Ajker Patrika

হোমল্যান্ড ইনস্যুরেন্সে পদে পদে অনিয়ম

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১২: ১৫
হোমল্যান্ড ইনস্যুরেন্সে পদে পদে অনিয়ম

তিন বছরের হিসাবে ব্যাংক স্থিতি দেখানো হয়েছে ১৭২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কিন্তু এ তথ্য যাচাইয়ের জন্য নিরীক্ষক হিসাব বিবরণী দেখতে চাইলে তা সরবরাহ করেনি হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। শুধু তা-ই নয়, লাইসেন্সবিহীন এজেন্টদের কমিশন প্রদান, হিসাববিহীন প্রিমিয়াম গ্রহণ, প্রশাসনিক ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা খরচ বাবদ সন্দেহজনক ব্যয়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বীমা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আইডিআরএর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অনিষ্পন্ন বিমা দাবিসহ হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সে ঘটে যাওয়া নানা অনিয়ম খুঁজে বের করতে অডিট ফার্ম হুসেইন ফরহাদ অ্যান্ড কোং-কে নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। সেই সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে নিরীক্ষা পরিচালনায় নিরীক্ষককে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য বিমা কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) নির্দেশ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু দুই দফা নির্দেশনার পরেও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অসহযোগিতা করায় নিরীক্ষাকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারেননি নিরীক্ষক। 

অভিযোগ উঠেছে, হোমল্যান্ডের সিইও ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলের অনিয়ম ও অসহযোগিতার কারণে নিরীক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়নি। এ অবস্থায় বিমা আইন লঙ্ঘন এবং গ্রাহকের স্বার্থের পরিপন্থী ভূমিকার কারণে ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলকে কেন পদ থেকে অপসারণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে তাঁকে নোটিশ দিয়েছে আইডিআরএ। একই কারণে আলাদাভাবে কারণ দর্শানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাকেও (সিএফও)। 

জানা গেছে, বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে ১০ আগস্ট আইডিআরএ, হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স এবং নিরীক্ষা ফার্ম হুসেইন ফরহাদ অ্যান্ড কোংয়ের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় শুনানি হয়। শুনানিতে ইনস্যুরেন্স কোম্পানিটির বেশ কিছু অনিয়ম সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। 

ব্যাংক হিসাবে অনিয়ম 
২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে যথাক্রমে ৫৪ কোটি ৯৭ লাখ, ৫৮ কোটি ৯৮ লাখ এবং ৫৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যাংক স্থিতি দেখিয়েছে হোমল্যান্ড। বিমা কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ২৬৭। এসব হিসাব যাচাইয়ের জন্য নিরীক্ষা দল ব্যাংক বিবরণী চাইলেও তা সরবরাহ করা হয়নি। ত্রিপক্ষীয় শুনানিকালে সিইও ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল ব্যাংক হিসাব বিবরণী সরবরাহ না করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। 

এজেন্টকে কমিশন
নিরীক্ষাধীন তিন বছরে হোমল্যান্ডের লাইসেন্সবিহীন এজেন্ট সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২ হাজার ১০৬ জন, ২ হাজার ১৭৮ জন এবং ২ হাজার ১৪৬ জন। অর্থাৎ ৬ হাজার ৪৩০ জন এজেন্টকে লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও বেআইনিভাবে কমিশন দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সিইও দাবি করেছেন, সব এজেন্টের লাইসেন্সপ্রাপ্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু শুনানিতে তিনি স্বীকার করেন, মাত্র ৪৭২ জন এজেন্টের লাইসেন্সের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। 

অর্থ ও সংখ্যায় গরমিল 
২০২০ সালে কোম্পানির দেওয়া তথ্য এবং নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা অনিষ্পন্ন বিমা দাবির মধ্যে ৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকার পার্থক্য নিরূপণ করেছেন নিরীক্ষক। এ নিয়ে লিখিত ব্যাখ্যায় সিইও বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল উল্লেখ করেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে দাবির আবেদন পাওয়ার পর তা যাচাই সাপেক্ষে বিমা দাবির অর্থ পরিশোধ করা হয়। ৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না পাওয়ায় তা হিসাবভুক্ত করা হয়নি। ত্রিপক্ষীয় শুনানিকালে তিনি স্বীকার করেন, কোম্পানির অনিষ্পন্ন বিমা দাবির অঙ্ক ১২ কোটি ৬ লাখ টাকার চেয়েও অনেক বেশি। সেটিও হিসাবভুক্তকরণে কোম্পানির ভুল হয়েছে। 

হিসাববিহীন নবায়ন প্রিমিয়াম আয় 
কোম্পানির ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালের নবায়ন প্রিমিয়াম আয় যাচাইয়ের জন্য নিরীক্ষা দল পলিসি টেবিল, পিআর, ডিসিএস এবং ব্যাংক ও শাখাভিত্তিক প্রিমিয়াম রসিদের সারাংশ চেয়েছিল। কিন্তু কোম্পানি মাত্র তিনটি শাখার একটি সারাংশ সরবরাহ করেছে, যাতে ব্যাংকভিত্তিক প্রিমিয়াম রসিদ ছিল না। ওই তিনটি শাখার ব্যাংক হিসাব ও রসিদের মধ্যেও নিরীক্ষা দল ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকার ঘাটতি শনাক্ত করেছে। কোম্পানি প্রকৃত তথ্য প্রদান না করায় ওই তিন বছরে নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ের যথার্থতা প্রত্যয়ন করতে পারেনি নিরীক্ষা দল। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানির সিইও ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পার্সোনাল ইয়ে... আছে। আমি সেটা বলব না। আমি পরিষ্কারভাবে আইডিআরএ-কে লিখিত জবাব দিয়েছি। আপনাকে দিচ্ছি, পড়লেই সবকিছু খোলাসা হয়ে যাবে।’ 
ব্যক্তিগত কী রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন আর এটা নিয়ে কিছু বলব না। পড়লেই সব পেয়ে যাবেন।’ এরপরই কল কেটে দেন তিনি। 

এ বিষয়ে আইডিআরএ মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি (সিইও) যদি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দেন, তাহলে কর্তৃপক্ষ বিশ্লেষণ করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। 

কোম্পানির তিন বছরের অসংগতির কী হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানির পরিচালক ও পর্ষদ সদস্যরা আছেন। অনিয়মের বিষয়েও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নাই। 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের

পরিবারের সামনে পুলিশ কর্মকর্তা লাঞ্ছিত, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩ নেতা-কর্মী আটক

নয়াদিল্লি হাসিনা আমলের দৃষ্টিভঙ্গিই ধরে রেখেছে: ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বিমসটেক সম্মেলনে ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি বৈঠক হচ্ছে

গ্রেপ্তার আসামিকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা, বিএনপির ১৭ নেতা-কর্মী আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত