Ajker Patrika

স্বজনের অপেক্ষা শেষ হয় না

রুদ্র রুহান, বরগুনা
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ৪৯
স্বজনের অপেক্ষা শেষ হয় না

অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না। এক মাস পূর্ণ হয়েছে, তবু নিখোঁজদের ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছেন পরিবারের লোকজন। নিখোঁজ কেউ ফিরবেন না নিশ্চিত জেনেও অপেক্ষায় কাটছে তাঁদের দিন। অন্তত জানতে চান প্রিয়জনের লাশ কোথায় আছে।

গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চ ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পৌঁছালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এক মাস পার হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩০ জনের নিখোঁজ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। শনাক্ত হয়নি ২৪ লাশের পরিচয়। পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা দিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজনেরা, যাতে অন্তত কবরটি শনাক্ত করতে পারেন।

বরগুনা জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সুগন্ধা ট্র্যাজেডিতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৮ জন। এর মধ্যে ২৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৪১ জনের লাশ উদ্ধার হয় ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ছয়জন মারা যান। জানুয়ারির ২ ও ৩ তারিখে ঢাকায় চিকিৎসাধীন দগ্ধ দুজন ও সর্বশেষ ২১ জানুয়ারি আরও এক নারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

নিহত ৪৮ জনের মধ্যে শনাক্ত না হওয়ায় ২৩ জনকে বরগুনায় ও একজনকে ঝালকাঠিসহ মোট ২৪ জনকে দাফন করে জেলা প্রশাসন। বাকি ২৪ জনের মরদেহ শনাক্ত করে নিয়ে যান স্বজনেরা। ঘটনার পর বরগুনা জেলা প্রশাসন নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের ৩০ জন নিখোঁজ থাকার তথ্য দিয়েছেন স্বজনেরা। ২৭ ডিসেম্বর সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু করে এবং তিন দিনের নিখোঁজ ৩০ জনের বিপরীতে ৪৮ স্বজনের নমুনা সংগ্রহ করেন। ওই সময় সিআইডির নমুনা পরীক্ষক রবিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, পরীক্ষার ফল পেতে এক মাসের বেশি সময় লাগতে পারে।

ঘটনার এক মাস পূর্ণ হলেও অনেকেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এ ছাড়া পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে দিশেহারা অনেকে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন নারী ও শিশু রয়েছেন, যাঁরা অভিভাবকহীন অবস্থায় আত্মীয়-স্বজনদের কাছে আশ্রিত হয়ে আছেন।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নে ছোট টেংরা গ্রামের আফজাল হোসেনের মেয়ে ফজিলা আক্তার পপির এখনো খোঁজ মেলেনি। পপির মেয়ে লামিয়া তার নানা আফজাল হোসেনের কাছে রয়েছেন এক মাস থেকে। ১১ বছরের লামিয়া অপেক্ষা করছেন মা আসবে কবে। আফজাল বলেন, ‘মেয়ে হারানোর শোক আর নাতনির ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি চিন্তিত।’

বরগুনা সদর উপজেলা বুড়িরচর ইউনিয়নের হাকিম শরীফ, তাঁর স্ত্রী পাখী বেগম ও শিশুসন্তান নাসরুল্লাহ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন। হাকিম শরীফের তিন সন্তান হাফসা বেগম (১৮) সুমাইয়া আক্তার (১৪) ও ফজলুল হক (১০) এখন অভিভাবকহীন। তাদের দেখার কেউ নেই। হাফসা বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তায় এহন মোগো তিন ভাই-বুইনের খাওন পড়ন চলে। এইরহম কতদিন কেডা মোগো দ্যাকপে। কেউ আইস্যা এট্টু খোঁজ নেয়নায় মোরা খাই নাকি না খাইয়া থাহি।’

বরগুনা সদর উপজেলার মোল্লাহোরা গ্রামের সুমন সরদার লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর স্ত্রী তাসলিমা (৩০), দুই মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৫) ও সুমনা আক্তার (১২) এখনো নিখোঁজ।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে নিহদের মধ্যে শনাক্ত হওয়া ২৪টি পরিবারকে ২৫ হাজার করে টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের কোনো সহায়তা এখনো দেওয়া হয়নি।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, শনাক্ত হওয়া মরদেহের স্বজনদের আমরা প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার করে টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। আমরা ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা পেলেই ঠিক কতজন নিখোঁজ আছেন, এটা শনাক্ত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করতে পারব। এরপর ‘সোশ্যাল সেফটি নেটের আওতায়’ বিশেষভাবে তাঁদের সহায়তার আওতায় আনা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

পারভেজ হত্যায় অংশ নেয় ছাত্র, অছাত্র ও কিশোর গ্যাং সদস্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত