Ajker Patrika

ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আসলে কত

মিঠাপুকুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ জুন ২০২২, ১৩: ২৫
ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আসলে কত

করোনা মহামারির ধাক্কায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রছাত্রীদের ঝরে পড়া বেড়েছে। কিন্তু মিঠাপুকুর উপজেলায় এই সংখ্যা আসলে কত তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ঝরে যাওয়া শিক্ষার্থীর যে সংখ্যা বলছে তার ১০ গুণ বেশি তথ্য দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ইকো-সোশ্যাল ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অধীনে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উপজেলার আট ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইএসডিও। ইউনিয়নগুলো হলো রানীপুকুর, পায়রাবন্দ, ভাংনী, কাফ্রিখাল, লতিবপুর, চেংমারী, দুর্গাপুর ও বড়হযরতপুর।

২০২১ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত অবহিতকরণ সভায় ইএসডিওর উপস্থাপিত তথ্যমতে, প্রকল্পভুক্ত আট ইউনিয়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ৩ হাজারের বেশি।

ইএসডিও সূত্র জানায়, আট ইউনিয়নের ৭০টি শিখনকেন্দ্রে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে কমপক্ষে ৩০ শিক্ষার্থী রয়েছে। সেই হিসাব মতে ৭০টি কেন্দ্রে শিক্ষার্থী রয়েছে অন্তত ২ হাজার ১০০ জন।

অথচ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের মতে, মিঠাপুকুরের ১৭ ইউনিয়নে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫০ থেকে ৩০০ জনের বেশি হবে না।

প্রকল্পভুক্ত এলাকার একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান ইএসডিওর জরিপ প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। লতিবপুর ইউনিয়নের এআর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইএসডিও প্রতিনিধি ফরিদ হোসেন বিদ্যালয়ের নিয়মিত এমনকি উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া দেখিয়ে শিখনকেন্দ্র পরিচালনা করে সরকারি অর্থের অপচয় করছেন।’

রুহুল আমিন জানান, তাঁর বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ঝরে পড়া দেখিয়ে শিখনকেন্দ্রে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে।

একই অভিযোগ করেন ভাংনী ইউনিয়নের ভাংনী দক্ষিণ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন। তিনি জানান, ফরিদ হোসেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া দেখিয়ে এবং পোশাক, খাবারসহ অনেক সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে শিখনকেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন।

রুহুল আমিন বলেন, তার বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে নিয়মিত এবং উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থী খুশি, আঁখি, সিয়াম ও বন্ধনকে শিখনকেন্দ্রের শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে। এ রকম আরও একাধিক নিয়মিত শিক্ষার্থীকে তাঁদের শিক্ষার্থী দেখিয়ে কেন্দ্র পরিচালনা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া শিক্ষকেরা জানান, শিখনকেন্দ্রের জন্য শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও অভিযোগ উঠেছিল। গত মার্চ মাসে শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু অধিকাংশ আবেদনকারীকে পরীক্ষার দিনক্ষণ জানানো হয়নি। উৎকোচের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইএসডিওর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফরিদ হোসেন বলেন, ঝরে পড়া শিক্ষার্থী নিয়ে কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে কিন্তু শিক্ষক নিয়োগে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। তবে তিনি শিক্ষক পদে ৪৬১টি আবেদনপত্রের মধ্যে ২০৮টি বাতিল করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ইএসডিওর শিক্ষার্থী ঝরে পড়া সংক্রান্ত জরিপ সঠিক নয়। করোনা পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। ওই সময় জরিপ করা হয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও অভিযোগ করছেন। শিক্ষক নিয়োগ ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

থানায় থানায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের তালিকা হচ্ছে

চার মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সেবা ডিজিটাইজ করার নির্দেশ দিল সরকার

ককটেল ফুটতেই সেলুনে লুকায় পুলিশ, রণক্ষেত্র হয় এলাকা

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে আবারও যা বললেন ভারতের সেনাপ্রধান

মসজিদে লুকিয়েও রক্ষা পেলেন না স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও তাঁর ভাই, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল প্রতিপক্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত