সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
একবার খামোখা গেলাম স্কুলে। খামোখা বলছি এই কারণে, আমি তখন স্কুলের শিক্ষার্থী নই। ঢের বড় হয়েছি, হাতে-পায়ে, মননে-মগজে, বয়সে। পড়ালেখা শেষ করে মনোযোগ দিয়েছি ক্যারিয়ারে। যা-ই হোক, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল সেদিন। শিক্ষকদের সঙ্গে কুশলবিনিময় হয়েছিল বহুকাল পর। তাঁরা আমাকে পেয়ে যারপরনাই খুশি ছিলেন। জানালেন, তাঁরা পত্রিকা খুলে আগে দেখেন আমার লেখা আছে কি না। তাঁরাই বাহবা দিয়ে বললেন, আমি নাকি ‘খুব ভালো’ লিখি! খানিকটা লজ্জাই পেলাম। কিন্তু আনন্দ লাগছিল এই ভেবে যে যদি ভালো লিখেই থাকি তা তো আমার এই শিক্ষাগুরুদেরই অবদান। তাঁদের কাছ থেকে এক শব্দের প্রশংসা পাওয়া মানে অনেক কিছু।
সেদিন খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণী চলছিল। একেবারে শেষে, অবাক করে দিয়ে আমার নাম ডাকলেন আমার এক শিক্ষক। আমার হাতে তুলে দিলেন বিশেষ সম্মাননা উপহার। আনন্দাশ্রু খুব সতর্কতার সঙ্গে লুকিয়ে নিলাম। আমাকে ওই উপহার দেওয়ার কারণ কী আমি আজও বুঝিনি। শুধু এতটুকু বুঝেছি, শিক্ষকেরা যেমন শাসন করতে জানেন, তেমনি স্নেহভরা তাঁদের হৃদয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ন্যূনতম শ্রদ্ধা ছাড়া আর তো কিছু চান না তাঁরা।
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রয়াত শিক্ষক বলেছিলেন, আমি খুব ভালো ফিচার লেখক হব। সেই থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি যৎসামান্য লেখালেখি করার। তাঁর একটা বাক্য আমাকে কতটা স্পৃহার জোগান দিয়েছিল, তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। কারণ, আমাদের সবার শিক্ষকেরাই এমন। তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের আপাদমস্তক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। সেটা তাঁরা আদর এবং শাসন দুটো ব্যবহার করেই করেন।
এই চিত্র নাকি ইদানীং পাল্টে যাচ্ছে? খবর থেকে জানা যায়, কোথাও শিক্ষক লাঞ্ছিত হচ্ছেন শিক্ষার্থী দ্বারা, কোথাও শিক্ষক জড়িয়ে পড়ছেন ঘুষ-দুর্নীতির অপরাধে, কোথাও শিক্ষক অভিযুক্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অপরাধে, আবার কোথাও কোচিং-বাণিজ্যের কর্ণধার হয়ে শিক্ষকেরাই শিক্ষার্থীদের দেখিয়ে দিচ্ছেন বিপথ! কী ভয়ানক কথা!
শিক্ষক—শব্দটা শুনলে শ্রদ্ধায় মন ভরে যায়। কে না জানে তাঁরা মানুষ গড়ার কারিগর? সেই কারিগরকে আজকাল যেমন প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়া হয় না, তেমনি কিছু শিক্ষকও অসৎ পথে পা বাড়ান। দুটো বিষয়ই হতাশাজনক। আমরা ভেবে দেখার সময় পাচ্ছি না কেন এমনটা হচ্ছে। একটার পর একটা ঘটনা হয়ে যাচ্ছে। ভাবার সময়টা কোথায়?
ছাত্র যখন শিক্ষককে বেধড়ক পিটিয়ে হাসপাতালের বিছানায় যেতে বাধ্য করে, এমনকি ছাত্রের আঘাতে যখন শিক্ষকের মৃত্যু হয় কিংবা ছাত্র যখন শিক্ষকের গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে দেয়, তখন কি আমরা শিক্ষককেই দোষারোপ করব এই বলে, তাঁরা আদর্শলিপিটা ঠুসে ঠুসে কেন শিক্ষার্থীদের মননে-মগজে ঢুকিয়ে দিলেন না? নাকি খানিকটা দোষ পরিবারের ওপরেও বর্তায়?
শিক্ষক সম্মানীয় ব্যক্তি। একই সঙ্গে তিনি দুর্জন, যদি বিপথে হাঁটেন। শিক্ষক সবার আদর্শ। তাই শিক্ষকেরা বিপথগামী হলে আদর্শটাই যায় উবে। কিছু শিক্ষক আদর্শের পাঠ পড়িয়েও শিক্ষার্থীর হাতে লাঞ্ছনার শিকার হন। তাঁরা সত্যিই হতভাগা।
খুব স্বল্প সময়ের অভিজ্ঞতা আমার আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার। হাতে গোনা দু-একজন শিক্ষার্থী ছাড়া সবার কাছ থেকে অঢেল সম্মান আর ভালোবাসা পেয়েছি। সেই দু-একজন শিক্ষার্থীকে কখনোই উঁচু স্বরে শাসন করিনি। একটা সময় তারা নিজেরাই ভুল বুঝতে পেরে নিজেদের শুধরে নিয়েছে। এভাবেই পৃথিবীর সব শিক্ষার্থী বদলে যাক, সম্মান করুক শিক্ষকদের।
কিছু শিক্ষক কেন অপরাধ আর দুর্নীতির পথ বেছে নেন, তা খতিয়ে দেখা দরকার। আর দরকার শিশু বয়সীদের পরিবার থেকেই আদর্শ শিক্ষাটা দেওয়া, যেন পাঠশালায় পা মাড়ানোর আগেই শিক্ষাগুরুর মর্যাদা সম্পর্কে তারা ধারণা পায়।
একবার আমার এক শিক্ষক আমার সম্পর্কে বলেছিলেন, আমার মস্তিষ্ক নাকি টিউবলাইটের মতো। প্রথমে জ্বলে না, কাঁচুমাচু করে। আর যখন জ্বলে, তখন এমন আলোকিত করে, যা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তিনি হয়তো জানেন না, সেই আলো জ্বালানোর জন্য যে সুইচ তিনি টিপে দিয়েছিলেন, তার জন্য তাঁর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। এমন লাখো শিক্ষক আপনার-আমার মতো মানুষদের আলোকিত করছেন। তাঁরা সূর্য। আমরা চাঁদ।
আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সেই সব সূর্যশিক্ষকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
একবার খামোখা গেলাম স্কুলে। খামোখা বলছি এই কারণে, আমি তখন স্কুলের শিক্ষার্থী নই। ঢের বড় হয়েছি, হাতে-পায়ে, মননে-মগজে, বয়সে। পড়ালেখা শেষ করে মনোযোগ দিয়েছি ক্যারিয়ারে। যা-ই হোক, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল সেদিন। শিক্ষকদের সঙ্গে কুশলবিনিময় হয়েছিল বহুকাল পর। তাঁরা আমাকে পেয়ে যারপরনাই খুশি ছিলেন। জানালেন, তাঁরা পত্রিকা খুলে আগে দেখেন আমার লেখা আছে কি না। তাঁরাই বাহবা দিয়ে বললেন, আমি নাকি ‘খুব ভালো’ লিখি! খানিকটা লজ্জাই পেলাম। কিন্তু আনন্দ লাগছিল এই ভেবে যে যদি ভালো লিখেই থাকি তা তো আমার এই শিক্ষাগুরুদেরই অবদান। তাঁদের কাছ থেকে এক শব্দের প্রশংসা পাওয়া মানে অনেক কিছু।
সেদিন খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণী চলছিল। একেবারে শেষে, অবাক করে দিয়ে আমার নাম ডাকলেন আমার এক শিক্ষক। আমার হাতে তুলে দিলেন বিশেষ সম্মাননা উপহার। আনন্দাশ্রু খুব সতর্কতার সঙ্গে লুকিয়ে নিলাম। আমাকে ওই উপহার দেওয়ার কারণ কী আমি আজও বুঝিনি। শুধু এতটুকু বুঝেছি, শিক্ষকেরা যেমন শাসন করতে জানেন, তেমনি স্নেহভরা তাঁদের হৃদয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ন্যূনতম শ্রদ্ধা ছাড়া আর তো কিছু চান না তাঁরা।
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রয়াত শিক্ষক বলেছিলেন, আমি খুব ভালো ফিচার লেখক হব। সেই থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি যৎসামান্য লেখালেখি করার। তাঁর একটা বাক্য আমাকে কতটা স্পৃহার জোগান দিয়েছিল, তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। কারণ, আমাদের সবার শিক্ষকেরাই এমন। তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের আপাদমস্তক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। সেটা তাঁরা আদর এবং শাসন দুটো ব্যবহার করেই করেন।
এই চিত্র নাকি ইদানীং পাল্টে যাচ্ছে? খবর থেকে জানা যায়, কোথাও শিক্ষক লাঞ্ছিত হচ্ছেন শিক্ষার্থী দ্বারা, কোথাও শিক্ষক জড়িয়ে পড়ছেন ঘুষ-দুর্নীতির অপরাধে, কোথাও শিক্ষক অভিযুক্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অপরাধে, আবার কোথাও কোচিং-বাণিজ্যের কর্ণধার হয়ে শিক্ষকেরাই শিক্ষার্থীদের দেখিয়ে দিচ্ছেন বিপথ! কী ভয়ানক কথা!
শিক্ষক—শব্দটা শুনলে শ্রদ্ধায় মন ভরে যায়। কে না জানে তাঁরা মানুষ গড়ার কারিগর? সেই কারিগরকে আজকাল যেমন প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়া হয় না, তেমনি কিছু শিক্ষকও অসৎ পথে পা বাড়ান। দুটো বিষয়ই হতাশাজনক। আমরা ভেবে দেখার সময় পাচ্ছি না কেন এমনটা হচ্ছে। একটার পর একটা ঘটনা হয়ে যাচ্ছে। ভাবার সময়টা কোথায়?
ছাত্র যখন শিক্ষককে বেধড়ক পিটিয়ে হাসপাতালের বিছানায় যেতে বাধ্য করে, এমনকি ছাত্রের আঘাতে যখন শিক্ষকের মৃত্যু হয় কিংবা ছাত্র যখন শিক্ষকের গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে দেয়, তখন কি আমরা শিক্ষককেই দোষারোপ করব এই বলে, তাঁরা আদর্শলিপিটা ঠুসে ঠুসে কেন শিক্ষার্থীদের মননে-মগজে ঢুকিয়ে দিলেন না? নাকি খানিকটা দোষ পরিবারের ওপরেও বর্তায়?
শিক্ষক সম্মানীয় ব্যক্তি। একই সঙ্গে তিনি দুর্জন, যদি বিপথে হাঁটেন। শিক্ষক সবার আদর্শ। তাই শিক্ষকেরা বিপথগামী হলে আদর্শটাই যায় উবে। কিছু শিক্ষক আদর্শের পাঠ পড়িয়েও শিক্ষার্থীর হাতে লাঞ্ছনার শিকার হন। তাঁরা সত্যিই হতভাগা।
খুব স্বল্প সময়ের অভিজ্ঞতা আমার আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার। হাতে গোনা দু-একজন শিক্ষার্থী ছাড়া সবার কাছ থেকে অঢেল সম্মান আর ভালোবাসা পেয়েছি। সেই দু-একজন শিক্ষার্থীকে কখনোই উঁচু স্বরে শাসন করিনি। একটা সময় তারা নিজেরাই ভুল বুঝতে পেরে নিজেদের শুধরে নিয়েছে। এভাবেই পৃথিবীর সব শিক্ষার্থী বদলে যাক, সম্মান করুক শিক্ষকদের।
কিছু শিক্ষক কেন অপরাধ আর দুর্নীতির পথ বেছে নেন, তা খতিয়ে দেখা দরকার। আর দরকার শিশু বয়সীদের পরিবার থেকেই আদর্শ শিক্ষাটা দেওয়া, যেন পাঠশালায় পা মাড়ানোর আগেই শিক্ষাগুরুর মর্যাদা সম্পর্কে তারা ধারণা পায়।
একবার আমার এক শিক্ষক আমার সম্পর্কে বলেছিলেন, আমার মস্তিষ্ক নাকি টিউবলাইটের মতো। প্রথমে জ্বলে না, কাঁচুমাচু করে। আর যখন জ্বলে, তখন এমন আলোকিত করে, যা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তিনি হয়তো জানেন না, সেই আলো জ্বালানোর জন্য যে সুইচ তিনি টিপে দিয়েছিলেন, তার জন্য তাঁর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। এমন লাখো শিক্ষক আপনার-আমার মতো মানুষদের আলোকিত করছেন। তাঁরা সূর্য। আমরা চাঁদ।
আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সেই সব সূর্যশিক্ষকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ দিন আগেআধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
০৮ মে ২০২৫