Ajker Patrika

হবিগঞ্জের বাতাস এত দূষিত!

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ৫৬
হবিগঞ্জের বাতাস এত দূষিত!

সারা দেশের মধ্যে বায়ুদূষণের শীর্ষ চারে রয়েছে হবিগঞ্জ জেলা। বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। যা গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘৬৪ জেলার বায়ুদূষণ সমীক্ষা ২০২১’ উপস্থাপন করা হয়। ক্যাপসের ৮১ সদস্যের একটি গবেষক দল দেশের ৬৪ জেলার ৩ হাজার ১৬৩ স্থানের বায়ুর অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ পরীক্ষা করে এ সমীক্ষাটি তৈরি করেছে। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত বস্তুকণার মান পর্যবেক্ষণ করে পরে তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করা হয়। তাদের পর্যালোচনা অনুযায়ী, হবিগঞ্জের বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা প্রতি ঘনমিটারে ২২০ দশমিক ১১ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায়। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি ভয়াবহ সংকেত।

পাহাড়-টিলা, সবুজ চা-বাগান আর হাওরবেষ্টিত এ জেলার বায়ুদূষণ কেন এত চরম আকার ধারণ করেছে? পরিবেশবাদীরা এর কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। তাঁদের মতে, নদী দখল ও দূষণ, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, অপরিকল্পিত ইটভাটা নির্মাণ, পাহাড় কাটা, বন উজাড়, শহরের বাইপাস সড়কে ময়লার স্তূপ এবং অপরিকল্পিতভাবে শহরের প্রধান সড়ক নির্মাণ এর কারণ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায় গড়ে উঠেছে অন্তত ১২০টি ইটভাটা। অথচ এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে মাত্র ৯৯টির। বাকিগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে।

জেলার বাহুবল ও চুনারুঘাট উপজেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬৫টি ইটভাটা রয়েছে। লোকালয়ে গড়ে ওঠা এসব ভাটা থেকে প্রতিনিয়ত নির্গত হচ্ছে কালো ধোঁয়া।তেব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। শুধু তা-ই নয়, এসব ইটভাটায় মাটি বহনকারী ট্রাক্টর গ্রামীণ সড়কে চলার কারণে ধুলায় দূষণ হয়ে উঠছে চারপাশ। অন্যদিকে মাধবপুর ও শায়েস্তাগঞ্জে গড়ে উঠেছে অর্ধশত শিল্পকারখানা। যার অধিকাংশই গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। এসব কারখানা থেকে উৎপাদিত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদী, খাল ও বিলে। এতে আশঙ্কাজনকভাবে দূষিত হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ। এসব শিল্পকারখানার কারণে ইতিমধ্যে অনেক নদী ও খাল বিলীন হয়ে গেছে।

পরিবেশ আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের মতে, হবিগঞ্জ শহরে বায়ুদূষণের জন্য মহামারি আকার ধারণ করেছে তিনটি বিষয়। এর মধ্যে পুরোনো খোয়াই নদী দখল ও দূষণ, বাইপাস সড়কে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ও শহরের প্রধান সড়কটি পাথর ও বালু দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ। যা থেকে সারা বছরই ধুলা-বালু অপসারিত হবে। 
এ ছাড়া বাহুবল ও চুনারুঘাটের বিস্তীর্ণ পাহাড় টিলা কেটে সমতল ভূমিতে রূপান্তর করা হয়েছে। ফলে চরমভাবে দূষণ হচ্ছে সুতাং, করাঙ্গী, খোয়াইসহ বিভিন্ন 
নদ-নদী।

ক্যাপসের বায়ুদূষণের সমীক্ষায় হবিগঞ্জ চতুর্থ শীর্ষ স্থানে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল।তোফাজ্জল সোহেল জানান, এ জেলা একসময় বনভূমি, নদ-নদী, হাওর ও জলাশয় অধ্যুষিত ছিল। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে 
পরিবেশ বিধ্বংসী নানা কর্মকাণ্ডের জন্য এ অঞ্চলের পরিবেশ চরমে সংকটপূর্ণ।

তোফাজ্জল সোহেল আরও জানান, বাসযোগ্য নগরীর জন্য পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড এখনই বন্ধ করা না হলে ভবিষ্যৎ আরও ভয়াবহ। পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে। হবিগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘হবিগঞ্জের পরিবেশ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, এটা সত্য। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য। ইতিমধ্যে ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

সৈয়দ জামিলের অভিযোগের জবাবে যা লিখলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা

এনসিপির কর্মীদের ঢাকায় আনতে সরকারের বাস রিকুইজিশন, সমালোচনার ঝড়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত