Ajker Patrika

বাংলাদেশে আজানের সময় পূজা করলে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তারের আদেশ—ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে গুজব

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০: ১৪
Thumbnail image

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সহস্রাধিক ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হামলার শিকার হয়েছে। 

সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সারা দেশে এসব ঘটনা ঘটেছে। এসব নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে, বিশেষ করে এক্সে (সাবেক টুইটার) বহু গুজব ছড়িয়েছে। ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে এবং ভারতীয় সংবাদমাধ্যম থেকেও এসব গুজব ছড়ানো হয়েছে। আসন্ন দুর্গাপূজা ঘিরে এক্সে আবারও এমন গুজব ছড়ানোর প্রবণতা দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। সম্প্রতি এক্সে দুর্গাপূজা ঘিরে দাবি করা হচ্ছে, দুর্গাপূজা চলাকালে নামাজের সময় কীর্তন, পূজা বন্ধ না রাখলে গ্রেপ্তার করা হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজতকের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া একটি টুইটে সংবাদ উপস্থাপক দাবি করেন, আজান ও নামাজের সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা পালন ও লাউড স্পিকারে ভজন না শোনার ব্যাপারে আদেশ দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো হিন্দু এই আদেশ অমান্য করেন, তাহলে পুলিশ তাঁকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করবে। প্রায় একই দাবি করেছে আরেকটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনেও। সংবাদমাধ্যমটির এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন তাদের এক্স ও ইউটিউবে পোস্ট করা হয়েছে।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে দেখা যায়, ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনগুলোতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর একটি বক্তব্যকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশের বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম সময় টিভির ফেসবুক পেজে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পুরো বক্তব্যটি পাওয়া যায়। 

গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) পেজে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের বক্তব্য লাইভ করা হয়। লাইভটি ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দুর্গাপূজা উদ্‌যাপন উপলক্ষে পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের। সভায় ধর্ম উপদেষ্টা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ও সাধারণ সম্পাদক তাপস পাল।

লাইভের শুরুতেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। বক্তব্যের ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আজান ও নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্র ও মাইকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখা। নিয়ন্ত্রণ রাখা মানে মাইক সে সময় বন্ধ রাখতে হবে। আজানের কমপক্ষে ৫ মিনিট আগে থেকে নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এ সময় তাঁর পাশে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বসেছিলেন। 

2স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাসুদেব ধরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এ সময় মাইক বন্ধ রাখার ব্যাপারে তাঁরাও সম্মত হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পুরো বক্তব্যে আজান ও নামাজের সময় পূজামণ্ডপের মাইক বন্ধ না রাখলে তাঁকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে কোনো আদেশ ছিল না। এ ছাড়া ধর্ম উপদেষ্টার বক্তব্যেও এমন কোনো আদেশ দেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, পূজায় আজান ও নামাজের সময় মণ্ডপের মাইক বন্ধ রাখার নির্দেশনা এবারই প্রথম নয়, এর আগেও এমন নির্দেশনা দেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। ২০২৩ সালে হবিগঞ্জে দুর্গাপূজার সময় আজান ও নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্র এবং মাইকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখার আহ্বান জানিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত