসঙ্গিকতা-বর্জিত ও মনগড়া ছবি ছড়িয়ে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে।’

২০১৫ সালের মার্চ মাস। কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে টেড (টেকনোলজি, এন্টারটেইনমেন্ট, ডিজাইন) কনফারেন্সে হাজির হয়ে বিল গেটস এক চরম হুঁশিয়ারি দিলেন।
০৫ মে ২০২১
একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
১৩ আগস্ট ২০২৫
রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তথা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগকে হিন্দু বলে প্রচার করেছে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো...
১৪ জুলাই ২০২৫বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রেখে গেছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। এটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।
৩০ জুন ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তথা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগকে হিন্দু বলে প্রচার করেছে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেক ইউনিট সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল রোববার এ তথ্য জানানো হয়।
প্রেস উইং জানিয়েছে, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে এবং ইওনসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন বলে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সোহাগের বাবার নাম মো. আয়ুব আলী এবং মায়ের নাম আলেয়া বেগম। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী লাকি বেগম, বোন ফাতেমা এবং একমাত্র ছেলে সোহানকে রেখে গেছেন।
গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর নিথর দেহেও বোল্ডার ছুড়ে মারা হয়। নৃশংস এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার জানাজা শেষে সোহাগকে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ গ্রাম বন্দরগাছিয়ায় তাঁর মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।
ভারতের যেসব সংবাদমাধ্যম সোহাগকে হিন্দু বলে উল্লেখ করেছে, তারা তাদের প্রতিবেদনে তার ধর্ম বা পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেনি। বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম নিয়মিত ভিত্তিহীন ও ভুল তথ্য প্রচার করে আসছে।

রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তথা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগকে হিন্দু বলে প্রচার করেছে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেক ইউনিট সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল রোববার এ তথ্য জানানো হয়।
প্রেস উইং জানিয়েছে, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে এবং ইওনসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন বলে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সোহাগের বাবার নাম মো. আয়ুব আলী এবং মায়ের নাম আলেয়া বেগম। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী লাকি বেগম, বোন ফাতেমা এবং একমাত্র ছেলে সোহানকে রেখে গেছেন।
গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর নিথর দেহেও বোল্ডার ছুড়ে মারা হয়। নৃশংস এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার জানাজা শেষে সোহাগকে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ গ্রাম বন্দরগাছিয়ায় তাঁর মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।
ভারতের যেসব সংবাদমাধ্যম সোহাগকে হিন্দু বলে উল্লেখ করেছে, তারা তাদের প্রতিবেদনে তার ধর্ম বা পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেনি। বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম নিয়মিত ভিত্তিহীন ও ভুল তথ্য প্রচার করে আসছে।

২০১৫ সালের মার্চ মাস। কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে টেড (টেকনোলজি, এন্টারটেইনমেন্ট, ডিজাইন) কনফারেন্সে হাজির হয়ে বিল গেটস এক চরম হুঁশিয়ারি দিলেন।
০৫ মে ২০২১
একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
১৩ আগস্ট ২০২৫
গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
১৭ জুলাই ২০২৫বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রেখে গেছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। এটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।
৩০ জুন ২০২৫ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রেখে গেছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। এটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।
৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একজন তরুণী হাত বাঁধা অবস্থায় কংক্রিটের মেঝেতে পড়ে আছেন। পাশেই একজন মধ্যবয়সী তরুণীটির বাবা পরিচয়ে আর্তনাদ করছেন। তাঁকে আরেকজন যুবক সান্ত্বনা দিচ্ছেন। পুলিশের পোশাক পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তি তরুণীকে ঘিরে পর্যবেক্ষণ করছেন। ভিডিওর শেষাংশে পুলিশকে তরুণীর মরদেহ ব্যাগে ভরতে দেখা যায়।
‘Md Nishad Hossain’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আজ সোমবার (৩০ জুন) সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘আহারে নির্মমতা এবং একজন বাবার আর্তনাদ। বাংলাদেশ ২০২৪’র আগস্ট মাস থেকে সারা দেশে নারী ধর্ষণ করেই চলছে বিএনপি জামাতের মব সন্ত্রাসীরা। একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে রেখে গেছে। মেয়ের পিতার আহাজারী কে শুনবে দেশে এখন বিচার নাই। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী হায়ানারা যা যা করছে ২০২৪ ’র বাংলাদেশে বিএনপি জামাত তার চেয়ে বেশি করছে।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভিডিওটি ১৯ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ৫১৫টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৫৬টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১৮৫ বার।
এসব কমেন্টে অনেকে ভিডিওটি নাটক উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে সত্য মনে করেও কমেন্ট করেছে। Shilvi Akther নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছে, ‘আহারে জীবন! মানুষ কিভাবে এতো নির্মম হয়? একজন বাবার আর্তনাদ কি কারো মনকে মর্মাহত করে না?’ (বানান অপরিবর্তিত) Narayon Saha লিখেছে,’ এই দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট বাবার কান্দে সন্তানের লাশ হায়রে দুনিয়া।’ (বানান অপরিবর্তিত)
S M Salam Patwari, গর্জে ওঠো আরেকবার বাংলাদেশ এবং গাজীপুর জেলা যুবলীগ শাখা নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ‘Short Film BD’ নামে একটি লোগো লক্ষ করা যায়। এই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Short Film BD’ নামে একটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি গত ২০ জুনে প্রকাশিত। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মেঝেতে পড়ে থাকা তরুণী, পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তি, আহাজারি করা ব্যক্তি ও আশপাশের দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘মৌসুমীর সাথে কি হলো।’ ৪ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখে বোঝা যায়, এটি একটি নাটিকার দৃশ্য।
Short Film BD নামে ফেসবুক পেজটিতে একই তারিখে একই ভিডিও প্রকাশ করে ক্যাপশনে লিখেছে, ‘মেয়ের কি হইছে জানতে চায় অসহায় বাবা।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে বিভিন্ন ধরনের নাটিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে অভিনয় করা একাধিক ব্যক্তিকে অন্যান্য ভিডিওতেও (১, ২) দেখা গেছে।
এ ছাড়া এই পেজের ইন্ট্রোতে লেখা, ‘শর্টফিল্ম ও নাটক দেখুন এবং উপভোগ করুন। আমাদের সঙ্গেই থাকুন।’ (ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তরিত)

সুতরাং, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে একটি নাটক।
বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রেখে গেছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। এটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।
৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একজন তরুণী হাত বাঁধা অবস্থায় কংক্রিটের মেঝেতে পড়ে আছেন। পাশেই একজন মধ্যবয়সী তরুণীটির বাবা পরিচয়ে আর্তনাদ করছেন। তাঁকে আরেকজন যুবক সান্ত্বনা দিচ্ছেন। পুলিশের পোশাক পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তি তরুণীকে ঘিরে পর্যবেক্ষণ করছেন। ভিডিওর শেষাংশে পুলিশকে তরুণীর মরদেহ ব্যাগে ভরতে দেখা যায়।
‘Md Nishad Hossain’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আজ সোমবার (৩০ জুন) সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘আহারে নির্মমতা এবং একজন বাবার আর্তনাদ। বাংলাদেশ ২০২৪’র আগস্ট মাস থেকে সারা দেশে নারী ধর্ষণ করেই চলছে বিএনপি জামাতের মব সন্ত্রাসীরা। একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে রেখে গেছে। মেয়ের পিতার আহাজারী কে শুনবে দেশে এখন বিচার নাই। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী হায়ানারা যা যা করছে ২০২৪ ’র বাংলাদেশে বিএনপি জামাত তার চেয়ে বেশি করছে।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভিডিওটি ১৯ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ৫১৫টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৫৬টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১৮৫ বার।
এসব কমেন্টে অনেকে ভিডিওটি নাটক উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে সত্য মনে করেও কমেন্ট করেছে। Shilvi Akther নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছে, ‘আহারে জীবন! মানুষ কিভাবে এতো নির্মম হয়? একজন বাবার আর্তনাদ কি কারো মনকে মর্মাহত করে না?’ (বানান অপরিবর্তিত) Narayon Saha লিখেছে,’ এই দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট বাবার কান্দে সন্তানের লাশ হায়রে দুনিয়া।’ (বানান অপরিবর্তিত)
S M Salam Patwari, গর্জে ওঠো আরেকবার বাংলাদেশ এবং গাজীপুর জেলা যুবলীগ শাখা নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ‘Short Film BD’ নামে একটি লোগো লক্ষ করা যায়। এই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Short Film BD’ নামে একটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি গত ২০ জুনে প্রকাশিত। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মেঝেতে পড়ে থাকা তরুণী, পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তি, আহাজারি করা ব্যক্তি ও আশপাশের দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘মৌসুমীর সাথে কি হলো।’ ৪ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখে বোঝা যায়, এটি একটি নাটিকার দৃশ্য।
Short Film BD নামে ফেসবুক পেজটিতে একই তারিখে একই ভিডিও প্রকাশ করে ক্যাপশনে লিখেছে, ‘মেয়ের কি হইছে জানতে চায় অসহায় বাবা।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে বিভিন্ন ধরনের নাটিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে অভিনয় করা একাধিক ব্যক্তিকে অন্যান্য ভিডিওতেও (১, ২) দেখা গেছে।
এ ছাড়া এই পেজের ইন্ট্রোতে লেখা, ‘শর্টফিল্ম ও নাটক দেখুন এবং উপভোগ করুন। আমাদের সঙ্গেই থাকুন।’ (ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তরিত)

সুতরাং, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে একটি নাটক।

২০১৫ সালের মার্চ মাস। কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে টেড (টেকনোলজি, এন্টারটেইনমেন্ট, ডিজাইন) কনফারেন্সে হাজির হয়ে বিল গেটস এক চরম হুঁশিয়ারি দিলেন।
০৫ মে ২০২১
একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
১৩ আগস্ট ২০২৫
গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
১৭ জুলাই ২০২৫
রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তথা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগকে হিন্দু বলে প্রচার করেছে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো...
১৪ জুলাই ২০২৫