Ajker Patrika

এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় কি ফিলিস্তিনিদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৯: ১৮
Thumbnail image

১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণার জন্য ফিলিস্তিনিদের কাছে যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষমা চেয়েছে দাবি করে একটি চিঠির ছবি মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে ভাইরাল হয়েছে। 

মুহাম্মদ শোয়াইব শাহীন নামের ভ্যারিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৮ ডিসেম্বর ছবিটি টুইট করা হয়। ছবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোর সঙ্গে চিঠিটি প্রকাশের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৪ ডিসেম্বর। 

ওই চিঠি নিয়ে অনুসন্ধানে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়া নিউজে গত ১৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি মূলত একটি মঞ্চ নাটকের জন্য লেখা ক্ষমা চাওয়ার কল্পিত চিঠি। স্কটল্যান্ডে বসবাসরত ফারাহ সালেহ নামের এক ফিলিস্তিনি নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার চিঠিটি লিখেছেন। গত শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) নাটকটি প্রদর্শন করা হয়। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফ্যাক্টচেক বিভাগ চিঠিটির সত্যতা সম্পর্কে অনুসন্ধানে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করে। বিশ্ববিদ্যালয়টির মুখপাত্র ইমেইলে রয়টার্সকে জানায়, ‘চিঠিটি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া কোনো অফিসিয়াল বক্তব্য নয়। এটি মূলত মঞ্চনাটকের উদ্দেশ্যে লিখিত একটি কাল্পনিক চিঠি।’

এসব সূত্রে অনুসন্ধানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ফারাহ সালেহের পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। এতে তিনি লেখেন, ‘এই ক্ষমা চাওয়ার চিঠি কাল্পনিক। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ চলাকালে বেলফোর রিপারেশনস (২০২৩-২০৪৩) নামে আমার একটি পারফরম্যান্স লেকচারের অংশ এ চিঠি।’

কি লেখা আছে চিঠিতে 
বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দ্য ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা আনুষ্ঠানিকভাবে এবং প্রকাশ্যে ঔপনিবেশিকতার এজেন্ডাকে সমর্থন করে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণার জন্য ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে। ১৯১৭ সালের ঘোষণাটি লিখেছিলেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘসময় উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা (১৮৯১-১৯৩০) আর্থার জেমস বেলফোর। যেখানে আদিবাসী ফিলিস্তিনি জনগণের স্ব-নিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে তিনি ইহুদি জনগণের জন্য ফিলিস্তিনকে একটি আবাসভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেন। 

চিঠিটি কাল্পনিক জানিয়ে স্কটল্যান্ডে বসবাসরত ফারাহ সালেহের পোস্টএই ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য, পাঁচটি কাজের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করা ও  তাদের আবাসভূমি নিশ্চিত করা। 

প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়টি ফিলিস্তিনে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে বৃহত্তর দমনমূলক এবং বর্ণবাদী বৈশ্বিক ব্যবস্থা তৈরিতে তার ভূমিকা জনসম্মুখে স্বীকার করবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি তার ঔপনিবেশিক আচরণের উপর শিক্ষার্থীদের কোর্স করার সুযোগ দিবে। 

দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়টি ইসরাইল বা ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ইন্টারন্যাশনাল হলোকাস্ট রিমাম্বারেন্স অ্যালায়েন্সের (আইএইচআরএ) বিতর্কিত ইহুদি বিদ্বেষের সংজ্ঞা প্রত্যাহার করবে। 

তৃতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়টি ফিলিস্তিনে অবৈধ সামরিক দখল এবং উপনিবেশ থেকে যেসব কোম্পানি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে লাভ করে, সেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক নতুনভাবে পর্যালোচনা করে, সেগুলো প্রকাশ্যে স্বীকার করবে এবং তাদের বর্জন করবে।

চতুর্থত, বিশ্ববিদ্যালয়টি ফিলিস্তিনি ছাত্রদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করবে, যাতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এসে পড়তে পারে এবং একইসঙ্গে ফিলিস্তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে জ্ঞান বিনিময় প্রকল্পে যুক্ত হবে।

পঞ্চমত, বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি এক রাষ্ট্রীয় সমাধান অনুমোদন দিবে। এই অনুমোদনের মাধ্যমে ফিলিস্তিন বা ইসরায়েলে সকল নাগরিকের জন্য রাজনৈতিক ভিত্তিতে এক ব্যক্তির এক ভোট, ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের ক্ষতিপূরণ ও নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। 

বেলফোর ঘোষণা কি 
১৯১৭ সালে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন জেমস আর্থার বেলফোর। ওই বছরের ২ নভেম্বর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য কথিত আবাসভূমি বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে ব্রিটেনের অবস্থানের কথা ঘোষণা করেছিলেন বেলফোর। সেই ঘোষণাই পরে ‘বেলফোর ঘোষণা’ নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিত হয়। এই ঘোষণাকেই ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের সূচনা হিসেবে গণ্য করা হয়।

সিদ্ধান্ত 
এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণার জন্য ফিলিস্তিনিদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে দাবি করে প্রচারিত চিঠিটি একজন ফিলিস্তিনি নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফারের লেখা ও কাল্পনিক। স্কটল্যান্ডে বসবাসরত ফারাহ সালেহ নামের একজন ফিলিস্তিনি তার পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপের অংশ হিসেবে এ চিঠি লিখেছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত