Ajker Patrika

ফার্মের মুরগি

আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩: ২৯
ফার্মের মুরগি

আচ্ছা, ফার্মের মুরগি আপনি কত টাকা দিয়ে কেনেন? একেক বাজারে তো দেখলাম একেক রকম দাম। আমার এক সহকর্মী শেষ কিনেছেন ১৮০ টাকা কেজি দরে। দামের হেরফের হয়। কোথাও ১৪২, তো কোথাও ১৩৩ টাকা। মোটকথা, ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকার মধ্যে কেজি দরে ফার্মের মুরগি কিনতে পাওয়া যায় দেশের নানা প্রান্তে। কিন্তু সহকর্মীর কেনা ফার্মের মুরগিটির দাম একটু বেশিই মনে হলো। সে যা-ই হোক, হঠাৎ একটা খবর পড়ে ফার্মের মুরগির দাম নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার ইচ্ছা হলো আরকি।

খবরটা হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শহরে ফ্ল্যাট বাসায় বন্দী শিশুরা নাকি দিন দিন ফার্মের মুরগির মতো হয়ে যাচ্ছে। যথার্থ কথা। স্কুলের বাংলা পরীক্ষায় প্রশ্ন আসত—‘অমুক কথাটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো’। এই প্রশ্নের উত্তরের মতো প্রধানমন্ত্রীর কথাটিকেও ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন, ফার্মের মুরগি শুধু খায়, ঘুমায় আর বিষ্ঠা বর্জন করে। ডিমও পাড়ে অবশ্য। তাদের ‘নড়ে নাকো চড়ে না’ অবস্থা একদম। একটা বদ্ধ খামারে বন্দী থেকে খেয়ে খেয়ে শুধু গতরের মাংস বাড়াতে থাকে। এমনিতেই বদ্ধ ঘরে থাকে, তার ওপর মোটা হতে হতে নড়াচড়া করার জায়গা সংকীর্ণ হয়ে যায়। বেচারা মুরগি! খোলা মাঠে ছেড়ে দিলে নাহয় হেসেখেলে দিনাতিপাত করতে পারত, শরীরচর্চা হতো, আকর্ষণীয় দেহাবয়বের অধিকারী হতো। তাহলে অবশ্য বাজারে কম মাংসল মুরগি হিসেবে তার চাহিদা কমে যেত।

আজকালকার শহুরে শিশুদেরও এমন ফ্ল্যাট বাসায় বন্দী থাকতে হয়। কী করবে ওরা আর? ওদের তো খেলার মাঠ নেই। যা-ও কিছু এলাকায় আছে, সেগুলো আবার দখলের চেষ্টা চলে। তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে কী হাঙ্গামাটাই না হয়ে গেল! শেষমেশ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে মাঠ থাকল শিশুদের খেলাধুলার জন্য। কিছু অভিভাবক আবার নিরাপত্তাজনিত কারণে শিশুদের বাসা থেকে বের হতে দেন না। বাবা-মায়ের ভয় তো স্বাভাবিক। কেননা, এই শহরে প্রীতির মতো মেয়েরাও বিনা কারণে প্রাণ হারায়, কিশোর গ্যাংয়ের খপ্পরে পড়ে ছেলেরাও বিপথে যায়।

ঘরে বন্দী থাকা বাচ্চাটা যখন খেলাধুলার মর্ম না জেনে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তখন কখনো কখনো অভিভাবকেরা একরকম বাধ্য হয়ে শিশুর হাতে তা তুলে দেন। আকর্ষণ থেকে একটা সময় নেশায় পড়ে যায় শিশুরা। তখন তাদের অভিভাবক চাইলেও টেনেহিঁচড়ে বাড়ির বাইরে খেলতে পাঠাতে পারেন না। আমার এক আত্মীয়র কথা বলি। ছেলেটা খুব ভালো ক্রিকেট খেলত। স্বপ্ন ছিল বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার। পড়াশোনা কম, খেলাধুলা নিয়ে বেশি মজে থাকত বলে তার মা বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। ‘মোবাইল দিলে বাসায় থাকব’ শর্তে তার আবদার মেনে নেওয়া হয়। ফলাফল, পাবজি খেলার নেশায় আসক্তি এবং পড়ালেখাও উঠল ‘চাঙের ওপরে’। তাকে আর খেলার মাঠে নেওয়া যায়নি। পরীক্ষায় পেল ডাব্বা, ক্রিকেটের স্বপ্ন মরে হলো ভূত! ফার্মের মুরগির মতো তার শরীরেও মাংস হয়েছে, জমেছে চর্বি।

না, এখানে আমি প্যারেন্টিংয়ের জ্ঞান ঝাড়ব না। আমি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই; বরং বিশেষভাবে অজ্ঞ! প্যারেন্টিং শেখার জন্য অন্তর্জাল ঘাঁটলেই আশা করি ধারণা পাবেন। আমি বরং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করছি। বাকিটা আপনাদের ব্যাপার।

একটা সময় অনেকে আমাকেও ‘ফার্মের মুরগি’ বলে ডাকতেন। আমার ভাই শহরের পথে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘যা করবি, একা একা করবি। নিজে নিজে শিখবি।’

এখন আমাকে কেউ দেশি মুরগি না হোক, পাকিস্তানি মুরগি বা সোনালি মুরগি ডাকলেও কিছু মনে করব না! দাম জানেন তো? কেজি ২৩০ থেকে ২৭০ টাকা। ফার্মের মুরগির চেয়ে দাম বেশি।

এবার একটু গম্ভীর কথায় আসি। আমাদের শিশুরা দেশের ভবিষ্যৎ, তা আমরা জানি। তারা মুরগি না। দেশের ভবিষ্যৎ কী বা কেমন হবে, তা কিন্তু বড়দের হাতেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত