Ajker Patrika

অজপাড়াগাঁ থেকে ব্রাজিলে তিন কিশোর ফুটবলার

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ৪৬
অজপাড়াগাঁ থেকে ব্রাজিলে তিন কিশোর ফুটবলার

অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে অধিকতর উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ব্রাজিলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে ১৫ জন খেলোয়াড়। তাদের মধ্যে সেরা ১১ জনের ৩ জনই আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের প্রতিষ্ঠিত ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমির খেলোয়াড়। এর মধ্যে দুজনই অবহেলিত চা-শ্রমিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সন্তান।

তাদের এই সাফল্যে খুশি চা-শ্রমিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষ এবং ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমি। তাদের অভিনন্দন জানিয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসন।

ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমি থেকে জানা যায়, অনূর্ধ্ব ১৭ খেলোয়াড় হিসেবে অধিকতর উন্নত প্রশিক্ষণে ব্রাজিলে যাওয়ার জন্য সারা দেশ থেকে ৪০ জন খেলোয়াড় অংশ নেয়। সেখান থেকে ক্রীড়া অধিদপ্তরের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ১১ জন খেলোয়াড়কে নির্বাচিত করে।

ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বাছাইয়ে এই ফুটবল একাডেমি থেকে তিনজন খেলোয়াড় অংশ নিয়ে তিনজনই ব্রাজিল যাওয়ার জন্য মনোনীত হয়। গত মঙ্গলবার ক্রীড়া অধিদপ্তরের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এক পত্রে ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমিকে এ তথ্য জানিয়েছে।

ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের জন্য যারা নির্বাচিত হয়েছে, তারা হলো হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ত্রিপুরা পল্লির সূর্য দেববর্মার ছেলে অনিক দেববর্মা শুভন, বেগম খান চা বাগানের শ্রমিক সুজন বাগতির ছেলে শংকর বাগতি মধু ও ঘরগাঁও গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে রনি মিয়া হাবিব।

ব্যারিস্টার সুমন একাডেমির টিম ম্যানেজার সাজি-উল ইসলাম বলেন, তাদের একাডেমি থেকে মনোনীত তিনজন খেলোয়াড়ই দরিদ্র পরিবারের ছেলে। এর মধ্যে একজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও একজন চা-শ্রমিকের সন্তান।

অনিক দেববর্মা শুভন ত্রিপুড়া সম্প্রদায়ের সন্তান। তারা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের একটি টিলায় বাস করে। তার বাবা সূর্য বনের ভেতর লেবু চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

শংকর বাগতি মধুর বাবা সুজন বাগতি চা-বাগানের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। ফলে এক বছর আগে খেলা ছেড়ে দিয়েছিল বধু। পরে ব্যারিস্টার সুমন তাকে চা-বাগানের ভেতরে একটি মুদিমালের দোকান খুলে দেন। খেলাধুলার পাশাপাশি দোকান থেকেই চলে মধুর সংসার।

রনি মিয়ার বাবা তৈয়ব আলী ও তার বড় ভাইও দিনমজুরি করে সংসার চালান।

খেলোয়াড় রনি মিয়া হাবিব বলে, ‘ কাজের জন্য খেলা থেকে হারিয়ে গিয়েছিলাম। ২০১৭ সালে খেলা একেবারেই ছেড়ে দিয়ে কাজে লেগে যাই। কিন্তু ২০১৯ সালে সুমন ভাই আমাদের আবার খেলায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।’

রনি মিয়া হাবিব আরও বলে, ‘সারা দেশ থেকে ১৫ জন খেলোয়াড় ফুটবলের রাজধানী ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের জন্য যাচ্ছে। এই দলে সেরা ১১ জনের মধ্যে একজন হতে পেরে আমি আনন্দিত।’

অনিক দেববর্মা শুভন বলে, ‘দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই—আমরা যেন ব্রাজিল গিয়ে সুন্দরভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারি। দেশকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারি।’

শংকর বাগতি মধু বলেন, ‘সুমন ভাই আমাদের এত দূর এগিয়ে নিয়ে এসেছেন। সংসার চালাতে আমি প্রশিক্ষণে আসতে পারতাম না। তিনি আমাকে একটি দোকান খুলে দিয়েছেন। সুমন ভাই ও একাডেমির সবাই আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন। আমি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সহ সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

গতকাল বৃহস্পতিবার এই তিন খেলোয়াড়ের পাসপোর্ট তৈরিসহ অন্যান্য খরচের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। এ সময় তিনি জানান, সবসবময় তিনি তাদের পাশে আছেন। জেলা প্রশাসন ও ক্রীড়া সংস্থা থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।

ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বলেন, ‘আমার কথা যত্ন করলে রত্ন মিলে। এই মানুষগুলো অভাব থেকে বের করে নিয়ে এসে এটাই আমি প্রমাণ করছি। এখন এরা সারা বাংলাদেশের স্টার হয়ে গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত