Ajker Patrika

৭৮টি বিদ্যালয়ে নেই মাঠ ব্যাহত সহপাঠ কার্যক্রম

মাহিদুল ইসলাম মাহি, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) 
Thumbnail image

বিদ্যালয়ের একতলা দুটি ভবনের মাঝখানে সরু জায়গা। এর মধ্যে খেলা করছে শিশু শিক্ষার্থীরা। তাদের স্কুলের মাঠ নেই। অবসাদ নিয়ে কেউ কেউ বসে আছে শ্রেণিকক্ষেই।

মাঠ না থাকায় ক্লাসের ফাঁকের সময়টুকু এভাবেই কাটে তাদের।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের বয়ড়া ইউনিয়নের যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমনটাই চোখে পড়ে। শুধু এ বিদ্যালয় নয়, এমন অবস্থা উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৯০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১২টির নামে নিজস্ব মাঠ আছে। বাকি ৭৮টি বিদ্যালয়ের মাঠ নেই। প্রায় ৮৭ শতাংশ বিদ্যালয়ে মাঠ নেই। এই উপজেলায় প্রাথমিকে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৩৫১ জন।

গত মঙ্গল ও বুধবার উপজেলার যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বয়ড়া ভাটিকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উজান বয়ড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, আন্ধারমানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাপাইর প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুতালড়ি কোদালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, ক্লাসের ফাঁকে শিশু শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ স্কুলের বারান্দায় বসে আছে, কেউবা স্কুল করিডরে দৌড়াদৌড়ি করছে। তবে অধিকাংশই অবসাদ নিয়ে শ্রেণিকক্ষে বসে আছে।

যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহুল খান বলেন, ‘আমাগো স্কুলে মাঠ নাই। আমরা খেলাধুলা করতে পারি না।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইয়ুম ফারহানা বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়টি উপজেলায় ফলাফলে প্রথম-দ্বিতীয় স্থানে থাকে। একটি খেলার মাঠের অভাবে পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে সহপাঠ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকির নিয়েই বিদ্যালয়ের সামনে শিশুরা দৌড়াদৌড়ি করে। মাঠ না থাকায় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা যাত্রাপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজন করে থাকি।’

আন্ধারমানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। শিশু শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের বারান্দায় খেলাধুলা করে থাকে।’

বয়ড়া ভাটিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখা যায়, সিঁড়িতে বসে গল্প করছে শিক্ষার্থীরা। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তামিম খান বলেন, ‘আমাদের খেলার মাঠ দরকার।

আমরা খেলার মাঠ চাই।’

বয়ড়া ভাটিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান চাতক বলেন, ‘শিশু শিক্ষার্থীদের সহপাঠ কার্যক্রমে একটি মাঠ দরকার। খেলাধুলা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।’

শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘর আসরের জেলার সাধারণ সম্পাদক পংকজ পাল বলেন, ‘হরিরামপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের সৃজনশীল বিকাশ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।

বই মুখস্থ করে, কোচিং-প্রাইভেট পড়ে একজন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেতে পারে, কিন্তু শুধু লেখাপড়া দিয়ে শিশুর সব রকম বিকাশ হয় না।’

শিশু সংগঠক পংকজ আরও বলেন, ‘মাঠের অভাবে খেলতে না পেরে ইদানীং শিশুরা অস্বাভাবিকভাবে মুটিয়ে যাচ্ছে, পরিবর্তিত পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ হলো, শিশুরা মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখা ও অ্যাপসভিত্তিক গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এতে চোখে কম দেখা, মাথা ব্যথার মতো সমস্যা হচ্ছে। শিশুদের বিকাশের জন্য তাদের অবশ্যই খেলার মাঠে ফেরাতে হবে।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলার ৯০টি সরকারি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টির মাঠ আছে। আমাদের উপজেলায় অনেক বিদ্যালয়ই ১০০ বছর আগের। বেশির ভাগ পুরোনো। জমিদাতারা যেভাবে জমি দিয়েছেন, তার ওপরই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মাঠ না থাকার এই চিত্র সারা দেশেই রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত