সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
একটা সংগৃহীত লেখা ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ‘ইডেন একটাই, তবে মানুষভেদে ইডেন ভিন্ন’। এরপর যা লেখা আছে, এর মর্মকথা হলো, আপনি ইডেনকে যে নজরে দেখবেন, ইডেনও ঠিক সেভাবেই আপনার কাছে ধরা দেবে।
পরিচিত এক ছোট বোনের ফেসবুক ওয়ালে লেখাটা প্রথম দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কোথায়? ঠিক আছ?’ জানাল, ‘আপু, পরীক্ষা চলছে, ক্যাম্পাসেই আছি। ভালো আছি।’
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে পরক্ষণেই মনে হলো, আমার নিজের বোনটার তো কোনো অসুবিধা হলো না এখন পর্যন্ত। আমাদের আগের প্রজন্মের যাঁরা ইডেন কলেজে পড়ালেখা করেছেন, তাঁদেরও কোনো সমস্যা হয়নি। তাহলে যারা নানা অভিযোগ করে, তারা কারা?
প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, তাই ইডেন মহিলা কলেজের একদম সাধারণ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললাম। সাধারণ বলতে বোঝাচ্ছি, যারা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। এর আগে পটভূমিটা মনে করে নেওয়া যাক। সম্প্রতি ইডেন কলেজে হলের আসন-বাণিজ্য নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের ফলে কেউ কেউ দাবি করেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচারের কথা। অত্যাচারটা কী? চাঁদাবাজি এবং ‘সুন্দরী’ মেয়েদের কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব দেওয়া। এর ফলে ‘সুন্দরী’ মেয়েরা হলে সিট পাবে।
যাই হোক, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানলাম ভিন্ন কথা। হলের আসন পেতে শিক্ষার্থীদের দুই ধরনের চেষ্টা করতে হয়। একটি নিয়ম মেনে, অপরটি রাজনৈতিক উপায়ে। যারা নিয়ম মেনে আসন পায়, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী। আর যারা রাজনৈতিক উপায়ে আসনের ব্যবস্থা করে নিজেদের জন্য, তারা শুরু থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ বাধলে তাদের মধ্যেই বাধে। এসব নিয়ে বাকি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা নিজেদের মতো করে হলে থাকে। তাদের কেউ বিরক্ত করে না। তাদের কেউ কোনো কাজে বাধা দেয় না। তাদের কেউ র্যাগ দেয় না। কেউ রাজনীতি করে স্বেচ্ছায়। অনেকে রাজনীতি করে না, সেটাও তাদের নিজেদের ইচ্ছাতেই। তারা প্রকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাদ পায় কলেজ ক্যাম্পাসে। তারা পড়াশোনা করে, পরীক্ষা দেয়, খায়, ঘুমায়, আনন্দ করে, অবসর যাপন করে, ছুটিতে বাড়ি যায়, ছুটি শেষে হলে ফিরে আসে—একেবারেই আপনার-আমার মতো সাধারণ জীবনযাপন করে।
একজন বলছিলেন, তাদের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০০ শিক্ষার্থী হয়তো রাজনীতি করে। সংকট, সংঘর্ষ ওই ২০০ মেয়ের মধ্যে হয়। সে জন্য কেন ইডেনের সব মেয়েকে এক পাল্লায় মাপা হবে? ফেসবুকে ঢুকে নিশ্চয়ই অনেকের মন্তব্য পড়েছেন এ রকম—ইডেনের মেয়েরা ভয়ানক, তাদের বিয়ে করা যাবে না, তারা কুরুচিপূর্ণ কাজে লিপ্ত ইত্যাদি ইত্যাদি। কেউ কেউ আত্মীয়দের কাছ থেকে ফোন পেয়েছে। আত্মীয়রা দুশ্চিন্তায় আছেন, ইডেনে পড়ুয়া তাদের মেয়েটি বিগড়ে গেল কি না, এই নিয়ে। এর পেছনের দুশ্চিন্তা আরও বড়—সেই মেয়ের বিয়ে কীভাবে হবে! এসব মন্তব্যের ভিড়ে অনেকে হতাশ হয়ে পড়ছেন, অনেকে প্রতিবাদী স্বরে জবাব দিচ্ছেন।
যাঁরা এই মেয়েদের সম্পর্কে কুমন্তব্য করছেন, তাঁদের মানসিকতা নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। তাঁদের কোনো বোন বা আত্মীয় হয়তো ইডেনে পড়ে না। না পড়ে থাকলে তাদের মাথাব্যথা তো হওয়ার কথা নয়। তবু যেহেতু হচ্ছে, তাঁরা প্যারাসিটামল গিলে ঘুমিয়ে থাকলেই হয়!
এখন ইডেন অনেকটাই শান্ত। নিয়মিত ক্লাস চলছে। যাদের পরীক্ষা চলছে তারা হলেই আছে। হল বন্ধ হয়ে গেলে খুব মুশকিল হয়ে যেত। এই শহরে যাদের কেউ নেই, তারাই তো হলে থাকে। পরীক্ষা চলাকালে তারা কোথাও যেতে পারবে না।
একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি থাকলে সেই রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ক্যাম্পাস ও পড়াশোনার মানোন্নয়ন। সেখানে জাতীয় রাজনীতির থাবা এসে পড়লে সবকিছু পাল্টে যায়। ক্ষমতার অসভ্য প্রকাশ তো রাজনীতির অপধারা। সে ধারা যেন পুষ্ট না হয়, সেদিকেই রাখতে হবে চোখ। কয়েকজন তথাকথিত নেতৃস্থানীয় ছাত্রীর জন্য গোটা ইডেন কলেজের বদনাম হবে—এটা মেনে নেওয়া যায় না।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
একটা সংগৃহীত লেখা ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ‘ইডেন একটাই, তবে মানুষভেদে ইডেন ভিন্ন’। এরপর যা লেখা আছে, এর মর্মকথা হলো, আপনি ইডেনকে যে নজরে দেখবেন, ইডেনও ঠিক সেভাবেই আপনার কাছে ধরা দেবে।
পরিচিত এক ছোট বোনের ফেসবুক ওয়ালে লেখাটা প্রথম দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কোথায়? ঠিক আছ?’ জানাল, ‘আপু, পরীক্ষা চলছে, ক্যাম্পাসেই আছি। ভালো আছি।’
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে পরক্ষণেই মনে হলো, আমার নিজের বোনটার তো কোনো অসুবিধা হলো না এখন পর্যন্ত। আমাদের আগের প্রজন্মের যাঁরা ইডেন কলেজে পড়ালেখা করেছেন, তাঁদেরও কোনো সমস্যা হয়নি। তাহলে যারা নানা অভিযোগ করে, তারা কারা?
প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, তাই ইডেন মহিলা কলেজের একদম সাধারণ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললাম। সাধারণ বলতে বোঝাচ্ছি, যারা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। এর আগে পটভূমিটা মনে করে নেওয়া যাক। সম্প্রতি ইডেন কলেজে হলের আসন-বাণিজ্য নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের ফলে কেউ কেউ দাবি করেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচারের কথা। অত্যাচারটা কী? চাঁদাবাজি এবং ‘সুন্দরী’ মেয়েদের কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব দেওয়া। এর ফলে ‘সুন্দরী’ মেয়েরা হলে সিট পাবে।
যাই হোক, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানলাম ভিন্ন কথা। হলের আসন পেতে শিক্ষার্থীদের দুই ধরনের চেষ্টা করতে হয়। একটি নিয়ম মেনে, অপরটি রাজনৈতিক উপায়ে। যারা নিয়ম মেনে আসন পায়, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী। আর যারা রাজনৈতিক উপায়ে আসনের ব্যবস্থা করে নিজেদের জন্য, তারা শুরু থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ বাধলে তাদের মধ্যেই বাধে। এসব নিয়ে বাকি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা নিজেদের মতো করে হলে থাকে। তাদের কেউ বিরক্ত করে না। তাদের কেউ কোনো কাজে বাধা দেয় না। তাদের কেউ র্যাগ দেয় না। কেউ রাজনীতি করে স্বেচ্ছায়। অনেকে রাজনীতি করে না, সেটাও তাদের নিজেদের ইচ্ছাতেই। তারা প্রকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাদ পায় কলেজ ক্যাম্পাসে। তারা পড়াশোনা করে, পরীক্ষা দেয়, খায়, ঘুমায়, আনন্দ করে, অবসর যাপন করে, ছুটিতে বাড়ি যায়, ছুটি শেষে হলে ফিরে আসে—একেবারেই আপনার-আমার মতো সাধারণ জীবনযাপন করে।
একজন বলছিলেন, তাদের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০০ শিক্ষার্থী হয়তো রাজনীতি করে। সংকট, সংঘর্ষ ওই ২০০ মেয়ের মধ্যে হয়। সে জন্য কেন ইডেনের সব মেয়েকে এক পাল্লায় মাপা হবে? ফেসবুকে ঢুকে নিশ্চয়ই অনেকের মন্তব্য পড়েছেন এ রকম—ইডেনের মেয়েরা ভয়ানক, তাদের বিয়ে করা যাবে না, তারা কুরুচিপূর্ণ কাজে লিপ্ত ইত্যাদি ইত্যাদি। কেউ কেউ আত্মীয়দের কাছ থেকে ফোন পেয়েছে। আত্মীয়রা দুশ্চিন্তায় আছেন, ইডেনে পড়ুয়া তাদের মেয়েটি বিগড়ে গেল কি না, এই নিয়ে। এর পেছনের দুশ্চিন্তা আরও বড়—সেই মেয়ের বিয়ে কীভাবে হবে! এসব মন্তব্যের ভিড়ে অনেকে হতাশ হয়ে পড়ছেন, অনেকে প্রতিবাদী স্বরে জবাব দিচ্ছেন।
যাঁরা এই মেয়েদের সম্পর্কে কুমন্তব্য করছেন, তাঁদের মানসিকতা নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। তাঁদের কোনো বোন বা আত্মীয় হয়তো ইডেনে পড়ে না। না পড়ে থাকলে তাদের মাথাব্যথা তো হওয়ার কথা নয়। তবু যেহেতু হচ্ছে, তাঁরা প্যারাসিটামল গিলে ঘুমিয়ে থাকলেই হয়!
এখন ইডেন অনেকটাই শান্ত। নিয়মিত ক্লাস চলছে। যাদের পরীক্ষা চলছে তারা হলেই আছে। হল বন্ধ হয়ে গেলে খুব মুশকিল হয়ে যেত। এই শহরে যাদের কেউ নেই, তারাই তো হলে থাকে। পরীক্ষা চলাকালে তারা কোথাও যেতে পারবে না।
একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি থাকলে সেই রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ক্যাম্পাস ও পড়াশোনার মানোন্নয়ন। সেখানে জাতীয় রাজনীতির থাবা এসে পড়লে সবকিছু পাল্টে যায়। ক্ষমতার অসভ্য প্রকাশ তো রাজনীতির অপধারা। সে ধারা যেন পুষ্ট না হয়, সেদিকেই রাখতে হবে চোখ। কয়েকজন তথাকথিত নেতৃস্থানীয় ছাত্রীর জন্য গোটা ইডেন কলেজের বদনাম হবে—এটা মেনে নেওয়া যায় না।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪