ড. আজহারুল ইসলাম
‘ভাল্লাগে না’ শব্দগুচ্ছটি ব্যবহার করেননি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। ভালো না লাগার এই বোধ দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে তা মানসিক স্বাস্থ্যের একটি বিশেষ অবস্থা নির্দেশ করে, যাকে বলা হয় বিষণ্নতা। তবে শুধু ভালো না লাগা নয়, বিষণ্নতায় ভুগলে আপনি কোনো কিছুতে আনন্দ বা আগ্রহ পাবেন না, খুব কম বা খুব বেশি ঘুম হবে, ক্লান্তি এবং অবসাদ বোধ করবেন, নিজেকে মূল্যহীন বা অপদার্থ মনে করবেন, গুছিয়ে চিন্তা করতে পারবেন না, আত্মহত্যা বা নিজের ক্ষতি করার চিন্তাও আপনার মনে আসতে পারে। এসবের সবগুলো বা কিছু কিছু উপসর্গ যদি অন্তত দুই সপ্তাহ বা তার বেশি দিন ধরে চলে এবং তার পেছনে শারীরিক কোনো কারণ না থাকে, তাহলে সেটা বিষণ্নতা হিসেবে ধরা হয়। নানা কারণে একজন মানুষ বিষণ্নতায় ভোগেন। এর মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব বা সংকট বিষণ্নতার ক্ষেত্র তৈরি ও জিইয়ে রাখতে অন্যতম ভূমিকা পালন করে।
পারস্পরিক দ্বন্দ্ব
সীমিত বাজেটে আপনি পুষ্টিকর খাবার কিনবেন নাকি ইন্টারনেটের বিল দেবেন, সেটা নিয়ে চিন্তিত হলে তা হবে আপনার নিজের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব। কিন্তু রাতে মশারি কে টাঙাবে, সেটা নিয়ে যখন আপনার সঙ্গীর সঙ্গে বাদানুবাদ হয়, তাকে বলা যায় ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির বা পারস্পরিক দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব খুব সাধারণ কিছু থেকে সাংঘাতিক জটিল আকার ধারণ করতে পারে। সংসারে কে উপার্জন করবে, কে বাচ্চা দেখাশোনা করবে, কোথায় অর্থলগ্নি করতে হবে, বাবা-মার চিকিৎসার ভার কে নেবে অথবা সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সচরাচর দ্বন্দ্ব দেখা যায়। আবার অফিসে কে বেশি কাজ করছে, কে ফাঁকি দিচ্ছে, কে রূঢ় ভাষায় কথা বলছে—এসব নিয়ে চলে টানাপোড়েন।
পারস্পরিক দ্বন্দ্বের মূলে
চারপাশের মানুষগুলোকে আপনি মোটাদাগে দুই ভাগে ভাগ করতে পারেন। একদল আপনার চিন্তা, দর্শন, অনুভূতির সঙ্গে সমান্তরালে চলে। আরেক দল চলে না। ক্ষেত্রবিশেষে, তারা আপনার থেকে উল্টো পথে চলে। তাঁদের এই উল্টো পথে চলাকে সেসব মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা হিসেবে দেখতে পারেন যদি সেটা আপনার স্বাধীনতাকে খর্ব না করে। ঘটনা সেখানেই শেষ। অথবা তাদের পথ সোজা অর্থাৎ আপনার মতো করার চেষ্টা করতে পারেন। সেটা করতে গিয়ে দেখা দিতে পারে দ্বন্দ্ব। বিপরীতমুখী এই মানুষগুলো আপনার যত কাছের তাদের উল্টো পথে চলা আপনার জন্য ততই পীড়াদায়ক এবং মন কষ্টের কারণ। কাছের মানুষদের আপনি অনেক বেশি পরিবর্তন করতে চাইবেন। সমস্যা আরও গভীর হয়, যখন আপনার চাওয়াটা দাবিতে রূপান্তরিত হয়।
দ্বন্দ্বের ফলে বিষণ্নতা
পারস্পরিক দ্বন্দ্ব যত দীর্ঘস্থায়ী হয়, মনের অশান্তি ততই বাড়ে। একসময় তা বিষণ্নতায় রূপ নেয়। দ্বন্দ্বগুলো প্রকটভাবে দেখা দেয় যখন আপনি একটা পরিচয় থেকে আরেকটা পরিচয়ে পরিচিত হন। যেমন রাজনৈতিক দলের কর্মী থেকে কর্মজীবী, কর্মজীবী থেকে কর্মহীন, অবিবাহিত থেকে বিবাহিত, সন্তানহীন থেকে সন্তানের বাবা-মা, বিবাহিত থেকে আবার একাকী ইত্যাদি। জীবনের এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে পদার্পণের এই সময়টাতে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হয়। যাতে অনেকেই কঠিন বেগ পান। আবার, নতুন পরিস্থিতির জন্য যে শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা ও প্রস্তুতি থাকা দরকার, তাতেও আপনার ঘাটতি থাকতে পারে। এ সময় প্রয়োজন হয় পারস্পরিক সহযোগিতার।
কিন্তু পারস্পরিক সম্পর্কগুলো দুর্বল হলে এ সময়ে আপনি একাকী, অসহায়, নিরুপায় বা হতাশ বোধ করবেন। নিজেকে মূল্যহীন ভাবা শুরু করবেন। অনেক সময় আপনার চিন্তার সঙ্গে যায় এ রকম সঙ্গীরও অভাব বোধ করতে পারেন।
সমাধানের উপায়
সমস্যা থেকেই সমাধানের উপায় বের করা যায়। অন্তর্দ্বন্দ্ব দূর করা কষ্টসাধ্য হলেও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসন করা সহজ। ভাবুন, আরেকজনের পরিবর্তনের সঙ্গে আপনার ভালো থাকা না থাকা জড়িত কি না? অন্যের সঙ্গে আপনার যোগাযোগের ধরনে কোনো পরিবর্তন আনতে হবে কি না? মানুষকে আপনি আপনার চাহিদার কথা সরাসরি বলতে পারছেন কি না?
একজন পেশাদার কাউন্সেলিং/ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসনে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেন। পারস্পরিক দ্বন্দ্বের ফলে বিষণ্নতা হতে পারে, যা অন্য অসুখের মতোই একটি অসুস্থতা। এটি চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সেরে যায়। এই বোধটুকু থাকা জরুরি। নিজেকে দোষারোপ বা নিজের ওপর বিরক্ত না হয়ে কীভাবে বিষণ্নতা থেকে বের হওয়া যায় সে দিকে মনোযোগ দিতে পারেন।
লেখক: কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট সহকারী অধ্যাপক, এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
‘ভাল্লাগে না’ শব্দগুচ্ছটি ব্যবহার করেননি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। ভালো না লাগার এই বোধ দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে তা মানসিক স্বাস্থ্যের একটি বিশেষ অবস্থা নির্দেশ করে, যাকে বলা হয় বিষণ্নতা। তবে শুধু ভালো না লাগা নয়, বিষণ্নতায় ভুগলে আপনি কোনো কিছুতে আনন্দ বা আগ্রহ পাবেন না, খুব কম বা খুব বেশি ঘুম হবে, ক্লান্তি এবং অবসাদ বোধ করবেন, নিজেকে মূল্যহীন বা অপদার্থ মনে করবেন, গুছিয়ে চিন্তা করতে পারবেন না, আত্মহত্যা বা নিজের ক্ষতি করার চিন্তাও আপনার মনে আসতে পারে। এসবের সবগুলো বা কিছু কিছু উপসর্গ যদি অন্তত দুই সপ্তাহ বা তার বেশি দিন ধরে চলে এবং তার পেছনে শারীরিক কোনো কারণ না থাকে, তাহলে সেটা বিষণ্নতা হিসেবে ধরা হয়। নানা কারণে একজন মানুষ বিষণ্নতায় ভোগেন। এর মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব বা সংকট বিষণ্নতার ক্ষেত্র তৈরি ও জিইয়ে রাখতে অন্যতম ভূমিকা পালন করে।
পারস্পরিক দ্বন্দ্ব
সীমিত বাজেটে আপনি পুষ্টিকর খাবার কিনবেন নাকি ইন্টারনেটের বিল দেবেন, সেটা নিয়ে চিন্তিত হলে তা হবে আপনার নিজের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব। কিন্তু রাতে মশারি কে টাঙাবে, সেটা নিয়ে যখন আপনার সঙ্গীর সঙ্গে বাদানুবাদ হয়, তাকে বলা যায় ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির বা পারস্পরিক দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব খুব সাধারণ কিছু থেকে সাংঘাতিক জটিল আকার ধারণ করতে পারে। সংসারে কে উপার্জন করবে, কে বাচ্চা দেখাশোনা করবে, কোথায় অর্থলগ্নি করতে হবে, বাবা-মার চিকিৎসার ভার কে নেবে অথবা সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সচরাচর দ্বন্দ্ব দেখা যায়। আবার অফিসে কে বেশি কাজ করছে, কে ফাঁকি দিচ্ছে, কে রূঢ় ভাষায় কথা বলছে—এসব নিয়ে চলে টানাপোড়েন।
পারস্পরিক দ্বন্দ্বের মূলে
চারপাশের মানুষগুলোকে আপনি মোটাদাগে দুই ভাগে ভাগ করতে পারেন। একদল আপনার চিন্তা, দর্শন, অনুভূতির সঙ্গে সমান্তরালে চলে। আরেক দল চলে না। ক্ষেত্রবিশেষে, তারা আপনার থেকে উল্টো পথে চলে। তাঁদের এই উল্টো পথে চলাকে সেসব মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা হিসেবে দেখতে পারেন যদি সেটা আপনার স্বাধীনতাকে খর্ব না করে। ঘটনা সেখানেই শেষ। অথবা তাদের পথ সোজা অর্থাৎ আপনার মতো করার চেষ্টা করতে পারেন। সেটা করতে গিয়ে দেখা দিতে পারে দ্বন্দ্ব। বিপরীতমুখী এই মানুষগুলো আপনার যত কাছের তাদের উল্টো পথে চলা আপনার জন্য ততই পীড়াদায়ক এবং মন কষ্টের কারণ। কাছের মানুষদের আপনি অনেক বেশি পরিবর্তন করতে চাইবেন। সমস্যা আরও গভীর হয়, যখন আপনার চাওয়াটা দাবিতে রূপান্তরিত হয়।
দ্বন্দ্বের ফলে বিষণ্নতা
পারস্পরিক দ্বন্দ্ব যত দীর্ঘস্থায়ী হয়, মনের অশান্তি ততই বাড়ে। একসময় তা বিষণ্নতায় রূপ নেয়। দ্বন্দ্বগুলো প্রকটভাবে দেখা দেয় যখন আপনি একটা পরিচয় থেকে আরেকটা পরিচয়ে পরিচিত হন। যেমন রাজনৈতিক দলের কর্মী থেকে কর্মজীবী, কর্মজীবী থেকে কর্মহীন, অবিবাহিত থেকে বিবাহিত, সন্তানহীন থেকে সন্তানের বাবা-মা, বিবাহিত থেকে আবার একাকী ইত্যাদি। জীবনের এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে পদার্পণের এই সময়টাতে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হয়। যাতে অনেকেই কঠিন বেগ পান। আবার, নতুন পরিস্থিতির জন্য যে শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা ও প্রস্তুতি থাকা দরকার, তাতেও আপনার ঘাটতি থাকতে পারে। এ সময় প্রয়োজন হয় পারস্পরিক সহযোগিতার।
কিন্তু পারস্পরিক সম্পর্কগুলো দুর্বল হলে এ সময়ে আপনি একাকী, অসহায়, নিরুপায় বা হতাশ বোধ করবেন। নিজেকে মূল্যহীন ভাবা শুরু করবেন। অনেক সময় আপনার চিন্তার সঙ্গে যায় এ রকম সঙ্গীরও অভাব বোধ করতে পারেন।
সমাধানের উপায়
সমস্যা থেকেই সমাধানের উপায় বের করা যায়। অন্তর্দ্বন্দ্ব দূর করা কষ্টসাধ্য হলেও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসন করা সহজ। ভাবুন, আরেকজনের পরিবর্তনের সঙ্গে আপনার ভালো থাকা না থাকা জড়িত কি না? অন্যের সঙ্গে আপনার যোগাযোগের ধরনে কোনো পরিবর্তন আনতে হবে কি না? মানুষকে আপনি আপনার চাহিদার কথা সরাসরি বলতে পারছেন কি না?
একজন পেশাদার কাউন্সেলিং/ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসনে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেন। পারস্পরিক দ্বন্দ্বের ফলে বিষণ্নতা হতে পারে, যা অন্য অসুখের মতোই একটি অসুস্থতা। এটি চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সেরে যায়। এই বোধটুকু থাকা জরুরি। নিজেকে দোষারোপ বা নিজের ওপর বিরক্ত না হয়ে কীভাবে বিষণ্নতা থেকে বের হওয়া যায় সে দিকে মনোযোগ দিতে পারেন।
লেখক: কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট সহকারী অধ্যাপক, এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
৩ দিন আগেবিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪