Ajker Patrika

প্রিন্টিং মিসটেক!

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদে নামের ভুলের সংবাদ আমরা প্রচুর দেখেছি। লৈঙ্গিক পরিচয়ে নারীর পরিবর্তে পুরুষ ছাপা হওয়ার নজিরও পাওয়া গেছে। এমনকি নাগরিকত্বের ভুল দেখেও আমরা অবাক হয়েছি—এ দেশে জন্মে কেউ তুরস্ক, নয়তো উগান্ডার নাগরিক! তেমন ভুল যে থানা-পুলিশের হয় না তা কিন্তু নয়। ভুল নাম-ঠিকানা নথিভুক্ত হওয়ায় অনেক নিরপরাধ মানুষকে হেনস্তা হতে হয়। তবে ইচ্ছাকৃত ‘ভুল’ কিন্তু কখনোই কাম্য নয়।

কয়েক দিন ধরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ধরপাকড় অভিযান চলছে। ঢাকার সাভার থানায় এ পর্যন্ত হয়েছে ১৫টি মামলা। থানার তথ্যমতে, ১৮ জুলাই রাতে আন্দোলনকারীরা সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চারটি বাস ও একটি ট্রাক পুড়িয়ে দেয়। জাহাঙ্গীর পরিবহন নামের একটি পুড়ে যাওয়া বাসের সুপারভাইজার গত বুধবার সাভার থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ৫৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা অনেককে আসামি করা হয়েছে।

সোমবার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর থেকে জানা যায়, এই মামলায় যাদের নাম উল্লেখ আছে, তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন দুই বছর আগেই। তাহলে কীভাবে তিনি পুলিশের খাতায় ‘আসামি’ হলেন? তাও মামলায় তাঁর নাম-ঠিকানা ভুল উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এটা ‘প্রিন্টিং মিসটেক!’

ধরে নেওয়া যাক, নাম ও ঠিকানা ভুল। নথিভুক্ত নাম আজগর আলী। মামলায় যে বাড়ির বাসিন্দা তাঁকে দেখানো হয়েছে, সেই বাড়িতে এই নামে কেউ থাকেন না বা আদৌ কেউ থাকতেন না বলেই বাড়ির মালিকের দাবি। তাহলে কে এই আজগর আলী?

নামটা আসলে হবে আজগর হোসেন। পুলিশের একটি সূত্রেই জানা গেছে, আজগর হোসেনের নামে মামলা করা হয়েছে, যিনি আশুলিয়া থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান। আগের রাজনৈতিক মামলার নথিপত্র দেখে নতুন মামলায় তাঁর নাম দেওয়া হয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিনি মৃত। সাভার ও আশুলিয়া থানায় জমা আছে মৃত্যুসনদও, যেন আর কোনো মামলায় তাঁর নাম না আসে। এরপরও এমন ‘ভুল’ করল সাভার থানার পুলিশ!

মামলার বাদী বলছেন, যারা বাস পুড়িয়েছে, তাদের তিনি চেনেন না। তাঁর মালিক থানায় যেতে বললে পুলিশের কথায় তিনি সই করেছেন মামলার বাদী হিসেবে।

তাহলে পুলিশ কি যাকে ইচ্ছা তাকেই যেকোনো মামলার ‘আসামি’ বানিয়ে দিতে পারে? নাকি এটাও তাদের ‘প্রিন্টিং মিসটেক’? ছাপার ভুল মেনে নেওয়া যায়, নীতি-আদর্শের বেলায় কি কোনো ভুলের উপস্থিতি থাকতে পারে? তবে ভুল হলে তা শোধরানো যায় এবং এই মামলার ভুলগুলো শুধরে পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন পেশ করবে বলে যে আশ্বাস দিয়েছে, তা আমরা বিশ্বাস করতে চাই।

এ কথাও ফেলনা নয়—এসব ‘ভুল’ বারবার হতে থাকলে তা শোধরাতে গিয়ে যে সময় ব্যয় হবে, তাতে প্রকৃত অপরাধীরা চলে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত